৪০০ বছরের প্রাচীন এই ঢাকায় একসময় বিচিত্র সব বিনোদন আর উৎসবের প্রচলন ছিল। আর এর বেশিরভাগই ছিল পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক এবং সেই সময়কার নবাব, নায়েব-নাজিম বা প্রভাবশালী জমিদারদের হাত ধরে। মূলত নবাব, জমিদার আর ধনী ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিচিত্র সব বিনোদন বিস্তৃতি লাভ করেছিল। পরে এসব বিনোদন ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তাও লাভ করে। এরকমই একটি উৎসবের নাম পৌষসংক্রান্তি। ঠিক কবে থেকে ঢাকায় পৌষ সংক্রান্তির আয়োজন শুরু হয়েছিল তা জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজিস মোহাম্মদ খানের আমল (১৭৪০-১৭৪৪) থেকেই এর শুরু। আর বিচিত্র আয়োজনে পালন করা এই পৌষ সংক্রান্তি উৎসবের ঐতিহ্য আজও যত্নের সঙ্গে ধরে রেখেছে পুরান ঢাকার মানুষজন। সেই পৌষ সংক্রান্তির নানা আয়োজনের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর মূল আয়োজন ধরা হয় ঘুড়ি উড়ানো উৎসবকে। সাধারণত পৌষসংক্রান্তি ও শ্রী পঞ্চমীতে ঢাকার প্রায় সব বাড়ির ছাদে বা ময়দানে ছেলে-বুড়ো মিলে ঘুড়ি উড়ানোর দৃশ্য দেখা যেত। দোকানে পাওয়া যেত রং-বেরংয়ের ঘুড়ি। নাটাই-ঘুড়ির আলাদা দোকান ছিল তখন। এখনো কিছু দোকান আছে পুরান ঢাকায়। তবে ঢাকার আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রধানত বসন্তকালে এ খেলার আয়োজন হতো। ঢাকাসহ সারা দেশে নাটাইয়ের সাহায্যেই ঘুড়ি উড়ানো হয়ে থাকে। অন্য দেশে ঘুড়ি সাধারণত খালি হাতেই উড়ানো হয়। বর্তমানের নাটাইগুলো অনেকটা আগের মতোই। বাঁশের তৈরি নাটাইগুলো হালকা এবং মজবুত। নাটাইয়ের আকার ও আকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঘুড়ি বানানো হয়। অন্যদিকে শুরুতে এ দেশের মানুষ পাট থেকে তৈরি এক ধরনের সরু স্থানীয় সুতার সাহায্যে ঘুড়ি উড়াত। ঘুড়ির কাটাকাটি খেলার ক্ষেত্রে আরেকটি প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে সুতায় 'মানজা' বা ধার দেওয়া। 'মানজা' দেওয়ার নিয়মটাও আছে আগের মতোই। কাচের মিহি গুঁড়ো তৈরি করে শিরিশ আঠার মধ্যে পছন্দসই রং মিশিয়ে জ্বাল দেওয়া হয়। এরপর নাটাইয়ে সুতা পেঁচিয়ে তা কাচের গুঁড়োর মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। এ কাজে অনেক সময় একাধিক নাটাইও ব্যবহার করা হয়। তারপর সেই কাচ মেশানো সুতা রোদে শুকানোর পর এ সুতা ব্যবহার উপযোগী হয়। এবার ঘুড়ি তৈরির পালা। ঘুড়ির আসল জিনিস হচ্ছে ধনুক। এ ধনুকে যে তল্লাবাঁশ ব্যবহৃত হয়, তা যত্নের সঙ্গে তৈরি করা হয়। এটাকে এমনভাবে চাঁচা হয়, যেন পরিপূর্ণ সমতা থাকে। যেন কোনো দিকেই কাত না হয় বা ভারসাম্য বরাবর থাকে। রংয়ের বিবেচনায় এবং আকৃতির কারণে ঘুড়ির বেশ কিছু নাম আছে। এখনকার ঘুড়িগুলো সাধারণত এক রংয়ের বা সাদাসিধে ধরনের হয়ে থাকে; কিন্তু উনিশ শতকের শেষের দিকে ঘুড়িগুলোতে সুন্দর সুন্দর নকশা করা হতো এবং একেকটি ঘুড়ি ছিল সমসাময়িক কালের শিল্পকলার নিদর্শন। এ তো গেল ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গল্প। কিন্তু ইদানীংকালের পৌষসংক্রান্তি পালিত হয় কিভাবে?
এদিন পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, শিংটোলা, কাগজীটোলা, ধুপখোলা, বাংলাবাজার, সদরঘাট, গেণ্ডারিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ বাড়ির ছাদে মহাআমেজের সঙ্গে এ উৎসব পালন করে। পৌষ মাসের শেষদিন পিঠা-পায়েস খেয়ে ঘুড়ি উড়ানো আর দিনভর আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে পৌষসংক্রান্তি উৎসব উদযাপনের রেওয়াজ চলে আসছে বহুদিন থেকেই। যদিও পৌষসংক্রান্তি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি বিশেষ ধর্মীয় উৎসব কিন্তু সময়ের বিবর্তনে বর্তমানে পুরান ঢাকায় জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ উৎসব পালন করা হচ্ছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে। বলা যায়, ঢাকার জন্মলগ্ন থেকেই এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। আর এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে রাজধানীর সব জায়গায় না হলেও পুরান ঢাকার বেশকিছু এলাকায়ই এ উৎসবটি বেশ আমেজের সঙ্গে পালন করা হয়। ভোর হতে না হতেই পুরান ঢাকার প্রতিটি বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়ানোর হিড়িক পড়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রতিযোগিতা। আর এর ফাঁকে ফাঁকেই চলে সাউন্ড সিস্টেমের গানের তালে তালে নাচানাচি, আনন্দ-উল্লাস। দিনব্যাপী চলে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলার প্রতিযোগিতা। কারও ঘুড়ি কাটা গেলেই বিজয়ী প্রতিপক্ষ বাকাট্টা বাকাট্টা বলে তার মনের আনন্দে উল্লাস করে। বাড়ির ছাদেই অনেকে একসঙ্গে দুপুরে খাবারের পালাটাও সেরে ফেলে। বিকালে শুরু হয় পৌষসংক্রান্তি উৎসবের সবচেয়ে বিশেষ আকর্ষণ। আয়োজকদের কেউ ওই সময় ব্যস্ত থাকে মুখে কেরোসিন হাতে মশাল নিয়ে আলোক প্রদর্শনীতে আবার কেউবা ব্যস্ত থাকে আতশবাজি ফোটানোর কাজে। ওই সময় পুরান ঢাকার আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আলোর ফোয়ারা। সন্ধ্যায় আগুন খেলার পরও অনেক বাড়ির ছাদেই বাড়তি আনন্দের জন্য রাতে জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান-বাজনা ইত্যাদির আয়োজন করা হয় । পুরান ঢাকার এসব ছাদে যারা এ ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালন করে তাদের মধ্যে বেশকিছু দলের রয়েছে নিজস্ব নাম ও পরিচিতি। বাকাট্টা বয়েজ, কাইটারজ ইত্যাদি। এরকম আরও বেশকিছু আয়োজক দল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পুরান ঢাকা এবং বিভিন্ন এলাকায়। সব মিলিয়ে দিনব্যাপী ব্যাপক আয়োজন, আনন্দ-উল্লাস ও উন্মাদনার মধ্য দিয়ে পালিত হয় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পৌষসংক্রান্তি।
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2011
(294)
-
▼
January
(90)
- দিঘিরপাড় মসজিদ, ওসমানী নগর; সিলেট
- খুশকি
- ওলমেক সভ্যতা
- শীতকালে সকালে এবং সন্ধ্যায় আমাদেরও মুখ থেকে ধোঁয়া ...
- দ্য উইটেলসব্যাক গ্রাফ ডায়মন্ড
- মানুষখেকো গুহা
- ইয়েলো রেইন
- ক্রপসার্কেল
- টেগর লজ, কুষ্টিয়া
- ট্রি-হাউস
- আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট
- ডেলফি মন্দির
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট
- মসলিন
- ধনুক
- ব্রহ্মপুত্র
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ও স্থানের নামকরণের কারণ
- ইংরেজি শব্দের উৎস সন্ধান
- উপমহাদেশের প্রথম গৌরবময় বিদ্রোহ
- কালো জাদু
- মণিপুরী জাদুঘর
- গড়াই
- কার্টুন
- গুহা
- পূর্ণিমায় রাস নৃত্য
- লিপিষ্টিক বা ঠোঁট পালিশ
- বড়দিন
- বিশ্বকাপ ক্রিকেট
- বুশ হাউস
- ইগুয়াজু জলপ্রপাত
- ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত
- নায়াগ্রা জলপ্রপাত
- সিয়ার্স টাওয়ার
- লুচি ফোলে কেন
- রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির
- কুকুর গাড়ি
- কালী মন্দির, চালিতাবাড়িয়া, কেশবপুর, যশোর
- পৌষসংক্রান্তি
- সমুদ্রের পানি ব্যবহার: ডুববে না বাংলাদেশ ও মালদ্বী...
- ℞ লেখার অন্তরালে
- রিসমন্ড প্রাসাদ
- হুতু-তুস্সি বৃত্তান্ত
- ওসমানী জাদুঘর
- ইকোপার্ক, কুয়াকাটা
- ইরিয়ান জায়া
- অ্যাজমা রোগীদের ইনহেলার ব্যবহার বিধি
- চুলকানি
- কাঁধের পেশির সমস্যায় করণীয়
- Palpitation বা বুক ধড়ফড়
- শুধু শীতপ্রধান দেশেই তুষারপাত হয় কেন
- নবাববাড়ি, প্রিতিমপাশা, সিলেট
- ইস্টার আইল্যান্ড
- সোনিয়া জেমস
- নটিক্যাল সায়েন্স
- পাকিস্তানে জমিদার নন্দনের প্রেম প্রত্যাখ্যানের জের
- মেহেরজান
- পার্ল হারবার
- ভার্সাই
- ঝালকাঠি
- বিশ্ব ইজতেমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
- সাদ্দামের রক্তে লেখা কোরআনের প্রদর্শনী
- জুতা আবিষ্কারের কাহিনী
- উটের দুধ-মূত্রে ক্যান্সার সারে!
- মীর জাফর
- MLM Business Illegal
- Log in Window XP without Password
- Some Moments With Bangobondhu
- গাইবান্ধা
- নাটোর
- বনসাই শিল্পের গোড়ার কথা
- চণ্ডীমুড়া, কুমিল্লা
- হেলেন
- ছুটি খাঁ জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম
- জাদুঘর
- মাদাগাস্কার
- করিডা ডি টোরস
- তিব্বত
- ফরাশগঞ্জ
- চারশত বছরের ঢাকা
- Dhaka International Trade Fair 2011
- প্রথম নর্তকী মাতা হারি
- Find Friend in Facebook
- দুশো বছরে বাংলায় লালনভাব ও লালনসঙ্গীতের ক্রম ধারাপাত
- মিন্দানাও
- জেনে নিন
- ভোলা
- বুর্জ খলিফা
- মুখের জ্বালাপোড়া এবং করণীয়
- স্বামী-স্ত্রীর পছন্দে অমিল
- নববর্ষ
-
▼
January
(90)
Tuesday, January 25, 2011
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment