পৃথিবীর রহস্যময় সভ্যতাগুলোর একটি হচ্ছে ওলমেক সভ্যতা। ওলমেকরা প্রাচীন মেক্সিকোর অধিবাসী ছিল। ওলমেক সভ্যতা মায়ান সভ্যতার পূর্বসূরি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার একটি। আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে বিকাশ ঘটেছিল এই সভ্যতার। ওলমেকরাই প্রথম প্রাচীন মেক্সিকোয় ধর্ম, লেখনী, পঞ্জিকা, গণিতশাস্ত্রে অসীম দক্ষতা_ এমন কি কম্পাসেরও সূত্রপাত করেছিল।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ঘটনাটা ১৮৬২ সালের। মেক্সিকো তখনো জঙ্গল আর জলাভূমিতে ভরা এক নির্জন দেশ। এরকমই একটা অরণ্যঘেরা জলাভূমিতে চাষের জন্য মাটি খোঁড়াখুঁড়ি চলছিল। হঠাৎ করেই পাথরের বা ধাতুর একটি বিরাট বস্তু বেরিয়ে এলো। মাটির নিচে পুঁতে রাখা। জিনিসটা দেখে চাষিদের মনে হলো এটা একটি লোহার কেটলি। গুপ্তধনের লোভে ওদের চোখ চকচক করে উঠল। দ্বিগুণ উদ্যমে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জায়গাটা খুঁড়ে পাথরের একটি ভাস্কর্যের ভাঙা মাথার সন্ধান মিলল। গুপ্তধনের দেখা না পেয়ে চাষিরা ভীষণ হতাশ হলো। কিন্তু আগ্রহী হয়ে ওঠলেন প্রত্নতাত্তি্বকরা। কারণ এই ভাঙা মাথাটিই যে প্রাচীন ওলমেক সভ্যতার প্রথম নিদর্শন।
সেই শুরু। তবে ওমলেক সভ্যতা বলে আদৌ কিছু ছিল কি-না তা নিয়ে বিতর্কের কমতি ছিল না। ১৯৪২ সালে মেক্সিকোতে এক আন্তর্জাতিক প্রত্নতাত্তি্বক সম্মেলনে অজস্র নমুনা ও প্রমাণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ওলমেক সভ্যতার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সবাইকে নিশ্চিত করা হয়। নতুন সন্ধান পাওয়া এই সভ্যতার প্রাচুর্য দেখে হতবাক হয়ে গেলেন প্রত্নতাত্তি্বকরা।
'ওলমেক' শব্দটি এসেছে অ্যাজটেক সভ্যতার 'নাহুতল' ভাষা থেকে। শব্দটির অর্থ হচ্ছে 'রাবার পিপল'। পনেরো-ষোল শতকে উপসাগরীয় এলাকার নাব্যদেশে যারা বসবাস করত তাদের এই নামে ডাকা হতো। ওলমেকদের আদিনিবাস ধরা হয় আফ্রিকাকে। সেখান থেকে বহুদূরের পথ পেরিয়ে ওলমেকরা এসেছিল আমেরিকায়। ওলমেকদের অনেকে বলে থাকেন 'নওবান'। এটাই নাকি ওদের আসল নাম। আজ থেকে তিন হাজারেরও বেশি সময় আগে গড়ে উঠেছিল প্রাচুর্যে ভরা এই ওমলেক সভ্যতা। এটি ছিল প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি মেসোআমেরিকার অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। মেসো আমেরিকা অর্থ মধ্য আমেরিকা। আর ওলমেকরাই মেসো আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দা। ওলমেক সভ্যতার কেন্দ্র ছিল মেক্সিকোর ইউকান উপদ্বীপ। মেক্সিকো উপসাগরের উপকূলে টুক্সটিলা পাহাড়ের পাদদেশের জলাভূমিময় জঙ্গলে, সে জঙ্গলের পাশে গ্রামে এবং নগরে বাস করত ওলমেকরা। বর্তমান মেক্সিকোর ভেরাকুজ ও তাবাসকো প্রদেশই প্রথম নগর ও গ্রাম গড়ে তুলেছিল ওলমেকরা।
প্রাচীন সভ্যতা হিসেবে মায়া ও অ্যাজটেক সভ্যতার কথা খুব শোনা গেলেও ওলমেক সভ্যতা এই দুই সভ্যতা থেকেও বুড়ো এবং সমৃদ্ধিশালী। ওলমেক সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন থেকে পণ্ডিতরা অনুমান করছেন, অ্যাজটেক ও মায়ার বিখ্যাত সভ্যতার অনেক কিছুই মায়ানদের দান করা। আর তাছাড়া ওমলেকদের সূক্ষ্ম খোদাইয়ের কাজ, বিরাট ভাস্কর্য, ভাষার ব্যবহার, গণিতশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য এবং বর্ষপঞ্জি প্রত্নতাত্তি্বকদের চমক লাগিয়ে দিয়েছে। পরবর্তী বিখ্যাত সভ্যতাগুলোর মতোই তারা পুরো ৩৬৫ দিনের এক দিনপঞ্জিকা মেনে চলত। তার চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ওলমেকরাও পিরামিড বানাতে জানত। আর পশ্চিমা দুনিয়ায় ওলমেকরাই সম্ভবত প্রথম জাতি, যারা নিজেদের একটি লিখন-পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিল। আর মায়ান সভ্যতার বর্ণমালা ওলমেক সভ্যতার প্রভাবেই গড়ে উঠেছে বলে মনে করা হয়। ওলমেকদের জীবনে ধর্ম ছিল কেন্দ্রজুড়ে, ছিল তাদের শাসকরা। আর সেই শাসকরা ছিলেন শামান। তাই যারা শাসক তারাই ছিলেন ওমলেকদের ধর্মীয় নেতা। সেই শামানরা নাকি রুপান্তরিত হতে পারত! ওলমেকদের মূল দেবতা ছিল জাগুয়ার দেবতা। ওলমেকরা মনে করত জাগুয়ার বা আমেরিকার এক ধরনের হিংস্র বাঘ সব শক্তির আধার। জাগুয়ারের মৃত্যু হলে সেই আত্মা বেরিয়ে আসে পৃথিবীতে। তবে এর বাইরেও এদের অন্য দেবতা ছিল। ওলমেক ধর্মে নরবলি ও রক্ত ঝরানোর রীতি ছিল। রক্ত ঝরানোর কৃত্য মানে দেবতাকে খুশি করতে নিজের শরীর থেকে (যেমন_ লিঙ্গ অথবা জিহবা) রক্ত ঝরানো।
ওলমেকরাই মেসো আমেরিকায় প্রথম স্থাপত্য নির্মাণে ও ভাস্কর্য গড়তে পাথর ব্যবহার করে । এ জন্য তারা দূরবর্তী পাহাড়ের কোয়ারি থেকে পাথর টেনে আনত। তৈরি করত পুরুষের মুখ। যা একেকটি প্রায় ৯ ফুট উঁচু। এগুলো আজো মেক্সিকোর ভিলাহেরমোসা নগরে দেখা যায়। বেশিরভাগ ওলমেকই গ্রামে বসবাস করত। আর এরা অরণ্য ও ঝোপঝাড় পুড়িয়ে ভুট্টা ও সূর্যমুখীর চাষ করত। বন্যার সময় ছাড়া তারা নদীর ধারেও করত। ভুট্টা ছাড়াও বুনত শিম, লাউ ও মিষ্টি আলু। সবজি ছাড়া মাংসের জন্য খেত মাছ, কাছিম, সাপ, ভোঁদড়, কাঁকড়া, হরিণ, খরগোশ ও পাখি। আর তারা খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে রাখার কৌশল জানত। পরবর্তী সময়ে যা খুঁজে পাওয়া গেছে অ্যাজটেকদের মধ্যে। ওলমেকদের চারটি শহরকে চিহ্নিত করা গেছে। লাগুনা দো লোজ সেরম, সান লোরেনজো, তে জাপাও আর লা তোনও। এগুলো প্রতিটিই উন্নত স্থাপনায় ও শৈলীতে সমৃদ্ধ। ওলমেক সভ্যতার প্রাচুর্য আর অগ্রগতি প্রত্নতাত্তি্বকদের অবাক করেছে। অনেক প্রশ্নের উত্তর আজো মেলেনি। ওলমেকরা কিভাবে আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় এলো? তারা কিভাবে এত তাড়াতাড়ি সব কিছু শিখে ফেলল? তাদের এই বিচিত্র ভাস্কর্যবিদ্যার উৎস কি? আবার রাতারাতি এ সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেল কিভাবে! আর এ সভ্যতার প্রাণরস কিভাবে পেঁৗছে গেল মায় আর অ্যাজটেক সভ্যতার মধ্যে? এসব প্রশ্নের উত্তর আজো মেলেনি।
-রণক ইকরাম
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2011
(294)
-
▼
January
(90)
- দিঘিরপাড় মসজিদ, ওসমানী নগর; সিলেট
- খুশকি
- ওলমেক সভ্যতা
- শীতকালে সকালে এবং সন্ধ্যায় আমাদেরও মুখ থেকে ধোঁয়া ...
- দ্য উইটেলসব্যাক গ্রাফ ডায়মন্ড
- মানুষখেকো গুহা
- ইয়েলো রেইন
- ক্রপসার্কেল
- টেগর লজ, কুষ্টিয়া
- ট্রি-হাউস
- আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট
- ডেলফি মন্দির
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট
- মসলিন
- ধনুক
- ব্রহ্মপুত্র
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ও স্থানের নামকরণের কারণ
- ইংরেজি শব্দের উৎস সন্ধান
- উপমহাদেশের প্রথম গৌরবময় বিদ্রোহ
- কালো জাদু
- মণিপুরী জাদুঘর
- গড়াই
- কার্টুন
- গুহা
- পূর্ণিমায় রাস নৃত্য
- লিপিষ্টিক বা ঠোঁট পালিশ
- বড়দিন
- বিশ্বকাপ ক্রিকেট
- বুশ হাউস
- ইগুয়াজু জলপ্রপাত
- ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত
- নায়াগ্রা জলপ্রপাত
- সিয়ার্স টাওয়ার
- লুচি ফোলে কেন
- রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির
- কুকুর গাড়ি
- কালী মন্দির, চালিতাবাড়িয়া, কেশবপুর, যশোর
- পৌষসংক্রান্তি
- সমুদ্রের পানি ব্যবহার: ডুববে না বাংলাদেশ ও মালদ্বী...
- ℞ লেখার অন্তরালে
- রিসমন্ড প্রাসাদ
- হুতু-তুস্সি বৃত্তান্ত
- ওসমানী জাদুঘর
- ইকোপার্ক, কুয়াকাটা
- ইরিয়ান জায়া
- অ্যাজমা রোগীদের ইনহেলার ব্যবহার বিধি
- চুলকানি
- কাঁধের পেশির সমস্যায় করণীয়
- Palpitation বা বুক ধড়ফড়
- শুধু শীতপ্রধান দেশেই তুষারপাত হয় কেন
- নবাববাড়ি, প্রিতিমপাশা, সিলেট
- ইস্টার আইল্যান্ড
- সোনিয়া জেমস
- নটিক্যাল সায়েন্স
- পাকিস্তানে জমিদার নন্দনের প্রেম প্রত্যাখ্যানের জের
- মেহেরজান
- পার্ল হারবার
- ভার্সাই
- ঝালকাঠি
- বিশ্ব ইজতেমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
- সাদ্দামের রক্তে লেখা কোরআনের প্রদর্শনী
- জুতা আবিষ্কারের কাহিনী
- উটের দুধ-মূত্রে ক্যান্সার সারে!
- মীর জাফর
- MLM Business Illegal
- Log in Window XP without Password
- Some Moments With Bangobondhu
- গাইবান্ধা
- নাটোর
- বনসাই শিল্পের গোড়ার কথা
- চণ্ডীমুড়া, কুমিল্লা
- হেলেন
- ছুটি খাঁ জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম
- জাদুঘর
- মাদাগাস্কার
- করিডা ডি টোরস
- তিব্বত
- ফরাশগঞ্জ
- চারশত বছরের ঢাকা
- Dhaka International Trade Fair 2011
- প্রথম নর্তকী মাতা হারি
- Find Friend in Facebook
- দুশো বছরে বাংলায় লালনভাব ও লালনসঙ্গীতের ক্রম ধারাপাত
- মিন্দানাও
- জেনে নিন
- ভোলা
- বুর্জ খলিফা
- মুখের জ্বালাপোড়া এবং করণীয়
- স্বামী-স্ত্রীর পছন্দে অমিল
- নববর্ষ
-
▼
January
(90)
Saturday, January 29, 2011
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment