একে বলা হয় ঈশ্বরের সিন্দুক। হাজার বছর ধরে মানুষের কাছে এক অপার রহস্যের বিষয় হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছে এই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট। হিব্রু, বাইবেল আর অন্যান্য প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ অনুসারে এই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট হচ্ছে ঈশ্বরের নির্দেশে নির্মিত একটি সিন্দুক বা বাক্স। আর এই বাক্সের ভেতর সৃষ্টিকর্তার ১০টি অনুশাসনের বাণী সযত্নে রাখা আছে। পেন্টাটিউক অনুসারে সিনাই পর্বতে থাকা অবস্থায় সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে মুসা এই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট নির্মাণের নির্দেশ পান। এটিকে ইসরায়েলের সৌন্দর্য নামে অভিহিত করা হয়। তবে অন্য একটি মতানুসারে মোট দুটি আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট তৈরি হয়েছিল। এর মধ্যে একটি নির্মাণ করেন মুসা। অন্যটি বেজালিল। আবার একাধিক প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে খানিকটা ভিন্নমত প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সবকিছুর ঊধর্ে্ব মূল কথা একটাই, এটি একটি পবিত্র এবং সৌভাগ্যের প্রতীক। এতে রয়েছে স্রষ্টার অনুশাসনের বাণী। আর এই?আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট যার কাছে থাকবে, সেই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী।
বিশ্বজুড়েই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট পরম আকাক্সিক্ষত এক বস্তুর নাম। ভালো-মন্দ নির্বিশেষে সব মানুষ ঈশ্বরের সিন্দুকের সন্ধান করে গেছে বছরের পর বছর। এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ, ইতিহাসের বই-পুস্তক আর জনশ্রুতি_ সবকিছুতেই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্টের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২০০৮ সালে 'চ্যানেল ফোর' এ নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও প্রচার করে। ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ডেরও এ নিয়ে দাবি কম নয়। প্রত্নতাত্তি্বক ধর্মীয় যাজকরা এখনো আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট খুঁজে বেড়ান। চ্যানেলে চ্যানেলে এ নিয়ে প্রচার হয়েছে বহু তথ্যচিত্র, নির্মিত হয়েছে বহু চলচ্চিত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে-'ডেভিড অ্যান্ড বাথশিবা' [১৯৫১], 'দ্য টেন কমান্ডমেন্টস' [১৯৫৬], 'সলোমন অ্যান্ড শিবা' [১৯৫৯], 'ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দ্য লাস্ট ক্রুসেড' [১৯৮৯], 'ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দ্য কিংডম অব দ্য ক্রিস্টাল স্কাল' [২০০৮], 'মেগামাইন্ড' [২০১০] প্রভৃতি। আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট নিয়ে নির্মিত হয়েছে ভিডিও গেমসও। বিশ্বজুড়েই তাই এটি এক বিশাল কৌতূহলের নাম।
আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট রহস্য নিয়ে নির্মিত ইন্ডিয়ানা জোনসের রেইডার অব দ্য লস্ট আর্ক ছবিটির গল্প অসাধারণভাবে এগিয়ে যায়। ছবির গল্পের শুরু ১৯৩৬ সালে। গুপ্তধন সন্ধানী ইন্ডিয়ানা জোনস একজন বিখ্যাত হান্টার। তিনি পেরুভিয়ান জঙ্গলে জটিল ধাঁধার এক মন্দির থেকে উদ্ধার করেন একটি স্বর্ণমূর্তি। আর সেটি দস্যুদের হাতে পড়ে ফিরে আসে আমেরিকায়। একসময় জোনস জানতে পারেন, হিটলারের নাৎসি বাহিনী খোঁজ করছে 'আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট'-এর। জিনিসটি হলো একটি সিন্দুক, যা ঈশ্বরের নির্দেশে ধর্মযাজক জ্যাকবের বারো বংশধর নির্মাণ করেছিল। আর সেই সিন্দুকে তারা সযত্নে রেখে দিয়েছিল ঈশ্বরপ্রদত্ত ১০টি অনুশাসনের বাণী। কথিত আছে, যার কাছে এ মহামূল্যবান ও পরম পবিত্র সিন্দুকটি থাকবে, তিনি মালিক হবেন পৃথিবীর সব শক্তির। আর মূলত এ কারণেই নাৎসি বাহিনী হন্যে হয়ে সেই সিন্দুকের খোঁজ করতে শুরু করে। গল্পে সেই সিন্দুক নিয়েই জোনস আর নাৎসি বাহিনীর মধ্যে চলে নানা অভিযান, যুদ্ধ আর হানাহানি। কিন্তু আসলে কোথায় সেই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট। ছবিতে এর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উত্তর নেই বাস্তবেও। প্রকৃত অর্থেই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট রহস্যের কোনো শেষ নেই। বাইবেলে বলা হয়েছে, সিন্দুকটি ঈশ্বরের নির্দেশেই বানানো হয়েছিল। অ্যাকাসিয়া নামের মিসরের একটি পবিত্র গাছের কাঠ দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। আর সৌন্দর্যের জন্য পরে এটিকে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সিন্দুকটি লম্বায় ১.১৫ মিটার, প্রস্থে ০.৭ মিটার আর উচ্চতায় ০.৭ মিটার। এটি বহন করার জন্য রয়েছে দুটি হাতল। নির্মাণের পর থেকে বহু বছর ইহুদিরা এটি তাদের কাছে সযত্নে রেখেছিল। ইহুদিরা যখন 'ল্যান্ড অব ক্যাননে' এসে পেঁৗছায়, তখন তাদের পথ দেখিয়েছে এ সিন্দুক। এই সিন্দুকের জন্যই জর্ডান নদী দুই ভাগ হয়ে রাস্তা করে দিয়েছিল তাদের। রাজা ডেভিড ও তার ছেলে সলোমন জেরুজালেমে স্থানান্তর করে সিন্দুকটি একটি মন্দিরে রেখে দেন। বহু বছর পর ব্যাবিলনের সম্রাট নেবুচাঁদনেজার ধ্বংস করে ফেলেন মন্দিরটি।
প্রায় সব জায়গায় বর্ণিত ঘটনাতেই এতটুকু মিলে গেছে। কিন্তু এর পরের ঘটনা নিয়েই বিশ্বজুড়ে যত বিতর্ক। কোথায় আছে পবিত্র সিন্দুকটি? অনেকে বলেন, ব্যাবিলন সভ্যতার কাছেই সিন্দুকটি রয়ে গেছে। আবার অনেকের মতে, রাজা সলোমন নিজেই সিন্দুকটির এমন ভবিষ্যৎ আন্দাজ করতে পেরে 'ডেড সি'র কাছে একটি গুহায় সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা আর জিম্বাবুয়ের লেম্বা সম্প্রদায়ের দাবি, তাদের পূর্ব-পুরুষরাই সিন্দুকটি বহন করে নিয়ে এসেছে। ইথিওপিয়ান খ্রিস্টানরা দাবি করে, সিন্দুকটি আসলে ইথিওপিয়ার অ্যাজিউমে সংরক্ষিত আছে। এরকম অনেকের অনেক রকম মত রয়েছে। কিন্তু মন্দিরটির প্রকৃত অস্তিত্ব আর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনোভাবেই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অন্যদিকে প্রত্নতাত্তি্বক লিন রিটমেয়ার গবেষণা করে জানিয়েছেন, সিন্দুকটি টেম্পল মাউন্টে রক্ষিত আছে। নির্মাণের বহু বছর পর্যন্ত সিন্দুকটি জেরুজালেমে ছিল বটে; কিন্তু সেখান থেকে হঠাৎ করেই হারিয়ে যায় এটি। এ শতাব্দীতে এসে নাকি সিন্দুকটির খোঁজও মিলেছে। যদিও এ নিয়ে কেউই কোনো কথা বলতে চায় না। তাই রহস্যগুলো আরও যেন জটিল হতে থাকে। মানুষ যতই এগিয়ে যায়, ততই আরও জটিল হতে থাকে কোথায় আছে সেই ঈশ্বরের সিন্দুকটি। বলা হয়, প্রতি বছর শুধু একবার প্রধান ধর্মযাজক পবিত্র প্রাণীর রক্ত হাতে মেখে দেখতে পারবেন সিন্দুকটি। কোনো পাপী ব্যক্তি কোনোভাবেই সিন্দুকটি স্পর্শ করতে পারে না। পাপীদের জন্য সিন্দুকটি দেখারও অনুমতি নেই। ইতিহাসে আছে, যখনই কোনো পাপী মানুষ এটি দেখতে গিয়েছে কিংবা স্পর্শ করতে চেয়েছে, তখনই সে ঈশ্বরের কাছ থেকে কঠিন শাস্তি পেয়েছে। তবু বৈজ্ঞানিক মনের মানুষের গবেষণার শেষ নেই। ধর্মভীরু, প্রত্নতাত্তি্বক থেকে শুরু করে ইতিহাসবেত্তা এমনকি সাধারণ মানুষও মনে মনে খুঁজে বেড়ান সেই রহস্যময় পবিত্র সিন্দুক। কিন্তু সেই রহস্য আজো রহস্যই রয়ে গেছে।
-রণক ইকরাম
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2011
(294)
-
▼
January
(90)
- দিঘিরপাড় মসজিদ, ওসমানী নগর; সিলেট
- খুশকি
- ওলমেক সভ্যতা
- শীতকালে সকালে এবং সন্ধ্যায় আমাদেরও মুখ থেকে ধোঁয়া ...
- দ্য উইটেলসব্যাক গ্রাফ ডায়মন্ড
- মানুষখেকো গুহা
- ইয়েলো রেইন
- ক্রপসার্কেল
- টেগর লজ, কুষ্টিয়া
- ট্রি-হাউস
- আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট
- ডেলফি মন্দির
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট
- মসলিন
- ধনুক
- ব্রহ্মপুত্র
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ও স্থানের নামকরণের কারণ
- ইংরেজি শব্দের উৎস সন্ধান
- উপমহাদেশের প্রথম গৌরবময় বিদ্রোহ
- কালো জাদু
- মণিপুরী জাদুঘর
- গড়াই
- কার্টুন
- গুহা
- পূর্ণিমায় রাস নৃত্য
- লিপিষ্টিক বা ঠোঁট পালিশ
- বড়দিন
- বিশ্বকাপ ক্রিকেট
- বুশ হাউস
- ইগুয়াজু জলপ্রপাত
- ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত
- নায়াগ্রা জলপ্রপাত
- সিয়ার্স টাওয়ার
- লুচি ফোলে কেন
- রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির
- কুকুর গাড়ি
- কালী মন্দির, চালিতাবাড়িয়া, কেশবপুর, যশোর
- পৌষসংক্রান্তি
- সমুদ্রের পানি ব্যবহার: ডুববে না বাংলাদেশ ও মালদ্বী...
- ℞ লেখার অন্তরালে
- রিসমন্ড প্রাসাদ
- হুতু-তুস্সি বৃত্তান্ত
- ওসমানী জাদুঘর
- ইকোপার্ক, কুয়াকাটা
- ইরিয়ান জায়া
- অ্যাজমা রোগীদের ইনহেলার ব্যবহার বিধি
- চুলকানি
- কাঁধের পেশির সমস্যায় করণীয়
- Palpitation বা বুক ধড়ফড়
- শুধু শীতপ্রধান দেশেই তুষারপাত হয় কেন
- নবাববাড়ি, প্রিতিমপাশা, সিলেট
- ইস্টার আইল্যান্ড
- সোনিয়া জেমস
- নটিক্যাল সায়েন্স
- পাকিস্তানে জমিদার নন্দনের প্রেম প্রত্যাখ্যানের জের
- মেহেরজান
- পার্ল হারবার
- ভার্সাই
- ঝালকাঠি
- বিশ্ব ইজতেমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
- সাদ্দামের রক্তে লেখা কোরআনের প্রদর্শনী
- জুতা আবিষ্কারের কাহিনী
- উটের দুধ-মূত্রে ক্যান্সার সারে!
- মীর জাফর
- MLM Business Illegal
- Log in Window XP without Password
- Some Moments With Bangobondhu
- গাইবান্ধা
- নাটোর
- বনসাই শিল্পের গোড়ার কথা
- চণ্ডীমুড়া, কুমিল্লা
- হেলেন
- ছুটি খাঁ জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম
- জাদুঘর
- মাদাগাস্কার
- করিডা ডি টোরস
- তিব্বত
- ফরাশগঞ্জ
- চারশত বছরের ঢাকা
- Dhaka International Trade Fair 2011
- প্রথম নর্তকী মাতা হারি
- Find Friend in Facebook
- দুশো বছরে বাংলায় লালনভাব ও লালনসঙ্গীতের ক্রম ধারাপাত
- মিন্দানাও
- জেনে নিন
- ভোলা
- বুর্জ খলিফা
- মুখের জ্বালাপোড়া এবং করণীয়
- স্বামী-স্ত্রীর পছন্দে অমিল
- নববর্ষ
-
▼
January
(90)
Friday, January 28, 2011
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment