Tuesday, January 18, 2011

মীর জাফর

0 comments
রাজাকার শব্দের অর্থ যাইহোক না কেন, সেটা এখন পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘৃনিত একটি গালি/উপাধি। সেরকমই 'মীর জাফর' নামটিও যুগে যুগে বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায় ও বাঙ্গালির মনে। বাংলার ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত সেই মীর জাফর আলী খাঁর আজ(১৭ জানুয়ারী)মৃত্যুদিন। ১৭৬৫ সালের এই দিনে কুষ্ঠরোগের যন্ত্রণায় তার প্রাণত্যাগ হয়। মীর জাফরের মৃত্যু ১৭৬৫ সালে হলেও সেই মীর জাফরের ছায়া যুগে যুগে দেখা গেছে বাংলার বুকে নানা নামে ও নানা রুপে। যাই হোক আসুন একটু চোখ বুলিয়ে নেই সেই ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকের জীবন আর ঘৃনা ভরা কর্মকান্ডের উপর, হয়তো মিলে যেতে পারে বর্তমানে সক্রিয় কোন মীর জাফরের কর্মকান্ড ও আচরণের সাথে।নবাব আলীবর্দী খাঁ ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি ছিলেন মীর জাফর। প্রথম জীবনে তিনি নবাব আলীবর্দী খাঁর কাছে পালিত হন। উচ্চবংশীয় মুসলমান সন্তান হওয়ায় নবাব তাকে খুব স্নেহ করতেন। নবাব তার বৈমাত্রেয় বোন শাহ খানমকে বিয়ে দেন মীর জাফরের সঙ্গে। মারাঠা যুদ্ধে শৌর্য-বীর্যে তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তিনি ছিলেন খুব ক্ষমতালোভী এবং চালবাজ।

আতাউল্লাহর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে বঙ্গরাজ্য দখলের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেলে নবাব তাকে পদচ্যুত করেন। পরে ক্ষমা করে দেন। ১৭৫৬ সালে আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাকে সেনাপতি পদে বহাল রাখেন। ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন ঘটিয়ে তিনি বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব হন। ইংরেজদের স্বার্থ দেখতে দেখতে তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে এলে তিনি ওলন্দাজদের সঙ্গে মিলে ইংরেজ প্রভুদের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র শুরু করেন। অন্যদিকে তার মেয়ের জামাতা মীর কাশিম হাত মেলায় ইংরেজদের সঙ্গে। পরিণতিতে ১৭৬০ সালে মীর জাফর ক্ষমতাচ্যুত এবং তার জামাতা মীর কাশিম তার স্থলাভিষিক্ত হন। এতে ইংরেজরা তার কাছ থেকে অনেক অযৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নেয়।

শেষ বয়সে তিনি শারীরিক মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন। কুষ্ঠরোগে শয্যাশায়ী অবস্থায় ১৭৬৫'র এই দিনে তার মৃত্যু হয়।

বিশ্বাসঘাতকদের চলিত বর্তমান যতই সুখের হোক না কেন সময় ও প্রকৃতি'র শাস্তি থেকে তাদের রেহাই নেই, কথাটি কিছুটা কাব্যিক শোনালেও ইতিহাস ঘাটলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে।

0 comments:

Post a Comment