Saturday, January 1, 2011

ভোলা

0 comments
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে সাগর আর স্থলভাগের সংযোগকারী বিস্তৃত ফসলের মাঠ, সবুজ প্রান্তর আর সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের শব্দে পর্যটক বিমোহনকারী দ্বীপ জেলা সাগরকন্যা ভোলা। দ্বীপটি এক সময় দক্ষিণ শাহবাজপুর নামে পরিচিত ছিল। পরে এই দ্বীপের নামকরণ করা হয় ভোলা।

আয়তন ও অবস্থান

আয়তনের ভিত্তিতে ভোলা জেলা বাংলাদেশের ১৫তম বৃহত্তম জেলা। এই জেলার মোট আয়তন ৩৪০৩.৪৮ বর্গ কিলোমিটার, যা সমগ্র বাংলাদেশের মোট আয়তনের ২.২৯%। ভোলা জেলা ২১০৫র্৪ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২২০র্৫ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০০৩র্৪ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯১০০র্১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। জেলার উত্তরে লক্ষ্মীপুর ও বরিশাল জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা এবং পশ্চিমে পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলা।

নামকরণের ইতিহাস

ভোলা নামকরণের পেছনে স্থানীয়ভাবে একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। ভোলা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বেতুয়া খালটি বর্তমান সময়ের মতো এমন অপ্রশস্ত ছিল না। এক সময় এটি পরিচিত ছিল বেতুয়া নদী নামে। খেয়া নৌকার সাহায্যে নদী পারাপার চলতো। খুব বৃদ্ধ এক মাঝি এখানে খেয়া নৌকায় লোকজন পারাপারের কাজ করতেন। তার নাম ছিল ভোলা গাজী পাটনী। আজকের যোগীর খালের কাছেই তার আস্তানা ছিল। এই ভোলা গাজীর নামানুসারেই একসময় স্থানটির নামকরণ করা হয় ভোলা। আবার অনেকে বলেন, ভোলা গাজী ছিলেন বিখ্যাত ধর্মসাধকের নাম। এই ধর্মসাধকের নামানুসারে দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে ভোলা।

প্রশাসনিক পটভূমি

আনুমানিক ১২৬৫ সালের দিকে বঙ্গোপসাগরের পলি দিয়ে দ্বীপটি গড়ে উঠতে শুরু করে। ১৩০০ সালের দিকে আশপাশের অঞ্চলের লোকজন এসে চাষাবাদ শুরু করে এবং তখন থেকেই এখানে স্থায়ী বসতি গড়ে উঠতে থাকে। ১৫০০ সালের দিকে পতর্ুগীজ জলদসু্যরা এসে এখানে ঘাঁটি স্থাপন করে। এরপর আসে বর্গী-ফিরিঙ্গিরা। মোঘল আমলে সুবেদার শায়েস্তা খান ও তার পুত্র উমেদ খান বর্গী ও মগদের পরাজিত ও বিতাড়িত করেন। পুরো মোঘল আমলে এই অঞ্চল দক্ষিণ শাহবাজপুর পরগনা হিসেবে জমিদার-জোতদার দ্বারা শাসিত হতো। ইংরেজ আমলে বাকেরগঞ্জ জেলা গঠিত হলে (১৭৯৭) দক্ষিণ শাহবাজপুর তার অন্তভর্ুক্ত হয়। ১৮৩৫ সালে ভোলা (দক্ষিণ শাহবাজপুর) মহকুমায় উন্নীত হয়। ১৮৭৬ সালের ৮ মে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের ফলে মহকুমার সদরের প্রায় সবাই নিহত হয়। এরপর দৌলত খান থেকে বর্তমান ভোলায় মহকুমা সদর দপ্তর স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮৪ সালে ভোলা বিভক্তির সময় ১ ফেব্রুয়ারি ভোলা স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা লাভ করে। ভোলা জেলায় ৭টি উপজেলা, ৬২টি ইউনিয়ন, ৪৭৩টি গ্রাম রয়েছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে_ভোলা সদর, চরফ্যাশন, মনপুরা, লালমোহন, দৌলতখান, তজুমুদ্দিন ও বোরহান উদ্দিন।

জনসংখ্যা

জেলার মোট জনসংখ্যা ১৬,৭৬,৬০০ (২০০১ সালের হিসাবে), যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১.৩৬%, ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৯২ জন (প্রায়) জনসংখ্যার ৫১.১৭% পুরুষ, ৪৮.৮৩% মহিলা, ধর্মের ভিত্তিতে ৯৩.৪২% মুসলিম, ৬.৫% হিন্দু, ০.০৮% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

নদ-নদী

প্রধান নদ-নদীগুলো হচ্ছে_মেঘনা, তেঁতুলিয়া, শাহবাজপুর, বোয়ালিয়া।

জলবায়ু

বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৩৬০ মিমি।

দর্শনীয় স্থানসমূহ

উলেস্নখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে_ শাহবাজপুর গ্যাস উত্তোলন কেন্দ্র, মনপুরা দ্বীপ, কবি মোজাম্মেল হকের তোরণ, উজির আলী শাহ'র দরগা শরীফ।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর আর মৌজার হাট এসে নদীপথে লঞ্চে ইলিশা হয়ে ভোলা যাওয়া যায়। সময় লাগে প্রায় ৮ ঘণ্টা। নদীপথে ঢাকার সদরঘাট হয়ে সরাসরি ভোলা যাওয়া যায়।

সংগ্রহঃ ইত্তেফাক

0 comments:

Post a Comment