Sunday, January 23, 2011

কাঁধের পেশির সমস্যায় করণীয়

0 comments
কাঁধে চারটি গুরুত্বপূর্ণ পেশি থাকে। পেশি এবং এদের টেনডনকে (যে অংশ দিয়ে হাড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে) একত্রে রোটাটর কাফ বলে। রোটাটর কাফ কাঁধের জয়েন্টকে আবৃত করে রাখে। কাঁধের পেশি ও টেনডন বা রোটাটর কাফ কাঁধের হাড় স্ক্যাপুলাকে বাহুর হাড়ের (হিউমেরাস) সঙ্গে যুক্ত করে। কাঁধের পেশি কাঁধের জোড়ার বিভিন্ন ধরনের নড়াচড়া প্রদান করে এবং হাতের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করে। শরীরের বিভিন্ন জোড়ার মধ্যে কাঁধের জোড়ায় সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া হয়। ফলে পেশি ও টেনডন বিভিন্ন রোগ এবং ইনজুরিতে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি। পেশি ও টেনডন উভয়েরই ইনজুরি হয় তবে টেনডনের বেশি হয় এবং একে রোটাটর কাফ ইনজুরি বলে। যখন টেনডন ইনজুরি বা রোগে আক্রান্ত হয়, তখন পেশি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না ।

কাঁধের পেশির সমস্যা বা ইনজুরির কারণসমূহ :

পেশির ট্রমা বা আঘাত একাকী হতে পারে বা জোড়ার ডিসপ্লেসমেন্ট ও হাড় ভাঙার সঙ্গে হতে পারে। কাঁধে সরাসরি আঘাত বা কাঁধে পড়লে।

বহুদিন ধরে পেশির অতিরিক্ত ব্যবহার। পুনরাবৃত্তি কাজ যেমন ক্রিকেট খেলা, টেনিস খেলা, ওয়েট লিফটিং ও বেসবল। ব্যবহারজনিত ক্ষয় হয় সাধারণত ৪০ বছর ঊধর্ ৩০ বছরের কম বয়সীদের পেশি ইনজুরি হয় আঘাতের কারণে। ভাঙা হাড় ঠিকমতো জোড়া না লাগলে পেশি ইনজুরি হয়। আর্থ্রাইটিসের কারণে অতিরিক্ত হাড় হলে পেশি দুর্বল এবং ইনজুরি হয়।

বার্সাইটিস ও আর্থ্রাইটিস হয়ে জয়েন্ট স্পেস কমে গেলে পেশি দুর্বল ও ইনজুরি হয়। জোড়ার স্থানচুত্যির চিকিৎসা না নিলে পেশি শুকিয়ে যায় এবং দুর্বল ও ইনজুরি হতে থাকে।

কাঁধের পেশি সমস্যার লক্ষণসমূহ :

কাঁধের পেশি বা রোটাটর কাফের সমস্যার প্রথম লক্ষণ হলো ব্যথা। ব্যথা সাধারণত কাঁধের উপরিভাগে এবং বাহুতে অনুভূত হয়। কখনো কখনো ব্যথা কনুই পর্যন্ত যায়। কাঁধের পেশি শুকিয়ে যায় এবং পেশি দুর্বল হয়। হাত উপরে তুলতে ব্যথা হয় বা উপরে উঠানো যায় না। িহাত উপর থেকে নিচে নামাতে ব্যথা হয়। কখনও হাত উপরে ধরে রাখা যায় না এবং হঠাৎ করে নিচে পড়ে যায়। হাত দিয়ে ওজন তোলা যায় না।

কাঁধে কাত হয়ে ঘুমালে ব্যথা হয় এবং ব্যথার জন্য ঘুম ভেঙে যায়। ব্যথা ও পেশি দুর্বলতার জন্য পিঠ চুলকানো, চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ানো, জামার বোতাম লাগানো ইত্যাদি করা খুবই কষ্টকর। কাঁধে কোনো একটি নির্দিষ্ট নড়াচড়ায় ক্রিপিটাস বা ক্রেকলিং সেনসেশন হয়। আঘাতের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যথা শুরু হয় কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পুনরাবৃত্তি কাজ বা অতিরিক্ত কাজের জন্য ব্যথা চলতে থাকে। ব্যথা প্রথমে অল্প থাকে এবং পরে বাড়তে থাকে এবং শেষে বিশ্রাম অবস্থায়ও ব্যথা হয়।

চিকিৎসা বা করণীয় : কাঁধের পেশির চিকিৎসা নির্ভর করে এর সমস্যার কারণের ওপর এবং ইনজুরির কারণ ও তীব্রতার ওপর। অধিকাংশ সমস্যা ও ছোট ইনজুরি বা টিয়ার মেডিক্যাল বা কনজারভেটিভ চিকিৎসায় ভালো হয় এবং বড় ধরনের ইনজুরি বা টিয়ারের জন্য সার্জিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তবে সঠিকভাবে রোগনির্ণয় এবং ইনজুরি বা টিয়ারের তীব্রতা বের করতে রোগের লক্ষণসমূহ, রোগীকে ভালোভাবে পরীক্ষা এবং কিছু ল্যাবরেটরি (এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাফী ও এম,আর,আই) পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসা (কনজারভেটিভ) :

বিশ্রাম এবং আর্ম সিলিং বা ইলবো বেগ ব্যবহার করা। গরম ও ঠাণ্ডা সেঁক - প্রতি ঘণ্টায় দশ মিনিট। স্ট্রেসিং ও পেশি শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। ফিজিক্যাল থেরাপি - এস ডবি্লউটি,ইউএসটি ব্যবহারে ব্যথা কমে আসে ।

বেদনানাশক ওষুধ সেবন। স্টেরয়েড ইনজেকশনে উপসর্গ সাময়িক লাঘব হয়।

আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি :

কনজারভেটিভ চিকিৎসায় ভালো না হলে, অতিরিক্ত হাড় হলে, জয়েন্ট স্পেস কমে গেলে এবং বড় ধরনের ইনজুরি বা টিয়ার হলে অপারেশন করাতে হয়। দীর্ঘদিন কাঁধ বিনা চিকিৎসায় থাকলে কাঁধের পেশি দুর্বল হয়, কাঁধ শক্ত হয়ে যায় এবং আর্থ্রাইটিস হয়ে জয়েন্ট নষ্ট হয়। বর্তমানে আর্থ্রোস্কোপ ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে কাঁধে প্রবেশ করিয়ে: ইনজুরির আকৃতি, ছোট বা বড় এবং অবস্থান নির্ণয় করা হয় এবং এনকোর সুসার দ্বারা সেলাই করে হাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।

আর্থ্রাইটিসের কারণে অতিরিক্ত হাড় সেভিং বা বের করা হয়। বার্সাইটিস ও আর্থ্রাইটিস হয়ে জয়েন্ট স্পেস কমে গেলে বিসংকোচন করা হয়।

৪. অনেক সময় ছোট ছিদ্র বা স্মল টিয়ার বা বড় ছিদ্র সেলাই করা সম্ভব না হলে শুধু বিসংকোচন করা হলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। কখনো কখনো বড় ধরনের ইনজুরির ক্ষেত্রে টেনডন বা পেশি ট্রান্সফার করা হয়।

অপারেশনের পর নিয়মিত ও পরিমিত পরিচর্যার (রিহেবিলিটেশন) মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে।

ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
ডিজিল্যাব মেডিক্যাল সার্ভিসেস,
মিরপুর, ঢাকা। ফোন : ০১৭৪৬-৬০০৫৮২

0 comments:

Post a Comment