Tuesday, January 25, 2011

রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির

0 comments
কলাপাড়া উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। সৈকতের কাছেই উপজাতি রাখাইন সম্প্র্রদায়ের কেরানীপাড়া। এ পাড়ার বাসিন্দারা অতিথিপরায়ণ। তাদের সম্মান দেখালে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাতে নিয়ে যায় তাদের পাড়া-মহল্লা। সেখানেই আছে সীমান বৌদ্ধ মন্দির। কেরানীপাড়ার পাশে খানিকটা উঁচু টিলার উপর এর অবস্থান। জুতা খুলে ঢুকতে হয় মন্দিরে। মন্দিরের ভেতরে স্থাপিত রয়েছে নবম ধাতুর তৈরি সাড়ে ৩৭ মণ ওজনের ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধ দেবের মূর্তি। জানা গেছে, মন্দিরের নির্মাণ সৌন্দর্যে চীনের স্থাপত্য অনুসরণ করা হয়েছে। দেখে মনে হবে থাইল্যান্ড বা মিয়ানমারের কোনো মন্দির। মন্দিরের ভেতরে ভাবগম্ভীর পরিবেশ। বেদির সামনে জ্বলছে আগরবাতি আর মোমবাতি। এর পাশে ত্রিপিটকসহ অন্যান্য উপাসনার সামগ্রী বেদির ওপর সাজানো রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন ফুট উঁচু বেদির ওপর মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের আড়াই হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে ৮৩ বছর আগে এ নবম ধাতুর মূর্তিটি ওই স্থানে স্থাপন করা হয়। পৌনে ৭ ফুট উচ্চতার এ বৌদ্ধ মূর্তিটি স্থাপন করেন উপেংইয়া ভিক্ষু। তখন মন্দিরের দায়ক ছিলেন বাছিন তালুকদার। তৎকালীন সময় তিনি এ অঞ্চলের উপজাতি রাখাইন সম্প্রদায়ের তেজস্বী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বাছিন তালুকদার ২০০০ সালে মারা যান। এরপর তার বড় ছেলে মংচুমিং তালুকদার মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব পান।

কুয়াকাটা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে আরেকটি উপজাতি রাখাইন সস্প্রদায়ের বসতি মিস্ত্রিপাড়া। এ পাড়ায় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি রয়েছে। এ মূর্তিটির উচ্চতা ৩৫ ফুট। এ মন্দিরের সামনেই সিমেন্ট দিয়ে দুটি বাঘ তৈরি করা হয়েছে। দেখে মনে হয় যেন জীবন্ত ওই বাঘ দুটি মন্দিরকে পাহারা দিচ্ছে। কুয়াকাটা যাওয়ার পথেই সবচেয়ে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজনের ঘনবসতি আমখোলাপাড়া নজরে পড়বে। এটিও একটি চমৎকার বৌদ্ধ বিহার। এখানেও ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬-১৭টি বুদ্ধ মূর্তি রয়েছে। এ পাড়ায় শতাধিক রাখাইন পরিবার বসবাস করছে। উপজাতি রাখাইনদের জীবনযাত্রা দেখতে হলে এ পাড়াটিই হচ্ছে আদর্শপাড়া। এ পাড়ায় রাখাইন নারীদের তাঁত বুনুন, পিঠা তৈরিসহ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি-কৃষ্টি সম্পর্কে জানা যায়। কুয়াকাটা সংলগ্ন কেরানীপাড়ার প্রবীণ রাখাইন আদিবাসী অংকুজা তালুকদার জানান, আমরা রাখাইন সম্প্রদায় দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার আদিবাসী। সমুদ্র উপকূলবর্তী পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, কুয়াকাটা, রাঙ্গাবালি, পার্শ্ববর্তী উপজেলার তালতলী এলাকায় প্রথম বসতি গড়েছি। তার আগে এলাকাটি ছিল দুর্গম গভীর বনজঙ্গলে ঘেরা। ওই জঙ্গলে ছিল বাঘ, ভালুকসহ হিংস্র শ্বাপদকূলের অবাধ বিচরণ। বন্য হিংস্র প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের লেজা, সড়কি, ছেনা নিয়ে দিনরাত পাহারা দিতে হতো।

আদিবাসী রাখাইন সম্প্র্রদায়ের লোকজনই এ জনপদে প্রথম বসতি স্থাপন গড়ে। সাধারণত এ এলাকার লোকজনের কাছে এরা 'মগ' নামে পরিচিত। মগরা পর্তুগিজ জলদস্যুদের সঙ্গে কোনো একসময় উপকূলবর্তী এলাকায় লুটপাট চালাত। রাখাইন আসলে মগ নয়। এ নামে তাদের কেউ সম্বোধন করলে তারা খুব অপমান বোধ করে।

কলাপাড়া বুড্ডিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রবীণ নেতা বাবু উসুয়ে হাওলাদার জানান, আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায় এ উপকূল এক সময় আবাদ করে মানুষের জন্য বাসোপযোগী করে তুললেও আজ আমরা অবহেলিত। বাঙালি ভূমিদস্যুদের দখলের কারণে আমাদের এলাকা ছাড়তে হচ্ছে। দিন দিন আমাদের ঐতিহ্য এবং অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। সরকারের উচিত আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব রক্ষা করা।

উত্তম কুমার হাওলাদার, কলাপাড়া

0 comments:

Post a Comment