Friday, January 28, 2011

ধনুক

0 comments
ধনুবিদ্যা অর্থাৎ ধনুক দিয়ে তীর ছোড়া হলো মানুষের প্রাচীন কলাকৌশলের অন্যতম। প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই ধনুক ছিল যুদ্ধ ও শিকারের প্রধান অস্ত্র। যদিও ১৫ শতাব্দীতে যুদ্ধক্ষেত্রে ধনুকের ব্যবহার লুপ্ত হয়, তবুও শিকারের অস্ত্র হিসেবে এর ব্যবহার অক্ষুণ্ন থাকে। শুরুতে ধনুক তৈরি হতো সাধারণত কাঠ দিয়ে কিন্তু পরবর্তী সময়ে কাঠসহ অন্যান্য অনেক বস্তুর ব্যবহার শুরু হয়। এগুলোকে বলা হয় কম্পোজিট বা যৌগিক ধনুক। ১৯৫০-এর দশকের পর ক্রীড়াযন্ত্র হিসেবে ক্রসবো অর্থাৎ আড় ধনুকের ব্যবহার শুরু হয়। ঠিক তখন থেকেই ধনুকের ছিলারও (দড়ি) অনেক পরিবর্তন ঘটে। ধনুকের ছিলার উপকরণগুলোর মধ্যে রয়েছে পশুর গায়ের লোম, শাকসবজির আঁশ, শন, রেশম, লিনেন পাক দেওয়া তন্ত্র এবং পশুর চামড়া, বাঁশ বা বেতের ফালি। তখন থেকেই ধীরে ধীরে বিকাশের মাধ্যমে তীরের উদ্ভব হয়। আগে যে তীর ব্যবহার করা হতো তা সম্ভবত কোনো ধরনের নলখাগড়া বা ক্রেন দিয়ে তৈরি হতো। তীর দিয়ে বিদ্ধ করার জন্যও তীরের অগ্রভাগে ধাতু বা পাথরের ফলার ব্যবহার করা হতো। লৌহ ও ইস্পাত আবির্ভাবের পর তীরের বিভিন্ন রকম ডিজাইন বিকাশ লাভ করে। দীর্ঘ ধনুকের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংগঠিত আধুনিক ক্রীড়া হিসেবে ধনুবিদ্যা ক্রীড়ার সূত্রপাত ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে লাটুকেটে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা হয় তখন থেকেই আন্তর্জাতিক ধনুবিদ্যা প্রতিযোগিতার সূত্রপাত ঘটে। প্রতিযোগিতা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক আরচারি ফেডারেশন গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরুষদের জন্য দীর্ঘতম দূরত্ব হলো ৯০ মি. (৯৮.৪ গজ) এবং স্ত্রীলোকদের জন্য ৭০ মি. (৭৬.৫ গজ)। এ ক্রীড়ার প্রতি পৃথিবীব্যাপী আগ্রহ বেড়ে যাওয়ার ফলে ১৯৬৯ সালে ফিল্ম আরচারিকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং দীর্ঘতম তীর ছোড়ার দূরত্ব স্থির করা হয় ৬০ মি. (৬৫.৬ গজ) এবং চারটি লক্ষ্যস্থলের বৃহত্তমটির আকৃতি স্থির করা হয় ৬০ সে. মি.। বিংশ শতাব্দীর প্রথম-তৃতীয়াংশে ইউরোপে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে টার্গেট আরচারি একটি জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে প্রচলিত হয়। ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীরা আসত ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইডেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও চেকোস্লোভাকিয়া থেকে। ১৯০০, ১৯০৪, ১৯০৮, ১৯২০ সালে আরচারি অলিম্পিক প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারপর পুনরায় ১৯৭২ সালের অলিম্পিক ক্রীড়ায় আবার এটি প্রচলিত হয়।

-প্রীতম সাহা সুদীপ

0 comments:

Post a Comment