সুদূর ইতালির নেপলসের মানুষ তিনি। অথচ বাংলাদেশের পথশিশুদের সঁপেছেন তাঁর মনপ্রাণ। গড়েছেন ‘পথশিশু সেবা সংগঠন’ নামের ছোট্ট একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গরিব মানুষের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হতেই বেছে নিয়েছেন বস্তির হতদরিদ্র জীবন। পরিচিত হোন লুসিও বেনিনাতির সঙ্গে।
লুসিও ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার বায়না ধরে ভালো ফ্যাসাদে পড়েছি। রাস্তার দুই পাশের ল্যাম্পপোস্টে বাতি নেই। বড় রাস্তা থেকে ভেতরে চলে গেছে যে সরু গলি, সেখানে রীতিমতো ঘুটঘুটে অন্ধকার। দুজন মানুষ পাশাপাশি হাঁটার উপায় নেই। এবড়োথেবড়ো অন্ধকার পথ। দুই পাশে নানা বয়সী মানুষ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে। লুসিও ভাইয়ের সেসব দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। ধোঁয়াটে এঁদো গলির ভেতর হনহনিয়ে চলেছেন তিনি। রাস্তার ওপর রান্না শুরু করেছে এক পরিবার। ‘তুমি কি রান্না করছ?’ রাঁধুনি মেয়েটির কাছে জানতে চান লুসিও। ‘ভাত খায়া যান লুসিও ভাই।’ চট করে বলে মেয়েটিও। ‘তুমি সত্যি বলছ? কি সৌভাগ্য আমার।’ হাসতে হাসতে লুসিও বললেন বটে, কিন্তু তাঁর হাঁটার গতি শ্লথ হয়নি এক ফোঁটাও। বুঝে নিতে হয়, এই ত্বরিত রসিকতা তাঁর প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিত্যদিনকার ভাববিনিময়ের অংশ। রাস্তা তখনো শেষ হয়নি। দু-দুটো নেড়ি কুকুর, শখানেক বাচ্চাকাচ্চা আর গোটাবিশেক ঘরবাড়ি পেরিয়ে খাবি খেতে খেতে যে জায়গাটায় এসে থামি, সেখানেও কোনো আলো নেই। অন্ধকারের ভেতর লুসিও ভাই অনেকক্ষণ খুটখাট করার পর শেষমেশ একটা বাতি জ্বলে। বেড়ার দরজা খুলে তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলেন। খুপড়িঘরের ভেতরটা দেখলে সত্যিই চোখে পানি আসে। ছোট একটা চৌকির ওপর তোশক পাতা। তেলচিটচিটে একটা বালিশ এক কোনায়। ঘরে বাকি আসবাব বলতে একটা পুরোনো বেতের শেলফ আর একটা টেবিল ফ্যান। মাথার ওপর রশিতে একটা পাকা কলার কাঁধি ঝুলছে। সেই সুদূর ইতালি থেকে এসে এমন হতদরিদ্র জীবন কেন বেছে নেবে একজন মানুষ? চোখ কচলে আরও একটু ঠাহর করে দেখতে ইচ্ছে করে।
লুসিও ভাই নিজে অবশ্য কোনো রকম আমলই দেন না ব্যাপারটাকে। ‘সারা দিন আমি গরিব বাচ্চাদের মধ্যে থাকি। ওদের সেবা দিই। একটু চিকিত্সা করি। লেখাপড়া করাই। আর রাতে যদি আমি দালানকোঠায় গিয়ে থাকি তাহলে ওদের দুঃখ আমি কেমন করে বুঝব?’ তাঁর উল্টো প্রশ্ন।
বাতিল কাগজ কুড়িয়ে, আঁস্তাকুড়ের ময়লা ঘেঁটে, সদরঘাটে কিংবা কমলাপুরে মিনতির কাজ করে জীবন কাটে যাদের, যাদের দেখার কেউ নেই, তাদের জন্য তিনি সঁপেছেন নিজের সব। ঢাকার পথশিশুরা জানে, লুসিও ভাইয়ের আগমন মানেই মহা আনন্দময় এক উপলক্ষ। এমনকি লুসিও ভাই নামটাও তাদের দেওয়া। মানুষটার গায়ের রং তাদের মতো নয়। বাংলা শিখেছেন তিনি বহু সাধ্য সাধনা করে। কিন্তু এই লুসিও ভাইই বুঝতে পারেন তাদের অন্তরের ব্যথা। শরীরের ঘা, খোসপাঁচড়া আর আঘাত নিয়ে ওরা যখন কাতরায় তখন এই সাদা মনের সাদা মানুষটিই এসে দাঁড়ান ওদের পাশে।
নেপলসের জীবন
ব্রাদার লুসিও বেনিনাতির জন্ম ইতালির নেপলসে। আট ছেলে আর দুই মেয়ের সংসার টানতে একটু কষ্টই হতো বাবা এলিও আন্তোনিয়েত্তার। দোকানের সাইনবোর্ড বানাতেন তিনি। মা ছিলেন গৃহবধূ। নয় বছর বয়স থেকেই নিজের খরচ নিজেই চালাতে দোকানে কাজ করতে শুরু করেন লুসিও। তারপর উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য চলে যান মিলান। কাজ আর পড়া দুটো একসঙ্গে চালিয়েই সফলভাবে শেষ করলেন ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডিপ্লোমা নেওয়ার কাজ। সেসবের পাট চুকিয়ে ২২ বছর বয়সে বাধ্য হয়েই যোগ দিতে হলো সেনাবাহিনীতে। কিন্তু গুলিবারুদের গন্ধ ভালো লাগল না বেশি দিন। ইংরেজি ১৯৭৮ সাল সেটা। তখনই তাঁকে পেয়ে বসে মানুষের জন্য কিছু করার ভাবনা।
এরই মধ্যে প্রেম হয়েছে মার্গারিথার সঙ্গে। হ্যাঁ, শুধুই প্রেম। তার বেশি কিছু নয়। নিজের মনোবাসনা লুসিও একদিন বললেন মনের মানুষ মার্গারিথাকে। মার্গারিথা মানতে পারলেন না কিছুতেই। কিন্তু লুসিও তার সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন। শিগগিরই মার্গারিথার বিয়ে হয়ে গেল অন্যত্র। আর লুসিও যোগ দিলেন নার্স মানে সেবকদের প্রশিক্ষণ শিবিরে। কুষ্ঠ রোগের চিকিত্সা বিষয়েও নিলেন সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ। এবার শুধু মানুষের সেবায় মনপ্রাণ সঁপে দেওয়ার পালা।
ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ নামটা মিলানে কি নেপলসে বসেই শুনেছিলেন লুসিও। জানতেন, ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে লণ্ডভণ্ড হয় এই দেশ। আরও বেশ কয়েক বছর পরে জানলেন, বাংলাদেশ শুধু ঘূর্ণিঝড়ের দেশ নয়, ধর্মীয় সম্প্রীতিরও দেশ। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে আছে সদ্য জন্ম নেওয়া এই স্বাধীন দেশটিতে।
১৯৮৮ সালে লুসিও প্রথম পা রাখলেন আমাদের বাংলাদেশে। দেখলেন চারদিকে কেবল মানুষ আর মানুষ। খুব একটা ‘বিশৃঙ্খলা’ মনে হলো চারদিকে। দেখলেন একদিকে পথের পাশে শুয়ে ঘুমায় মানুষের সন্তান। অন্যদিকে সুরম্য অট্টালিকার সারি।
সেবার তিনি দিনাজপুর-ময়মনসিংহের রেলস্টেশনগুলোতে ছিন্নমূল গরিব বাচ্চাদের জন্য কাজ করলেন বেশ কিছু দিন। তারপর ডাক এল ব্রাজিল থেকে। ১৯৯৪ সালে পাড়ি জমালেন ব্রাজিলের সাওপাওলো। ওখানকার অবস্থা হয়তো আরও করুণ মনে হয়েছিল তাই। বহু বস্তি আছে সেখানে। রাস্তাঘাটে রাত-দিন কাটে অগণন শিশু-কিশোরদের। তার চেয়ে ভয়ানক কথা, ওদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো ক্ষতিকর নেশায় আসক্ত। লুসিও ওদের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হলেন যেন। সাত বছরের মতো সময় কাজ করার পর লুসিও ব্রাজিলের পথশিশুদের দেখার ভার তুলে দিলেন তাঁর সহকর্মীদের হাতে। মনে পড়ল বাংলাদেশকে, যেখানে অনেক অসমাপ্ত কাজ ফেলে এসেছেন তিনি। ব্রাজিল থেকে এলেন ভারতে। আশা বাংলাদেশে আসার। কিন্তু ভিসা মিলল না। দুই বছর চেষ্টার পর ২০০৬ সালের মে মাসে মিলল অনুমতি। এবার বেশ আটঘাট বেঁধেই নামলেন কাজে। প্রথম চার মাস অন্য কিছু নয়, শুধু বাংলা শিখলেন মণিপুরিপাড়ার একটি স্কুলে। পরের বছর তিনি শুরু করলেন তাঁর পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ।
লঞ্চঘাটে একদিন
মহা শোরগোল পড়ে গেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। এদিক-সেদিক জটলা করছিল যেসব ছেলেপিলের দল তারা ভোঁ দৌড় দিয়ে আসছে। নাকের সিকনি মুছতে মুছতে বোনকে কোলে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে একজন। কুলির কাজ করে যেসব বালক, তারাও ছুটছে গাট্টি-বোঁচকা টানাটানির কাজে ইস্তফা দিয়ে। লুসিও ভাই তখন সবে তাঁর ওষুধপথ্যের ব্যাগটা নিয়ে নেমেছেন টার্মিনালের সামনে। টার্মিনালের একটা কোনায় নিজের মালপত্র রাখতে না রাখতেই তাঁকে ঘিরে বাচ্চাদের ভিড়। হইচই, চিল্লাচিল্লি। লুসিও এরই মধ্যে ত্রস্ত হস্তে কাজ করে চলেছেন। তাড়া দিচ্ছেন সঙ্গী স্বেচ্ছাসেবকদের, ‘ছিঃ ছিঃ তোমরা এত দেরি করে আসলে কেন? বাচ্চারা অপেক্ষা করছে।’
মিনিট দশেকের মাথায় লাল সুতো দিয়ে টার্মিনালের একটা কোনা ঘিরে ফেলা হয়। রশির সঙ্গে ছোট ব্যানার। ‘পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ চলছে।’ চার কোনায় চারটা তেরপল বিছিয়ে গোল হয়ে বসে যায় ওরা সবাই। থলে থেকে বেরোয় রংবেরঙের খেলনা। রং পেনসিলের বাক্স। অ আ ক খ শেখার রংদার ছবিওয়ালা বই। ওরা কেউ পড়ে, কেউ রং পেনসিল দিয়ে আঁকিবুঁকি করে। লুসিও তাঁর ওষুধপথ্যের বাক্স খুলে বসে যান আরেক পাশে। পয়লা নম্বর রোগীর নাম আল-আমিন। কোথায় যেন কেটে গেছে ১০ কি ১২ বছর বয়সী আল-আমিনের পা। লুসিও শুরুতে তুলো দিয়ে পরিষ্কার করেন ক্ষতস্থান। তারপর কি যেন একটা মলম লাগান। এসবের ফাঁকেই বাচ্চা বয়সী একজন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। গলায় মধু ঢেলে ডাকলেন, ‘এই যে ছোট ভাইয়া, আসো। কাছে আসো।’
প্রাপ্তবয়স্ক বেশ কয়েকজন কৌতূহলী হয়ে উঁকি দিচ্ছিল। তাদের দিকে আবার হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গি, ‘ভাইয়া, দইয়া করেন। এখন যান। আমাদের জন্য অসুবিধা হয়। একটু দইয়া করেন। এটা শুধু বাচ্চাদের জন্য।’
আল-আমিন চিকিত্সা নিয়ে চলে যাচ্ছিল। লুসিও আবার তাকে হাত ধরে বসান। ‘তুমি কৃমির ঔষধ খেয়েছ? কত দিন আগে?’ আল-আমিন মাথা ঝাঁকায়। সে এক মাস আগে খেয়েছে। পরের রোগীর নাম রাজু। চার কি পাঁচ বছর বয়স। পরনে একটা ছেঁড়া হাফপ্যান্ট। পিঠে বড়সড় একটা ক্ষত।
লুসিও কি একটা ওষুধ লাগাতেই প্রথমে ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলে রাজু। তারপর লুসিও কানে কানে কি একটা বলতেই পোকায় খাওয়া সব দাঁত বের করে হেসে ফেলে সে। ‘কৃমির ঔষধ খেয়েছ?’ রাজু কি বুঝে কে জানে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ে। লুসিও তার পেট টিপেটুপে দেখেন। ‘না। তুমি খাও নাই তো।’ লুসিও মৃদু তিরস্কার করেন রাজুকে কোলে বসিয়ে। রাজুর নাকেমুখে কালিঝুলি লেপটে আছে। সিকনির দাগ শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে ঠোঁটের ওপর। লুসিও ভেজা একটা ফেসিয়াল টিস্যু দিয়ে ধীরেসুস্থে ঘষেঘষে পরিষ্কার করেন সব। তারপর পিঠ চাপড়ে রাজুকে বিদায় করে পরের রোগীকে ডাকেন।
পথশিশু সেবা
সপ্তাহে ছয় দিন বিজয় সরণি, কমলাপুর রেলস্টেশন, মোহাম্মদপুর, সদরঘাট, সংসদ ভবন এলাকায় এভাবইে কাজ করেন লুসিও। তাঁর দেখাদেখি অনেক বালাদেশি তরুণ-তরুণীও নাম লিখিয়েছে পথশিশু সেবা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের খাতায়।
‘বছর কয়েক আগের ঘটনা সেটা। কারওয়ান বাজার এলাকায় একটা ছেলে আমাদের কাছে এল। ছেলেটার সারা গায়ে ঘা। সেখান থেকে পুঁজ ঝরছে। বিকট গন্ধের কারণে তার কাছে ঘেঁষা যায় না। আমরা সবাই তাকে দেখে হকচকিয়ে গেছি। লুসিও বেনিনাতি কোনো রকম দস্তানা ছাড়া তার ঘা স্পর্শ করলেন। লম্বা সময় নিয়ে সব জায়গায় ওষুধ লাগালেন। তারপর চুমো খেলেন ছেলেটার কপালে। এই ঘটনা এখনো আমার চোখে ভাসে। একটা মানুষ কেমন করে আরেকটা মানুষকে এত ভালোবাসতে পারে?’ বলছিলেন আখতার হোসেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক তিনি। রাস্তার গরিব বাচ্চাদের জন্য লুসিওর হূদয়ের উষ্ণতা ছুঁয়ে গেছে তাঁকে। লুসিওকে দেখে উত্সাহি হয়েই প্রায় দুই বছর তিনি কাজ করছেন পথশিশু সেবা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। এ রকম ৬০-৭০ জন স্বেচ্ছাসেবকের শ্রমেই চলে পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ। এই বাংলাদেশেরই দরদি একজন মানুষ রেজাউল করিমের কাছ থেকে ছোট একটা ঘর পেয়েছেন লুসিও। ঠিকানা মণিপুরিপাড়া। সেটাই পথশিশু সংগঠনের অফিস। pothoshishu.sheba@gmail.com এই ঠিকানায় যোগাযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবক হতে ইচ্ছুকেরা। শিশুদের সঙ্গে গল্পগুজব করে তাদের মন ভালো রাখা, ওষুধপথ্য দেওয়া, খেলার ছলে শিক্ষা, প্রয়োজনে হাসপাতালে বা আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া—এসব কাজই করে পথশিশু সেবা সংগঠন।
সেবার সুখ
রাত নয়টার মতো বাজে। আগারগাঁও বিএনপি বস্তির ভেতরে লুসিও বেনিনাতির ঘর দেখে ফিরছি। কেন জানি মনটা একটু উথাল-পাথাল করছে। আমার মোটরসাইকেলের পেছনে বসেছেন লুসিও বেনিনাতি। একটু দোনোমোনা করে প্রশ্নটা করেই ফেলি লুসিওকে, ‘এই যে আপনি মানুষের ঘা আর খোসপাঁচড়া ঘাঁটেন, আসাদ এভিনিউতে নিজের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ ফেলে বস্তির ভেতর দীনহীন জীবন কাটান, আপনার খারাপ লাগে না?’
ঘা, খোসপাঁচড়া ঘেঁটে খারাপ লাগার বিষয়টা শুরুতে সম্ভবত তিনি বুঝে উঠতে পারেন না ঠিক। বেশ খানিক বোঝানোর চেষ্টার পর সব শুনে যেন কথায় পেয়ে বসে তাঁকে, ‘রাস্তাঘাটের এই অসহায় শিশুদের দেখে আমি বুঝতে পারি, আমাদের সমাজ অসুস্থ। সমাজ যখন অসুস্থ হয় তখনই ওদের মতো হাজারও শিশুর জন্ম হয়। সমাজের চিকিত্সা দরকার। কেউ মনে করে, বেশি সেবা পেলে সে বেশি ভালো থাকবে। ছয়টা কাজের লোক, তিনটা বাবুর্চি থাকলে সে বেশি বেশি সুখ পাবে। পকেটে অনেক বেশি টাকা থাকলে সে বেশি আনন্দ পাবে। আমি অন্য মানুষকে সেবা দিতে পারলে সুখ পাই। যত বেশি সেবা দিতে পারি তত বেশি সুখ পাই।’
লুসিও ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার বায়না ধরে ভালো ফ্যাসাদে পড়েছি। রাস্তার দুই পাশের ল্যাম্পপোস্টে বাতি নেই। বড় রাস্তা থেকে ভেতরে চলে গেছে যে সরু গলি, সেখানে রীতিমতো ঘুটঘুটে অন্ধকার। দুজন মানুষ পাশাপাশি হাঁটার উপায় নেই। এবড়োথেবড়ো অন্ধকার পথ। দুই পাশে নানা বয়সী মানুষ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে। লুসিও ভাইয়ের সেসব দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। ধোঁয়াটে এঁদো গলির ভেতর হনহনিয়ে চলেছেন তিনি। রাস্তার ওপর রান্না শুরু করেছে এক পরিবার। ‘তুমি কি রান্না করছ?’ রাঁধুনি মেয়েটির কাছে জানতে চান লুসিও। ‘ভাত খায়া যান লুসিও ভাই।’ চট করে বলে মেয়েটিও। ‘তুমি সত্যি বলছ? কি সৌভাগ্য আমার।’ হাসতে হাসতে লুসিও বললেন বটে, কিন্তু তাঁর হাঁটার গতি শ্লথ হয়নি এক ফোঁটাও। বুঝে নিতে হয়, এই ত্বরিত রসিকতা তাঁর প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিত্যদিনকার ভাববিনিময়ের অংশ। রাস্তা তখনো শেষ হয়নি। দু-দুটো নেড়ি কুকুর, শখানেক বাচ্চাকাচ্চা আর গোটাবিশেক ঘরবাড়ি পেরিয়ে খাবি খেতে খেতে যে জায়গাটায় এসে থামি, সেখানেও কোনো আলো নেই। অন্ধকারের ভেতর লুসিও ভাই অনেকক্ষণ খুটখাট করার পর শেষমেশ একটা বাতি জ্বলে। বেড়ার দরজা খুলে তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলেন। খুপড়িঘরের ভেতরটা দেখলে সত্যিই চোখে পানি আসে। ছোট একটা চৌকির ওপর তোশক পাতা। তেলচিটচিটে একটা বালিশ এক কোনায়। ঘরে বাকি আসবাব বলতে একটা পুরোনো বেতের শেলফ আর একটা টেবিল ফ্যান। মাথার ওপর রশিতে একটা পাকা কলার কাঁধি ঝুলছে। সেই সুদূর ইতালি থেকে এসে এমন হতদরিদ্র জীবন কেন বেছে নেবে একজন মানুষ? চোখ কচলে আরও একটু ঠাহর করে দেখতে ইচ্ছে করে।
লুসিও ভাই নিজে অবশ্য কোনো রকম আমলই দেন না ব্যাপারটাকে। ‘সারা দিন আমি গরিব বাচ্চাদের মধ্যে থাকি। ওদের সেবা দিই। একটু চিকিত্সা করি। লেখাপড়া করাই। আর রাতে যদি আমি দালানকোঠায় গিয়ে থাকি তাহলে ওদের দুঃখ আমি কেমন করে বুঝব?’ তাঁর উল্টো প্রশ্ন।
বাতিল কাগজ কুড়িয়ে, আঁস্তাকুড়ের ময়লা ঘেঁটে, সদরঘাটে কিংবা কমলাপুরে মিনতির কাজ করে জীবন কাটে যাদের, যাদের দেখার কেউ নেই, তাদের জন্য তিনি সঁপেছেন নিজের সব। ঢাকার পথশিশুরা জানে, লুসিও ভাইয়ের আগমন মানেই মহা আনন্দময় এক উপলক্ষ। এমনকি লুসিও ভাই নামটাও তাদের দেওয়া। মানুষটার গায়ের রং তাদের মতো নয়। বাংলা শিখেছেন তিনি বহু সাধ্য সাধনা করে। কিন্তু এই লুসিও ভাইই বুঝতে পারেন তাদের অন্তরের ব্যথা। শরীরের ঘা, খোসপাঁচড়া আর আঘাত নিয়ে ওরা যখন কাতরায় তখন এই সাদা মনের সাদা মানুষটিই এসে দাঁড়ান ওদের পাশে।
নেপলসের জীবন
ব্রাদার লুসিও বেনিনাতির জন্ম ইতালির নেপলসে। আট ছেলে আর দুই মেয়ের সংসার টানতে একটু কষ্টই হতো বাবা এলিও আন্তোনিয়েত্তার। দোকানের সাইনবোর্ড বানাতেন তিনি। মা ছিলেন গৃহবধূ। নয় বছর বয়স থেকেই নিজের খরচ নিজেই চালাতে দোকানে কাজ করতে শুরু করেন লুসিও। তারপর উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য চলে যান মিলান। কাজ আর পড়া দুটো একসঙ্গে চালিয়েই সফলভাবে শেষ করলেন ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডিপ্লোমা নেওয়ার কাজ। সেসবের পাট চুকিয়ে ২২ বছর বয়সে বাধ্য হয়েই যোগ দিতে হলো সেনাবাহিনীতে। কিন্তু গুলিবারুদের গন্ধ ভালো লাগল না বেশি দিন। ইংরেজি ১৯৭৮ সাল সেটা। তখনই তাঁকে পেয়ে বসে মানুষের জন্য কিছু করার ভাবনা।
এরই মধ্যে প্রেম হয়েছে মার্গারিথার সঙ্গে। হ্যাঁ, শুধুই প্রেম। তার বেশি কিছু নয়। নিজের মনোবাসনা লুসিও একদিন বললেন মনের মানুষ মার্গারিথাকে। মার্গারিথা মানতে পারলেন না কিছুতেই। কিন্তু লুসিও তার সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন। শিগগিরই মার্গারিথার বিয়ে হয়ে গেল অন্যত্র। আর লুসিও যোগ দিলেন নার্স মানে সেবকদের প্রশিক্ষণ শিবিরে। কুষ্ঠ রোগের চিকিত্সা বিষয়েও নিলেন সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ। এবার শুধু মানুষের সেবায় মনপ্রাণ সঁপে দেওয়ার পালা।
ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ নামটা মিলানে কি নেপলসে বসেই শুনেছিলেন লুসিও। জানতেন, ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে লণ্ডভণ্ড হয় এই দেশ। আরও বেশ কয়েক বছর পরে জানলেন, বাংলাদেশ শুধু ঘূর্ণিঝড়ের দেশ নয়, ধর্মীয় সম্প্রীতিরও দেশ। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে আছে সদ্য জন্ম নেওয়া এই স্বাধীন দেশটিতে।
১৯৮৮ সালে লুসিও প্রথম পা রাখলেন আমাদের বাংলাদেশে। দেখলেন চারদিকে কেবল মানুষ আর মানুষ। খুব একটা ‘বিশৃঙ্খলা’ মনে হলো চারদিকে। দেখলেন একদিকে পথের পাশে শুয়ে ঘুমায় মানুষের সন্তান। অন্যদিকে সুরম্য অট্টালিকার সারি।
সেবার তিনি দিনাজপুর-ময়মনসিংহের রেলস্টেশনগুলোতে ছিন্নমূল গরিব বাচ্চাদের জন্য কাজ করলেন বেশ কিছু দিন। তারপর ডাক এল ব্রাজিল থেকে। ১৯৯৪ সালে পাড়ি জমালেন ব্রাজিলের সাওপাওলো। ওখানকার অবস্থা হয়তো আরও করুণ মনে হয়েছিল তাই। বহু বস্তি আছে সেখানে। রাস্তাঘাটে রাত-দিন কাটে অগণন শিশু-কিশোরদের। তার চেয়ে ভয়ানক কথা, ওদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো ক্ষতিকর নেশায় আসক্ত। লুসিও ওদের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হলেন যেন। সাত বছরের মতো সময় কাজ করার পর লুসিও ব্রাজিলের পথশিশুদের দেখার ভার তুলে দিলেন তাঁর সহকর্মীদের হাতে। মনে পড়ল বাংলাদেশকে, যেখানে অনেক অসমাপ্ত কাজ ফেলে এসেছেন তিনি। ব্রাজিল থেকে এলেন ভারতে। আশা বাংলাদেশে আসার। কিন্তু ভিসা মিলল না। দুই বছর চেষ্টার পর ২০০৬ সালের মে মাসে মিলল অনুমতি। এবার বেশ আটঘাট বেঁধেই নামলেন কাজে। প্রথম চার মাস অন্য কিছু নয়, শুধু বাংলা শিখলেন মণিপুরিপাড়ার একটি স্কুলে। পরের বছর তিনি শুরু করলেন তাঁর পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ।
লঞ্চঘাটে একদিন
মহা শোরগোল পড়ে গেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। এদিক-সেদিক জটলা করছিল যেসব ছেলেপিলের দল তারা ভোঁ দৌড় দিয়ে আসছে। নাকের সিকনি মুছতে মুছতে বোনকে কোলে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে একজন। কুলির কাজ করে যেসব বালক, তারাও ছুটছে গাট্টি-বোঁচকা টানাটানির কাজে ইস্তফা দিয়ে। লুসিও ভাই তখন সবে তাঁর ওষুধপথ্যের ব্যাগটা নিয়ে নেমেছেন টার্মিনালের সামনে। টার্মিনালের একটা কোনায় নিজের মালপত্র রাখতে না রাখতেই তাঁকে ঘিরে বাচ্চাদের ভিড়। হইচই, চিল্লাচিল্লি। লুসিও এরই মধ্যে ত্রস্ত হস্তে কাজ করে চলেছেন। তাড়া দিচ্ছেন সঙ্গী স্বেচ্ছাসেবকদের, ‘ছিঃ ছিঃ তোমরা এত দেরি করে আসলে কেন? বাচ্চারা অপেক্ষা করছে।’
মিনিট দশেকের মাথায় লাল সুতো দিয়ে টার্মিনালের একটা কোনা ঘিরে ফেলা হয়। রশির সঙ্গে ছোট ব্যানার। ‘পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ চলছে।’ চার কোনায় চারটা তেরপল বিছিয়ে গোল হয়ে বসে যায় ওরা সবাই। থলে থেকে বেরোয় রংবেরঙের খেলনা। রং পেনসিলের বাক্স। অ আ ক খ শেখার রংদার ছবিওয়ালা বই। ওরা কেউ পড়ে, কেউ রং পেনসিল দিয়ে আঁকিবুঁকি করে। লুসিও তাঁর ওষুধপথ্যের বাক্স খুলে বসে যান আরেক পাশে। পয়লা নম্বর রোগীর নাম আল-আমিন। কোথায় যেন কেটে গেছে ১০ কি ১২ বছর বয়সী আল-আমিনের পা। লুসিও শুরুতে তুলো দিয়ে পরিষ্কার করেন ক্ষতস্থান। তারপর কি যেন একটা মলম লাগান। এসবের ফাঁকেই বাচ্চা বয়সী একজন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। গলায় মধু ঢেলে ডাকলেন, ‘এই যে ছোট ভাইয়া, আসো। কাছে আসো।’
প্রাপ্তবয়স্ক বেশ কয়েকজন কৌতূহলী হয়ে উঁকি দিচ্ছিল। তাদের দিকে আবার হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গি, ‘ভাইয়া, দইয়া করেন। এখন যান। আমাদের জন্য অসুবিধা হয়। একটু দইয়া করেন। এটা শুধু বাচ্চাদের জন্য।’
আল-আমিন চিকিত্সা নিয়ে চলে যাচ্ছিল। লুসিও আবার তাকে হাত ধরে বসান। ‘তুমি কৃমির ঔষধ খেয়েছ? কত দিন আগে?’ আল-আমিন মাথা ঝাঁকায়। সে এক মাস আগে খেয়েছে। পরের রোগীর নাম রাজু। চার কি পাঁচ বছর বয়স। পরনে একটা ছেঁড়া হাফপ্যান্ট। পিঠে বড়সড় একটা ক্ষত।
লুসিও কি একটা ওষুধ লাগাতেই প্রথমে ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলে রাজু। তারপর লুসিও কানে কানে কি একটা বলতেই পোকায় খাওয়া সব দাঁত বের করে হেসে ফেলে সে। ‘কৃমির ঔষধ খেয়েছ?’ রাজু কি বুঝে কে জানে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ে। লুসিও তার পেট টিপেটুপে দেখেন। ‘না। তুমি খাও নাই তো।’ লুসিও মৃদু তিরস্কার করেন রাজুকে কোলে বসিয়ে। রাজুর নাকেমুখে কালিঝুলি লেপটে আছে। সিকনির দাগ শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে ঠোঁটের ওপর। লুসিও ভেজা একটা ফেসিয়াল টিস্যু দিয়ে ধীরেসুস্থে ঘষেঘষে পরিষ্কার করেন সব। তারপর পিঠ চাপড়ে রাজুকে বিদায় করে পরের রোগীকে ডাকেন।
পথশিশু সেবা
সপ্তাহে ছয় দিন বিজয় সরণি, কমলাপুর রেলস্টেশন, মোহাম্মদপুর, সদরঘাট, সংসদ ভবন এলাকায় এভাবইে কাজ করেন লুসিও। তাঁর দেখাদেখি অনেক বালাদেশি তরুণ-তরুণীও নাম লিখিয়েছে পথশিশু সেবা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের খাতায়।
‘বছর কয়েক আগের ঘটনা সেটা। কারওয়ান বাজার এলাকায় একটা ছেলে আমাদের কাছে এল। ছেলেটার সারা গায়ে ঘা। সেখান থেকে পুঁজ ঝরছে। বিকট গন্ধের কারণে তার কাছে ঘেঁষা যায় না। আমরা সবাই তাকে দেখে হকচকিয়ে গেছি। লুসিও বেনিনাতি কোনো রকম দস্তানা ছাড়া তার ঘা স্পর্শ করলেন। লম্বা সময় নিয়ে সব জায়গায় ওষুধ লাগালেন। তারপর চুমো খেলেন ছেলেটার কপালে। এই ঘটনা এখনো আমার চোখে ভাসে। একটা মানুষ কেমন করে আরেকটা মানুষকে এত ভালোবাসতে পারে?’ বলছিলেন আখতার হোসেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক তিনি। রাস্তার গরিব বাচ্চাদের জন্য লুসিওর হূদয়ের উষ্ণতা ছুঁয়ে গেছে তাঁকে। লুসিওকে দেখে উত্সাহি হয়েই প্রায় দুই বছর তিনি কাজ করছেন পথশিশু সেবা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। এ রকম ৬০-৭০ জন স্বেচ্ছাসেবকের শ্রমেই চলে পথশিশু সেবা সংগঠনের কাজ। এই বাংলাদেশেরই দরদি একজন মানুষ রেজাউল করিমের কাছ থেকে ছোট একটা ঘর পেয়েছেন লুসিও। ঠিকানা মণিপুরিপাড়া। সেটাই পথশিশু সংগঠনের অফিস। pothoshishu.sheba@gmail.com এই ঠিকানায় যোগাযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবক হতে ইচ্ছুকেরা। শিশুদের সঙ্গে গল্পগুজব করে তাদের মন ভালো রাখা, ওষুধপথ্য দেওয়া, খেলার ছলে শিক্ষা, প্রয়োজনে হাসপাতালে বা আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া—এসব কাজই করে পথশিশু সেবা সংগঠন।
সেবার সুখ
রাত নয়টার মতো বাজে। আগারগাঁও বিএনপি বস্তির ভেতরে লুসিও বেনিনাতির ঘর দেখে ফিরছি। কেন জানি মনটা একটু উথাল-পাথাল করছে। আমার মোটরসাইকেলের পেছনে বসেছেন লুসিও বেনিনাতি। একটু দোনোমোনা করে প্রশ্নটা করেই ফেলি লুসিওকে, ‘এই যে আপনি মানুষের ঘা আর খোসপাঁচড়া ঘাঁটেন, আসাদ এভিনিউতে নিজের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ ফেলে বস্তির ভেতর দীনহীন জীবন কাটান, আপনার খারাপ লাগে না?’
ঘা, খোসপাঁচড়া ঘেঁটে খারাপ লাগার বিষয়টা শুরুতে সম্ভবত তিনি বুঝে উঠতে পারেন না ঠিক। বেশ খানিক বোঝানোর চেষ্টার পর সব শুনে যেন কথায় পেয়ে বসে তাঁকে, ‘রাস্তাঘাটের এই অসহায় শিশুদের দেখে আমি বুঝতে পারি, আমাদের সমাজ অসুস্থ। সমাজ যখন অসুস্থ হয় তখনই ওদের মতো হাজারও শিশুর জন্ম হয়। সমাজের চিকিত্সা দরকার। কেউ মনে করে, বেশি সেবা পেলে সে বেশি ভালো থাকবে। ছয়টা কাজের লোক, তিনটা বাবুর্চি থাকলে সে বেশি বেশি সুখ পাবে। পকেটে অনেক বেশি টাকা থাকলে সে বেশি আনন্দ পাবে। আমি অন্য মানুষকে সেবা দিতে পারলে সুখ পাই। যত বেশি সেবা দিতে পারি তত বেশি সুখ পাই।’