Friday, October 9, 2009

চলন্ত ট্রেন থেকে পড়েও বেঁচে গেল সদ্যোজাত শিশু

0 comments
মায়ের পেট থেকে পড়েই শিশুটি দেখল, তার বুকের সামান্য উঁচু দিয়ে ছুটছে এক দুরন্ত রেলগাড়ি। কয়েক সেকেন্ড ধরে শুধু ঝমঝম আওয়াজ। পৃথিবী কি এ রকম? ট্রেন চলে গেল। শিশুর চোখের সামনে ফুটে উঠল তারাভরা আকাশ।

তার মা ছিলেন সেই ট্রেনেই। শৌচাগারে গিয়েছিলেন। সেখানেই আচমকা প্রসব। শৌচাগারের ছয় ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ গলে শিশুটি পড়ল রেললাইনে। ঘোর কাটতে সময় লাগেনি মায়ের। যেই মুহূর্তে তিনি বুঝলেন, তখনই চলন্ত ট্রেনের দরজা খুলে দিলেন ঝাঁপ। যাত্রীরা ভাবল, তিনি আত্মহত্যা করছেন। চেইন টেনে ট্রেন থামানো হলো। যাত্রীরা নেমে মহা বিস্ময়ে দেখল, ছেলেকে বুকে জড়িয়ে হেঁটে আসছেন সেই মা। ছেলে অক্ষত। সামান্য ছড়ে যাওয়া ছাড়া চোট লাগেনি মায়েরও। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চক্রধরপুর ডিভিশনের গামারিয়া ও বীররাজপুর স্টেশনের মাঝে। মা-ছেলে দুজনই এখন পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। বিপদ নেই কারোর।


উড়িষ্যার সুন্দরগড় জেলার লালিনপাড়ার বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা রিঙ্কু রায় তাঁর স্বামী ভোলা রায়ের সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে বিহারের পাতোড়া জেলার পাহলানপুরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁদের চার বছরের মেয়ে মুসকান। উঠেছিলেন ডাউন টাটা-ছাপড়া এক্সপ্রেস ট্রেনে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিঙ্কু রায় শৌচাগারে যান। এরই মধ্যে তাঁর প্রসববেদনা শুরু হয়। রিঙ্কু রায় বসে পড়েন শৌচাগারে। রিঙ্কু শৌচাগারেই একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। অসাবধানতাবশত সদ্যোজাত শিশুটি শৌচাগারের প্যান গলে রেললাইনের ওপর পড়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে রিঙ্কু চিত্কার দিয়ে বেরিয়ে আসেন শৌচাগার থেকে। তখন ধীরগতিতে চলছিল ট্রেনটি। আর অপেক্ষা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন তিনি। ছুটতে থাকেন ট্রেনের পেছন দিকে। এরই মধ্যে ট্রেনের গার্ড তাঁর ঝাঁপ দেওয়া দেখে চেইন টেনে থামিয়ে দেন ট্রেনটি। ততক্ষণে টের পেয়ে যান রিঙ্কু রায়ের স্বামী। ট্রেনের গার্ড ও রিঙ্কুর স্বামী ছুটে যান।
রেল সূত্রে জানা গেছে, শৌচাগারের পাইপের ব্যাস ছয় ইঞ্চি। পুরুলিয়া হাসপাতালের শিশু বিভাগের কর্তব্যরত চিকিত্সক রতন দাস বলেন, ‘ট্রেনের শৌচাগারের পাইপ দিয়ে সদ্যোজাত শিশু গলে যেতেই পারে। আশ্চর্য হচ্ছে, চলন্ত ট্রেন থেকে পড়েও শিশু ও মায়ের সুস্থ থাকা! শিশুটির ওজন দুই কিলো ৪০০ গ্রাম। ওর তো কোনো চোটই লাগেনি। শিশুটির মায়ের বাঁ কাঁধ আর দুই হাত সামান্য ছড়ে গিয়েছে।’
পুরুলিয়া স্টেশনের রেলকর্মীরা নবজাতককে ডাকছেন ‘দুরন্ত’ বলে। ‘মৃত্যুঞ্জয়’ বলছেন হাসপাতালের নার্সরা। আনন্দবাজার পত্রিকা।

0 comments:

Post a Comment