Friday, October 9, 2009

শিশুরা স্কুলে, কর্মস্থলে ও ঘরে শাসি্তর শিকার হয়

0 comments
 ইউনিসেফ ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জরিপ

শিশুরা স্কুলে, কর্মস্থলে ও ঘরে শাসি্তর শিকার হয়
দেশের শিশুরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মস্থলে ও ঘরে শারীরিক শাসি্তর শিকার হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ শিশু মনে করে, ৯১ শতাংশ শিশুই স্কুলে শারীরিক শাসি্ত ভোগ করে। এই শারীরিক শাসি্তর ঘটনা বেশি ঘটে শহর ও বসি্ত অঞ্চলে। ১৪ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলেরা এই শাসি্তর শিকার সবচেয়ে বেশি হয়। অপরদিকে বেশির ভাগ শিশুর মতে, ৭৪ শতাংশ শিশুই নিজঘরে শারীরিক শাসি্ত পায়।


তবে উচ্চশিক্ষিত বাবা-মায়েরা তঁাদের সন্তানদের অপেক্ষাকৃত কম শারীরিক শাসি্ত দেন। অধিকাংশ শিশুর মত, শিশুদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সঙ্গে পরামর্শ দেওয়া অধিক কার্যকর। সামগ্রিকভাবে শারীরিক শাসি্ত শিশুদের ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি করে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ইউনিসেফের একটি যেৌথ প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত শিশুদের মতামত জরিপ থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। Èশিশুদের মতামত জরিপ-২০০৮' শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরিন শারমিন চেৌধুরী ও বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি ক্যারল ডি রয়। এ সময় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব রোকেয়া সুলতানা, জরিপের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ওসমান গনি তালুকদার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দেশের মোট তিন হাজার ৮৪০টি পরিবারের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। এতে শারীরিকভাবে সীমাবদ্ধ, দুর্যোগ এবং লিঙ্গ বিষয়ে শিশুদের মতামত নেওয়া হয়েছে। ছেলে ও মেয়েশিশুদের সমানভাগে ভাগ করে এতে প্রায় চার হাজার শিশুর সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়। এদের বয়স ৯ থেকে ১৩ বছর এবং ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। এমনকি গৃহকর্তাদের সাক্ষাত্কারও এতে স্থান পায়। একই সঙ্গে এই জরিপের আওতায় ২০টি ফোকাস গ্রুপের মাধ্যমে শিশুদের সঙ্গে আলোচনা হয়, ১০টি উপকরণ ও পথশিশুদের নিয়ে একটি বিশেষ জরিপও পরিচালনা করা হয়।

প্রকল্প পরিচালক ওসমান গনি তালুকদার এই জরিপ সম্পর্কে বলেন, শিশুরা বিদ্যালয়ে ও বাসায় কী ধরনের ব্যবহার বা শাসি্তর সম্মুখীন হয়, তা জানতেই এ গবেষণা চালানো হয়েছে।

স্কুলে আঘাতের শিকার: জরিপে শিশুদের যে মতামত বেরিয়ে এসেছে তাতে দেখা যায়, স্কুলে শিশুরা এখনো অনেক উচ্চহারে লাঠি ও বেতের আঘাতের শিকার হচ্ছে। স্কুলে এই লাঠি ও বেত ব্যবহারের হার ৮৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া শিশুদের হাতের তালুতে রুলার ও লাঠি দিয়েও আঘাত করা হয়। স্কুলে এই রুলার ও লাঠির আঘাত করার হার ৭৬ শতাংশ।

জরিপে দেখা যায়, দেশের স্কুলগুলোর শ্রেণীকক্ষে দঁাড় করিয়ে রেখে ৬৩ শতাংশ শিশুকে শাসি্ত দেওয়া হয়, শরীরের অন্যান্য স্থানে রুলার বা লাঠি দিয়ে ৬০ শতাংশ শিশুকে আঘাত করা হয়, ৪৯ শতাংশ শিশু চড় ও থাপড়ের শিকার হয়, একইভাবে ৩৬ শতাংশ শিশুর কান, চুল বা চামড়া মুচড়ে দেওয়া হয় এবং হঁাটু ভেঙে দঁাড় করিয়ে রাখা হয় ২৫ শতাংশ শিশুকে।

দেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিশু ঘরে মধ্যম ও উচ্চপর্যায়ের শারীরিক শাসি্তর শিকার হয়। এ ছাড়া শিশুরা ঘরে যে সাধারণ শাসি্তগুলো পায় এর মধ্যে বকাবকি, তিরস্কার, নিন্দা ও ভয় দেখানোর কথা জানিয়েছে।

কর্মজীবী শিশু: জরিপে কর্মজীবী শিশুদের বড় অংশই কর্মস্থলে শাসি্ত পাওয়ার কথা জানিয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশ কর্মজীবী শিশু কর্মস্থলে শাসি্ত পায়। শারীরিক শাসি্ত পাওয়ার কথা বলেছে ২৫ শতাংশ শিশু।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরিন শারমিন চেৌধুরী বলেন, শিশুরা শারীরিকভাবে শাসি্ত পেতে চায় না। এতে শিশুদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি হয়, যা শিশুদের মনের ওপর প্রভাব ফেলে। এ ব্যাপারে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ আবার পর্যালোচনা করা হবে এবং শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ইউনিসেফের সহায়তায়ও কাজ করবে।

শিশু অধিকার বিষয়ে কর্মশালা

Èজাতিসংঘ সনদ ও বাংলাদেশের সংবিধানে শিশু অধিকারের বিষয়টি বিধিবদ্ধ থাকলেও সমাজে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একাডেমিক পর্যায়ে বিষয়টি অন্তভর্ুক্ত করা প্রয়োজন। শিশু অধিকার বা উন্নয়নবিষয়ে কিছু পাঠ্য থাকলেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পৃথক বিভাগ নেই। দেশের শিশুদের সার্বিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই এটা এখন জরুরি।'

গতকাল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও সেভ দ্য চিলড্রেন সুইডেন-ডেনমার্কের যেৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত আইনার হিবোগার্ড জেনসেন এবং সেভ দ্য চিলড্রেন সুইডেন-ডেনমার্কের বাংলাদেশের প্রতিনিধি নিলস বেন্টজেন বক্তব্য দেন।

0 comments:

Post a Comment