Sunday, October 4, 2009

এক হাজারের বেশি হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছেন লতা মুঙ্গেশকর

0 comments
২৮ সেপ্টেম্বর ছিল লতা মুঙ্গেশকরের জন্মবার্ষিকী। ১৯২৯ সালের এই দিনে ভারতে এ স্বনামধন্য গায়িকার জন্ম হয়। এ বছর তিনি পা দিলেন ৮০ বছরে। তার জীবনের কিছু অজানা কথা তুলে ধরা হলো এখানে।
এক হাজারের বেশি ভারতীয় ছবিতে গান করেছেন তিনি। এছাড়া ভারতের ২০টি আঞ্চলিক ভাষাতেও গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তারই।



ঁ ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান ভারত রত্ন পাওয়া তিনিই দ্বিতীয় সঙ্গীতশিল্পী।
ঁ কৃষ্ণপ্রেমে সমর্পিত লতাজী বিশ্বাস করেন, ভালোবাসা পাওয়াটাই জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। মা একদিন বলেছিলেন, দুঃখ যতো বাড়ে, ততোই উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে শিল্প।
ঁ সাইকেল চালানোটা তার ভীষণ পছন্দ, যদিও জীবনে কখনো আসত্দ একটি সাইকেলের মালিক হতে পারেননি তিনি। তার প্রথম গাড়ি আট হাজার রম্নপি দিয়ে কেনা একটি ধূসর 'হিলম্যান'। আর এ মুহূর্তে যে গাড়িটিতে তিনি ঘোরাফেরা করেন সেটি একটি মার্সিডিজ_ যশ চোপরার উপহার।
ঁ হৈ-হুলেস্নাড় ভীষণ পছন্দ তার। আর পছন্দ জেমস বন্ডের সিনেমা। তার সবচেয়ে প্রিয় সিনেমার নাম দ্য কিং অ্যান্ড আই। সিনেমাটি তিনি এ পর্যনত্দ দেখেছেন ১৬ বার! হিন্দিতে তার প্রিয় সিনেমার মধ্যে আছে_ ত্রিশুল, মধুমতি, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, শোলে, সীতা আউর গীতা। কিসমত সিনেমাটি তিনি দেখেছেন ৫০ বারের বেশি, আজব!
ঁ তার বড়ই অপছন্দ মেকআপ আর লাইটিংয়ের ঝামেলা। পাহিলি মঙ্গলাগৌর সিনেমার জন্য নির্মাতার অনুরোধে নিজের ভ্রূ এবং চুল ট্রিম করতে প্রথমে রাজি থাকলেও চিনত্দা-ভাবনা করে পরে আবার পিছিয়ে যান।
ঁ শৈশবে বাড়িতে থাকাকালীন কে এল সায়গল ছাড়া আর কিছু গাইবার অনুমতি ছিল না তার। বাবা চাইতেন ও শুধু ধ্রম্নপদী গান নিয়েই থাকুক।
ঁ জীবনে প্রথম রেডিও কেনার সামর্থ্য যখন হলো, তখন তার বয়স ১৮। কিন্তু রেডিওটা কেনার পর নব ঘুরাতেই প্রথম যে খবরটি তাকে শুনতে হয় তা হচ্ছে, কে এল সায়গল আর বেঁচে নেই। সঙ্গে সঙ্গেই রেডিওটা ফেরত দিয়ে দেন তিনি।
ঁ ক্যারিয়ারের প্রাথমিক সেই সোনালি দিনগুলোর কথা। হেমনত্দ কুমারের সঙ্গে গাইতে হতো তাকে। এ সময় দুজনের জন্য বরাদ্দ থাকতো একটাই মাইক্রোফোন। কিন্তু তার সঙ্গে গাইতে গিয়ে ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হতো তাকে। কেননা, হেমনত্দ ছিলেন ওর চাইতে অনেক লম্বা। এ কারণে যখনই ওর সঙ্গে গাওয়ার প্রয়োজন হতো, একটা ছোট বাক্স কিংবা টুলের ওপর উঠে দাঁড়াতেন তিনি।
ঁ ১৯৬২ সালে একবার হঠাৎ করেই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেবার তার মনে হয়েছিল, এ জীবনে আর কোনোদিন গান গাওয়া হবে না। পরবর্তী সময় মেডিকেল রিপোর্টে দেখা যায়, স্বয়ং তার রাঁধুনিই তার খাবারে দীর্ঘদিন ধরে সস্নো পয়জনিং করে আসছে। ঘটনাটা চাউর হয়ে গেলে মাইনে না নিয়েই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় তার পাঁচক।
ঁ তার দারম্নণ পছন্দ মসলাদার খাদ্যের সঙ্গে দুর্দানত্দ ঝাল। একসময় কাঁচা ঝাল চিবানোর অভ্যাস ছিল তার। খেতেন প্রতিবারে একডজন করে।
ঁ একবার ট্রেনে করে মুম্বাই যাচ্ছেন লতাজী। তার সঙ্গে ওই একই কম্পার্টমেন্টে উঠেছেন কিশোর কুমার। কেউ কাউকে চেনেন না। কিশোর নেমে যান মহালক্ষ্মী স্টেশনে। একটা টাঙ্গাও ভাড়া করেন ওখানে। অথচ সারাৰণ লতাজী ভেবেছিলেন উটকো 'লোকটা' বুঝি তাকেই ফলো করছে। পরবর্তী সময়ে ওইদিনই তারা গাইলেন তাদের জীবনের প্রথম ডুয়েট গান 'ইয়ে কৌন আয়া রে কারকে সোলা সিনগার'- জিদ্দি সিনেমার জন্য।
ঁ ঘুরে বেড়ানোর জন্য তার অন্যতম প্রিয় একটি স্থান লস অ্যাঞ্জেলেস। ওখানে সস্নট মেশিনের সামনে বসে কয়েন চালাচালি করতে আর কোকাকোলায় চুমুক দেয়াটা তার অন্যতম ফেভারিট বিনোদন।
ঁ দীর্ঘদিনের পুরনো একটা অভ্যাস ছিল তার- ডায়রি লেখা। হিন্দিতে কতোগুলো গল্প আর গানও লিখে ফেলেছিলেন সেখানে। হঠাৎ একদিন তার মনে হলো, কী লাভ এতে। সবই ফালতু! অমনি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললেন ডায়রির পাতাগুলো!
ঁ জীবনে একদিন মাত্র স্কুলে গিয়েছেন লতাজী। তাও তার সঙ্গে ছিল ১০ মাস বয়সী ছোটবোন আশা। কিন্তু ক্লাসের ভেতর 'পিচ্চি আশা'কে দেখে টিচার তাকে ভীষণ বকা দিলে গোস্বা করে পরদিন থেকে স্কুলে যাওয়াই ছেড়ে দিলেন তিনি।
ঁ নিজেকে শিৰিত করে তুলেছেন তিনি নিজেই। তাকে প্রথম অৰরজ্ঞান দান করে তাদের পরিবারেরই কিঙ্কর।
ঁ তার না পূরণ হওয়া দুটো ইচ্ছা_ কে এল সায়গলের সঙ্গে দেখা করতে না পারা এবং দিলীপ কুমারের জন্য কোনো গান গাইতে না পারা।
ঁ তার পছন্দের তালিকায় কয়েকটি বিখ্যাত নাম_ মোজার্ট, বিটোভেন, চাইকোভস্কি, শপিন, ন্যাট কিং কোলে এবং দ্য বিটলস।
ঁ দিলীপ কুমার একবার লতাজীর গান শুনে প্রশ্ন তুলেছিলেন, 'ওর বাড়ি কি মহারাষ্ট্রঁ ওদের উর্দু উচ্চারণ কোনোদিনই সঠিক হয় না। তাছাড়া ওদের গান শুনলে ডাল-ভাতের গন্ধ পাওয়া যায়।' এ মনত্দব্যে মনে মনে প্রচ- আঘাত পেলেও সেদিন থেকেই উর্দু শিখতে শুরম্ন করেন লতাজী।
ঁ সঙ্গীত সম্রাজ্ঞীর দারম্নণ পছন্দের একটি কাজ ছবি তোলা। তার প্রথম ক্যামেরাটি ছিল একটি রোলিফ্লেক্স; দাম ১ হাজার ২০০ রম্নপি মাত্র। তার আরেক পছন্দের নাম- কুকুর। কুকুর তিনি এতোই ভালোবাসতেন, এক পর্যায়ে তার বাড়িতে স্থায়ী ঠাঁই নিয়ে নেয় নয়টি কুকুর। যদিও এসব কারণে তাকে বিসত্দর বকা খেতে হয়েছে মায়ের হাতে।
ঁ হীরা আর এমারেল্ড ভালোবাসেন লতাজী। ১৯৪৭ সালে মাত্র ৭০০ রম্নপি দিয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো একটা হীরের আংটির মালিক হন তিনি। এটির ডিজাইনারও ছিলেন তিনি নিজেই। সোনা তার খুব একটা পছন্দ না হলেও তার পায়ে প্রায়ই দেখা যায় সোনার পায়েল।
ঁ লতাজী একজন পারফেকশনিস্ট। কোনো কনসার্ট থাকলে তার অনত্দত দুই মাস আগে থেকে তিনি শুরম্ন করেন অর্কেস্ট্রা মহড়া। মহড়ায় গাইতে গিয়ে কারো কোনো ভুল হলে মিষ্টি হেসে শুধু বলেন, ভুল হতেই পারে। ও কিছু না। চালিয়ে যাও!



ঁ নার্গিস এবং মীনা কুমারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল তার। ওদের ঘাগরা আর শাড়ির ভয়ানক ভক্ত ছিলেন তিনি। সুযোগ পেলেই চলে যেতেন নার্গিসের বাড়ি।
ঁ তার প্রিয় মানুষের তালিকায় রয়েছেন নিম্মি, সুলোচনা, ওয়াহিদা এবং রেখা।
ঁ মধুবালা তো তার সঙ্গে চুক্তিই করে নিয়েছিলেন, মধুবালার সব গানে কণ্ঠ দেবেন একমাত্র লতা
মুঙ্গেশকর।
প্রকাশিত হয়েছে "দৈনিক যায়যায়দিন " পত্রিকায়।

0 comments:

Post a Comment