সোং রাজা
সোং রাজত্বকাল (খ্রিস্টাব্দ ৯০৭-১২৭৯)। এক হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে তখনকার চীনে ক্ষমতাবলয় এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের বেশ কৌতূহলোদ্দীপক বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে এ রচনায় ৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তাং রাজবংশের অবসান ঘটে। উত্তর চীনে অন্তবর্তীকালীন অস্থিরকাল ছিল প্রায় তিপ্পান্ন বছর। এই অর্ধশতাব্দীর মধ্যে পরপর পাঁচটি রাজবংশের উত্থান এবং দক্ষিণে স্বতন্ত্র রাজ্যসমূহের সূচনা ঘটে।তাং রাজত্বের শেষের দিকে দেশে অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থা ক্রমাগতভাবে অধঃপতনের দিকে যেতে থাকে। অবশেষে উত্তরে নানা গণ-অভ্যুত্থানের চাপে প্রশাসন একেবারে ভেঙে পড়ে। যাঁদের বিদ্রোহ দমন করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁরাই শুধু লাভবান হন। পরপর পাঁচজন আঞ্চলিক সেনাপতি ক্ষমতা দখল করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। এই পঞ্চাশ বত্সরের সংকটকাল পঞ্চম রাজবংশের কাল হিসেবে অভিহিত হয়।
চীনের সোং রাজত্বকালে এক বিস্ময়কর সুদক্ষ ও শ্রেণীহীন আমলাতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটে। কালক্রমে তা সর্বোচ্চ উত্কর্ষ সাধন করে। সুই ও তাং সম্রাটদের সময় বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে গঠিত অভিজাত শ্রেণী শিক্ষিত পণ্ডিত প্রশাসকদের কাছে প্রতিপত্তি হারিয়ে ফেলে। অবশ্য সমগ্র তাং আমলে আমলাতন্ত্রের নানা ফাঁকফোকরে, বিশেষ করে সুরক্ষার নামে প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিবর্গ চাকরির পরীক্ষা এড়িয়ে গিয়ে নিজেদের সন্তানদের এমন সব উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়, যেসব পদের দায়িত্ব সম্পর্কে তাঁদের সম্যক ধারণা ছিল না। এমনকি সোং আমলেও এ ধরনের ছলচাতুরি সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়নি। তবে এই সময় বেশির ভাগ উচ্চপদ নির্দিষ্ট ছিল তাঁদের জন্য, যাঁরা পরীক্ষায় বিশেষ সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সোং রাজত্বকালের প্রথম এক শ বছর নাকি যাঁরা ডক্টরেট-পর্যায়ের বৈদগ্ধ অর্জন করেননি তাঁদের কাউকে সংস্কৃতির অভিভাবক বা নীতির-সমালোচকের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও ওই দুটো বিভাগে প্রভাব খাটিয়ে সুযোগ নেওয়ার কিছু সম্ভাবনা ছিল। সোং রাজত্বের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গে অস্থিরতা দূর হয়। এটি প্রথম রাজবংশ, যেটি নতুন রাজধানী কাইফেংকে কেন্দ্র করে দক্ষিণে প্রতিষ্ঠিত হয়।
সোং আমলে প্রশাসনের উত্তরাধিকারে পণ্ডিতদের প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে চীনের অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষাকল্পে পণ্ডিতবর্গের যে প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত হয় তার কোনো তুলনা নেই। সোং রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা পরিকল্পিতভাবে কেবল গণবিচারে উত্তীর্ণ আমলাতন্ত্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন।
ষষ্ঠ রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত করে সোং সম্রাট ঝাউ কোয়াংকি স্থির করলেন যে উচ্চাভিলাষী সেনাপতিদের কেউ যেন সপ্তম রাজবংশের প্রতিষ্ঠা না করে। সীমান্ত অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত গৌণ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়ে উত্কৃষ্টতর সেনাদলকে তাঁদের নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। তিনি অভিজাত শ্রেণীর প্রভাব খর্ব করার জন্য অনেক বেশি প্রশাসন-পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আমলাদের ওপর নির্ভর করেন। প্রতিষ্ঠাতা-সম্রাটের ভ্রাতা এবং পরবর্তী সম্রাট ঝাউ কোয়াংকি বলেন, ‘মোটা বস্ত্রাচ্ছাদিত হূদয়ও যে জেডের গুণ বহন করতে পারে, আমাদের ধারণা সেই তথ্য তো আমাদের জানা নেই।’
সমগ্র চীনের ওপর যিনিই তাঁর আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছেন তাঁর জন্য বড় জটিল বিষয় ছিল চীনের শক্তিশালী প্রতিবেশী রাজ্যগুলো। বহিরাক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করতে বিশাল সৈন্যবাহিনী সীমান্তে মোতায়েন রাখতে হতো। আর যেসব সেনাপতি সেই প্রতিরক্ষা-কর্মে নিয়োজিত থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠত তারা চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের হুকুম অমান্য করতে উত্সাহিত বোধ করত। ৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ঝাও কুয়াংকিন পরবর্তী ঝৌ সম্রাটের সেনাবাহিনীর সেনাপতি হিসেবে তাঁর ভাই ঝাও কুয়ানকি ও তাঁর পরামর্শদাতা ঝাও পিউয়ের সহযোগিতায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং উত্তর সোং রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। রাজধানী কাউফেং-এ থাকলেও তার নতুন নাম হয় দং জিং। পনেরো বছরের মধ্যে জিংকনান, শু, দক্ষিণে হান ও তাং রাজ্য পরাভূত হয়। ৯৭৮ ও ৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে চীন মোটামুটি এক-রাজ্যের পতাকাতলে সমবেত হয়। লিয়াও অবশ্য এর বাইরে থাকে।
সোং রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা-সম্রাট সেনাপতিদের আকর্ষণীয় অবসরভাতা দিয়ে সীমান্ত থেকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। অধস্তনদের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার চেয়ে বর্বর প্রতিবেশীদের হাতে হয়রানি সহ্য করার জন্য সম্রাট প্রস্তুত থাকেন এবং প্রায়ই তাদেরকে অর্থের বিনিময়ে প্রতিহত করেন।প্রথম সোং সম্রাট যুদ্ধজয়ের পরিবর্তে নিজের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সংস্কারের দিকে বেশি মনোযোগ দেন। পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য তিনি নানা ব্যবস্থা নেন। পণ্ডিত-প্রশাসকরা চীনা সমাজে ও আইনি ব্যবস্থায় চিরাচরিতভাবে ব্যবসায়ীদের তেমন সম্মান না জানালেও কালক্রমে ব্যবসায়ীদের প্রতিপত্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সোং রাজাদের প্রশাসনের শীর্ষে ছিল সম্রাট ও একটি রাষ্ট্রীয় পরিষদ। অব্যবহিত নিচে ছিল সচিবালয়, অর্থদপ্তর ও সামরিক দপ্তর। তিন শ’র অধিক ঝৌ তত্ত্বাবধান করত স্থানীয় সরকার এবং তাদের নিচে ছিল অধস্তন আঞ্চলিক সরকার।
সোং রাজত্বকালে শিক্ষা ও জ্ঞানগরিমার বিস্তার ঘটে। বিশেষ করে কনফুসিয়াসবাদ প্রসার লাভ করে। বৌদ্ধ ও অন্যান্য বিদেশি চিন্তাধারায় কনফুসিয়াস দর্শনের নতুন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, ফলে তা সমৃদ্ধি লাভ করে। সেই দর্শনকে ভিত্তি করে দেশের প্রশাসনের পরীক্ষা নির্ধারিত হতো। শিক্ষিত আমলারা সম্রাটকে যুদ্ধ জয়ে তেমন অনুপ্রাণিত করতেন না। শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী এবং বারুদের জ্ঞানে সমৃদ্ধ সোং সম্রাটরা কিছু যুদ্ধে জয়লাভ করলেও তাঁরা শিয়া শিয়া বা খিতান রাজ্যগুলোকে অর্থপ্রদান করে প্রতিহত করত।
আমলাদের পরীক্ষা ছিল এক স্নায়ুবিদারক ব্যাপার। পরীক্ষার্থীদের মাঝরাতে উঠে প্রত্যুষে নিজেদের উপস্থাপন করতে হতো। পরীক্ষার সময় তাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করার জন্য তারা ঠান্ডা ভাত ও পিঠা নিয়ে আসত। কারও বিলম্ব করার উপায় ছিল না। পরীক্ষার সময় দরজা বন্ধ করে দেওয়া হতো। পরবর্তীকালে দরজা সিলগালা করে বন্ধ করা হতো। অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রত্যেকে নিজের নিজের আসনে বসত। মাঝে তিনটি দেয়াল ও ওপরে ঢালু ছাদের ব্যবধান থাকত। পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ছিল ছোট ছোট কোষ্ঠ। পরীক্ষায় যেন কেউ কোনো চাতুরী বা অন্যায় সুযোগ না নিতে পারে তার জন্য চীনের ঐতিহ্যে বেশ কড়া নিয়মকানুন মেনে চলা হতো। হান আমলে প্রশ্নপত্র কেউ যাতে আগে ভাগে জানতে না পারে তার জন্য প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে প্রশ্নপত্রের দিকে একটা তীর ছুড়তে হতো। যে প্রশ্নপত্র তীর বিদ্ধ হতো, পরীক্ষার্থীকে সেই পত্রের উত্তর দিতে হতো।
তীরন্দাজি বিদ্যাকে কনফুসিয়াসের সময় ভদ্রলোকের মর্যাদাময় একটা গুণ বলে গণ্য করা হতো। তাং রাজত্বকালে কোনো রকম চিহ্ন দেওয়ার আগে খালি খাতা পরীক্ষার্থীর নামের ওপরে আঠা দিয়ে সাঁটিয়ে দেওয়া হতো। পরীক্ষার্থীর হাতের লেখা দেখে যাতে পরীক্ষকেরা কাউকে শনাক্ত না করতে পারে, তার জন্য নকলনবিশরা সকল পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র নকল করত। এমনকি পরীক্ষকদেরও ঘরে আটকে রেখে তাঁদের বাইরের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে দেওয়া হতো না। তাঁদেরও এক ধরনের পরীক্ষা হতো। যাঁদের তাঁরা পাস করান তাঁদের পরবর্তী কর্মকাণ্ড দেখে পরীক্ষকদের গুণাগুণ বিচার করা হতো। ফলে একটা দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠত একজন পরীক্ষকের সঙ্গে সফল পরীক্ষার্থীদের। কেউ ক্ষমতার ওপরে উঠলে তিনি অভিনন্দনব্যঞ্জক কবিতা উপহার পেতেন। উদ্বেগ প্রশমনের একটা সুযোগ ছিল। পরীক্ষার্থীরা বারবার পরীক্ষা দিতে পারতেন। কেউ কেউ পনেরোবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন। ৭০ বছর বয়সী পরীক্ষার্থীও দেখা গেছে। নানা-নাতি একসঙ্গেও পরীক্ষা দিতেন। পরীক্ষা পাস শুধু চাকরি পাওয়ার জন্য নয়, তা সমাজে এক মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান অর্জনেও কাজে আসত। পরীক্ষায় সফলতার জন্য আবার কেউ কেউ বিশেষ রঙের পরিধেয় পরতে পারতেন। পরীক্ষা পাস করেও অনেক বিত্তবান অনুচ্চাভিলাষী নিজেদের জমিজমা দেখাশোনা ও সংস্কৃতি চর্চা করে এক সহজ ও সম্মানজনক জীবন অতিবাহিত করতেন।
কোনো সমাজেই সরকারি চাকরিতে সবাই সমান সুযোগ পায় না। সোং রাজত্বকালে সরকারের সবাই প্রায় সমান সুযোগ পায় পরীক্ষা-পদ্ধতির গুণে। যাঁদের তিন প্রজন্ম ধরে সরকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না, তাঁদের অনেকে সোং রাজত্বকালে উচ্চপদে আসীন হন। সোং রাজত্বের প্রথম দিকে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া সব উচ্চপদস্থ আমলা ভাষার গদ্য ও পদ্য রীতিতে মুন্সিয়ানার পরিচয় দেন। হাংকঝৌও বন্দর নগরীর দুই তীর, তাং আমলের পাই জুয়ি এবং সোং আমলের সু তংপো-র। দুই জন বড় আমলার নাম বহন করে।
১০৫২ খ্রিস্টাব্দে শীর্ষস্থানীয় পরামর্শদাতা ওয়াং আনশিহ সম্রাটকে পরামর্শ দিলেন যে, কে না জানে সীমান্তরক্ষী বা সম্রাটের রক্ষীদের ওপর দেশে শান্তি রক্ষার জন্য নির্ভর করা চলে না! শিক্ষিত লোকেরা অস্ত্রধারণকে অমর্যাদাকর মনে করে এবং যেহেতু তাদের কেউ ঘোড়ায় চড়তে বা তীর ছুড়তে জানে না এবং সামরিক অভিযান সম্পর্কে কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই, তাই ভাড়াটে সৈন্যবাহিনী ছাড়া আর কাকে দায়িত্ব দেওয়া যাবে? অর্থনীতিতে বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য কোনো রাজ্য দখল করা হয় না বা উত্পাদনও বৃদ্ধি করা যায় না। ওয়াং আনশিহ-র মতে সরকারের ঘাটতি কেবল অতিরিক্ত অর্থব্যয়ের জন্য নয়, বরং তা আয় বৃদ্ধির উপায় না জানার জন্যই। যাঁরা তাঁদের পরিবারকে সমৃদ্ধ করতে চান, তাঁরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে নেন। যাঁরা কেবল রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধ করতে চান, তাঁরা কেবল দেশ থেকে নেন এবং যাঁরা দেশকে সমৃদ্ধ করতে চান তাঁরা প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে আহরণ করেন। ব্যাপারটা তেমন পরিবারের মতো, যেখানে সন্তানের জন্য তার আয় বৃদ্ধি না করে পিতা তার কাছ থেকে গ্রহণ করে। পরিবার নিজেকে আরও বিত্তবান মনে করলেও সবই ঘটে পরিবারের বদ্ধ দরজার মধ্যে এবং সেখান থেকে কিছুই বাইরে আসে না। ওয়াং আনশি-র এই বক্তব্য এখনো প্রণিধানযোগ্য।
দুঃসময়ের কর্তব্য হিসেবে হাংঝৌও-এর ঝাউ মিংচেং তাঁর কবি স্ত্রী লি চিং ঝাউকে পরামর্শ দেন, ‘তুমি সব কিছু রক্ষা করতে পারবে না। প্রথমে ভারী লটবহর ফেলে দাও, তারপর কাপড়চোপড়-বিছানাপত্র, তারপর বই ও চিত্রসমূহ এবং সবশেষে প্রাচীন ব্রোঞ্জ শিল্পকর্ম। কিন্তু পোর্সিলিনের জিনিসগুলো তুমি সঙ্গে বইবে এবং তোমার সঙ্গে সেগুলো হয় রক্ষা পাবে নয় ধ্বংস হয়ে যাবে।’মোঙ্গলীয়ান
চীনের উত্তরের শত্রুরা বড় বিপদের সম্মুখীন হচ্ছিল। মোঙ্গলদের আবির্ভাব সব কিছু পালটে দেয়। আশ্চর্যজনকভাবে সোং সম্রাটরা তাঁদের পুরোনো ভ্রান্ত পথেই এগোলেন। জিন রাজ্যের বিরুদ্ধে সোং সম্রাট মোঙ্গলদের পক্ষ নেয়। কয়েক দশক ধরে নতুন প্রতিবেশীদের প্রতিহত করতে সোং রাজারা সক্ষম হলেও ১২৭৯ সালে মোঙ্গলদের কাছে তাঁরা পরাভূত হন। সর্বপ্রথম সারা চীন একজন বিদেশি বিজেতার অধীনে আসে। তিনি আর কেউ নন, কুবলাই খান।কুবলাই খান
0 comments:
Post a Comment