কেভিন কার্টার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৪ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার মাত্র দু'মাস আগে তিনি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি হৃদয়বিদারক আলোকচিত্রের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করেন।
আলোকচিত্রটির পটভূমি
কেভিন কার্টার ১৯৯৩ সালে বিদ্রোহীদের আন্দোলনের আলোকচিত্র সংগ্রহের জন্য দুর্ভিক্ষকবলিত সুদানে যান। তিনি দুর্ভিক্ষকবলিত মানুষের অবর্ণনীয় দু:খ-দুর্দশা, ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রণা ও ধুঁকে ধুঁকে মরার অসংখ্য বাস্তব চিত্র তার ক্যামেরায় ধারণ করেন।
মানুষের করুণ মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণায় বিদ্ধ হন এবং ছবি তোলা বন্ধ করে দিয়ে খোলামেলা অরণ্যভূমিতে উদ্দেশ্যহীনভাবে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ অদূরে ক্ষীণকন্ঠে কাতরস্বরে কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন এবং দেখতে পেলেন, অত্যন্ত অল্প বয়সের একটি ক্ষুদ্র শিশু অতিকষ্টে জাতিসংঘের খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের দিকে এগোতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে; হামাগুড়ি দিয়ে সামান্য একটু এগিয়েই মাটিতে মাথা রেখে বিশ্রাম নিচ্ছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
কেভিন কার্টার যখন সতর্কতার সাথে বাচ্চাটির ছবি তোলার প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই একটি শকুন শিশুটির পেছনে উড়ে এসে বসল। শকুনটির মনোযোগ নষ্ট না করেই তিনি এমন একটি স্থান বেছে নিলেন যেখান থেকে শকুনসহ শিশুটির ভালো একটি ছবি তুলতে পারেন। তিনি ছবি নিলেন এবং অপেক্ষা করতে থাকলেন শকুনটি কী করে তা দেখার জন্য। তিনি ভেবেছিলেন, শকুনটি এমনিতেই কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই সেখানে উড়ে এসে বসেছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে উড়ে চলে যাবে। কিন্তু শকুনটি উড়ে গেল না, বসেই রইল। কার্টার লক্ষ্য করলেন, শকুনটি একদৃষ্টিতে মৃতপ্রায় শিশুটির দিকে তাকিয়ে রইল। এক্ষণে কেভিন বুঝতে পারলেন যে শিশুটি মারা গেলে তার মাংস খাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শকুনটি অপেক্ষা করছে। তিনি দৃশ্যটি সহ্য করতে না পেরে শকুনটিকে তাড়ালেন এবং ভারাক্রান্ত মনে একটি গাছের নিচে গেয়ে বসলেন। একটি সিগারেট ধরালেন আর গুমরে কেঁদে উঠলেন।
পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন
পরবর্তী সময়ে কেভিন আলোকচিত্রটি নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে বিক্রি করে দিলেন। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমস ছবিটি প্রকাশ করে। ছবিটি প্রকাশের সাথে সাথেই সারাবিশ্বে আলোকচিত্রটি নিয়ে ভীষণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আফ্রিকার দুর্ভিক্ষের তীব্র যন্ত্রণার জীবন্ত প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি পায় এই অবিস্মরণীয় ছবি। হাজার হাজার পাঠক ফোন করে জানতে চায় শেষ পর্যন্ত শিশুটির ভাগ্যে কী ঘটেছিল। সারাবিশ্বের অগণিত সংবাদপত্রে ছবিটি পুর্নমুদ্রিত হতে থাকে। অতি অল্প সময়ে কেভিন কার্টার সারাবিশ্বে কিংবদন্তির মর্যাদা লাভ করেন।
ছবিটি ধারণের মাত্র চোদ্দ মাস পর ১৯৯৪ সালের ২৩ মে কেভিন কার্টার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লো মেমোরিয়াল লাইব্রেরির সুসজ্জিত মঞ্চ থেকে অসংখ্য ভক্ত ও সুধীর সামনে পুলিৎজার পুরস্কার গ্রহণ করেন।
কঠোর সমালোচনা
এই অবিস্মরণীয় ছবি কেভিন কার্টারের জন্য শুধু মান-সম্মান, যশ-খ্যাতি ও স্বীকৃতি-ই বয়ে আনেনি, এই ছবির জন্য তাকে কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো কোনো সাংবাদিক এই ছবিকে কেভিন কার্টারের আকস্মিক সৌভাগ্য বলে আখ্যায়িত করেন। অনেকে বলেছেন, কেভিন নিজে নিজেই কোনো না কোনোভাবে দৃশ্যপট সাজিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ছবিটি তুলে বাহবা নিয়েছেন। সেন্ট পিটার্সবার্গ (ফ্লোরিডা) টাইমস লিখেছিল, "কেভিন কার্টার ক্যামেরার লেন্স ঠিক করে একটি অসহায় মেয়ের দুর্দশার ছবি তুলতে গিয়ে নিজেই সেই প্রেক্ষাপটের একজন শিকারি শকুন বনে গেছেন।" অনেকে আবার তার নৈতিকতাবোধ বা মানবিক মূল্যবোধ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তারা ভেবে আশ্চর্য হন যে কেভিন কেন মেয়েটিকে সাহায্য করল না।
অবশেষে আত্মহত্যা
পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্তির মাত্র দুই মাস পর মানসিক যন্ত্রণা ও হতাশা সহ্য করতে না পেরে কেভিন কার্টার আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ছোটবেলায় যে নদীটির পাড়ে তিনি খেলাধুলা করতেন, আত্মহত্যার দিন তার পিকআপ ট্রাকটি সেখানেই পার্কিং করেন। ট্রাকের পেছনে ধোঁয়া নির্গমনের নলের সঙ্গে একটি প্লাস্টিকের নল লাগিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করেন এবং গাড়ি থেকে নির্গত কার্বন-মনোঅক্সাইড নলের মুখ থেকে নি:শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে গ্রহণ করে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার পর তার গাড়ির পেছনের সিটে একটি সংক্ষিপ্ত নোট পাওয়া যায়। তাতে তিনি লিখেছিলেন, "আমি সত্যি সত্যি দু:খিত। জীবন-যন্ত্রণা আনন্দকে এমন পর্যায়ে পদদলিত করে যে, তখন আনন্দ বলে আর কিছু থাকে না।"
সারাবিশ্বের মানুষকে কাদিঁয়ে, হতবাক করে দিয়ে এভাবেই এক কিংবদন্তির বিদায় ঘটে।
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2009
(230)
-
▼
October
(102)
- লুসিও বেনিনাতি
- বনৌষধি জাফরান
- জুলভার্ন
- হজ্বের মাহাত্ম্যপূর্ণ দোয়া সমূহ
- মক্কা শরীফের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ
- শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহ্মদ
- স্ট্যাচু অব লিবার্টি
- বেনেবউ বা কৃষ্ণ কোথা পাখি বা হলদে পাখি বা ইষ্টিকুটুম
- টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি লিডারস পুরস্কার পেলেন মন...
- রামগঙ্গা
- ক্লান্তির ছাপ পড়বে না মুখে
- অস্কারে বাংলাদেশের ছবি
- গাজায় টনি ব্লেয়ারকে ফিলিস্তিনি যুবকের ধাওয়া!
- কমলাফুলি
- প্রবাল চৌধুরী
- চখাচখী
- Seal Hunting
- হাট্টিমা
- নোবেল পুরস্কার
- বনৌষধি দুধিয়া/বড় কেরুই
- পদ্মার চরে বিরল ‘বাংলা বাবুই’ পাখির বাসা
- চীনের সোং রাজত্বকাল
- শচীন দেববর্মণ
- নোয়াখালীতে গান্ধী
- মহাত্মা গান্ধী: সত্য ও অহিংসার অবতার
- ‘বাপু’ আসবেন বলে
- কয়েকজন গান্ধী-দ্রষ্টার গল্প
- কেন অহিংস হবে না মানুষ
- এখনো বিক্রির শীর্ষে থাকে মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী
- সোনার মানুষ ভাসছে রসে
- শ্যাম সুন্দর
- লালন সাঁই
- সাত ভাই
- মানুষখেকো গাছ
- ঝকঝকে ত্বক ঝরঝরে চুল
- PDF তৈরীর পরও ফাইল যোগ করা প্রসংগে
- কাল্পনিক ই-মেইল ঠিকানা তৈরী করা
- জলমুরগি
- বাঁশপাতি
- কানাকুয়ো
- হাড়িচাঁছা
- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী'র কিছু সংগ্রহীত Art...
- কালিম
- নীলকন্ঠ বসন্তবৈরী
- সবচেয়ে দামি ল্যাম্প
- কর্পস ফুল
- মাছে কেন মেছো গন্ধ থাকে?
- জাদুর ভাত
- হ্রদের নগর কসমোপলিটন সিটি
- চিড়িয়াখানা বিষয়ক কিছু তথ্য
- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশবন্ধু
- Michael Jacksons Relatives
- মাইকেল জ্যাকসন
- বড় কাটরা
- বনৌষধি রক্তচিতা
- ইস্টার দ্বীপের মূর্তি
- চে গুয়েভারা
- জিন্নাহ বিতর্ক
- চলন্ত ট্রেন থেকে পড়েও বেঁচে গেল সদ্যোজাত শিশু
- লালন অনুসারী ছয়জন শিল্পী
- জলপোকাদের কারিগর
- শিশুরা স্কুলে, কর্মস্থলে ও ঘরে শাসি্তর শিকার হয়
- সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইবু্ন্যালে যাচ্ছে...
- সাহিত্যে নোবেল পেলেন জার্মানির হেরটা মুয়েলার
- বিশ্বে প্রতি চারজনের একজন মুসলমান
- বিশ্বের সেরা শহর
- গ্রহণ কেন হয়
- পিপিলিকা
- প্যাঙ্গোলিন
- কাদা উৎসব
- ময়ুর পোশাক
- বিভিন্ন দেশের নামের রহস্য
- পৃথিবীর লম্বা বিল্ডিং
- সুসান ফুল
- বকুল
- সোনালু
- শাপলা
- গন্ধরাজ
- কাঞ্চন
- নানান ভাষায় ভালবাসা
- বরফের তৈরী ঘর
- কাঠ মালতী
- নয়নতারা
- চিকিত্সাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিন মার্কিন ...
- ত্বক পরিচর্যায় স্ক্রাব
- ডেঙ্গু
- বর্নাণুক্রম অনুসারে উদ্ভীদের নাম
- মাখনা ফুল
- পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জিতলেন তিন আলোকবিজ্ঞানী
- কাঠশালিক
- ড্রাগনফ্রুট
- How to attach file in Yahoo mail Classic
- আলোকচিত্রী:কেভিন কার্টার
- মুক্তিযুদ্ধের অন্য রকম দলিল
- মাওবাদী আন্দোলন
- এক ব্যতিক্রমী মাওবাদী বিপ্লবী
- এক হাজারের বেশি হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছেন লতা মুঙ্গ...
- গান নয় অ্যাকশন মাইকেল জ্যাকসন
- পুতুল নাচ (পাপেট শো)
- নাচিয়ে যেমন নাচায় তেমনই নাচে
-
▼
October
(102)
Tuesday, October 6, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment