Friday, October 9, 2009

জলপোকাদের কারিগর

0 comments
জালাল উদ্দিনের (৪২) শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামের খাল-বিল ও নদীর পাড়ে। পানিতে ডুবে শিশুমৃতু্যর খবরগুলো তঁাকে খুব নাড়া দিত। জালাল উদ্দিন দেখলেন, প্রতিবছর নানা অসুখ-বিসুখের পাশাপাশি পানিতে ডুবে অনেক শিশু মারা যায়। সঁাতার জানলে শিশুদের এভাবে অকালে প্রাণ দিতে হতো না। তাই সেই কৈশোরেই শিশুদের সঁাতার শেখানোর একটা বাসনা তঁার মনে উঁকি দেয়।

পড়াশোনা করতে গিয়ে সেই ইচ্ছাটা এতদিন পূরণ করা হয়ে ওঠেনি। তাই এক ধরনের যন্ত্রণা সব সময় পীড়া দিত তঁাকে। একসময় পড়াশোনা শেষ হয়। ২০০৪ সালে জালাল উদ্দিন শারীরিক প্রশিক্ষণ (বিপিএড) কোর্স করেন। তারপর ফিরে আসেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার ন্যামতপুর গ্রামের বাড়িতে। শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদ্রাসায়। চাকরির পাশাপাশি তিনি নেমে পড়েন শিশুদের সঁাতার শেখানোর কাজে।
২০০৪ সালে নিজ গ্রামের বান্নিঘাটে কয়েকজন শিশুকে সঁাতার শেখানো শুরু করেন। সপ্তাহে দুই দিন বিনা খরচে এ কাজ চালিয়ে যান তিনি। এভাবে ন্যামতপুর ও আশপাশের গ্রামের শিশুরা সঁাতারে মনোনিবেশ করে। গত পঁাচ বছরে অসংখ্য শিশু তঁার কাছ থেকে সঁাতার শিখেছে। তঁার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ও হাওরের বিভিন্ন এলাকা থেকে খুদে জলপোকাদের নিয়ে গত শুক্রবার সকালে বান্নিঘাটের নরসুন্দা নদে সঁাতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে হাওরবেষ্টিত তাড়াইল, ইটনা ও করিমগঞ্জ উপজেলা থেকে দুই শতাধিক খুদে সঁাতারু এতে যোগ দেয়। প্রতিযোগিতা দেখতে আসে কয়েক হাজার মানুষ। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন করিমগঞ্জ উপজেলার সংস্কৃতিকর্মী এম এ আউয়াল। এ সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
জালাল উদ্দিন বলেন, পানিতে ডুবে শিশুদের মর্মানি্তক মৃতু্যর অনেক খবর পড়েছি। শৈশব থেকে ইচ্ছা ছিল শিশুদের জন্য বিনা খরচে সঁাতার শেখানোর কাজটি আমি করব। সেই অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে কয়েক শ শিশু আমার কাছ থেকে সঁাতার শিখেছে ও প্রশিক্ষণ নিয়েছে।'
ওই দিন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৫০ জন সঁাতারু বাছাই করা হয়েছে। তাদের পরবর্তী সময়ে নিখরচায় প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের খুদে সঁাতারুদের সপ্তাহে দুই দিন প্রশিক্ষণ চলবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সঁাতারুরা জেলা থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সঁাতারে কৃতিত্ব অর্জন করবে বলে বিশ্বাস করেন জালাল উদ্দিন। তঁার সহযোগী মাহবুবুল আলম, বকুল মিয়াসহ কয়েকজন জানান, প্রথমবারের মতো জালাল উদ্দিন ব্যক্তিগত খরচে সঁাতার প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। প্রতিবছর এ প্রতিযোগিতা চলবে। তবে সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে স্থায়ী সঁাতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
ন্যামতপুর গ্রামের অশীতিপর এম এ আশিদ খান জানান, অনেক দিন পর গ্রামে একটা উত্সব হয়েছে। সঁাতার প্রতিযোগিতায় শিশু সঁাতারুদের দেখে খুব ভালো লেগেছে। প্রতিবছর যেন এ প্রতিযোগিতা হয়।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এম এ বারী খান বলেন, জালাল ব্যক্তিগত উদ্যোগে সঁাতার প্রতিযোগিতার যে আয়োজন করেছেন, তাতে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। তঁাকে সবার সহযোগিতা করা দরকার। কারণ গ্রামাঞ্চল থেকেই বেরিয়ে আসবে সত্যিকারের ক্রীড়াবিদ।'

0 comments:

Post a Comment