Wednesday, October 7, 2009

ড্রাগনফ্রুট

0 comments

চীনা সভ্যতার ভয়ঙ্কর দানব ড্রাগনের কাহিনী কে না শুনেছে! ধারালো নখ, আগুনরঙা চোখ, কণ্টকাকীর্ণ অমসৃণ দেহ যে কারো চোখের সামনে ভেসে উঠলেই রোমাঞ্চিত হতে হয়। এবার বাংলাদেশে এসেছে ড্রাগন। তবে সেই আগুন ঝরানো ভয়ঙ্কর রূপে নয়, এসেছে সুস্বাদু ফল হিসেবে। বাংলার জমিনে হাজির হয়েছে নতুন আজব ফল ড্রাগনফ্রুট। কণ্টকাকীর্ণ অমসৃণ কা-, আগুনরঙা চোখ ও ড্রাগনের অবয়বের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় এর নাম হয়েছে 'ড্রাগনফ্রুট' মধ্য আমেরিকার এ ফলটি থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন বাউকুলের জনক বাকৃবি জার্মপস্নাজম সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. এম এ রহিম। সংরৰণ করা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জার্মপস্নাজম সেন্টারে। বাণিজ্যিক উৎপাদনে প্রতি হেক্টরে আয় সম্ভব এক লাখ টাকা। এছাড়া যেসব মানুষ ডায়াবেটিসে ভোগেন তারা এ ফল খেয়ে শরীরের রক্তের গস্নুকোজ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। পাশাপাশি ফলটি ল্যাক্সটিভ ও লিভার সমস্যার জন্য উপকারী।

জানা যায়, ড. রহিম ২০০৭ সালে থাইল্যান্ডে ড্রাগনফ্রুট খেয়ে মুগ্ধ হন। দেশে ফেরার পথে তাই কয়েকটি চারা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এবং পরিচর্যা ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ দুই বছর পর ড্রাগনফলের দেখা পান। দেখতে যেমন থাইল্যান্ডের ড্রাগন তেমনি স্বাদেও। শত শত ফলবৈচিত্র্যে ভরপুর এ জার্মপস্নাজম সেন্টারে ড্রাগনফল এরই মধ্যে বিশেষ স্থান অধিকার করেছে।
ড. রহিম জানান, ড্রাগনফ্রুটের (ঐুষড়পবৎবঁং ংঢ়.) উৎপত্তি মধ্য আমেরিকায় হলেও ভিয়েতনামে এ ফলের ব্যাপক চাষ হয়। এছাড়া এ ফলটি মেক্সিকো, মধ্য ও দৰিণ আমেরিকা, দৰিণ-পূর্ব এশিয়া, দৰিণ চীন, ইসরাইল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতেও চাষ হচ্ছে। ড্রাগন ক্যাকটাস পরিবারের একটি ফল। গাছ দেখে সবাই একে চিরসবুজ ক্যাকটাস বলেই মনে করে। এশিয়ার মানুষের কাছে এ ফল অনেক প্রিয়। এটি খেতে হালকা মিষ্টি স্বাদের। এ ফলকে ড্রাগনফল ছাড়া 'পিটাইয়া', 'টিহায়া' নামেও ডাকা হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাধারণত চার জাতের ড্রাগনফ্রুট চাষ করা হয়। জাতগুলো হচ্ছে সাদা ড্রাগনফ্রুট, হলুদ ড্রাগনফ্রুট, লাল ড্রাগনফ্রুট ও কালচে ড্রাগনফ্রুট। এগুলোর মধ্যে লাল ড্রাগনফ্রুট সুমিষ্ট এবং সবচেয়ে জনপ্রিয়।




ড. রহিম আরো জানান, এ গাছে ফুল আসে শুধু রাতে। ফুল লম্বাটে ও রঙ সাদা অথবা হলুদ। অনেকে ড্রাগনফ্রুটের ফুলকে 'মুন ফ্লাওয়ার' অথবা 'রাতের রানী' বলে ডেকে থাকেন। এটা একটা লতানো গাছ কিন্তু এর কোনো পাতা নেই। ড্রাগনফ্রুট গাছ ১.৫-২.৫ মিটার লম্বা হয়। ড্রাগনফ্রুট একটি উচ্চ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ফল। এ ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, মিনারেল ও অাঁশ রয়েছে। ফলটি জুস তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। অনেকে খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে এ ফল খেয়ে থাকেন।
তিনি জানান, মদ ও সস্নেভার তৈরিতেও এর ব্যবহার অনস্বীকার্য। এ ফলে ফাইবার ০.৯ ভাগ (প্রায়), ফ্যাট ০.৩ গ্রাম, অ্যাশ ০.৬৪ গ্রাম, ক্যারোটিন ০.০২ গ্রাম, পানি ৮৩.০ গ্রাম, ফসফরাস ৩৬.১ মিলিগ্রাম, অ্যাসকরবিক এসিড ৯.০ গ্রাম, প্রোটিন ০.২২ গ্রাম, রিবোফ্লাবিন ০.০৪৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.৮৮ গ্রাম, নিয়াসিন ০.৪৩০ মি. গ্রাম, আয়রন ০.৬৫ মিলিগ্রাম থাকে। এছাড়া এ ফল উৎপাদিত দেশগুলোতে ফলের ডিশের সঙ্গে না থাকলে যেন ডিশ অপূর্ণ থাকে, যা দেখতে অত্যনত্দ সাজানো ও মনোমুগ্ধকর। একটি তাজা ফল খেয়ে সহজেই মন ও শরীরকে পরিপাটি, সুস্থ রাখা যায়। যেসব মানুষ ডায়াবেটিসে ভোগেন তারা এ ফল খেয়ে শরীরের রক্তের গস্নুকোজ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ফ্রেশ ফলের চেয়ে শুষ্ক ফল বেশি কার্যকর। এ ফল সালাদের সঙ্গেও ব্যবহার করা যায়।
জার্মপস্নাজম সেন্টারের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কৃষিবিদ শামসুল আলম মিঠু জানান, ড্রাগনফলের আকার গোলাকার থেকে ডিম্বাকার এবং রঙ উজ্জ্বল গোলাপি থেকে লাল রঙের হয়। প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ২০০-৭০০ গ্রাম। এ ফলগুলো ৭-১০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ৮-১৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। ভেতরের পাল্প সাদা, লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের হয়। পাল্পের মধ্যে ছোট ছোট কালো নরম অনেক বীজ থাকে। ড্রাগনফ্রুটের মিষ্টতা (টিএসএস) ১৮ থেকে ২৪-এর মধ্যে হয়ে থাকে।
ড. রহিম বলেন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশে ড্রাগনফ্রুট চাষ করা গেলে চাষীরাই উপকৃত হবেন এবং প্রতি হেক্টর জমিতে এক লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। এছাড়া শৌখিন মানুষ তাদের আবাসিক এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধক ফল গাছ হিসেবে এ ড্রাগনফ্রুট লাগাতে পারবেন।
লিখেছেন গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস বাকৃবি প্রকাশিত হয়েছে "দৈনিক যায়যায়দিন" পত্রিকায়।

0 comments:

Post a Comment