Saturday, October 17, 2009

বনৌষধি দুধিয়া/বড় কেরুই

0 comments

 দুধিয়া—এই জনপ্রিয় নামকরণের পেছনে হয়তো এর নরম কাণ্ড ভাঙলে দুধের মতো সাদা কষ বের হওয়ার বিষয়টি থাকতে পারে। তবে এর পোশাকি নাম বড় কেরুই। এক অতি সাধারণ বীরুধ। আমাদের দেশে রাস্তাঘাটের পাশেই এদের জন্মাতে দেখা যায়। ধানি জমির পাশে ও বসতবাড়ির জঙ্গলা জায়গায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। আমি এদের দেখেছি মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস থেকে ইন্দোনেশিয়ায় ক্ষেতখামারের ধারে। অতি নগণ্য আগাছা হয়েও ভেষজগুণে সে এক সমৃদ্ধ উদ্ভিদ।
এই নরম বীরুধ বর্ষজীবী, সোজা ও অবনতভাবে জন্মে থাকে। এক-দুই ফুট উঁচু। কাণ্ড রোমযুক্ত। পাতা সরল ও বিপরীত। কিনারা করাতের মতো কাটা কাটা। বৃন্ত ছোট ছোট। পাতার শিরা বেশ স্পষ্ট। পুষ্প-বৃন্ত ছোট। ফুল একলিঙ্গী। মানে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা, তবে একই পুষ্পগুচ্ছে জন্মে থাকে। প্রতিটি পুষ্পগুচ্ছে একটি স্ত্রী ফুল মাঝখানে জন্মে থাকে আর পুরুষ ফুল অনেকগুলো তার চারদিকে ঘিরে থাকে। বীজ ছোট ধূসর রঙের। সাধারণত শীতকালে ফুল হয়ে থাকে। সব থেকে মজার কথা হলো, রাস্তার ধারের এই আগাছা ভারতীয় বনৌষধির বিখ্যাত গ্রন্থ রাজনিঘণ্টুতে এক স্থান করে নিয়েছে। এর সমালংকৃত নাম হলো: খরস্কন্ধ, প্রিয়াল, নবদ্রু, তাপসপ্রিয়। ভারতীয় বনৌষধির তালিকায় এর প্রধান গুণ রক্ত আমাশয় ও পেট বেদনায় ব্যবহূত হয়। প্রসূতিদের স্তন্যদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। গাছের সাদা কষ জীবাণুনাশক। এর সাদা কষে ও কাণ্ডে আছে গ্লাইকোসাইডস, স্টেরোল নামের রাসায়নিক পদার্থ। চীনা-থাই ভেষজ তালিকায় গাছের নির্যাস অ্যাজমা ও মৃগী রোগের এক উপকারী ভেষজ। পুরান কাশিতে এর উপকার পাওয়া যায়। এই প্রজাতির নাম Euphorbia hirta আর পরিবার Euphorbiaceae। আমাদের দেশে এর আরও কয়েকটি ঘনিষ্ঠ ভেষজ প্রজাতি আছে। যেমন: বাজবারন, মনসাসিজ, ছোট কেরুই ও শ্বেত কেরুই।

0 comments:

Post a Comment