Saturday, October 31, 2009

বনৌষধি জাফরান

18 comments
প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলোয়লিখেছেন নওয়াজেশ আহমদ
জাফরান নিয়ে কয়েক বছর আগে আমাদের দেশে এক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। বিক্সা গাছকে জাফরান বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন বেশ কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করে একটা লেখা লিখেছিলাম একটি দৈনিক পত্রিকায়। এখন জাফরানের কথা বলা যাক।


আসলে জাফরান বা কুমকুম তৈরি হয় এক ধরনের পেঁয়াজের মতো ছোট গুল্মের ফুলের গর্ভকেশর থেকে। এই কন্দগুল্মের বৈজ্ঞানিক নাম Crocus sativa, পরিবার Iridaceae। এশিয়া মাইনরের পাহাড়ি এলাকায় এর আদি বসতভূমি। প্রাচীন মিসর ও গ্রিসবাসী এর ব্যাপক ব্যবহার জানত। বিখ্যাত গ্রিক প্রজ্ঞা ও বক্ত ইসোক্রোটিস জাফরানের গুঁড়া দিয়ে বালিশ সুগন্ধি করতেন সুখনিদ্রার জন্য। ফিনিসিয়ান ও রোমানরা একে নানাভাবে ব্যবহার করত। ৯০০ শতকের দিকে আরবরা এই কন্দ সম্প্রসারণ করে স্পেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে। বর্তমানে দক্ষিণ স্পেনের আব্রুজি গ্রামে, ইতালি, পারস্য ও কাশ্মীরের পামপুরের উচ্চভূমিতে জাফরানের চাষ হয়ে থাকে। জাফরান অত্যন্ত স্পর্শকাতর আবহাওয়া, জলবায়ু ও মাটির ব্যাপারে। আগস্ট মাসে সাধারণত এর পেঁয়াজের মতো কন্দ লাইন করে চক জাতীয় মাটিতে রোপণ করা হয়। কয়েকটা পাতা গজানোর পর প্রতি কন্দ থেকে দু-তিনটি হালকা বেগুনি রঙের ফুল দেখা দেয়। পাপড়ি ছয়টি। অক্টোবর মাসে এই ফুল সংগ্রহ করা হয় অতি যত্নের সঙ্গে। এরপর ফুলের ভেতর থেকে উজ্জ্বল কমলা রঙের গর্ভকেশর তোলা হয় বিশেষ যত্নসহকারে। এই কেশর শুকিয়েই তৈরি হয় জাফরান। এক পাউন্ড জাফরান তৈরি করতে প্রায় ৮০ হাজার ফুলের প্রয়োজন হয়। সে জন্য আসল জাফরান এত মূল্যবান। কাশ্মীরের জাফরান ঈষত্ লাল ও পদ্মফুল গন্ধি। এটি শ্রেষ্ঠ জাফরান বলে বিবেচিত। দক্ষিণ ইউরোপের জাফরান ফিকে লাল আর গন্ধ অনেকটা কেয়া ফুলের মতো। এর মান মধ্যম। আর ইরানের জাফরান একটু সাদাটে ও মধুর গন্ধযুক্ত। এটা নিম্নমানের।
জাফরানের উল্লেখযোগ্য রাসায়নিক দ্রব্য হচ্ছে: ক্যারোটিন, লাইকোপেন, রাইবোফ্লোবিন, ক্রোচিন ও ক্রসিটিন নামের গ্লাইকোসাইডস। ভারতের প্রাচীন ভেষজ সাহিত্যে জাফরানের সন্ধান পাওয়া যায়। গুণ পর্যায়ে সুগন্ধি, উষ্ণবীর্য, কাশ, বায়ু ও কণ্ঠরোগনাশক। দেহের কান্তিবর্ধক। পেটের নানাবিধ রোগে উপকারী। বিশেষ করে হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
নানা ধরনের খাবার-দাবারে সুগন্ধি ও রঙের জন্য জাফরানের ব্যবহার অতি প্রাচীন। মূল্যবান পোশাক রাঙাতে জাফরানের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিল।
নজরুলের একটা গানের কলি দিয়ে শেষ করছি জাফরান প্রসঙ্গ।
‘পরি জাফরানী ঘাঘরি চলে সিরাজের পরী...’।







জাফরান একটি সুন্দর ফুল বেশির ভাগ ভারতে কাশ্মীরে জন্মায়। যেটি ওজনের মধ্যে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান মসলার একটি । এইটি গ্রিসে প্রথম চাষ করা হয়েছিল। বিরিয়ানীতে রংএর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

এক অজানা কারণে জাফরান ফল তৈরী করতে পারে না। যার ফলে এটা বংশ বিস্তারের জন্য মানুষের সাহয্য প‌্রয়োজন হয়। ক্রোমগুলি মাত্র এক বছর পর্যন্ত বেচে থাকে এবং এর মধ্যেই এই ক্রোমগুলিকে মাটিতে রোপন করতে হয়। এইটার বাংলা নামঃ জাফরান
অন্যান্য স্থানীয় নামঃ saffron Za'afaran, Zaafaran Kesar, Zafran
বৈজ্ঞানিক নামঃ Crocus sativus পরিবারঃ Iridaceae (Iris family)

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস

জগৎ/রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Liliopsida
বর্গ: Asparagales
পরিবার: Iridaceae
উপরিবার: Crocoideae
গণ: Crocus
প্রজাতি: C. sativus
দ্বিপদ নাম
Crocus sativus

18 comments:

Post a Comment