মহানগরী ঢাকায় রয়েছে বেশকটি জাদুঘর। এর মধ্যে একটি জাদুঘর আপন বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। লালবাগ দুর্গের ভেতর এ জাদুঘরটির অবস্থান। গত শতকের আশির দশকে এখানে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ জাদুঘরে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। লালবাগ প্রাসাদ দুর্গটি এ দেশে মোগল স্থাপত্যের এক অসাধারণ কীর্তি। উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত এ দুর্গে আছে সুদৃশ্য তোরণ, দরবার হল, পরীবিবির সমাধিসৌধ, তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এবং বেশ কটি মনোরম ফোয়ারা। সুরম্য দরবার হলটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে জাদুঘরটি। বিভিন্ন নিদর্শন প্রদর্শনের মাধ্যমে মোগল শাসকদের জীবনধারা সম্পর্কে দর্শনার্থীদের ধারণা দিতেই এ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম শাহ ১৬৭৮ সালে লালবাগ দুর্গের অংশ হিসেবে দরবার হলটি নির্মাণ করেন। পরবর্তী সুবাদার ঢাকায় এসে এখানে বসে রাজকার্য পরিচালনা করেন। তিনি ছিলেন শায়েস্তা খান। তিনি এখানে দেশি-বিদেশি বণিক ও পর্যটকদের সাক্ষাৎকার দিতেন। শায়েস্তা খান সুবাদারি শেষে ১৬৮৮ সালে ঢাকা ত্যাগ করলে দুর্গটি অযত্ন-অবহেলার শিকার হয়। তবে শত অবহেলা আর অযত্নের পরও দুর্গের ইমারতগুলো বিস্ময়করভাবে টিকে আছে। অবশেষে গত শতকের আশির দশকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দুর্গটি সংস্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ শায়েস্তা খানের স্মৃতিবিজড়িত দরবার হলটি একটি আকর্ষণীয় জাদুঘরে রূপান্তর করে। এমনিতেই দরবার হলটি একটি দর্শনীয় ইমারত। দ্বিতল এ ইমারতটি নির্মাণে মোগল এবং বাংলার স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। তাছাড়া ইমারতের নিচতলায় আছে হাম্মামখানা। যাতে মোগলদের আভিজাত্য ও রুচিবোধ ফুটে উঠেছে। ফলে এখানে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় একই সঙ্গে হাম্মামখানাটি দেখারও সুযোগ হয়েছে দর্শনার্থীদের। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মোগলদের ব্যবহৃত নিদর্শন সংগ্রহ করে এ দরবার হলটি সাজিয়েছে। একতলার তিনটি এবং দোতলার তিনটি কক্ষে রয়েছে যাবতীয় নিদর্শন। নিচতলার কক্ষগুলোতে রয়েছে তীর, ধনুক, বর্শা, বল্লম, কুঠার, কৃপাণ, তরবারি, গাদাবন্দুক প্রভৃতি। আর উপর তলার কক্ষগুলোতে আছে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, শিলালিপি, রেপ্লিকা মুদ্রা, মৃৎশিল্প, কার্পেট, মোগল চিত্রকলা, ফরমান দলিল ইত্যাদির সঙ্গে শাহজাদা আজম শাহের একটি হাতে আঁকা ছবি। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী জাদুঘরটি দেখতে আসেন। রবিবার পূর্ণ দিবস এবং সোমবার অর্ধদিবস লালবাগ দুর্গ বন্ধ থাকে। সপ্তাহের অন্যান্য দিন দুর্গ যথারীতি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।
* স্বপন কুমার দাস
0 comments:
Post a Comment