Sunday, July 15, 2012

ভগীরপাড়া, দিনাজপুর

0 comments
আটষট্টি হাজার গ্রামের এই বাংলাদেশ। শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো এই গ্রামগুলো এবং তার নামকরণ নিয়ে আছে নানা জনশ্রুতি। কোনোটা সত্য, কোনোটা আবার শুধুই মিথ। গ্রামবাংলা এবং তার জনশ্রুতি নিয়ে আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন। আজ শুনুন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ভগীরপাড়া গ্রামের গল্প।
জনশ্রুতি আছে_ ভগীরপাড়া এক সময় খুব ছোট ও ধনশালী গ্রাম ছিল। খুব অল্প মানুষের বসবাস ছিল এখানে। এক সময় পুকুর আর নদী ভরা মাছ যেমন ছিল, তেমনি ছিল গোলাভরা ধান। মনের আনন্দে বসবাস করত গ্রামের মানুষ। ফলে আশপাশের মানুষ এখানকার বাসিন্দাদের মনে করত ভাগ্যবান। অনেকে তাই এই গ্রামের মানুষকে ভাগ্য গ্রামের মানুষ বলে ডাকত। ভাগ্য কথাটি যুগের পর যুগ মুখে মুখে এক সময় ভাগ্য থেকে ভগী হয়ে যায়। গ্রামকে পাড়া ধরে এভাবেই এক সময় গ্রামের নাম হয়ে যায় ভগীরপাড়া। কথায় কথায় ভগীরপাড়া গ্রামের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডা. খোসবুল জানালেন ভগীরপাড়ার এই জনশ্রুতি।
ইতিহাস
বীরগঞ্জের ছোট্ট গ্রাম ভগীরপাড়া। এক সময় অল্প কিছু লোক বাস করত এখানে। এখন অবশ্য লোকে লোকারণ্য ভগীরপাড়া গ্রাম। আঠার শতকের কথা। দিনাজপুরের বীরগঞ্জের নদীপাড়ে ছিল ছোট্ট এক বসতি। সেখানে বাস করত এক কামার। সকালে উঠেই হাতুড়ি নিয়ে বসে যেতেন দা, বঁটি বানানোর কাজে। সারাদিন চলত তার কাজ। বাড়ির ঘাটে বসেই তিনি দা, বঁটি বানাতেন। কামারের নাম ছিল ভগীর নাথ। আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ তার কাছে দা, বঁটি, কোদাল, কাঁচি, লাঙলের ফলা বানাতে আসত। নিজের এলাকা তো বটেই, আশপাশের এলাকার মানুষও এক নামে তাকে চিনত। এক সময় ভগীর নাথের নামেই গ্রামের নাম হয়ে যায় ভগীরপাড়া।
ভগীরপাড়ায় একদিন
গ্রামের বেশিরভাগ ঘরই মুলির বেড়া আর ছনের চালা দিয়ে তৈরি। তবে টিনের চালও আছে। চাষের জমির সমান উচ্চতায় করা ঘরবাড়িগুলো দেখে মনে হয় ফসলের মাঠেই ঘর তুলেছে ভগীরপাড়ার বাসিন্দারা। ছোট্ট গ্রামের চারপাশে ধানক্ষেত। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজের খেলা। সেচের মাধ্যমে এখানে সারা বছরই ইরি ধান উৎপাদিত হয়। ধানক্ষেতের মাঝে ছোট ছোট ঘর দেখে মনে হতে পারে, গ্রামের বাসিন্দারা বুঝি এসব ঘরেই রাত কাটায়। ঘরগুলো আসলে ধানক্ষেতে পানি দেওয়ার শ্যালো ইঞ্জিনের (ডিপ পাম্প) ঘর। এখানকার মানুষের জীবনযাপন খুবই সাধারণ। সবুজ প্রকৃতিই তা জানান দেয়।

অনিন্দিতা রাজকন্যা

0 comments:

Post a Comment