বন, পাহাড়, নদী আর ঝরনা নিয়ে এই পানিহাটা। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী জনপদ। এখানে আরো আছে সহজ-সরল আদিবাসী মানুষের দল। সেদিন মেঘে আকাশ ভার হয়ে ছিল। শেষ হাসি অবশ্য সূর্যই হেসেছিল, তবে ততক্ষণে ৯টা বেজে গেছে। শেরপুর শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রওনা হই নালিতাবাড়ী। আধঘণ্টার একটু বেশি লাগল নালিতাবাড়ী পেঁৗছতে। হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করছিল স্থানীয় সাংবাদিক মনির। আগে থেকেই কথা ছিল। একটি চায়ের দোকানে খানিক জিরিয়ে নিয়ে মনিরের মোটরসাইকেলে চেপে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের পথ ধরে রওনা হই। পৌর শহরের গড়কান্দা চৌরাস্তা হয়ে সোজা উত্তরে চারালি বাজার পার হলে নাকুগাঁও। পরে পূর্ব দিকে মোড় নিলে দারুণ সুন্দর চারালি ভোগাই ব্রিজ। এরপর পূর্ব দিকেই প্রায় তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর চায়না মোড়। এখান থেকে পথ গেছে উত্তরে। গাছগাছালিতে ঘেরা রাস্তাটি পাহাড় ঘেঁষে। প্রায় আধা কিলোমিটার যাওয়ার পর পাওয়া যায় পানিহাটা। এখানে দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে চলেছে ভোগাই নদী। এর পারে পাহাড়ের ঢালে পানিহাটা খ্রিস্টান মিশন। মিশনের সামনে গিয়ে থামল আমাদের মোটরসাইকেল। এরপর উঁচু-নিচু টিলাপথে ভোগাইয়ের তীর ধরে পথ চললাম। পথে এক দোকানি নূরুজ্জামান, মনিরের আগের চেনা, খুব খাতির করল, চা-বিস্কুট না খাইয়ে ছাড়ল না। প্রবীণ মারাক আর ম্যাট্রিকেল সাংমা_দুই গারো আমাদের সঙ্গী হলেন এখান থেকে।
পানিহাটা নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে। একেবারে গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে। দূরের পাহাড়গুলোতে মেঘের লুকোচুরি। ওই পাহাড়েই মেঘালয়ের তুরা শহর। ভোগাইও এসেছে ওই পাহাড় থেকেই। এর পানি স্বচ্ছ টলটলে। ভারতের প্রান্তে ব্রিজের ওপর দুজন বিএসএফকে টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। সেগুন, গজারি আর আকাশমণির বাগান থেকে পাখিরা বার্তা পাঠাচ্ছে কিচিরমিচির শব্দে। পথে পায়ে বাধছে ছোট ছোট বুনো গাছ-লতাগুল্ম। ম্যাট্রিকেল জানালেন, এখন পানিহাটার পাহাড়ে বন্য হাতি আছে। রাতে লোকালয়ে নেমে আসে।
খ্রিস্টান মিশনে উপাসনালয়, চিকিৎসাকেন্দ্র, বিদ্যালয় আর শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য হোস্টেল আছে। মিশনের অল্প পুবে আদিবাসী গ্রাম ফেক্কামারী। ৪৫-৫০টি পরিবারের বাস পাড়াটিতে। পাড়ার পূর্ব দিকে পাহাড়ঘেরা পানিহাটা বিল। বিলে অনেক মাছ_চাষ হয় যে!
দুপুর গড়াতে শুরু করেছে। নূরুজ্জামানের দোকানে বনরুটি আর কলা খেয়ে নিলাম। চাও খেলাম শেষে। সূর্য আরেকটু পশ্চিমে হেললে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের দিকে গেলাম। আধঘণ্টা বন্দর ঘোরাঘুরি করে ফিরে এলাম নালিতাবাড়ী। মুড়ি আর চা নিয়ে নালিতাবাড়ী প্রেসক্লাবে তখন আড্ডা দিচ্ছিলেন সাংবাদিক হীরা ভাই, সোহেল ও লাল মোহাম্মদ। আমি আধঘণ্টা থাকলাম আড্ডায়। সন্ধ্যা ঘনালে ফেরার পথ ধরলাম।
কিভাবে যাবেন
কোথায় থাকবেন
ঢাকার মহাখালী থেকে বিলাস পরিবহনের বাসে নালিতাবাড়ী যাওয়া যায়। সময় লাগে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। ভাড়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। নালিতাবাড়ী শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে পানিহাটা যেতে সময় লাগে ৩৫ থেকে ৪৫ মিনিট। মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার যাতায়াত ভাড়া দুই শ থেকে আড়াইশ টাকা। নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা আছে।
--হাকিম বাবুল
0 comments:
Post a Comment