Sunday, August 1, 2010

দালাল

0 comments
ঢাকা শহরে জমি বেচা-বিক্রির দালাল চক্রের সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাব জানা না থাকলেও এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকা শহরে তথা তার আশপাশে বিভিন্ন সরকারি আধা সরকারি, অফিস অধিদপ্তর, পরিদপ্তর হাউজিং কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রায় ৫০ হাজার জমির দালাল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা ছোট-বড় শতাধিক হাউজিং কোম্পানি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের পিছু প্রতিনিয়ত ছুটে বেড়াচ্ছে। এসমস্ত জমির দালালরা ঢাকার ১৫টির বেশি সাব-রেজিস্ট্রারি অফিস, রাজউক, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, এসিল্যান্ড অফিস, তহশীল অফিস সর্বত্র কাজ করছে।

তিন শ্রেণীর দালাল

দালালদের শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর দালাল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর দালালের সংখ্যা বেশি নয়। এই শ্রেণীর দালাল উচ্চশিক্ষিত। দ্বিতীয় শ্রেণীর দালালদের শিক্ষার দৌড় অনেক কম। এরা বেশির ভাগ হাউজিং কোম্পানির সাথে জড়িত। তৃতীয় শ্রেণীর দালাল একেবারেই অশিক্ষিত। এরা সারাদিন ঘুরে ঘুরে কাজ সংগ্রহ করে। এরা বেশির ভাগ হাউজিং কোম্পানির প্রকল্প এলাকায় ঘুরে ঘুরে জমির প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করে। তাদের নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর দালালের কাছে হাজির করে। অতঃপর ঐসব জমির মালিককে বিভিন্ন রকম ভুল বুঝিয়ে তাদের বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের পুরনো ভিটামাটি নামমাত্র মূল্যে হাউজিং কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করে। অভিযোগ রয়েছে, এই শ্রেণীর দালাল আবার মানুষের সাথে প্রতারণা করে বেশি। এদের খপ্পরে পড়ে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন।

দালালদের আড্ডাখানা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বটতলা ফলপট্টি, মতিঝিল বলাকা ভবনের চারপাশে, রাজউক ভবন ঘিরে, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট সংগলগ্ন চত্বর, পুরনো পল্টন আজাদ প্রোডাক্টসের পাশে, জয়কালী মন্দির, এসিল্যান্ড অফিসের চত্বর, ঢাকা ডিসি অফিসের আশপাশে, আরামবাগ ক্লাবপাড়া, তেজগাঁও রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সসহ সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসগুলো, সাত রাস্তা ভূমি জরিপ অধিদপ্তর অফিসের আশপাশে, জরিপ প্রেসের সামনে বটতলা, গুলিস্তান ও ওসমানী উদ্যানসহ প্রভৃতি স্থানে এদের আস্তানা।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দালাল

ঢাকা জেলার ১৫টির মতো সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে তš§ধ্যে উল্লেখযোগ্য খিলগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, তেজগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, মিরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস প্রভৃতি এলাকায় ভূসম্পত্তি কেনাবেচা ও সংশ্লিষ্ট অফিসসহ জমি সংক্রান্ত সকল কাজে এ দালালচক্র জড়িত।

এডিসির রাজস্ব ও এসিল্যান্ড অফিসে দালাল

ঢাকা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে এডিসির রাজস্বসহ সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড দপ্তরগুলোতে জমির এসএ পরচা, আরএস পরচা, খাজনা, খারিজ করার জন্য যখন কেউ যায় তখন এই দালালচক্র মৌমাছির মতো তাকে ঘিরে ধরে। এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ সমাধান করে দেয়ার কথা থাকলেও তিন মাসেও দিতে পারে না।

ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তরে দালালি

তেজগাঁও সাত রাস্তায় ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তরে কয়েকশ’ দালাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে। কারো যদি পুরনো মৌজা, ম্যাপ, পিডি খতিয়ান, নতুন পরচা ইত্যাদির প্রয়োজন হয় তাহলে ঐ দপ্তরের ভিতরে ঢোকার সাথে সাথে দেখা যাবে ১০ থেকে ১৫ জন দালাল উক্ত ব্যক্তিকে ঘিরে ধরে। তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কথা শুনে এক পর্যায়ে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা দাবি করে। ১দিন থেকে ২ দিনের মধ্যে উল্লিখিত কাগজ দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে দেখা যায় ১৫ দিন বা এক মাসেও ঐ কাগজগুলো দিতে পারে না। এই হলো দালালের কারবার।

জমি বিক্রি করে কমিশন পাওয়ার কৌশল

দালালরা সাধারণত প্রথমে জমির দলিল ফটোকপি করে দ্বিতীয় দালালের হাতে দেয়। দ্বিতীয় দালাল জমির দলিল নিয়ে ক্রেতা খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে ক্রেতা পেলে ঘটকের ভূমিকায় বিভিন্ন কলাকৌশল দেখিয়ে ও বুঝিয়ে জমি ক্রয়ের জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করে। প্রথম দালাল দ্বিতীয় দালালকে জমি বিক্রির একটা নির্দিষ্ট অঙ্ক বলে দেয়। এর উপরে বিক্রি করতে পারলে অতিরিক্ত টাকা পাবে দালালেরা। এমনভাবে তারা হাউজিং কোম্পানি কিংবা কোনো ধনাঢ্য ব্যক্তিকে জমি ক্রয়ের জন্য বাধ্য করার চেষ্টা চালায়। যদি ভাগ্য ভালো থাকে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সমঝোতা হয় তাহলে দীর্ঘদিন পরে একজন দালালের ভাগ্য ফেরে। তারা উভয় পক্ষের কাছ থেকে কমিশন আদায় করে আর যদি জমির মধ্যে ভেজাল থাকে এবং কাগজপত্রে গরমিল পাওয়া যায় তখন আর বিক্রি করার কোনো সুযোগ থাকে না। তবে তৃতীয় শ্রেণীর দালালের ক্ষেত্রে বেশি পরিলক্ষিত হয়। কারণ পূর্বেই বলা হয়েছে এ শ্রেণীর দালাল একেবারেই অশিক্ষিত। জমির কাগজপত্র না বুঝেই তা নিয়ে দৌড়াতে থাকে। এক্ষেত্রে অধিকাংশই সফল হয় না। আশায় আশায় তাদের দিন যায়।

0 comments:

Post a Comment