Monday, August 16, 2010

শ্রীমঙ্গল

45 comments
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগান মৌলভী বাজার জেলায়। আর এ জেলার শ্রীমঙ্গলে রয়েছে আকর্ষণীয় কিছু চা বাগান। বাংলাদেশের একমাত্র রেইন ফরেস্ট লাউয়াছড়াও রয়েছে এখানেই। কড়চার এবারের বেড়ানো মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।

চা বাগান

শ্রীমঙ্গলে বেশ কয়েকটি মনোরম চা বাগান আছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সময় চারিদিকে চোখে পড়বে শুধুই চা বাগান আর চা বাগান। পছন্দসই যে কোনো বাগানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেখতে পারেন। এখন চা পাতা তোলার মৌসুম। চা বাগানের শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততাও তাই চোখে পড়বে চারিদিকে।

সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা

শ্রীমঙ্গল শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডে অবস্থিত সীতেশ বাবুর ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা চিড়িয়াখানাটি মুগ্ধ করার মতো। ছোট্ট এ চিড়িয়াখানাটিতে সোনালী বাঘ, সাদা বাঘ, মেছো বাঘ, অজগর, লজ্জাবতী বানর, মায়া হরিণ, সোনালি কচ্ছপসহ নানা ধরণের বিরল প্রাণী রয়েছে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট

দেশের একমাত্র চা গবেষণা ইনস্টিটিউটটি (বিটিআরআই) শ্রীমঙ্গল শহরের পাশেই। বিশাল চা বাগানের মাঝে বিটিআরআই এর ক্যাম্পাসটি সবারই ভালো লাগবে। এখানে আছে চা পরীক্ষার ল্যাবরেটরি, বিটিআরআই উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রজাতির চা গাছ, ভেষজ উদ্ভিদের বাগান, পুরনো চা গাছ। তবে এসব দেখতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।

নীলকণ্ঠ কেবিন

শ্রীমঙ্গল শহরের পাশেই রয়েছে চা শ্রমিক রমেশের জাদুকরী চায়ের দোকাণ নীলকণ্ঠ কেবিন। দুই রঙ থেকে শুরু করে পাঁচ রঙের চায়ের জন্য বিখ্যাত এ কেবিন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পর্যটকদের ভীড় লাগে এখানে। স্বাদে খুব একটা মজাদার না হলেও রমেশ বাবুর এ চা পরখ করে দেখতে পারেন।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের পাশেই রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। প্রায় ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে এ উদ্যানে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, বিশ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি। প্রধান সড়ক ফেলে কিছুদূর চলার পরে ঢাকা-সিলেট রেল লাইন। এর পরেই মূলত জঙ্গলের শুরু। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ হলো উল্লুক, চশমা বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর ইত্যাদি। উদ্যানে বেড়ানোর তিনটি ট্রেকিং পথ আছে। একটি তিন ঘন্টার, একটি দু ঘন্টার এবং অন্যটি এক ঘন্টার পথ। উদ্যানের ভেতরে একটি খাসিয়া পল্লীও আছে। এ পল্লীর খাসিয়া তরুণ-তরুণীরা উদ্যানে আগত দর্শনার্থীদের গাইডও করে থাকেন। প্রবেশপথে উদ্যানের কার্যালয় থেকে এ রকম কোনো গাইড নিয়েই জঙ্গল ট্রেকিংয়ে যাওয়া উচিৎ। নয়তো পথ হারানোর ভয় আছে।

ভাড়াউড়া ও রাজঘাট লেক

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রয়েছে ভাড়াউড়া লেক। পাশেই রাজঘাট চা বাগানের ভেতরে দৃষ্টি নন্দন আরেকটি লেক রয়েছে। এ লেক দুটিতে বর্ষায় প্রচুর পদ্ম ও শাপলা ফুটে থাকে।

হাইল হাওর

শ্রীমঙ্গল শহরের পশ্চিমে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মৎস্য ভান্ডার খ্যাত হাইল হাওর। এ হাওরে সারা বছরই প্রচুর পাখির আনাগোনা থাকে। তবে শীতে অতিথি পাখির আগমন পাখির সংখ্যাকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। তিন দিকে পাহাড় বেস্টিত এ হাওরের সৌন্দর্য মৃগ্ধ হবার মতো।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে রেল ও সড়ক পথে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০১৭১১৯২২৪১৭), শ্যামলী পরিবহন (০১৭১১৯৯৬৯৬৫), সিলেট এক্সপ্রেস (০১৭১৩৮০৭০৬৯), টি আর ট্রাভেলস (০১৭১২৫১৬৩৭৮) ইত্যাদি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া নন এসি বাসে ২৫০ টাকা। টি আর ট্রাভেলসের এসি বাসে ভাড়া ৩৫০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায় শ্রীমঙ্গল। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৫২৬ টাকা, এসি সিট ৩৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩০০ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২০০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৪৫ টাকা, শোভন চেয়ার ১৩৫টাকা, শোভন ১১০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টায় উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩৭০ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৫০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৬৫ টাকা এবং শোভন ১৫০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের জায়গা ভানুগাছ রোডে টি রিজর্ট (০৮৬২৬-৭১২০৭, ০১৭১২৯১৬০০১, ০১৭১২০৭১৫০২)। এছাড়া শ্রীমঙ্গলের অন্যান্য হোটেল হলো হবিগঞ্জ সড়কে টি টাউন রেস্ট হাউস (০৮৬২৬-৭১০৬৫), কলেজ রোডে হোটেল প্লাজা (০৮৬২৬-৭১৫২৫)।
০০ আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন ০০

45 comments:

Post a Comment