Sunday, August 15, 2010

বড় বাপের পোলায় খায়

0 comments
রসনাবিলাসে পুরান ঢাকার এতিহ্যের কথা সবার জানা। রমজান মাসে এখানে মেলে বাহারি ইফতার ও রকমারি খাবার। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য চকবাজারের ইফতার নিয়ে লিখেছেন খালেদ আহমেদ
রমজান মানে সংযম। শুধু ইফতারের বাজারে তার ব্যত্যয়। পুরো রমজান মাসে নগরীর ইফতারির বাজার সরগরম থাকে । নামিদামি রেস্টুরেন্টের ব্যাপক আয়োজন থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লাতেও ইফতারির ছোট বড় দোকান বসে। সবখানে টেবিলে সাজানো থাকে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার। আর ক্রেতাদের উপচেপড়া। রাজধানীর সবচেয়ে বড় ইফতারির বাজার পুরান ঢাকায়। এরমধ্যে চকবাজারের ইফতার ঐতিহ্যবাহী। সেই কবে থেকে রমজান এলেই বাহারি সব ইফতার সামগ্রী নিয়ে শাহী মসজিদের সামনের রাস্তা দখল করে বসে এ বাজার। দুপুর একটার মধ্যেই দোকানিরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেন। ক্রেতারাও আসতে থাকেন দুপুর থেকেই। বিকাল চারটার সময় রীতিমতো জমে ওঠে নগরীর সবচেয়ে বড় এ ইফতার বাজারটি। ঐতিহ্যবাহী এ ইফতারের বাজারে আস্ত খাসির রোস্ট থেকে শুরু করে বাহারি সব রকম খাবার কিনতে পাওয়া যায়। ভিন্ন স্বাদের ইফতার সামগ্রী কিনতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা চকবাজারে ছুটে আসেন। ক্রেতারা পরিবারের জন্য কিনেন বাহারি সব ইফাতর।
ঐতিহ্যবাহী এই ইফতারির বাজার ঘুরে দেখা গেল, গোশত পদের ইফতারির মধ্যে সুতি কাবাবের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
৮ কেজি ওজনের আস্ত খাসির রোস্টসহ ইফতারির পসরা নিয়ে বসেছেন আব্দুল জলিল বাবুর্চি। তার পসরায় আরও রয়েছে সুতি কাবাব, কোয়েল পাখি ভাজা, খাসির রান, মুরগির রোস্ট, হাঁস ভাজা, কবুতর ভাজা। সব মিলিয়ে তিনি বিক্রি করছেন ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। আস্ত খাসির রোস্টটির দাম হাঁকছেন ৩ হাজার টাকা। অনেকেই বিক্রি করছেন শাহী জিলাপি। এ জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। গতবছরও একই দরে এ জিলাপি বিক্রি হয়েছে। এক কেজির নিচে কোন শাহী জিলাপি নেই। সর্বোচ্চ আড়াই থেকে তিন কেজি পর্যন্ত একটি জিলাপির ওজন।
গতবারের তুলনায় এবারের চকবাজারে ইফতারি পণ্যের দামে খুব বেশি বাড়েনি। এ বছর বড় বাপের পোলায় খায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, সুতি কাবাব ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, খাসির রান বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ২৫০ টাকা, মুরগির রোস্ট ১৫০ টাকা, চিংড়ি প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪৫ টাকা, কোয়েল পাখি ভাজা ৬০ টাকা, কবুতর ১৫০ টাকা, হাঁস ২০০ টাকা, দই বড়া প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ঘুঘনি প্রতি কেজি ৪০ টাকা, শাহী চানা (ছোলা) ১২৫ টাকা কেজি, ছোলা ভাজা প্রতি কেজি ১২০ টাকা, জিলাপি ৮০ টাকা, মুড়ি প্রতি কেজি ৫৫ ও ৮০ টাকা, গরুর চপ ২০ টাকা, নার্গিস চপ ৩০ টাকা। এছাড়া আলুর চপ, বেগুনি, পিঁয়াজু ও সবজির চপ ২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। টিকিয়া বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা করে। সিঙ্গারা, সামুচা, নিমকি, মাঠা, শাহী পরাটা, হালিম, কাশ্মীরি শরবত, লাবাং শরবত, মুড়িভর্তাও পাওয়া যাচ্ছে চকবাজারের এ ইফতার বাজারে। রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের আচারও। আমড়া, ত্রিফলা, তেঁতুল, আমচুর, কাসুন্দি ও বরইয়ের আচারের সমাহার। খেজুরসহ নানা প্রকারের ফল বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে মালটা, পেঁপে ও বাঙ্গির চাহিদা বেশি। কাঁচা মালটা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পাকা মালটা প্রতি কেজি ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে পেঁপে ও বাঙ্গি সাইজ অনুযায়ী নানা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেলের শরবত, ইসুবগুলের ভুসি, পুঁদিনার পাতা, ধনেপাতা, লেবু বিক্রি হচ্ছে ইফতারির প্রচলিত উপকরণ হিসেবে।
এই ইফতার বাজারে ক্রেতার ভিড় শুরু হয় দুপুর থেকেই। নগরীর অসহনীয় যানজট ঠেলে উত্তরা থেকে চকবাজার এসেছেন জয়নাল আবেদীন। তিনি চকবজারের ইফতারের কথা অনেকের কাছেই শুনেছেন, তাই কিনতে এসেছেন। জয়নাল আবেদীনের মত ধানমন্ডি থেকে এখানে ইফতার কিনতে আসেন রুহুল আমিন। তবে এখানে আসার পর তার কেনাকাটায় ভাটা পড়েছে। তার ভাষ্যে, ইফতারির এত দাম, কী কিনবেন সেটাই বুঝতে পারছেন না। রোজার দ্বিতীয় দিন শুক্রবারের বাজার ভালই বললেন চকবাজারের ইফতার বিক্রেতরা। তারা বলেন, প্রথমদিন বৃষ্টির কারণে বাজার না জমলেও আশা করছি আজ জমবে।

0 comments:

Post a Comment