Friday, August 20, 2010

ক্যামেরুনে মেয়েদের ‘বড়’ হতে বাধা

1 comments
এ যুগেও আফ্রিকার মেয়েদের ওপর চলে নানা ধরনের অমানুষিক নির্যাতন। ক্যামেরুনে রয়েছে এ ধরনের আরেকটি অমানবিক প্রচলন। যখন কোন মেয়ে বড় হতে থাকে তখন শারীরিক বেশ কিছু পরিবর্তন স্পষ্টতই চোখে পড়ে। বাড়ন্ত শরীর, গলার স্বর, আচার-স্বভাবেও আসে পরিবর্তন। অনেক মেয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায় শারীরিক গঠনে তারা একটু দ্রুত এগিয়ে যায়। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা স্বাভাবিক নয় ক্যামেরুনে। ক্যামেরুনে মেয়েদের এই ‘বড় হওয়া’ বা ‘বাড়ন্ত’ বয়সকে আটকে দেয়া হয়। কীভাবে?

যখন একটি মেয়ে বড় হতে থাকে তখন তার স্তনও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধির অনুষঙ্গ এটি। কিন্তু ক্যামেরুনে বাচ্চা মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধিকে জোর করে আটকে দেয়া হচ্ছে। একটি মেয়ের বয়স যখন আট তখন আগুনে গরম করা পাথর ঘষে দেয়া হয় তার বুকে যেন স্তন বেড়ে উঠতে না পারে। এর মধ্যে দিয়ে একটি মেয়ের ‘বড় হওয়া’কে বাধা দেয়া হয়? যেন কোন ছেলে মেয়েটিকে বিরক্ত না করে, কোন পুরুষ যেন তার প্রতি আগ্রহ না দেখায়?

এমিলিয়েন, তার মেয়ে কেউই বাদ যায়নি

ক্যামেরুনের উত্তরে অবস্থিত দুয়ালা। সেখান থেকে কয়েক ঘন্টার পথ ইয়াবাসি। এমিলিয়েন দোম্বি একটি কুটিরের বাইরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। কুটিরের ভেতরে তার মেয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে। কারণ মেয়েটির বুকে গরম পাথর ঘষা হচ্ছে? এই মেয়েটি তার সবচেয়ে ছোট। যতবার গরম পাথর ছোঁয়ানো হচ্ছে ততবারই মেয়েটি আর্ত চিৎকার করে যাচ্ছে। এমিলিয়েন বলেন, আমার মেয়ের ওপর যখন এ ধরনের কিছু করা হয় তখন সত্যিই আমার ভীষণ কষ্ট হয়। আমি সহ্য করতে পারি না। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। এই গ্রামে প্রতিটি মেয়ের জন্যই ‘স্তন' একটি সমস্যা।

এমিলিয়েনের বয়স বর্তমানে ৩৫। কিন্তু তাকে দেখতে আরো অনেক বেশি বয়স্কা মনে হয়। তিনি পরাজয় মেনে নিয়েছেন জীবনের কাছে? তিনি এখন মনে করেন মেয়ে হয়ে জš§ানো তার উচিত হয়নি। তিনি তাঁর কুটির ছেড়ে বের হন না বললেই চলে। কেননা তার শারীরিক পরিবর্তন তিনি অন্য কাউকে দেখাতে চান না। অনেক ছোট বেলায় তাঁর বুকেও গরম পাথর ঘষে দেয়া হয়েছিল। তার গলার নিচ থেকে পেট পর্যন্ত কেবল পোড়া, কালো দাগ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। তিনি বললেন:আমি যখন খুব ছোট তখন আমার মা গরম পাথর আমার বুকে ঘষে দিত। প্রতিদিনই এমনটা চলতে থাকে যতক্ষণ না স্তন মিশে যেয়ে একেবারে হাড়ের সঙ্গে লেগে যাচ্ছে। অমানুষিক শারীরিক কষ্ট বোঝানোর মত নয়। সেই কষ্ট এবং ব্যাথা কখনোই যায় না।

এমিলিয়েনের কুটিরের সামনে বসে রয়েছে এমিলিয়েনের মা আনে কোয়েডি। তিনি কখনোই চাননি তাঁর নিজের মেয়ে এ ধরনের যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাক। কিন্তু তার হাত-পা ছিল বাঁধা, সমাজের দিকে তাকিয়ে মেয়েকে এই যন্ত্রণা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। কোয়েডি বললেন: একটি মেয়ের বয়স যখন আট হয় তখন থেকেই শুরু হয় নিয়মিত গরম পাথর ঘষা। তখন থেকেই স্তন আর বড় হতে পারে না। এর ফলে কোন ছেলেও কোন মেয়েকে বিরক্ত করতে পারে না। সে দিক থেকে মেয়েদের রক্ষা করা হয়।

মেয়ে অপহরণ এবং ধর্ষণ বেড়ে গেছে ক্যামেরুনে। তা থামাতে পারেননি এমিলিয়েন এবং তার মা। এর পরিবর্তে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মকে বাধা দেয়াই শ্রেয় মনে করেছেন তারা। শুধু ক্যামেরুনেই নয়, আফ্রিকার অন্যান্য দেশ, যেমন টোগো, বেনিন, নাইজিরিয়া এবং গিনি এক্যোটোরিয়ালেও মেয়েদের ওপর চালানো হয় এই নির্যাতন। এই রীতি মেনে চলা হচ্ছে কয়েক দশক ধরে। এর মূলে রয়েছে বাবা-মায়ের অহেতুক ভয়। সেই ভয় হল, হয়তো মেয়ে কারো সঙ্গে পালিয়ে যাবে বা বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়ে পড়বে? এসব হবে না যদি মেয়েটি শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় না হয়।

মহিলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডেনিস কাফুন্ডা জানান এর ক্ষতিকর দিকগুলোর কথা? এর মধ্যে একটি হল ব্রেস্ট ক্যান্সার? কাফুন্ডা জানান:মেয়েদের বুকে বা স্তনে যা করা হয় তা নিরাময়ের কোন ওষুধ নেই? তা ঠিক করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ারও কোন উপায় নেই। এটি খুবই অমানবিক একটি কাজ? মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের মতই।
০০ ডয়চে ভেলে

1 comments:

Post a Comment