Thursday, August 19, 2010

গিরিশচন্দ্র সেন ও কুরআনের বাংলা অনুবাদ

41 comments
খ্রিস্টিয় দ্বাদশ শতাব্দীর আগেই ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে বিজেতা মুসলমানদের আগমন হয়। আর বণিক ও ইসলাম ধর্ম প্রচারক হিসাবে তাঁদের আগমন আরো আগে; তবুও মুসলমানদের সর্বপ্রধান ও মূল জীবনব্যবস্থা সম্বলিত মহাগ্রন্থ আল কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়নি। বাংলা ছিল তখন প্রায় সাত কোটি লোকের ভাষা; এ ভাষায় রচিত অনেক সমৃদ্ধ সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদার অধিকারী ছিল। তখন আরবি, ফার্সি, উর্দু ভাষাবিজ্ঞ আলেমের অভাব ছিল না - এঁদের মধ্যে অনেকের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উপর ভাল দখলও ছিল। তাঁদের রচিত ও অনূদিত বিভিন্ন পুস্তক হতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু এদিকে তাঁদের কারও মনোযোগ ছিল না। জানা যায়, টাঙ্গাইলের মওলানা আমিরউদ্দিন বসুনিয়া এ সময় আমপারার কিছু অংশ কাব্যে অনুবাদের চেষ্টা করেছিলেন. তাঁর কাব্যিক আমপারার অপূর্ণাঙ্গ অনুবাদখানি কাঠের হরফে মুদ্রিত হয়েছিল এবং কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদক এবং হযরত মুহম্মদ (স.) এর প্রথম বাঙালি জীবনীকার ভাই গিরিশচন্দ্র সেন। তিনি এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের আচার্য কেশব চন্দ্র সেনের নির্দেশে, গিরিশ চন্দ্র সেন ১৮৭১ সালে ব্রাহ্মমতে দীক্ষিত হন এবং ইসলাম ধর্ম, আরবি ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞানার্জনে অগ্রহান্বিত হন। উল্লেখ্য, তিনি বাংলা, সংস্কৃত, ফার্সি, উর্দু ভাষায় পূর্বেই পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। গিরিশ চন্দ্র সেন ছয় বছর (১৮৮১-১৮৮৬ খ্রি) পরিশ্রম করে নিজের বিদ্যার উপর সাহস ও দৃঢ়তা রেখে কুরআন শরীফের প্রথম বঙ্গানুবাদ করেন। তাঁর এই অনুবাদ মুসলিম আলেমগণ অনুমোদন ও গ্রহণ করলে বিতর্কহীনভাবে গিরিশ চন্দ্র জয়মাল্য পান। মওলানা আকরম খাঁ- গিরিশ চন্দ্রের অনুবাদের লেখিত প্রশংসা করেন।

এছাড়া সমকালীন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা-সাময়িকীতে গ্রন্থটির শুদ্ধতা ও গুণাবলিতে মুগ্ধ হয়ে কলকাতাসহ বাংলাদেশের বহু আলেম তাঁরে উদ্দেশ্যে প্রশস্তি পত্র লেখেন। গিরিশ চন্দ্র সেন ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গবাসী মুসলমানের কল্যাণে বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন জানিয়ে বক্তৃতা ও গ্রনন্থরচনা করেন। তিনি টীকাসহ কুরআন শরীফের অনুবাদ ছাড়াও ইসলাম ধর্ম বিষয়ে মোট ৪২টি পুস্তক রচনা ও অনুবাদ করেন। যাঁর অধিকাংশই দুর্লভ। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছেঃ তফসিরুল হোসাইনি, শাহ্ আবদুল কাদিয়ের ফায়িদা এবং তফসিরুল জালালাইন অবলম্বনে টীকাসহ কুরআন শরীফের অনুবাদ (১৮৮১-’৮৬ খ্রি); শেখ ফরিদুদ্দিন আত্তারের “তাজকেরাতুল আউলিয়া” অবলম্বনে “তাপসমালা” (১৮৮০-’৯৬); মওলানা জালালুদ্দিন রুমির “মসনবি শরীফ” “ও শেখ আত্তারের” মানতেকুহ্তায়ের” অবলম্বনে “তত্ত্বরতœমালা” (১৮৮২-১৮৮৭); শেখ সাদির “গুলিস্তাঁ” ও “বুস্তাঁ” এর উপাদান নিয়ে “হিতোপাখ্যানমালা (১৮৭৬-১৮৮৫) ইত্যাদি। ভাই গিরিশচন্দ্রের জš§ ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে এবং ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ঢাকায় এই সাধকে জীবনাবসান ঘটে। প্রায় নিরবেই তাঁর জš§জয়ন্তী ও মৃত্যুবার্ষিকী অতিক্রান্ত হয়। কেউই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা-স্মরণ বা সৃষ্টির মূল্যায়নের কোনো উদ্যোগ আজও নেয়া হয়নি। গত ১৫ আগস্ট ছিল তাঁর একশততম মৃত্যুবার্ষিকী।
**শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান**

41 comments:

Post a Comment