Monday, August 16, 2010

তেজপুর

0 comments
ব্রহ্মপুত্র নদী আছে বাংলাদেশে, আবার ভারতের অসম রাজ্যেও রয়েছে। অসমের আর এক দিগন্ত পড়ে আছে ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পাড়ে, নাম তার ‘তেজপুর’। তেজপুরের দু’পাশ ঘিরে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। অতীতের দরং এখন শোনিতপুরÑ শোনিতপুর জেলার সদর রয়েছে এই তেজপুরে। কিংবদন্তী, শিবের অবতার ভৈরব নাথের উপাসক অসুর-রাজ বানের রাজত্ব ছিল অতীতে। অসুররাজ বানের রূপসী কন্যা ঊষা স্বপ্নে দেখেন দয়িতকে। সখি চিত্রলেখা রূপ দেয় চিত্রে- খুঁজেও মেলে স্বপ্নে দেখা রাজকুমার দ্বারকাধিপতি শ্রীকৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধকে। বিয়ে হয় গান্ধর্ব মতে ঊষা ও অনিরুদ্ধর। বান জানতে পেরে কারাগারে পাঠায় অনিরুদ্ধকে। দ্বারকা থেকে শ্রীকৃষ্ণ (হরি) আসেন নাতি উদ্ধারে। এ দিকে শিবও আসেন ভক্ত বানের আহবানে। এরপর যুদ্ধ শুরু হয়। হরি আর হরের যুদ্ধে রক্ত ঝরে সারা শহরে, সেই থেকে নাম হয় শোনিত বা তেজপুর অর্থাৎ রক্তের শহর।

বাসা বাঁধে ঊষা ও অনিরুদ্ধ শহর থেকে ৫ কিমি দূরে বামুনী পাহাড়ে। ৭টি মন্দির ছিল সেকালে-শিব ও বিষ্ণু উপাস্য দেবতার নামে। তেমনই পাহাড় চূড়ায় ঊষা হরণের নানান আখ্যান রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের স্নানঘাটে সিদ্ধিদাতা গনেশের মন্দির। পাথর কুঁদে তৈরি গনেশ মূর্তিটি দেখার মত। ঘাট থেকে ব্রহ্মপুত্রের দৃশ্যও মনোরম। বিপরীতে ঊষা ও অনিরুদ্ধ পরিবেশ উদ্যান অর্থাৎ মনোহর বাগিচা, মূর্তি হয়েছে ঊষা ও অনিরুদ্ধের। এর সামনে আর এক টিলা অর্থাৎ অগ্নিগড়। ১৭৫ ধাপ অতিক্রম করে এখানে আসতে হয়। পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদ। সাঁঝের সূর্যাস্তে ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিমাকাশে অস্তগামী সূর্যের রঙের বর্ণালী আর এক নয়নলোভন দৃশ্য। মূর্তি রয়েছেÑ ঊষা ও সখি’র। এখানে ট্যুরিস্ট লজের সামনে আছে একটি পার্ক। কেউবা এই পার্ক দেখে বলেন, এ যেনো স্বর্গের নন্দন কানন।

তেজপুর শহরের অপর প্রান্তে মহাভৈরব শিব মন্দিরটিও যথেষ্ট আদৃত ভক্তদের কাছে। তেজপুরের ৫১ কিমি পশ্চিমে বিশ্বনাথ মন্দিরটির ভগ্নস্তূপ আজও ট্যুরিস্টদের অতীত রোমন্থন করায়। লেক, পার্ক আর গাছ-গাছালিতে ছাওয়া সুন্দর সাজানো শহর তেজপুরের প্রকৃতিও সুন্দর। শীত ও গ্রীষ্ম কারোরই আধিক্য নেই, জলবায়ু ও স্বাস্থ্যপ্রদ তেজপুরের। জলবায়ুর গুণে তেজপুরেও চায়ের কেন্দ্র রয়েছে। প্রায় ৬০টি চা বাগান রয়েছে এই জেলায়। এককালে ব্রিটিশদের প্রিয় ছির তেজপুর শহর। রেসকোর্স, পোলো গ্রাউন্ড ব্রিটিশেরই গড়া। ১৯৪২ সালে স্বাধীন ভারতের পতাকা তুলে ব্রিটিশের বুলেটে শহীদ হন ১৪ বছরের কনক লতা তেজপুরের অদূরে গহপুরে।

তেজপুরের আশপাশের জায়গাও কম সুন্দর নয়। তেজপুর থেকে ৬০ কিমি দূরে পাহাড় আর সবুজে ছাওয়া আরণ্যক ভালুকপঙ। হিমালয়ের পাদদেশে শোনিতপুর জেলায় আর এক বন্য জন্তু সংগ্রহালয় ১৭৫ বর্গ কিমি ব্যাপ্ত মোনাই ও রূপাই-এর উপর দিয়ে পথ গিয়েছে অসম ও অরুণাচল রাজ্যের সীমান্ত জোড়া শহর ভালুকাপঙে। এখানে নীল খরসে াতা দামাল নদী জিয়াভরলি নদী বয়ে চলেছে। তেজপুর থেকে বাসে তেজপুর-গৌহাটি সড়কে ৪৫ কিমি পশ্চিমে ওরাং চারিআলি পৌঁছে চারি আলি থেকে ১৮ কিমি দক্ষিণে ওরাং বন্যজন্তু সংগ্রহালয়। শাল, সেগুন, শিমুল, ইউক্যালিপাটাসে ছাওয়া এই বনাঞ্চলে বসবাস করে এক শৃঙ্গি গন্ডার, হাতি, লেপার্ড, শম্বর, হরিণ ছাড়াও নানা প্রজাতির পাখি। শীতে দূর-দূরান্ত থেকে চেনা-অচেনা পাখিরা এসে নীড় বাঁধে অরণ্য জুড়ে বৃক্ষ শাখে। দুধ সাদা পেলিক্যানেরা আসে সুদূর আমেরিকা থেকে। ওরাং-এর ফরেস্ট বাংলোতে রাতে অবস্থান করা যায়। রাতে অবস্থান করা মানেই এর রোমাঞ্চ পাওয়া। তেজপুর ঘুরে দেখা আর ওরাং অরণ্যে কয়েকদিন বেড়ানো জীবনের স্মরণীয় ঘটনা হতে পারে। যে জন্য আজ ভুলতে পারিনি তেজপুরকে।

0 comments:

Post a Comment