Wednesday, August 18, 2010

আবর্জনা থেকে শক্তি

0 comments
বর্তমান পৃথিবীর সব থেকে বড় সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জ্বালানি ও শক্তিবিষয়ক। এ নিয়ে উন্নত বিশ্বের চিন্তা ও গবেষণার শেষ নেই। সভ্যতার মূলচালিকা শক্তি বিদ্যুৎ বা এনার্জি। এবার সেই এনার্জি বা শক্তি তৈরির এক অভিনব পদ্ধতির কথা জানা গেছে। প্রতিদিনই কমবেশি সকল বাসা বাড়িতেই আবর্জনা হয়। আমরা সেসব আবর্জনা ফেলে দেই। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে আবর্জনা থেকেও তৈরি করা সম্ভব শক্তি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এখন আবর্জনা থেকে শক্তি উৎপাদন করা হচ্ছে।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩৫টিরও বেশি দেশে রয়েছে আবর্জনা থেকে শক্তি উৎপাদনের প্লান্ট। এদের মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় ৫টি দেশ হলো ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা ও স্পেন। আবর্জনাকে পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদনের জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের প্লান্ট। সারা বিশ্বে এরকম প্লান্টের সংখ্যা ৬০০-র বেশি।

২০০০ পাউন্ড আবর্জনা পুড়িয়ে যে পরিমাণ তাপশক্তি পাওয়া যায়, ৫০০ পাউন্ড কয়লা পুড়িয়ে ঠিক ততটাই তাপশক্তি পাওয়া যায়।

আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা একটি কার্যকর 'মোবাইল ওয়েস্ট টু এনার্জি' কনভার্টার তৈরির ব্যাপারে চেষ্টা করছেন। এই মোবাইল এনার্জি টু ওয়েস্ট কনভার্টারটি বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা পুড়িয়ে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। এছাড়াও এই কনভার্টারটিকে যুদ্ধক্ষেত্রে আমেরিকান সৈন্যদের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেও ব্যবহার করা হবে বলে চিন্তা করছেন গবেষকরা। এরকম একটি কার্যকর কনভার্টার তৈরি পুরোপুরি সফল হলে হয়তো ভবিষ্যতে বাসাবাড়িতেও এই কনভার্টার ব্যবহার করা যাবে। এবং এসব কনভার্টারের মাধ্যমে আমরা ঘরের আবর্জনা দিয়ে নিজেরাই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হব।

আবর্জনাতে অন্যান্য ময়লার পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন ধাতু, কাগজ, প্লাস্টিক। প্লাস্টিক সাধারণত তৈরি করা হয় পেট্রোলিয়াম (হাইড্রো-কার্বন) থেকে। এছাড়াও আবর্জনাতে অন্যান্য জৈব পদার্থ থাকে যা শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও এ নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। বর্তমানে প্রকৌশলীদের কাছে একটি পছন্দের শব্দ হচ্ছে 'Recycle' 'Recycle' হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আবর্জনা থেকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী জিনিস প্রক্রিয়াজাত করা যায়। অনেকেই আবর্জনা পোড়ানোর পরিবর্তে তা Recycle করার পক্ষপাতী। এই প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। Recycle করায় উৎপাদিত জিনিসের দাম কমে যায়। তবে এতে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও আছে। যেমন : রঙিন এবং উজ্জ্বল বা গ্লসি কাগজ Recycle করা বেশ কঠিন। তাই বলা যায়, দুটি প্রক্রিয়াই ব্যবহারযোগ্য। আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ তৈরির এসব প্লান্টে আবর্জনার বেশিরভাগ অংশই পুড়ে যায়। তবে আবর্জনার কিছু অংশ আছে যা পোড়ে না। একে বলা হয় অ্যাশ। এই অ্যাশের প্রধান অংশ হলো বিভিন্ন ধরনের ধাতু। এসব অ্যাশ থেকে বিভিন্ন ধাতু পুনরুদ্ধার করে আবার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাগজ ও প্লাস্টিক সমৃদ্ধ আবর্জনার প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি অংশ পুড়িয়ে তা থেকে শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। সাধারণ ১ টন আবর্জনা থেকে ৫২৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব।

কয়লা একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। কয়লার মজুদ ফুরিয়ে এলে হয়তো আবর্জনাই হবে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রধান জ্বালানি। আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্নকারী শীর্ষস্থানীয় দেশ ডেনমার্ক আবর্জনার ৫৪ শতাংশেরও বেশি পুড়িয়ে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি এর ফলে আরেকটি সুবিধা পাওয়া যায়। তা হলো বেশিরভাগ আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলায় বাকি আবর্জনা ফেলতে জায়গা কম লাগে।

আমাদের দেশে এ মুহূর্তে প্রধান সমস্যাগুলোর একটি হলো বিদ্যুৎ সমস্যা। তাই আমাদের দেশেও আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ তৈরির বিষয়টি আরো গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা দরকার।
**আরমান খান **

0 comments:

Post a Comment