Sunday, August 8, 2010

বলধা গার্ডেন

0 comments
রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ পুরান ঢাকা। যা আসল ঢাকা নামেই পরিচিত। আর এ পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। পুরান ঢাকার এরকম একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হচ্ছে ওয়ারীর বলধা গার্ডেন। যা ঢাকা তথা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত উদ্যানগুলোর মধ্যে অন্যতম। বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ৩.৩৮ একর জমির ওপর ১৯০৯ সালে উদ্যানটি নির্মাণের কাজ আরম্ভ করেন। যা শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৮ বছর। বিরল প্রজাতির ৮০০ গাছসহ বাগানটিতে প্রায় ১৮ হাজার গাছ রয়েছে। বর্তমানে এখানে ৬৭২ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বাগানটিতে এমনও অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। এখানে শুধুমাত্র ক্যাকটাসই রয়েছে ৭০ প্রজাতির। এছাড়াও যেসব প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে এ বাগান এগুলো হলো_ গ্রিন হাউসের গাছপালা, অর্কিড, ক্যাকটাস, জলজ উদ্ভিদ, শিলালগ্ন প্রজাতি, দেয়াল লতা, বৃক্ষশালা ও বিবিধ গাছপালা। জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ওয়ারী, টিকাটুলী ও নারিন্দার ঠিক মাঝখানে দু'টি ভাগে বলধা গার্ডেন তৈরি করেছেন। বলধা গার্ডেনের এক পাশের নাম সাইকি এবং অপর পাশের নাম সিবিলি। 'সাইকি' অর্থ আত্দা এবং 'সিবিলি' ছিল গ্রিকের প্রকৃতি দেবীর নাম। বলধা গার্ডেনের সাইকি অংশটিতে সবার যাওয়ার অনুমতি নেই। এটা বন্ধ করে রাখা হয়। কারণ এমন কিছু দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে যা মানুষের আনাগোনায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাইকিতে রয়েছে_ নীল, লাল ও সাদা শাপলাসহ রঙ্গিন পদ্মা, তলা জবা, অপরাজিতা, ক্যাকটাস, পামগাছ, জবা, প্রভৃতি। এখানে আরো রয়েছে_ 'সেঞ্চুরি প্লান্ট' নামক শতবর্ষে একবার ফোটা ফুলের গাছ। আরো রয়েছে বাওবাব নামক এক ধরনের গাছ। এ গাছের খোঁড়ল এর মধ্যে আফ্রিকার আদিবাসীরা মিসরের ফারাওদের বহু পূর্বেই মৃতদেহ রেখে মমি বানাত। এ অংশের দু'টি গ্রিন হাউসের একটিতে আছে নানা প্রজাতির অর্কিড এবং অপরটিতে রয়েছে ঔষধি ও ইনডোর উদ্ভিদ। এখানেই ছিল বলধার জমিদার বাড়ি। বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশটি সবার জন্য উন্মুক্ত। বাগানের এ অংশে রয়েছে সূর্যঘড়ি। যার মাধ্যমে সূর্য নিজেই সময় বলে দেয়। এছাড়াও এখানে শঙ্খনিধি নামক একটি পুকুর রয়েছে। সিবিলিতে বিরল প্রজাতির পদ্মফুল রয়েছে যা জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ আফ্রিকা থেকে এনেছিলেন। এখানে আরো রয়েছে পারুল, কনক, সাদা অপরাজিতা, নীল শাপলা, আমাজন লিলি, কদম, চালতা, ঝুমকো লতা, শাপলা, ছায়াতরু, শতমূলী, এলাচি ফুল, কনক সুধা, আফ্রিকান টিউলিপ, অর্কিড, এনথুরিয়াম, স্বর্ণ অশোকসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ। ১৯৪৩ সালে জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর এ বাগানটির দায়িত্ব নেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সে সময় হাইকোট সরাসরি এ বাগানটির তত্ত্বাবধানে ছিল। পরবর্তীতে ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের 'কোর্ট অব ওয়ার্ডস' বলদা গার্ডেনের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিদের অবহেলা ও অযত্নের ফলে বাগানটি নষ্ট হতে শুরু করে। ১৯৬২ সালে বনবিভাগ বাগানটির দায়িত্ব নিয়ে নতুনরূপে তা সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। ধীরে ধীরে বাগানটি পূর্বের সমৃদ্ধি ফিরে পেতে শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম উদ্যান হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও বাগানটি আজও টিকে আছে ঢাকার বুকে।

0 comments:

Post a Comment