Tuesday, August 17, 2010

হবিগঞ্জ

0 comments
হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ জেলাকে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ হিসাবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। প্রকৃতির রম্য নিকেতন বৃহত্তর সিলেটের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ। পাহাড়, হাওর, নদী এবং চা ও রাবার বাগান, বনজসম্পদ, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন আর গ্যাসসহ অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, খাসিয়া, টিপরা উপজাতি এবং মনিপুরীদের বসবাসে সমৃদ্ধ হবিগঞ্জ। ২৪৩৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী হবিগঞ্জের উত্তরে সুনামগঞ্জ ও সিলেট পূর্বে মৌলভীবাজার, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ভারতের পার্বত্য ত্রিপুরা, পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলা। ৮টি উপজেলা ৭৭টি ইউনিয়ন ও ৬টি পৌরসভা এবং ২১৯৬টি গ্রামের মোট জনসংখ্যা ১৮ লক্ষাধিক। ১৮৭৮ সালে মহকুমা এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হলেও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার না হওয়ায় হবিগঞ্জে প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি।

রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে ৩/৪ ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত হবিগঞ্জ। ভৌগোলিক বৈচিত্র্যপূর্ণ হবিগঞ্জের ৮টি উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলাই ভাটি অঞ্চলে। বর্ষাকালে ভাটি অঞ্চলের অধিকাংশই ডুবে যায় অথৈ পানিতে। দূর থেকে তখন ছোট গ্রামগুলোকে দেখে মনে হবে হাঁসের মত পানিতে ভাসছে। এ সময় গ্রামগুলোর যোগাযোগের মাধ্যম ইঞ্জিন নৌকা। বর্ষাকালে হাওর অঞ্চলে নৌকা বাইচ, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ্য। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ গ্রাম বানিয়াচং এই জেলায়। এখানে রয়েছে সাগরদীঘি যা রাণী কমলাবতীর দীঘি হিসাবে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে বাইরের হামলা থেকে গ্রাম রক্ষার জন্য প্রাচীনকালের গড়ের খাল, রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ, বাংলার স্বাধীন সুলতানী আমলে তৈরি বিবির মোকাম ও পুরানবাগ মসজিদ। বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গলে রয়েছে বিথঙ্গল আখড়া। প্রাচীনকালে এ আখড়ায় ১২০ জন বৈষ্ণব বসবাস করতেন বলে কথিত আছে। নাগুরায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে পুরাতন ধান গবেষণা কেন্দ । নবীগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড। এ উপজেলারই দিনারপুর এলাকায় কুরুটিলা দর্শনীয় স্থান হিসাবে পরিচিত।

চুনারুঘাট, মাধবপুর, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ২৪টি চা বাগান। চা বাগানের নৈসর্গিক দৃশ্য সহজেই দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে। শাহজীবাজার ও বাহুবলের রূপাই ছড়ায় রয়েছে ২টি বড় রাবার বাগান, শাহজীবাজার ও রশিদপুরে ২টিসহ জেলায় বড় গ্যাস ফিল্ড রয়েছে ৩টি। শাহজীবাজারে রয়েছে একটি সরকারি ও ২টি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ ও একটি ফ্রুটস ভ্যালি। মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বুলেট আকৃতির স্মৃতিসৌধ।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইলে রয়েছে শঙ্করপাশা শাহীমসজিদ। মাছুলিয়ায় রয়েছে প্রাচীন আখড়া। চুনারুঘাটের মুড়ারবন্দে রয়েছে হজরত শাহজালালের (রঃ) অন্যতম সঙ্গী এই অঞ্চল বিজয়ী হজরত নাসিরউদ্দিন সিপাহসালার (রঃ), হজরত কুতুবুল আওলিয়াসহ অনেক ওলি-আউলিয়ার মাজার। মাজার এলাকায় শত শত জাম গাছ এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। জেলায় বনভূমির পরিমাণ ৩২ হাজার ৭৭৬ একর। ফয়েজাবাদ, রঘুন্দন, দিনারপুর, কালেঙ্গা পাহাড়ী এলাকায় প্রচুর আনারস, লেবু, কাঁঠাল, পান সুপারি উৎপাদিত হয়।

আলীয়াছড়া, মুছাই ও বৈরাগী পুঞ্জিতে বাস করে খাসিয়া উপজাতির কয়েকশ পরিবার। সাতছড়ি ও কালেঙ্গায় বাস করে টিপরা উপজাতির কিছ ুসংখ্যক পরিবার। চুনারুঘাটের বিভিন্ন গ্রামে বাস করে মনিপুরী জনগোষ্ঠী। নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে বসবাসরত এ সকল জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনধারা সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাতছড়ি পাহাড়ে জাতীয় উদ্যানে রয়েছে বিভিন্ন মূল্যবান উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। চুনারুঘাটের রেমায় রয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় অভয়ারণ্য। হবিগঞ্জকে প্রকৃতি সাজিয়েছে অকৃপন ভাবে। এ সৌন্দর্যকে তুলে ধরা গেলে অচিরেই হবিগঞ্জ দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দে পরিণত হবে।

০০ মনসুর উদ্দিন আহমেদ

0 comments:

Post a Comment