Monday, August 30, 2010

প্রেমিকার জন্য ল্যাপটপ এবং একটি অপহরণ নাটক

0 comments
প্রেমিকা বৃষ্টিকে পূজায় ল্যাপটপ উপহার দিতে হবে। এ জন্য দশম শ্রেণীর ছাত্র রাহুলের ৪৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাই প্রবাসী পিতার একমাত্র সন্তান রাহুল বন্ধুদের নিয়ে পরামর্শ করে সাজায় এক অপহরণ নাটক। মায়ের কাছ থেকে মুক্তিপণ নেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা। সে টাকায় কেনা হবে রাহুলের প্রেমিকার জন্য ল্যাপটপ। এমন পরিকল্পনাই ছিল চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র সনদ সুশীল ওরফে রাহুলের (১৬)। কিন্তু মা
তাপসী সুদ্দল মুক্তিপণের টাকা না দিয়ে রোববার সন্ধ্যায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় পুলিশের
সহায়তা চাইলে ফাঁস হয়ে যায় সব। পুলিশ ফাঁদ পেতে রোববার রাতেই কথিত অপহৃত রাহুলকে উদ্ধার এবং তিন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে।
কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ গাজী সাখাওয়াত হোসেন সমকালকে বলেন, 'প্রেমিকাকে উপহার দেওয়ার জন্য স্কুলছাত্র রাহুল ও তার বন্ধুরা এ অপহরণ নাটকের অবতারণা করেছিল। অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত আমরা অভিযান চালিয়ে রাহুলকে উদ্ধার করার পাশাপাশি অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিন জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এ অপহরণের সঙ্গে জড়িত অপর দুজনকেও গ্রেফতার করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।'
নগরীর পাথরঘাটা এলাকার প্রবাসী সত্যরঞ্জন সুশীলের স্ত্রী তাপসী সুদ্দল রোববার ইফতারের আগে কোতোয়ালি থানায় এসে কাঁদতে কাঁদতে জানান, তার ছেলে রাহুলকে (১৬) অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এখন মোবাইল ফোনে রাহুলের মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দাবি করছে। টাকা নিয়ে দ্রুত নগরীর জিইসি মোড়ে যাওয়ার জন্যও বারবার তাগিদ দিচ্ছে তারা। এরপর তাপসী সুদ্দলকে নিয়ে পুলিশ অপহরণকারীদের গ্রেফতার করতে একটি ফাঁদ পাতে। কোতোয়ালি থানার এসআই সুকান্ত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সাদা পোশাকে পুলিশের একটি দল রাহুলের মাকে নিয়ে জিইসি মোড় এলাকায় যায়। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর জিইসি মোড় সংলগ্ন ওআর নিজাম রোডের রয়েল হাসপাতালের সামনে মুক্তিপণের ৫০ হাজার টাকা নিতে দুই অপহরণকারী এলে পুলিশ মোঃ মফিজ নামের এক অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে। পালিয়ে যায় মফিজের সঙ্গী ফারুক। থানায় নিয়ে আসার পর রাহুলের মা মফিজ, ফারুকসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে একটি অপহরণ মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রোববার সকালে পাথরঘাটার বাসা থেকে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে যায় রাহুল। স্কুলের পর কোচিং শেষে দুপুর গড়িয়ে গেলেও সে আর ফিরে আসে না। মোবাইল ফোনও বন্ধ। এ অবস্থায় দুপুর ৩টার দিকে রাহুলের মোবাইল ফোন খোলা পাওয়া যায়। কিন্তু রাহুলের ফোন ধরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। তিনি রাহুলের মাকে বলেন, বসের সঙ্গে কথা বলুন। এরপর অপর অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন ধরে রাহুলের মাকে জানায়, 'আপনার ছেলে রাহুল আমার হাতে। তাকে পেতে হলে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে জিইসি মোড়ে চলে আসেন।'
এ অপহরণের মামলাটি হওয়ার পর রাহুলকে উদ্ধার করতে আরও তৎপর হয় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। একটি বিশেষ টিম রাতেই নগরীতে ব্যাপক অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে ফারুককে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফারুকের বাবা মোঃ আলতাফ হোসেনকে থানায় নিয়ে আসা হয়। আনার দুই ঘণ্টার মধ্যে আত্মীয়স্বজনরা অপহরণকারী ফারুককে থানায় হাজির করে। ফারুক স্বীকার করে, এটি একটি অপহরণ নাটক।
ফারুকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার রাত ২টার দিকে নগরীর খুলশী থানাধীন গরিবুল্লাহ শাহ মাজার এলাকা থেকে কথিত অপহৃত রাহুলকে উদ্ধার করা হয় এবং তার বন্ধু রিয়াদকে (১৬) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর অপহরণকারী ও রাহুলকে পৃথকভাবে ও মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ২৮ আগস্ট সকাল ১০টায় রাহুল নগরীর মেহেদীবাগ সিডিএ কলোনির তার বন্ধু রিয়াদের বাসায় গিয়ে তাকে নিয়ে পাথরঘাটা রাহুলের বাসার কাছে মন্দিরের পেছনে আসে। সেখানে রাহুলের স্থানীয় বন্ধু ইমন পান্নাসহ বৈঠকে বসে। ওই বৈঠকেই এ অপহরণ নাটকের পরিকল্পনা করা হয়।
গতকাল সোমবার আদালত অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া মফিজ, ফারুক ও রিয়াদকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান। রাহুলকে পাঠানো হয় নিরাপত্তা হেফাজতে।
সূত্রঃ সমকাল
রুবেল খান, চট্টগ্রাম ব্যুরো

0 comments:

Post a Comment