দক্ষিণাঞ্চলে অসংখ্য পুরাকীর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিল দেব-দেবীর মূর্তি, দীঘি, দুর্গ, তাম্রলিপি ও মুদ্রা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাকলা-চন্দ দ্বীপের অনেক পুরনো কীর্তিই ধবংস হয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় ও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, চতুর্থ শতকে রাজা চন্দ বরমা চন্দ দ্বীপ জয় করে একটি বিরাট দুর্গ নির্মাণ করেন। এই দুর্গটির অবস্থান ছিল কোটালীপাড়ায়। মাটির দুর্গটি ১৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু এবং দুই মাইল লম্বা। ৩১৫ খ্রীষ্টাব্দে এটি নির্মাণ করা হয়। ১৫০৮ খ্রীষ্টাব্দে ভূমি জরিপের সময় কোটালীপাড়ায় ঐ দুর্গের কাছাকাছি বেশকিছু স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায়। এছাড়া বেশকিছু তাম্রলিপি উদ্ধার হয়। তাম্রলিপিগুলোর মধ্যে ঘুঘ্রাহাটি বা ঘাগরকাঠি তাম্রশাসন তাৎপর্যপূর্ণ। ষষ্ঠ শতকে চন্দ দ্বীপ-বাকলার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গ ছিল সমৃদ্ধশালী জনপদ। দশম শতকের রাজা শ্রী চন্দে র ৫ খানা তাম্রশাসনের মধ্যে তিনখানা প্রাচীন চন্দ দ্বীপে পাওয়া যায়। এগুলো হলো ধুলিয়া, কেদারপুর ও ইদিলপুর তাম্রশাসন। ধুলিয়া ও কেদারপুর বর্তমানে ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত। আর কোটালীপাড়া গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। এছাড়া উজিরপুর থানার শিকারপুরে ১০১৫ খ্রীষ্টাব্দে রচিত একটি তালপাতার পুঁথি পাওয়া যায়। তাম্রশাসনে গৌরনদী থানার রামসিদ্দি, বাঙ্গালা ও ঝালকাঠী থানার নৈকাঠী ও চন্দ দ্বীপের নাম উল্লেখ ছিল। রামসিদ্দি ও বাঙ্গালা গ্রাম দুইটি ছিল পাশাপাশি। ১৩ শতকের এ তাম্রশাসনে ব্রাহ্মণকে ভূমিদানের ও চন্দ ভণ্ড জাতি শাসন ও মন্দির নির্মাণের কথা উল্লেখ আছে।
চতুর্থ থেকে ১৩ শতক পর্যন্ত বাকলা-চন্দ দ্বীপে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে। তখন সংঘারাম বৌদ্ধ মন্দির ও বেশ কিছু বৌদ্ধ মন্দির স্থাপিত হয়। মূলত পাল ও সেন আমলে চন্দ দ্বীপ (বরিশালের আদি নাম) উন্নত জনপদ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। তখন বাঙ্গালা, রামসিদ্দি, মাহিলারা, ফুলশ্রী, গোবরধন, বাটাজোর, চন্দ হার, শিকারপুর, বাগদা, নলচিড়া, বাকাল, বাকাই, লক্ষণকাঠী, আগৈলঝাড়া, নৈকাঠী, রুনশি, বাইশারী, নথুল্লাবাদ, রাজাপুর, ইদিলপুর, গোবিন্দপুর ও লতা প্রসিদ্ধ স্থান হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে থাকে। এই স্থানগুলোতেই ছিল নানা প্রাচীন কীর্তি। কালের বিবর্তনে পুরনো কীর্তি তো দূরের কথা, অনেক এলাকার অস্তিত্বই নেই। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ছাড়াও নদী ভাঙ্গনে হারিয়ে গেছে এসব পুরাকীর্তি। এক সময়ে যেখানে ছিল রাজাদের দালানকোঠা, সেখান দিয়ে এখন চলছে বড় বড় জাহাজ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ফুলশ্রী গ্রামে রাজবংশের ৭ জন রাজকুমারের নামে ৭টি দীঘি ছিল। সুপরিকল্পিতভাবে সুপেয় পানির জন্য খনন করা হয়েছিল এ দীঘিগুলো। এখন তার অস্তিত্ব নেই। অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। নরসিংহের দীঘিতে ঘাটলা পাওয়া গিয়েছিল স্বাধীনতার আগে। এখন সেখানে জনবসতি গড়ে উঠেছে। মাহিলাড়ার রুদ্র সেনের বাড়ি ও দীঘি এখন শুধুই ইতিহাস। রাজাপুর থানার নিকট স্বাধীনতার পূর্বে পুকুর খনন করতে গিয়ে মাটির নীচে টালী ইটের নির্মিত প্রশস্ত দেয়াল পাওয়া যায়। ইতিহাসবিদগণের মতে এসব স্থাপনা সেন আমলের তৈরি। পাল ও সেন আমলের মূর্তিগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ধবংস হয়ে গেছে। চুরি হয়ে গেছে অনেক পুরাকীর্তি। মাধবপাশার দলুজমর্দন সুগন্ধা নদীতে কাইত্তাইনি মূর্তি পেয়েছিল। দুইটি মূর্তি মাধবপাশার রাজবাড়িতে রাখা হয়েছিল। রাজপরিবার ৫শ’ বছর ধরে ঐ মূর্তি পূজা করত বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। এখন মূর্তিও নেই রাজা কিংবা রাজ্যও নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঐ মূর্তি দুইটি উধাও হয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ একটি মূর্তি উদ্ধার করে ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে পাঠায়। শিকারপুর থেকে উদ্ধার করা তারা মূর্তিটি ছিল ভারতবিখ্যাত। তখন ঐ মূর্তিকে কেন্দ করে শিকারপুর তীর্থ স্থানে পরিণত হয়েছিল। দেবীর সেবায়েতের নিজ হাতে লেখা প্রাচীন পুঁথি থেকে জানা যায়, শ্রী গঙ্গাবতী চক্রবর্তী সুগন্ধা নদীতটে পাষাণময়ী তারামূর্তি ও শিবলিঙ্গ প্রাপ্ত হন। ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে আটিপাড়া গ্রামের একদল মুসলমান ঐ মূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলে। পরে সেখানে একটি কালি মূর্তি স্থাপন করা হয়। সেই মূর্তিটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ভেঙ্গে ফেলে। মূর্তির সাথে প্রাপ্ত শিবলিঙ্গ তারা মন্দিরে এখনো সংরক্ষিত আছে। শিকারপুরে ধবংসপ্রাপ্ত তারা মূর্তিটি সপ্তম শতকে স্থাপন করা হয়েছিল বলে সেবায়েতরা দাবি করেন। দক্ষিণাঞ্চলের বহু পুরনো মূর্তি, মন্দির ও পুরনো মুদ্রা এভাবেই বিলীন হয়েছে। প্রাচীন বাড়িগুলো বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। এখন প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর যেসব পুরাকীর্তি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে তা ততটা পুরনো আমলের নয়।
০০ লিটন বাশার
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2010
(616)
-
▼
August
(96)
- এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন
- বিএনপি
- শ্রীকৃষ্ণ
- প্রেমিকার জন্য ল্যাপটপ এবং একটি অপহরণ নাটক
- বীভৎস যৌন নির্যাতন, কিন্তু এড়িয়ে গেছেন সবাই
- গিমে মিউজিয়াম, ফ্রান্স
- মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক মার্কেট
- জাতীয় জাদুঘর
- দাসত্ব প্রথা
- পিরামিড
- ল্যুভর মিউজিয়াম, ফ্রান্স
- হার্ডরক ব্যান্ড ডিপ পার্পল
- পরমাণু ঘড়ি
- নওশেরার উদ্বাস্তু শিবির
- মৌলভীবাজার
- বাদামি প্রেতাত্মা রহস্য
- ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম
- মুখোশচিত্র
- ঢাকার রেকর্ড সংখ্যক শিলালিপি প্রকাশ, বঙ্গ নিয়ে গবে...
- বার্ড ফ্লু
- আচেহ দ্বীপ
- পৃথিবীর প্রথম সংবাদপত্র
- আলজেরিয়া
- প্রাচ্যের ভেনিস বরিশাল
- বাংলাদেশের নৌকা
- বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউজ
- হানবুক
- বাত সারাতে ব্যাকটেরিয়া
- ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কলেজ
- সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ
- ডিমেও বিষ!
- বাংলাদেশের গ্যাস দিয়ে ভারতে তৈরি হচ্ছে ৭২৬ মেগাওয়া...
- বেলস পালসি বা মুখ বেঁকে যাওয়া
- জগদল বিহার, নওগাঁ
- কৃষ্ণ বিবর বা ব্ল্যাক হোলস
- মানুষের মাঝের আঙুল লম্বা কেন
- ছাগল সুন্দরী প্রতিযোগিতা
- নতুন টাইটানিক
- সূর্যের জানা-অজানা কথা
- তারা মসজিদ
- ইসরায়েলি ‘স্যুভেনির ছবি’
- ফিলিস্তিনি স্বামী হত্যার বিচারের অপেক্ষায় মার্কিন ...
- ক্যামেরুনে মেয়েদের ‘বড়’ হতে বাধা
- বিশ্বপ্রকৃতির জীবন্ত জাদুঘর গ্যালাপাগোস
- Is this the way you send love messages?
- গিরিশচন্দ্র সেন ও কুরআনের বাংলা অনুবাদ
- মহাপ্রাচীর কাহিনী
- মক্কামান সময়
- আবর্জনা থেকে শক্তি
- রাজধানীর বর্জ্য পুনঃব্যবহারে বছরে বাঁচে ৩৫০০ কোটি ...
- যুদ্ধের সময় সেনাদের দ্বারা ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ
- ব্রজলাল কলেজ, খুলনা
- শেয়ার বাজারে আসতে হলে
- হবিগঞ্জ
- রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ একটি ঐতিহাসিক বা...
- বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিয়ে প্রশ্ন
- জীবনযুদ্ধ এবং কিছু স্বপ্ন
- বিশ্বের দুর্ভাগা ৪১ রাষ্ট্রনায়ক
- তেজপুর
- শ্রীমঙ্গল
- বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর সর্বদলীয় তালিকা
- ঢাকা নগরের আয়তন বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই
- মজলিশ আউলিয়া মসজিদ, মাদারীপুর
- সেফটি পিন
- উট
- ফেনসিডিল
- শরীরের লোম
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর
- আহসান মঞ্জিল জাদুঘর
- ডাকসু সংগ্রহশালা
- রূপলাল হাউজ
- কারওয়ান বাজার সুপার মার্কেট
- বড় বাপের পোলায় খায়
- চার বছরের শিশুর মুখে ফেনসিডিল!
- শরণখোলা, বাগেরহাট
- সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা
- বাংলাদেশের পতাকা
- জামালপুর
- কাপ্তান বাজার ডিসিসি মার্কেট
- পানাম নগর
- ঢাকা ক্লাব ঐতিহ্যে শতবর্ষের ধারক
- বলধা গার্ডেন
- মনসা মঙ্গলে বাংলার ভাবের হদিস
- স্টাম্প প্যাড
- আয়শা
- স্পেতসেস
- ভারতীয় মুসলমানদের বঞ্চনা
- আকবরিয়া গ্র্যান্ড হোটেল, বগুড়া
- ক্লিওপেট্রা
- ব্যাংক অব আমেরিকা টাওয়ার
- সৌন্দর্য চর্চায় লেবু
- কক্সবাজার
- আচার ভালো রাখার উপায়
- রোজ গার্ডেন
- খিলগাঁও সুপার মার্কেট
- দালাল
-
▼
August
(96)
Thursday, August 26, 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
অসংখ্য ধন্যবাদ, একটি অজানা তথ্য আপনার ব্লগের মাধ্যমে জানতে পেরে আমি অনেক উপকৃত হলাম, অজানাকে জানতে এবং অন্যকে জানাতে আপনার মত ব্লক আঙিনায় হাতে খড়ি নিচ্ছি, আমার টাইটেল, মানবিক সাহিত্য। লেখালেখির জীবনে যারা আত্মবিশ্বাসী, বৃত্তের চেয়ে চিত্তের রসদে তারাই তুষ্ট। সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা অন্যের মনোজগতের গুপ্তধন আবিষ্কারের নেশায় মত্ত,মোটকথা স্রষ্টার রহস্যময় অপার সৃষ্টি যাদেরকে কৌতুহলী করে, তাদের জন্য লেখালেখি আরামের এবং আনন্দের। সেই গন্তব্যে আমিও চলছি,এজন্য আমাকে যে পঁজি নিতে হয়েছে তা হলো প্রখর ধৈর্য এবং অনুসন্ধানী মনোভাব,লেখার প্রতি অগাধ ভালবাসা- ভাললাগা,শ্রদ্ধাবোধ। আর তীব্র এই প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান কে নিশ্চিত করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। সেই লক্ষ্য অর্জন করতেই আজ ব্লগিংএর বিশাল আকাশে ছোট একটি তারা হয়ে জ্বলতে চাই, যদি পাঠক আমাকে পাঞ্জেরীর ভূমিকায় রাখে। তবে সেদিন বেশি দূরে নয়, আমার আলোকিত লেখা দিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত জীবনের গলি পথের একটু একটু অন্ধকার দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যা আমার ভিতরে জ্বলছে.........aponobaidulbd.blogspot.com