Thursday, August 26, 2010

প্রাচ্যের ভেনিস বরিশাল

1 comments
দক্ষিণাঞ্চলে অসংখ্য পুরাকীর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিল দেব-দেবীর মূর্তি, দীঘি, দুর্গ, তাম্রলিপি ও মুদ্রা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাকলা-চন্দ দ্বীপের অনেক পুরনো কীর্তিই ধবংস হয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় ও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, চতুর্থ শতকে রাজা চন্দ বরমা চন্দ দ্বীপ জয় করে একটি বিরাট দুর্গ নির্মাণ করেন। এই দুর্গটির অবস্থান ছিল কোটালীপাড়ায়। মাটির দুর্গটি ১৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু এবং দুই মাইল লম্বা। ৩১৫ খ্রীষ্টাব্দে এটি নির্মাণ করা হয়। ১৫০৮ খ্রীষ্টাব্দে ভূমি জরিপের সময় কোটালীপাড়ায় ঐ দুর্গের কাছাকাছি বেশকিছু স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায়। এছাড়া বেশকিছু তাম্রলিপি উদ্ধার হয়। তাম্রলিপিগুলোর মধ্যে ঘুঘ্রাহাটি বা ঘাগরকাঠি তাম্রশাসন তাৎপর্যপূর্ণ। ষষ্ঠ শতকে চন্দ দ্বীপ-বাকলার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গ ছিল সমৃদ্ধশালী জনপদ। দশম শতকের রাজা শ্রী চন্দে র ৫ খানা তাম্রশাসনের মধ্যে তিনখানা প্রাচীন চন্দ দ্বীপে পাওয়া যায়। এগুলো হলো ধুলিয়া, কেদারপুর ও ইদিলপুর তাম্রশাসন। ধুলিয়া ও কেদারপুর বর্তমানে ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত। আর কোটালীপাড়া গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। এছাড়া উজিরপুর থানার শিকারপুরে ১০১৫ খ্রীষ্টাব্দে রচিত একটি তালপাতার পুঁথি পাওয়া যায়। তাম্রশাসনে গৌরনদী থানার রামসিদ্দি, বাঙ্গালা ও ঝালকাঠী থানার নৈকাঠী ও চন্দ দ্বীপের নাম উল্লেখ ছিল। রামসিদ্দি ও বাঙ্গালা গ্রাম দুইটি ছিল পাশাপাশি। ১৩ শতকের এ তাম্রশাসনে ব্রাহ্মণকে ভূমিদানের ও চন্দ ভণ্ড জাতি শাসন ও মন্দির নির্মাণের কথা উল্লেখ আছে।
চতুর্থ থেকে ১৩ শতক পর্যন্ত বাকলা-চন্দ দ্বীপে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে। তখন সংঘারাম বৌদ্ধ মন্দির ও বেশ কিছু বৌদ্ধ মন্দির স্থাপিত হয়। মূলত পাল ও সেন আমলে চন্দ দ্বীপ (বরিশালের আদি নাম) উন্নত জনপদ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। তখন বাঙ্গালা, রামসিদ্দি, মাহিলারা, ফুলশ্রী, গোবরধন, বাটাজোর, চন্দ হার, শিকারপুর, বাগদা, নলচিড়া, বাকাল, বাকাই, লক্ষণকাঠী, আগৈলঝাড়া, নৈকাঠী, রুনশি, বাইশারী, নথুল্লাবাদ, রাজাপুর, ইদিলপুর, গোবিন্দপুর ও লতা প্রসিদ্ধ স্থান হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে থাকে। এই স্থানগুলোতেই ছিল নানা প্রাচীন কীর্তি। কালের বিবর্তনে পুরনো কীর্তি তো দূরের কথা, অনেক এলাকার অস্তিত্বই নেই। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ছাড়াও নদী ভাঙ্গনে হারিয়ে গেছে এসব পুরাকীর্তি। এক সময়ে যেখানে ছিল রাজাদের দালানকোঠা, সেখান দিয়ে এখন চলছে বড় বড় জাহাজ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ফুলশ্রী গ্রামে রাজবংশের ৭ জন রাজকুমারের নামে ৭টি দীঘি ছিল। সুপরিকল্পিতভাবে সুপেয় পানির জন্য খনন করা হয়েছিল এ দীঘিগুলো। এখন তার অস্তিত্ব নেই। অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। নরসিংহের দীঘিতে ঘাটলা পাওয়া গিয়েছিল স্বাধীনতার আগে। এখন সেখানে জনবসতি গড়ে উঠেছে। মাহিলাড়ার রুদ্র সেনের বাড়ি ও দীঘি এখন শুধুই ইতিহাস। রাজাপুর থানার নিকট স্বাধীনতার পূর্বে পুকুর খনন করতে গিয়ে মাটির নীচে টালী ইটের নির্মিত প্রশস্ত দেয়াল পাওয়া যায়। ইতিহাসবিদগণের মতে এসব স্থাপনা সেন আমলের তৈরি। পাল ও সেন আমলের মূর্তিগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ধবংস হয়ে গেছে। চুরি হয়ে গেছে অনেক পুরাকীর্তি। মাধবপাশার দলুজমর্দন সুগন্ধা নদীতে কাইত্তাইনি মূর্তি পেয়েছিল। দুইটি মূর্তি মাধবপাশার রাজবাড়িতে রাখা হয়েছিল। রাজপরিবার ৫শ’ বছর ধরে ঐ মূর্তি পূজা করত বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। এখন মূর্তিও নেই রাজা কিংবা রাজ্যও নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঐ মূর্তি দুইটি উধাও হয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ একটি মূর্তি উদ্ধার করে ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে পাঠায়। শিকারপুর থেকে উদ্ধার করা তারা মূর্তিটি ছিল ভারতবিখ্যাত। তখন ঐ মূর্তিকে কেন্দ করে শিকারপুর তীর্থ স্থানে পরিণত হয়েছিল। দেবীর সেবায়েতের নিজ হাতে লেখা প্রাচীন পুঁথি থেকে জানা যায়, শ্রী গঙ্গাবতী চক্রবর্তী সুগন্ধা নদীতটে পাষাণময়ী তারামূর্তি ও শিবলিঙ্গ প্রাপ্ত হন। ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে আটিপাড়া গ্রামের একদল মুসলমান ঐ মূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলে। পরে সেখানে একটি কালি মূর্তি স্থাপন করা হয়। সেই মূর্তিটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ভেঙ্গে ফেলে। মূর্তির সাথে প্রাপ্ত শিবলিঙ্গ তারা মন্দিরে এখনো সংরক্ষিত আছে। শিকারপুরে ধবংসপ্রাপ্ত তারা মূর্তিটি সপ্তম শতকে স্থাপন করা হয়েছিল বলে সেবায়েতরা দাবি করেন। দক্ষিণাঞ্চলের বহু পুরনো মূর্তি, মন্দির ও পুরনো মুদ্রা এভাবেই বিলীন হয়েছে। প্রাচীন বাড়িগুলো বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। এখন প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর যেসব পুরাকীর্তি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে তা ততটা পুরনো আমলের নয়।
০০ লিটন বাশার

1 comments:

  • December 19, 2023 at 11:42 PM
    Anonymous :

    অসংখ্য ধন্যবাদ, একটি অজানা তথ্য আপনার ব্লগের মাধ্যমে জানতে পেরে আমি অনেক উপকৃত হলাম, অজানাকে জানতে এবং অন্যকে জানাতে আপনার মত ব্লক আঙিনায় হাতে খড়ি নিচ্ছি, আমার টাইটেল, মানবিক সাহিত্য। লেখালেখির জীবনে যারা আত্মবিশ্বাসী, বৃত্তের চেয়ে চিত্তের রসদে তারাই তুষ্ট। সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা অন্যের মনোজগতের গুপ্তধন আবিষ্কারের নেশায় মত্ত,মোটকথা স্রষ্টার রহস্যময় অপার সৃষ্টি যাদেরকে কৌতুহলী করে, তাদের জন্য লেখালেখি আরামের এবং আনন্দের। সেই গন্তব্যে আমিও চলছি,এজন্য আমাকে যে পঁজি নিতে হয়েছে তা হলো প্রখর ধৈর্য এবং অনুসন্ধানী মনোভাব,লেখার প্রতি অগাধ ভালবাসা- ভাললাগা,শ্রদ্ধাবোধ। আর তীব্র এই প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান কে নিশ্চিত করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। সেই লক্ষ্য অর্জন করতেই আজ ব্লগিংএর বিশাল আকাশে ছোট একটি তারা হয়ে জ্বলতে চাই, যদি পাঠক আমাকে পাঞ্জেরীর ভূমিকায় রাখে। তবে সেদিন বেশি দূরে নয়, আমার আলোকিত লেখা দিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত জীবনের গলি পথের একটু একটু অন্ধকার দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যা আমার ভিতরে জ্বলছে.........aponobaidulbd.blogspot.com

Post a Comment