যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগের নারী হলেও বিশ্বজুড়ে আজো তাকে নিয়ে কৌতূহলের কোনো কমতি নেই। রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রার প্রসঙ্গ আসলেই প্রাচীন মিসর আর রোম সভ্যতার কথা অনিবার্যভাবে ওঠে আসবে। মরুভূমির দেশ মিসরের চারদিকে শুধু বালি আর বালি। এ যেন বালির পাহাড় আর বালির সমুদ্র। কিন্তু নীলনদ, চারদিকের রুক্ষতার মধ্যে সৃষ্টি করেছে সবুজ-শ্যামল প্রান্তর। নীলনদে প্রতিবছর বন্যা হতো। সেই বন্যা ছিল ভয়ঙ্কর। কিন্তু এতে উপকার হয়েছিল অনেক। বন্যার জল নেমে গেলেও যে পলিমাটি পড়ে থাকত, তাতে জমি হতো উর্বর। চাষাবাদ করে মানুষ জীবনযাপন করত। প্রায় ৪০০ মাইল এভাবেই হয়ে উঠেছিল সুজলা-সুফলা। এভাবেই সূত্রপাত মিসরীয় সভ্যতার। আর সেখানকারই ইতিহাসখ্যাত এক দেশ আলেকজান্দ্রিয়া। ক্লিওপেট্রা ছিলেন সেই দেশের রানী। এই রূপসী ও তরুণীকে নিয়ে ছড়িয়ে আছে অনেক কল্পকাহিনী আর কিংবদন্তি। লেখা হয়েছে অনেক গল্প-কবিতা-উপন্যাস। নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রও। এমনকি মহান সাহিত্যিক শেঙ্পিয়রও তার নাটকে অমর করে রেখেছেন রানী ক্লিওপেট্রার প্রেমকাহিনীকে।
ক্লিওপেট্রার জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৬৯ সালে প্রাচীন মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায়। তার পুৃরা নাম ঈষবড়ঢ়ধঃৎধ ঠওও ঞযবধ চযরষড়ঢ়ধঃড়ৎ. ক্লিওপেট্রার বড় আরো দু'বোন ছিল। ক্লিওপেট্রা-৬ আর বেরেনিস; আর ছোট বোনের নাম ছিল আরসিনো-৪। তার ছোট আরো দু'ভাইও ছিল টলেমি-১৩ ও টলেমি-১৪ নামে। ধারণা করা হয়, ক্লিওপেট্রা-৬ ছোটবেলায় মারা যান, আর বেরেনিস কোনো কারণে অযোগ্য ছিলেন। অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে খ্রিস্টপূর্ব ৫১ অব্দে রোম সম্রাট টলেমি অলেতিস মারা গেলেন। মারা যাওয়ার আগে তার বিশাল সাম্রাজ্য ১৮ বছর বয়সী কন্যা ক্লিওপেট্রা (ক্লিওপেট্রা-৭) ও ১৮ বছর বয়সী পুত্র টলেমি-১৩-কে উইল করে দিয়ে যান। সেইসঙ্গে মৃত্যুর সময় রোমান নেতা পম্পে-কে রাজ্য ও তার সন্তানদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়ে যান।
তখনকার মিসরীয় আইন অনুসারে দ্বৈত শাসনের নিয়মে রানী ক্লিওপেট্রার একজন নিজস্ব সঙ্গী থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কাজেই ক্লিওপেট্রাকে বিয়ে করতে হয় তারই ছোটভাই টলেমি-১৩কে, যখন তার বয়স ১২ বছর। কিন্তু, ক্লিওপেট্রা ক্ষমতায় বসার কিছুদিনের মধ্যেই প্রচলিত মুদ্রার ওপর থেকে টলেমি-১৩'র ছবি তুলে দিলেন, সব অফিসিয়াল কাগজপত্র থেকেও তার নাম বাদ দিয়ে দিলেন অবজ্ঞা করে। কিন্তু এর সবই ছিল আইনবিরোধী কার্যকলাপ। আইন অনুসারে দ্বৈতশাসনে পুরুষের নাম থাকবেই এবং সেটা অবশ্যই নারীর ওপর থাকবে। ফলে এ ধরনের কাজের মাধ্যমে ক্লিওপেট্রা বিস্তর সমালোচনার মুখোমুখি হলেন। এরই মধ্যে রাজ্যের একাধিক অংশ চলে গেল বহিঃশক্তির দখলে। অরাজকতার পাশাপাশি দেশজুড়ে দেখা দিল চরম খাদ্যাভাব। যদিও ক্লিওপেট্রা ছিলেন মানসিকভাবে অত্যন্ত ধীশক্তিসম্পন্ন মেসিডোনিয়ার রানী যার সুন্দর স্বপ্ন ছিল যে, নিজ দেশকে তিনি আরো ভালো করে গড়ে তুলবেন, আরো বৃহত্তর পরিসরে তিনি রানী হবেন। ধীরে ধীরে তিনি সে রকমটিই হতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিগত দিনের ন্যায় অন্যান্য হেলেনিয় রানীদের মতোই তিনি ছিলেন একটু নরম মেজাজের যে কিনা ভালোবাসার পাত্রী, দুর্বল চরিত্রের নারী। তবে তিনি যেকোনো মূল্যে নিজের জন্মস্থান আলেকজান্দ্রিয়া রক্ষা করার ব্যাপারে ছিলেন দঢ়প্রতিজ্ঞ।
ক্ষমতায় আরোহণের পর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও ক্লিওপেট্রা তার শাসন চালিয়ে গেলেন। এরই মধ্যে ৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে ফারসালুসের যুদ্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাপতি পম্পে পরাজিত হলেন। সে বছরই আলেকজান্দ্রিয়ায় ফেরার পথে ফারসালুসের হাতে নিহত হন। যুদ্ধ থেকে পালাতে গিয়ে ক্লিওপেট্রার স্বামী ও ভাই টলেমি-১৩'র মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর ক্লিওপেট্রা হয়ে ওঠেন মিসরের একচ্ছত্র রানী।
মার্ক অ্যান্টনিও ছিলেন রোমের পরাক্রমশালী বীর। লোকমুখে তিনি শুনেছিলেন ক্লিওপেট্রার রূপ-লাবণ্যের কথা। কিন্তু কিভাবে সেই রূপ-লাবণ্য চাক্ষুষ করবেন? একদিন তিনি রোম থেকে এসে হাজির হলেন ক্লিওপেট্রার কারুকার্যশোভিত প্রাসাদের সামনে। রানী ক্লিওপেট্রার কাছে খবর গেল অন্দর মহলে। মার্ক অ্যান্টনিওকে দেখে তিনিও মুগ্ধ হলেন। পরিচারিকাকে ডেকে বলেন, 'নিয়ে এসো তাকে যোগ্য সম্মান জানিয়ে।' কথামতো কাজ। অ্যান্টনিও প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ হলেন ক্লিওপেট্রাকে দেখে। যত দেখেন, ততই যেন দেখার আকর্ষণ বেড়ে যায়। নয়নের তৃপ্তি হয় না যেন কিছুতেই। এভাবে সূচনা। কিন্তু তারপর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলে অ্যান্টনিওর জীবন। পত্নী ফুলভিয়ার মৃত্যু এবং পম্পির বিদ্রোহ ঘোষণা। গৃহযুদ্ধে রীতিমতো বিপর্যস্ত রোম। শেষ পর্যন্ত অ্যান্টনিওর আত্দহত্যা, সিজারের সঙ্গে ক্লিওপেট্রার যোগাযোগ এবং সবকিছুর পরিণামে ক্লিওপেট্রার মৃত্যুবরণ। এসব কাহিনী যেন মিসরের আকাশে-বাতাসে আজো ঝঙ্কার তোলে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে ক্লিওপেট্রার জীবন নিয়ে নানা বিস্ময়কর কাহিনী। মিসর ছিল তখন সবদিক থেকেই সমৃদ্ধ। রোমের দৃষ্টি প্রায় সর্বদাই নিবদ্ধ থাকত সেদিকে, খাদ্য বা অন্য প্রয়োজনে। রোমের গৃহযুদ্ধের নায়ক পম্পি। সিজারের বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহ। জনসাধারণকে তিনি বুঝিয়েছেন, সিজার ও তার পৃষ্ঠপোষকরা ভীষণ অবিচার করেছেন পম্পির পিতাকে অকারণে হত্যা করে। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে তার এই বিদ্রোহ। সিজার শুনতে পেলেন, তার বিরোধীরা দল বেঁধে পম্পির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে অথচ দেশের এ দুর্দিনে অ্যান্টনিও ভোগবিলাসে আত্দহারা ক্লিওপেট্রার সঙ্গে। পড়ে আছেন আলেকজান্দ্রিয়ার রাজপ্রাসাদে। সিজার কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। শেষ পর্যন্ত তার একান্ত বিশ্বস্ত লেপাডাইসের সঙ্গে পরামর্শ করে একজন দূতকে পাঠালেন মিসরে। অনেক টানাপড়েন সত্ত্বেও সফল হলেন তিনি। ফিরে এলেন তিনি। খ্রিস্টের জন্মের ৪৯ বছর আগে যে গৃহযুদ্ধের সূচনা, তার সমাপ্তি ঘটল পম্পির পরাজয়ে। পম্পি পালিয়ে গেলেন ক্লিওপেট্রার দেশ আলেকজান্দ্রিয়ার উদ্দেশে। কিন্তু শত্রুকে বিনাশ না করতে পারলে মনে শান্তি নেই সিজারের। অনুচরদের আদেশ দিলেন যে করেই হোক পম্পিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে। অনুচরদের কাছে খবর এলো পম্পি পালিয়ে যাচ্ছে ক্লিওপেট্রার দেশে। ওঁত পেতে রইল তারা। সেখানে পম্পি যাওয়া মাত্র সিজারের অনুচররা ছুরিকাঘাতে হত্যা করল পম্পিকে। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, সময়টা ছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৪৮ বছর আগে, সেপ্টেম্বর মাস। সিজারের পথ থেকে আরো একটি কাঁটার বিলুপ্তি ঘটল। এরপর সিজার তার দূতের মাধ্যমে ক্লিওপেট্রাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। মজার ব্যাপার এই যে, প্রস্তাব শুনে ক্লিওপেট্রা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন। ক্লিওপেট্রার জীবনে শুরু হলো অন্য এক পর্ব। সিজারের সঙ্গে ক্লিওপেট্রাকে মিসরের রানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেন এবং মিসর শাসন করতে লাগলেন।
৪৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ক্লিওপেট্রা যখন রোমে অবস্থান করছিলেন আর একজন রানী হয়ে তারই অধস্তন এক জেনারেলের সঙ্গে রাজপ্রাসাদে একত্রে বসবাসের কারণে চারদিকে কানাঘুঁষা শুরু হলো। এর মধ্যেই ঘটে গেলো আরেক আশ্চর্য ঘটনা। ক্লিওপেট্রার একটি পুত্রসন্তান হলো। আলেকজান্দ্রিয়ার অধিবাসীরা তার নাম দিল সিজারিঅন। ক্লিওপেট্রা বলতেন, টলেমি সিজার। কিন্তু সিজারের আইনসম্মত উত্তরাধিকারী এবং ভাগ্নে অক্টোভিয়ান এটা মেনে নিলেন না। সিজার অবশ্য প্রকাশ্যেই বলে বেড়াতে লাগলেন যে, সিজারিঅন তারই সন্তান। অনেকেই ভাবলেন, এটা সিজারের এক ধরনের চক্রান্ত, তিনি একে তো একজন বিদেশি তার ওপর বিবাহিত হয়েও ক্লিওপেট্রার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। আর এটা কোনো নিয়মের মধ্যেই পড়ে না।
অন্যদিকে একই সময় ক্লিওপেট্রা নানাদিক থেকে চরম সমস্যার মুখোমুখি হতে লাগলেন। ক্লিওপেট্রা নিজেকে দেবী নতুন 'আইসিস' বা নারীকূলের মাতৃত্ব নিয়ন্ত্রক বলে ডাকতে শুরু করলেন। আইসিস হচ্ছেন দেব ওসিরিসের স্ত্রী ও ভগ্নী। যিনি মৃত্যু-পরবর্তী বিচারক হিসেবে পরিচিত। এ নিয়ে সমাজে ব্যাপক সমালোচনা হতে লাগল। এমনিতেই তিনি অতি উচ্চস্তরের বিলাসিতার মধ্যে থাকতে ভালোবাসতেন। সিজারকে বলে নিজের একটা স্বর্ণমূর্তি গড়ে ভেনাস জেনেট্রিক একটি মন্দির স্থাপনের ব্যবস্থাও করলেন।
এর মধ্যে ৪৪ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের কোনো এক উৎসবের দিনে সবকিছুর পরিসমাপ্তি ঘটল। রোমের সিনেট বিল্ডিংয়ের সন্মুখ চত্বরে সিজার ছুরিকাঘাতে নিহত হলেন। ব্রুটাসের নেতৃত্বে ক্যাসিয়াস, ট্রিবোনিয়াস, কেস্কাসহ ৬০ জন সিনেট সদস্যের প্রাসাদ-ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি মারা গেলেন। সিজার হত্যাকাণ্ডের পর ক্লিওপেট্রা রোম থেকে পালিয়ে জন্মভূমি আলেকজান্দ্রিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। মৃত্যুর আগে সিজার কখনো স্বীয় পুত্র বা ক্লিওপেট্রাকে কোনো উইল করে যেতে পারেননি; কাজেই তিনি তো গেলেনই, তার পুত্রের জীবনও চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত হলো।
আলেকজান্দ্রিয়ায় ফেরত আসার সময় ক্লিওপেট্রার সম্বল ছিল কেবল তার দ্বিতীয় স্বামী অর্থাৎ পরবর্তী ভাই টলেমি-১৪। সেও এক সময় নিহত হলো এবং সিজারিঅনই শেষ পর্যন্ত ৪ বছর বয়সে পরবর্তী রাজা হিসেবে উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত হলেন। ক্লিওপেট্রা ফিরে এসে দেখলেন, সমগ্র আলেকজান্দ্রিয়া দুর্ভিক্ষ আর মহামারিতে সয়লাব। দীর্ঘদিন ধরে চলতে লাগল এই দুর্ভিক্ষ আর মহামারী। সিজারিঅন স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা চেয়ে তিনি চারজন পদাতিক সৈন্যকে সিজারের প্রাক্তন এক লেফটেন্যান্ট 'দোলাবেলা' বরাবর পাঠালেন যার সুপারিশপত্র সিজারই এক সময় মিশরে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চিঠি দোলাবেলার কাছে পৌঁছেনি। পথিমধ্যে ওই চারজন পদাতিককে 'ক্যাসিয়াস' নামে সিজারের এক হত্যাকারী আটক করে, ফলশ্রুতিতে দোলাবেলা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আর কোনো উপায় না দেখে ক্লিওপেট্রা বিশাল এক নৌবহর সাজিয়ে মার্ক এন্টনি ও অক্টোভিয়ানের উদ্দেশে নোঙ্গর তোলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, সেই যাত্রা শুরুতেই ঝড়ের কবলে পড়ে শেষ হয়ে যায়। ব্রুটাস এবং ক্যাসিয়াস নিহত হলে রোমের পরবর্তী কর্ণধার হিসেবে এন্টনি, অক্টোভিয়ান ও লেপিডাসই হবেন পরবর্তী বিজয়ী। আর ক্লিওপেট্রা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, এদের মধ্যে কার সঙ্গে তার ভালো যাবে! অক্টোভিয়ান ভীষণ অসুস্থ হয়ে এক সময় ইতালি ফেরত গেলেন। কাজেই এন্টনি থাকলেন ক্লিওপেট্রার পর্যবেক্ষণে।
৪১ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মার্ক এন্টনির পক্ষ থেকে টারসাস সফরের দাওয়াত পেলেন ক্লিওপেট্রা। ইতোমধ্যে তিনি এন্টনিকে কিভাবে পেতে হবে সে সম্পর্কে ভালোভাবেই জেনে গিয়েছিলেন। ক্লিওপেট্রা এও জানতেন যে, এন্টনির কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা যা কিছু সবই সীমিত আর শরীরেও নীলরক্ত। সুরায় আসক্তি, নারীলোভী, উচ্ছৃঙ্খলতা আর উচ্চাভিলাষ। তা সত্ত্বেও মিশর ছিল অর্থনৈতিক দুরবস্থার শেষ সীমায় উপনীত। ক্লিওপেট্রা ব্যাপক এক সংবর্ধনার আয়োজন করলেন এন্টনির সৌজন্যে। আর সেই যাত্রাকেও এমনভাবে সাজালেন যা কোনোদিন কেউ দেখেনি, নিজেও সেভাবেই সাজলেন ঠিক যেন প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির মতোই। শহরে প্রবেশটা ছিল অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক, ভালগারে পরিপূর্ণ, অর্ধ উলঙ্গ নারীদের ডিসপ্লে যা একজন ভালগার-মানুষকে আকৃষ্ট করতে ছিল যথেষ্ট। এন্টনি নিজে একজন ব্লু-ব্লাডেড হয়ে আরেকজন ব্লু-ব্লাডেড টলেমীয় রমণীর ধ্যান-ধারণা তো পছন্দ করবেনই। এন্টনির সাবেক স্ত্রী বা বর্তমান স্ত্রী ফুলভিয়া সবাই তো অত্যন্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে আগত।
ক্লিওপেট্রা আর এন্টনি ৪১ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ ৪১-৪০ পর্যন্ত শীত মৌসুম আলেকজান্দ্রিয়ায় কাটালেন। ক্লিওপেট্রা চাইলে সবকিছুই পেতে পারতেন যা মনে চাইত। কিন্তু পরে এন্টনির ওপর ক্লিওপেট্রা খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। আসলে ওই সময় ক্লিওপেট্রা একবারেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এন্টনি চেয়েছিলেন অর্থসম্পদ আর ক্লিওপেট্রার উদারতা ছিল মূলত যেখানে লাভের ব্যাপার থাকত।
৪০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে, মার্ক এন্টনি আলেকজান্দ্রিয়া ত্যাগ করে স্বদেশে ফিরে যান। এভাবে ৪ বছর কেটে গেলো, আর দেখা হয়নি দু'জনের। এন্টনির স্ত্রী ফুলভিয়া সেখানে অক্টোভিয়ানের বিরুদ্ধে জমিজমা সংক্রান্ত বিরাট একটা আন্দোলনের মুখে পড়েন। এর মধ্যে ফুলভিয়া খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। এন্টনি ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে সেই শরতেই অক্টোভিয়ানের বোন অক্টোভিয়াকে বিয়ে করেন। অক্টোভিয়া খুবই সুন্দরী ও বুদ্ধিমতি রমণী ছিলেন এবং খুব অল্পদিন আগে তিনি বিধবা হন। আগের পক্ষে তিনটি সন্তানও ছিল। আর সেই মুহূর্তেই আলেকজান্দ্রিয়ায় ক্লিওপেট্রা মার্ক এন্টনির ঔরসে ছেলে-মেয়েসহ যমজ সন্তান প্রসব করেন। আর এন্টনি-অক্টোভিয়া দম্পতির প্রথম সন্তান হলো মেয়ে। যদি অক্টোভিয়ার গর্ভে পুত্রসন্তানের জন্ম হতো তাহলে হয়তো ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিত। এন্টনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের খবর রাখতেন, তা থেকে নিজের জন্য কত প্রয়োজন তারও হিসেব করতেন। এভাবেই এলোমেলো হয়ে চলতে লাগলো ক্লিওপেট্রার জীবন।
ক্লিওপেট্রা আর মার্ক এন্টনির প্রেমের কথা তখন রাজ্যের প্রধান আলোচনার বিষয়। সবকিছু চলছিল ঠিকঠাক মতোই। এরই মধ্যে দু'জনের সম্পর্ক যেন আগের চেয়ে অনেকটা ফিকে হয়ে এলো। তবুও এন্টনি ক্লিওপেট্রার জন্য করেছেন অনেক কিছুই। এরই মধ্যে এন্টনি পার্থিয়ানের সঙ্গে বোঝাপড়া করার জন্য গ্রিস ছেড়ে ইতালি গেলেন। ইতোমধ্যে অক্টোভিয়া আরো একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এন্টনি জানালেন, কন্যাসন্তান জন্মদানের ব্যাপারটি তিনি মেনে নিয়েছেন। কারণ তার ভাই অক্টোভিয়ানের সঙ্গে এখনো শান্তি স্থাপনে অনেক করণীয় রয়ে গেছে। তাই রোমে অবস্থান করাই তার জন্য যুক্তযুক্ত হবে। কিন্তু এন্টনি প্রথমমেই ক্লিওপেট্রার জন্য কিছু করতে চাইলেন। এন্টনি-ক্লিওপেট্রা দম্পতির যমজ সন্তানের অফিসিয়াল স্বীকৃত ছিল এন্টনির নামেই, নামও দেয়া হয়েছিল সেভাবেই; আলেকজান্ডার হেলিওস ও ক্লিওপেট্রা সেলিনি। রাজ্য ভাগ করতে গিয়ে মার্ক এন্টনি ক্লিওপেট্রাকে দিলেন বিশাল কৃষিক্ষেত্র। এটি ক্লিওপেট্রা এবং মিশরের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল। এন্টনি দিলেন সাইপ্রাস, সিলিসিয়ান বেলাভূমি, ফোনিসিয়া, কোয়েলি-সিরিয়া, জুদিয়া এবং আরব ভূখন্ড। এ অনুদান মিশরকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো ব্যবস্থা করে দিল এবং বিশাল নৌবহর গঠন করতেও সমর্থ হলো। এন্টনির পরিকল্পনা ছিল পাথিয়ানের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা। এজন্য এন্টনির প্রয়োজন ছিল ক্লিওপেট্রার সমর্থন; কিন্তু ৩৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে পার্থিয়ানের সঙ্গে যুদ্ধে তিনি হেরে গেলেন। এজন্য ক্লিওপেট্রার প্রতি তার ঋণের পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরো বেড়ে গেল। আর তাদের তৃতীয় সন্তানেরও জন্ম হলো তখন। তারা যখন সিরিয়া প্রত্যাবর্তনের পথে, ক্লিওপেট্রা সেনাবাহিনীর ভরণ-পোষণ, কাপড়-চোপড়, খাবার-দাবার, বেতনভাতা ইত্যাদি নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। ৩৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের প্রথমদিকে এন্টনি ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে আবার মিশরে ফিরে এলেন। ওদিকে এন্টনির স্ত্রী অক্টোভিয়া তখন এথেন্স-এ সরবরাহ ও পুনর্গঠন নিয়ে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছিলেন আর স্বামীর জন্য প্রতীক্ষায় দিন গুনছিলেন। এন্টনি তাকে একটা চিঠি পাঠালেন, তিনি যেন কোনোভাবেই মিশরে না আসেন। অক্টোভিয়ার ভাই অক্টোভিয়ান নানাভাবে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছিলেন এন্টনির সঙ্গে কোনো মতে একটা যুদ্ধ বাধানোর জন্য, যেটা একপ্রকার অলঙ্ঘনীয় হয়ে পড়েছিল। এন্টনিও হয়তো কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারতেন যদি অক্টোভিয়া ও তার ভাই অক্টোভিয়ানকে রোমে পেতেন। ক্লিওপেট্রা হয়তো এন্টনিকে আলেকজান্দ্রিয়ায় রেখে ভালোই করেছিলেন। এসব সত্ত্বেও অক্টোভিয়া এন্টনির প্রতি পূর্ণ বিশ্বস্ত ছিলেন। ৩৪ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মার্ক এন্টনি আর্মেনিয়া রাজ্যের জনসাধারণের মধ্যে জনমত গঠনে নামলেন, যা পরবর্তীকালে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনে। এসব পূর্বাপর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি দেশব্যাপী এমনকি আলেকজান্দ্রিয়াসহ উৎসবের আয়োজন করেন, ক্লিওপেট্রাকে 'নতুন আইসিস' হিসেবে তুলে ধরার মানসে তাকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির মর্যাদায় ভূষিত করেন। এন্টনিও প্রাচীন গ্রিক-রোমান শাসনের প্রতিভূ হিসেবে নিজেকে 'নতুন ডিওনাইসাস' হিসেবে উপস্থাপন করেন, যা ছিল তার বহুদিনের স্বপ্ন। কিছুদিনের মধ্যে আরো অনেক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, শিশু-উৎসব অনুষ্ঠান করলেন যেখানে শিশুদের জন্য রাজকীয় উপাধি প্রদান এমনকি রাজ সিংহাসনে তাদের নিয়ে বসারও সুযোগ দিলেন।
সেই অনুষ্ঠানে টলেমি-১৫তম (সিজারিওঁ)-কে সহযোগী সম্রাট ও 'রাজাদের রাজা' হিসেবে জনসমক্ষে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো। ক্লিওপেট্রা রইলেন 'রাজাদের রানী' হিসেবে, যা ছিল সিজারিওঁর উপরের পদবি। আলেকজান্ডার হেলিওস যার অর্থ সূর্য্য, ভূষিত হলেন 'গ্রট কিং অব দি সেলিউসিড সাম্রাজ্য'; ক্লিওপেট্রা সিলেনি যার অর্থ 'চন্দ্র' যাকে দেয়া হলো 'সেরেনাইকা ও ক্রেট রাজ্যের রানীর খেতাব, 'ক্লিওপেট্রা-এন্টনি'র পুত্র টলেমি ফিলাডেলফোসকে দেয়া হলো 'সিরিয়া ও এশিয়া মাইনরের রাজার খেতাব, যার বয়স তখন মাত্র ২ বছর। ক্লিওপেট্রার স্বপ্ন ছিল তিনিই হবেন সমগ্র বিশ্বের রানী এবং সেই স্বপ্ন পূরণের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের খুবই কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন।
খ্রিস্ট পূর্ব ৩২-৩১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এন্টনি চূড়ান্তভাবে অক্টোভিয়ানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটালেন। এই ঘটনা সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বে এটাই প্রমাণ করল যে, ক্লিওপেট্রার সঙ্গে তার সত্যিকারের প্রণয় রয়েছে। এন্টনি ইতোমধ্যে রোমন মুদ্রা 'সিলভার দিনারি'তে ক্লিওপেট্রার মুখের ছবি প্রকাশ করেছিলেন যা মেডিটারিনিয়ান রাজ্যগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। ফলশ্রুতি দাঁড়ালো এই যে, রোমানদের সঙ্গে এন্টনির বিশ্বস্ততা, নির্ভরতা, সহযোগিতা ইত্যাদি সবকিছুরই পরিসমাপ্তি ঘটল। অক্টোভিয়ান ঘটনার প্রেক্ষিতে এন্টনির 'উইল' প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন আর সে সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাও করলেন।
এন্টনির নাম রাজকীয় সর্বপ্রকার ডকুমেন্টগুলোতেই ব্যবহৃত হয়ে আসছিল তখন। ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে এমন ভিত্তিহীন সব অভিযোগ আনা হচ্ছিল যে, তিনি মদ্যপ শ্রেণীর এবং একজন আস্ত পতিতা। ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ছড়ানোর ফলে তার আর এন্টনির জন্য বেশ ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াল। অন্য অনেকের মনে এটাও ধারণা হলো যে, এর ফলে নতুন দেবী হিসেবে ক্লিওপেট্রাই টিকে থাকবেন, এন্টনিও সম্মিলিত শক্তিতে আলেকজান্দ্রিয়া থেকেই বিশ্ব জয়ের সূচনা করবেন। কিন্তু দেখা গেল, ৩১ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ২ সেপ্টেম্বর অক্টোভিয়ান নৌবাহিনীর কাছে অক্টিয়াম (গ্রিস)'র যুদ্ধে এন্টনির মর্মান্তিক পরাজয় ঘটল। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে (৩০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ) দ্বিতীয়বারের মতো আলেকজান্দ্রিয়া অভিমুখে অগ্রসরমান অক্টোভিয়ান বাহিনীর মুখোমুখি হলেন এন্টনি। পরাজয় যেন নির্ধারিতই ছিল। আর পরাজিত এন্টনি নিজের তরবারি দিয়েই আত্মহত্যা করলেন; পেছনে পড়ে রইল বিশাল রোমান সাম্রাজ্য- গ্রিস, ইতালি, মিশর আর ক্লিওপেট্রা ও তার আলেকজান্দ্রিয়া।
এন্টনির মৃত্যুর পর একা হয়ে পড়লেন ক্লিওপেট্রা। কিছুদিনের মধ্যেই ক্লিওপেট্রাকে অক্টোভিয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে অক্টোভিয়ান নিজের বিজয়ে ক্লিওপেট্রার ভূমিকা অনেকটাই হাল্কা করে দিলেন। তিনি বলেন, মিসরের রানীর সঙ্গে তার কোনোরূপ সম্পর্ক, সমঝোতা বা বোঝাপড়ার কোনো বিষয় নেই। ক্লিওপেট্রার শাসনকাল শেষ হয়ে গেছে। এখন তাকে ক্রীতদাসী হিসেবে শহরের রাস্তায় রাস্তায় প্রদর্শন করা হবে। তবে এরকম কিছু ঘটার আগেই ক্লিওপেট্রাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করা হলো। ক্লিওপেট্রাকে মারার জন্য আনা হলো চরম বিষাক্ত সাপ 'অ্যাসপ' (মিসরীয় কোবরা। একে জীবন-মৃত্যুর ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়)। ফলের ঝুড়িতে লুকিয়ে সেই কোবরাকে আনা হলো ক্লিওপেট্রার সামনে। এই সাপের কামড়েই ৩০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ১২ আগস্ট ক্লিওপেট্রা মারা গেলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৯ বছর। মিসরীয় ধর্মমতে সর্পদংশনে মৃত ব্যক্তিরা হবেন অমর। আর এভাবেই ক্লিওপেট্রা মৃত্যুকালীন ইচ্ছা পূরণ করলেন, যা কেউ কোনোদিন ভুলে যাবে না। আবার আরেকটি মতানুসারে পরাজয়, প্রেমিক এবং রাজ্য হারানোর শোকে ক্লিওপেট্রা তার ব্যক্তিগত কক্ষে একটি সাপ আনিয়ে আত্মহত্যা করেন। সে সময়ে তার সঙ্গে দুই সহচরও আত্মহত্যা করেন। তবে এ আত্দহত্যা নিয়ে সংশয় আছে অনেকেরইে। ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং লিভারপুল ইউনিভার্সিটির ঈজি্বােলজিস্ট জয়েস অ্যান টিলডেসলি তারবই 'স্নোবাইট সুইসাইড'-এ জানান, ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর সঙ্গে যে সাপের থিওরি দেয়া হয়েছে তাতে বিস্তর ফাঁক রয়েছে? ইতিহাস বলে, ক্লিওপেট্রার সঙ্গে তার দুজন সখী বা সহচরীও মারা যান। কিন্তু একটি সাপই যে তিনজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী বা সেখানে তিনটি সাপ আনা হয়েছিল কিনা সেটাও চিন্তার বিষয়? এমনও সন্দেহ ওঠে, সেই সাপটি আসলেই বিষাক্ত ছিলো কিনা, আর সাপরে কামড়েই যে তিন নারীর মৃত্যু হয়েছে সেটাই বা নিশ্চিত করা গেলো কিভাবে? তাছাড়া যে সাপটির কথা ইতিহাসে বলা হয়েছে, তার সঙ্গে অ্যাসপ বা মিসরীয় গোখরো সাপের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়, যা সাধারণত ৬ ফিট লম্বা হয়ে থাকে? এ ধরনের একটি সাপকে সেই কক্ষে আনা হলেও তার জন্য যে ধরনের বড় ঝুড়ি বা পানির জগের প্রয়োজন হয় তা সেখানে ছিল না।
জয়েস মনে করেন, ক্লিওপেট্রা এবং তার দুই সহচরী আত্মহত্যা করেন সাধারণ বিষপান করে। সে যাই হোক ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই মিশরে ফারাও সম্রাজ্যের অবসান ঘটে।
পরবর্তীতে অন্যান্য শাসক ক্লিওপেট্রার মায়াময় সৌন্দর্যটিকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করেছিলেন যিনি মহাবীর আলেকজান্ডারের মতো আরেক মেসিডোনিয়ান। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর পর তার পুত্র সিজারিঅনকে কতিপয় রোমান সিনেটরের ইঙ্গিতে গলাটিপে হত্যা করা হয়, যখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। বাবা সিজার তার উইলে সিজারিঅনের উল্লেখ না করায় সিজারিঅনের সম্রাট হওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়েছে আগেই। কিন্তু শেঙ্পিয়র থেকে শুরু করে বানার্ডশ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে বহু বিখ্যাত লেখকের রচনায় অমর হয়ে আছেন সিজার-ক্লিওপেট্রাপুত্র সিজারিঅন। সিজারিঅনের আবক্ষ মূর্তির আবিষ্কার ও এ সম্পর্কে গবেষণা প্রসঙ্গে ফ্রেডন্স অব ক্লাসিকস'র সম্পাদক পিটার জোনস বলেছেন, 'ছোট সিজার বা সিজারিঅনের এ আবক্ষ মূর্তির আবিষ্কার এবং লন্ডনের জাদুঘরে তার স্থানলাভ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।' গ্রানাইট পাথরের ওপর ছোট সিজারের এ আবক্ষ মূর্তিটি সত্যি অভিনব। লন্ডনের জাদুঘরের গ্রিস ও রোমের পুরাতত্ত্ব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সুসান ওয়াকারের মতে, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, ক্লিওপেট্রার সময়ের একজন ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানার জন্য এর চেয়ে আকর্ষণ কিছু নেই? সিজারিঅনের আবক্ষ মূর্তিটি সমুদ্রের নিচ থেকে উত্তোলনের ব্যাপারে কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন ফরাসি পুরাতত্ত্ববিদ ফ্রাঙ্ক গোড্ডিও। তিনি নিজে প্যারিসে ১৯৮৭ সালে সমুদ্রতলের পুরাতত্ত্ব নিদর্শন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আলেকজান্দ্রিয়ার সমুদ্রে অনেক দিন ধরেই এই নিয়ে গবেষণা করছিলেন। সিজারিঅনের আবক্ষ মূর্তিটি জল থেকে তুলতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় তাকে। সিজারিঅনের আবক্ষ মূর্তিটির সঙ্গে মিশরের টুরিন জাদুঘরে রাখা অন্য একটি আবক্ষ মূর্তি হলো ক্লিওপেট্রার স্যালিঅ্যান অ্যাসট, যিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিসরতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেছেন, আবক্ষ মূর্তিটির মুখমণ্ডল বেশ প্রশস্ত ও চেটালো ঠোঁট, নিম্নমুখী চিবুক এবং ঠোঁটের মাঝখানে একটি সূক্ষ্ম রেখা আছে যা টলেমি সম্রাটদের ছবিতে দেখা যায়।
অন্যদিকে ক্লিওপেট্রার বাকি সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্ব নেন এন্টনির সাবেক স্ত্রী অক্টোভিয়া। বড় মেয়ে ক্লিওপেট্রা সেলেনিকে অক্টোভিয়ানের সহায়তায় মৌরিতানিয়ার রাজা দ্বিতীয় জুবার সঙ্গে বিয়েও দেন। এ দ্বিতীয় জুবা ছিলেন অক্টোভিয়ানের আজীবন বন্ধু।
ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রাচীন মিশরীয় ফারাও যুগের অবসান ঘটে যদিও তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ান। মিশরে রোমান শাসনকাল শুরু হয়। টলেমীয়রা মেসিডোনিয়ান হয়েও মিশর শাসন করেন। আর ক্লিওপেট্রা ছিলেন সর্বশেষ ফারাওহ্। অসীম সুন্দরী ক্লিওপেট্রা ছিলেন বহু গুণে গুণান্বিত এক রমণী। তার অনেক গুণের মধ্যে ছিল প্রখর বুদ্ধিমত্তা আর মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। আচার-আচরণের দিক থেকে ক্লিওপেট্রা ছিলেন অনেকটাই সহজ-সরল প্রকৃতির। ক্লিওপেট্রা নয়টি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। শুধু তাই নয়, তিনি একজন গণিতজ্ঞ ও ভালো ব্যবসায়ীও ছিলেন। অন্যকে আকর্ষণ করার মতো সহজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল ক্লিওপেট্রার। জন্মগতভাবেই তিনি ছিলেন নেতৃত্ব গুণের অধিকারী। রাজসিংহাসনের জন্য আত্দহত্যা ছাড়া সবকিছু করতেই এক প্রস্তুত ছিলেন তিনি। বিগত দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে ক্লিওপেট্রার এই ব্যক্তিত্ব, রূপ, গুণাবলীর কাহিনী আলোচিত হয়ে আসছে। নাটক, থিয়েটার, গল্প, উপন্যাস, মডেলিং, চলচ্চিত্র এমনকি মেয়েদের ব্যক্তিগত স্টাইল ও রূপচর্চার ক্ষেত্র পর্যন্ত দখল করে আছে ক্লিওপেট্রা। ক্লিওপেট্রা সারা বিশ্বের আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তার চরিত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা হয়েছে কালজয়ী উপাখ্যান। জর্জ বার্নড শ' লিখেছেন সিজার ক্লিওপেট্রা, এতে প্রাধান্য পেয়েছে রোমান্টিসিজিম। শেঙ্পিয়র লিখেছেন_ এন্থনি-ক্লিওপেট্রা। এটিতেও প্রাধান্য পেয়েছে প্রেম ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আর সেই সঙ্গে তিনি আশ্চর্য দক্ষতার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন ক্লিওপেট্রার রূপের। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের ক্লিওপেট্রায় ফুটে উঠেছে ক্লিওপেট্রার ব্যক্তিত্ব, উচ্চাভিলাস আর কিছুটা নারীসুলভ অসহায়তা। এ ছাড়াও ক্লিওপেট্রার চরিত্র নিয়ে লিখেছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক_ ড্রাইডেন প্লুটার্ক, ড্যানিয়েল প্রমুখ। ইংরেজ ঔপনিবেশিকতার জন্য এ দেশে বেশিরভাগ লোকই শেঙ্পিয়রের এন্থনি-ক্লিওপেট্রা পড়েছেন। সেই সঙ্গে পড়েছেন হ্যাগার্ডের ক্লিওপেট্রাও। এই বিশেষ চরিত্রটিকে লেখকরা ঐতিহাসিক দিক দিয়ে যথাসম্ভব অপরিবর্তিত রেখেছেন। আবার অনেকে কিছু কাল্পনিক চরিত্রের অবতারণা করেছেন। ক্লিওপেট্রা সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল ও উৎসাহ এত দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও এতটুকু কমেনি। কালজয়ী উপাখ্যানের অমর চরিত্র ক্লিওপেট্রা কিংবদন্তি হয়ে আজও বেঁচে আছে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুগের মমি ও নানা প্রত্ননিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে ইতিহাসের নানা অজানা অধ্যায়ও। কিন্তু রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রা যেন রহস্যের আধার হয়েই থেকে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার বোধ হয় সেই রহস্যের জাল ছিন্ন হতে চলেছে। মিসরে টাপোসিরিস ম্যাগনা উপাসনালয়েই মিসরের সর্বশেষ ফারাও শাসক ক্লিওপেট্রার সমাধি পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সত্যিই কি টাপোসিরিস ম্যাগনা উপাসনালয়ে পাওয়া সমাধিতেই শুয়ে আছেন ক্লিওপেট্রা? এ প্রশ্নের জবাব এখনো খুঁজে পাননি প্রত্নতাত্তি্বকরা। তবে তারা প্রায় ২০০০ বছরের পুরনো দুটি সমাধির খোঁজ পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে এগুলো রানী ক্লিওপেট্রা এবং তার প্রেমিক মার্ক এন্থনির। এই ধারণা যদি সঠিক প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি হতে পারে এ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।
মিসর এবং ডোমিনিকান রিপাবলিকের প্রত্নতাত্তি্বকরা তিন বছর ধরে টাপোসিরিস ম্যাগনা উপাসনালয়ে খননকার্য চালাচ্ছেন। এটি ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত? প্রত্নতাত্তি্বকদের বিশ্বাস, ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত যুগল মার্ক এন্থনি ও ক্লিওপেট্রাকে প্রায় ২০০০ বছর আগে এখানে সমাধিস্থ করা হয়েছিল? ইতোমধ্যে তারা এ সম্পর্কিত বেশ কিছু নিদর্শনও উদ্ধার করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্লিওপেট্রার ছবি সংবলিত ২২টি ব্রোঞ্জ মুদ্রা এবং খাড়া নাকবিশিষ্ট মুখোশ পরিহিত একজন পুরুষ মানুষের ঊর্ধ্বাংশ, যা মার্ক এন্থনির হবে বলে তাদের ধারণা। এছাড়াও উৎখননে এখানে অন্যান্য প্রত্নবস্তুর সঙ্গে ১০টি মমি পাওয়া গেছে।
আবিষ্কৃত টাপোসিরিস ম্যাগনার বর্তমান নাম অ্যবসির (Abousir)। নীল উপত্যকার পশ্চিম তীরে লেক ম্যারিউটের কাছে এর অবস্থান। এখানে একটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আর আলেজান্দ্রিয়ার লাইট হাউসের একটি রেপ্লিকা রয়েছে। কারো কারো মতে ২০০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরটি দেবতা ওসিরিসের। আবার ভিন্ন মতানুসারে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দের দিকে মিসরীয় দেবী আইসিসের সম্মানে এ মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল।
মিসরের সুপ্রিম কাউন্সিল ফর এন্টিকুইটিজের প্রধান জাহি হাওয়াস বলেন, ক্লিওপেট্রার সমাধি খুঁজে পাওয়া গেলে সারাবিশ্বের প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য সেটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে। তবে তিনি বলেন, সেখানে ক্লিওপেট্রার দেহাবশেষ পাওয়া না গেলেও কমপক্ষে কোনো রাজকীয় সমাধি অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যাবে, কেননা জায়গাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সমাধিতে ভরা। আর প্রাচীন মিসরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাধারণত শাসক ফারাওদের আশপাশেই সমাহিত করা হতো। তিনি বলেন, এই স্থানে ক্লিওপেট্রার সমাধি পাওয়া গেলে ১৯২২ সালে তরুণ রাজা তুতেনখামেনের সমাধির খুঁজে পাওয়ার পর এটাই হবে সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্তি্বক আবিষ্কার।
হাওয়াস জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ'কে বলেন, এই উপাসনালয়টিই তাদের লুকিয়ে ফেলার জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থান। এই উপাসনালয়টির মধ্যে পাওয়া গেছে আইসিস মন্দির। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দের দিকে মিসরীয় দেবী আইসিসের সম্মানে এ মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। দেবী আইসিস ক্লিওপেট্রার মতো এবং দেবতা ওসিরিস মার্ক এন্থনির মতোই ছিল। ক্লিওপেট্রা এবং এন্থনি পরস্পরের রাজনৈতিক মিত্র ছিলেন। প্রচলিত ধারণা, তারা এক্টিয়াম যুদ্ধে রোমান সম্রাট অক্টাভিয়ানের কাছে পরাজয়ের পর আত্মহত্যা করেছিলেন।
ডোমিনিকান প্রত্নতাত্তি্বক ক্যাথলিন মার্টিনেজ মনে করেন, আত্মহত্যার পর এই মন্দিরের যাজক ক্লিওপেট্রার দেহ এখানে এনে রাখতে পারেন। তিনি বলেন, তাদের মৃতদেহ যেন রোমানরা খুঁজে না পায় সেজন্য এই মন্দিরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। কেননা সেসময় পরাজিত শাসকের মৃতদেহ হাতে পাওয়াটাকেই প্রকৃত বিজয় হিসেবে গণ্য করা হতো। মার্টিনেজ বলেন, তিনি ১৪ বছর ক্লিওপেট্রা সম্পর্কে পড়াশোনা করেছেন এবং তার বিশ্বাস, ক্লিওপেট্রার মৃত্যু ছিল একটি ধর্মীয় ঘটনা এবং ভাইপার জাতের ক্ষুদ্র বিষধর সাপের দংশনে তিনি মারা গিয়েছিলেন। এছাড়া তাকে এই মন্দিরেই সমাহিত করা হয়েছিল। রোমান ঐতিহাসিক প্লুটার্কের লেখাতেও এটা রয়েছে, যে ক্লিওপেট্রাকে এন্থনির সঙ্গেই সমাহিত করা হয়েছিল। তবে সত্যি তারা এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। যদি সত্যি তাই হয় তাহলে এই টাপোসিরিস ম্যাগনা সারাবিশ্বের প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য সেটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে। সেই সঙ্গে ক্লিওপেট্রার রহস্যময় জীবন আর তাকে নিয়ে রটনা-ঘটনারও অনেক সত্য প্রমাণ বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
বিষয় সমূহ
- Animal (67)
- Artical (29)
- Education (79)
- Fitness (19)
- Food (40)
- Game (12)
- Hijra(হিজড়া) (7)
- Journalism (23)
- Law (19)
- Liberation War(মুক্তিযুদ্ধ) (34)
- Love Effect (26)
- Mosque (42)
- Music (16)
- Nobel Prize (5)
- Organization (30)
- Others (56)
- Plants(গাছ-পালা) (29)
- Politics(রাজণীতি) (22)
- Scandal Religion (1)
- Tribe (8)
- Violence (16)
- Wikileaks (3)
Like for Update
64 Districts
- Bagerhat (4)
- Bandarban (3)
- Barisal (3)
- Bhola (3)
- Bogra (11)
- Brahmanbaria (2)
- Chandpur (4)
- Chapai Nawabganj (2)
- Chittagong (6)
- Comilla (2)
- Cox's Bazar (13)
- Dhaka (65)
- Dinajpur (6)
- Faridpur (1)
- Feni (1)
- Gaibandha (1)
- Gazipur (3)
- Gopalgonj (2)
- Habiganj (2)
- Jamalpur (4)
- Jessore (3)
- Jhenidah (2)
- Khagrachari (1)
- Khulna (3)
- Kishorgonj (2)
- Kurigram (1)
- Kushtia (3)
- Lalmonirhat (2)
- Madaripur (3)
- Magura (1)
- Manikgonj (1)
- Meherpur (2)
- Moulvibazar (14)
- Munsiganj (3)
- Mymensingh (5)
- Naogaon (8)
- Narayanganj (2)
- Natore (10)
- Netrokona (1)
- Nilphamari (2)
- Noakhali (1)
- Pabna (3)
- Panchagarh (2)
- Patuakhali (7)
- Pirojpur (1)
- Rajbari (1)
- Rajshahi (8)
- Rangamati (3)
- Rangpur (5)
- Satkhira (4)
- Sherpur (2)
- Sirajganj (5)
- Sunamganj (4)
- Sylhet (11)
- Tangail (1)
Blog Archive
-
▼
2010
(616)
-
▼
August
(96)
- এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন
- বিএনপি
- শ্রীকৃষ্ণ
- প্রেমিকার জন্য ল্যাপটপ এবং একটি অপহরণ নাটক
- বীভৎস যৌন নির্যাতন, কিন্তু এড়িয়ে গেছেন সবাই
- গিমে মিউজিয়াম, ফ্রান্স
- মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক মার্কেট
- জাতীয় জাদুঘর
- দাসত্ব প্রথা
- পিরামিড
- ল্যুভর মিউজিয়াম, ফ্রান্স
- হার্ডরক ব্যান্ড ডিপ পার্পল
- পরমাণু ঘড়ি
- নওশেরার উদ্বাস্তু শিবির
- মৌলভীবাজার
- বাদামি প্রেতাত্মা রহস্য
- ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম
- মুখোশচিত্র
- ঢাকার রেকর্ড সংখ্যক শিলালিপি প্রকাশ, বঙ্গ নিয়ে গবে...
- বার্ড ফ্লু
- আচেহ দ্বীপ
- পৃথিবীর প্রথম সংবাদপত্র
- আলজেরিয়া
- প্রাচ্যের ভেনিস বরিশাল
- বাংলাদেশের নৌকা
- বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউজ
- হানবুক
- বাত সারাতে ব্যাকটেরিয়া
- ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কলেজ
- সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ
- ডিমেও বিষ!
- বাংলাদেশের গ্যাস দিয়ে ভারতে তৈরি হচ্ছে ৭২৬ মেগাওয়া...
- বেলস পালসি বা মুখ বেঁকে যাওয়া
- জগদল বিহার, নওগাঁ
- কৃষ্ণ বিবর বা ব্ল্যাক হোলস
- মানুষের মাঝের আঙুল লম্বা কেন
- ছাগল সুন্দরী প্রতিযোগিতা
- নতুন টাইটানিক
- সূর্যের জানা-অজানা কথা
- তারা মসজিদ
- ইসরায়েলি ‘স্যুভেনির ছবি’
- ফিলিস্তিনি স্বামী হত্যার বিচারের অপেক্ষায় মার্কিন ...
- ক্যামেরুনে মেয়েদের ‘বড়’ হতে বাধা
- বিশ্বপ্রকৃতির জীবন্ত জাদুঘর গ্যালাপাগোস
- Is this the way you send love messages?
- গিরিশচন্দ্র সেন ও কুরআনের বাংলা অনুবাদ
- মহাপ্রাচীর কাহিনী
- মক্কামান সময়
- আবর্জনা থেকে শক্তি
- রাজধানীর বর্জ্য পুনঃব্যবহারে বছরে বাঁচে ৩৫০০ কোটি ...
- যুদ্ধের সময় সেনাদের দ্বারা ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ
- ব্রজলাল কলেজ, খুলনা
- শেয়ার বাজারে আসতে হলে
- হবিগঞ্জ
- রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ একটি ঐতিহাসিক বা...
- বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিয়ে প্রশ্ন
- জীবনযুদ্ধ এবং কিছু স্বপ্ন
- বিশ্বের দুর্ভাগা ৪১ রাষ্ট্রনায়ক
- তেজপুর
- শ্রীমঙ্গল
- বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর সর্বদলীয় তালিকা
- ঢাকা নগরের আয়তন বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই
- মজলিশ আউলিয়া মসজিদ, মাদারীপুর
- সেফটি পিন
- উট
- ফেনসিডিল
- শরীরের লোম
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর
- আহসান মঞ্জিল জাদুঘর
- ডাকসু সংগ্রহশালা
- রূপলাল হাউজ
- কারওয়ান বাজার সুপার মার্কেট
- বড় বাপের পোলায় খায়
- চার বছরের শিশুর মুখে ফেনসিডিল!
- শরণখোলা, বাগেরহাট
- সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা
- বাংলাদেশের পতাকা
- জামালপুর
- কাপ্তান বাজার ডিসিসি মার্কেট
- পানাম নগর
- ঢাকা ক্লাব ঐতিহ্যে শতবর্ষের ধারক
- বলধা গার্ডেন
- মনসা মঙ্গলে বাংলার ভাবের হদিস
- স্টাম্প প্যাড
- আয়শা
- স্পেতসেস
- ভারতীয় মুসলমানদের বঞ্চনা
- আকবরিয়া গ্র্যান্ড হোটেল, বগুড়া
- ক্লিওপেট্রা
- ব্যাংক অব আমেরিকা টাওয়ার
- সৌন্দর্য চর্চায় লেবু
- কক্সবাজার
- আচার ভালো রাখার উপায়
- রোজ গার্ডেন
- খিলগাঁও সুপার মার্কেট
- দালাল
-
▼
August
(96)
Thursday, August 5, 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
নোনা স্বপ্নে গড়া তোমার স্মৃতি
শত রঙ্গে রাঙ্গিয়ে মিথ্যে কোন স্পন্দন
আলোর নিচে যে আধার খেলা করে
সে আধাঁরে শরীর মেশালে
আজ আমি ধূসর কী রঙ্গীন সময়ে
পথ হারাই তোমাতে
মিসর সাম্রাজ্যের টলেমি বংশের শেষ সম্রাজ্ঞী ছিলেন সপ্তম ক্লিওপেট্রা ফিলোপেটর। দ্বাদশ টলেমির (নিয়োজ ডায়োনিসাস) তৃতীয় কন্যা ক্লিওপেট্রা ছিলেন অতি বুদ্ধিমতী ও বিদ্বান তবে শিথিল নৈতিকতাসম্পন্ন নারী। তার শরীরে ছিল গ্রিক রক্ত। মিসরের টলেমি বংশে ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার প্রথম মিসরে আধিপত্য স্থাপন করেন আর তার ইতি টানলেন সপ্তম ক্লিওপেট্রা। এর মধ্যে যে ৬ জন ক্লিওপেট্রা ছিলেন তারা তেমন কোনো কীর্তি রেখে যেতে পারেননি। ফলে তারা ততটা আলোচিতও হননি। আলেকজান্ডারের মিসর বিজয়ের পর প্রায় আড়াইশ বছর ধরে এ ১২ জন টলেমি মিসর শাসন করেন। দ্বাদশ টলেমিই ছিলেন প্রকৃত অর্থে টলেমি রাজবংশের শেষ সম্রাট। তার বালকপুত্র ত্রয়োদশ টলেমিও সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন, কিন্তু রাজত্ব করতে পারেননি।
১৮ বছর বয়সে মিসরের সম্রাজ্ঞী হলেন সপ্তম ক্লিওপেট্রা। মিসরীয় নিয়ম অনুযায়ী অষ্টাদর্শী ক্লিওপেট্রা (ফিলোপেটর) তার ছোট ভাই ১০ বছর বয়সী ত্রয়োদশ টলেমিকে বিয়ে করে মিসরের রানী হন। কিন্তু তাদের দুজনের মধ্যে ছিল বিরোধ। খ্রিস্টপূর্ব ৪৭ অব্দে রোমের সেনাপতি জুলিয়াস সিজার মিসরে এলে এই বিরোধের নিষ্পত্তি হয়। সিজারের সঙ্গে যুদ্ধে মারা যান ত্রয়োদশ টলেমি। ক্লিওপেট্রা পরিণত হন সিজারের প্রণয়িনীতে এবং সিজারের সঙ্গে তিনি রোমে চলে যান। অবশ্য এ সময় তিনি নামে মাত্র বিয়ে করেছিলেন তার ছোট ভাই চতুর্দশ টলেমিকে। সিজার নিহত হলে তিনি মিসরে ফিরে আসেন। চতুর্দশ টলেমি মারা যাওয়ার পর ক্লিওপেট্রা তার সন্তান পঞ্চদশ টলেমির সঙ্গে যৌথভাবে মিসর শাসন করতে থাকেন। পঞ্চদশ টলেমি ছিলেন সিজারের ঔরসজাত সন্তান। তিনি সিজারিয়ন হিসেবেও ইতিহাসে পরিচিত।
ইতিহাসের এক পর্যায়ে সিজারের বন্ধু ও সেনাপতি মার্ক অ্যান্টনি মিসরে ক্লিওপেট্রাকে আক্রমণ করতে আসেন এবং তিনি ক্লিওপেট্রার প্রেমে পড়েন। তাদের যমজ সন্তান হয়। এদের একজন আলেকজান্ডার হেলিয়স ও অন্যজন ক্লিওপেট্রা সেলেনি। মিসরের সিংহাসন লাভের জন্য অ্যান্টনি খ্রিস্টপূর্ব ৩৬ অব্দে ক্লিওপেট্রাকে বিয়ে করেন। কিন্তু অ্যান্টনি ছিলেন বিবাহিত, তার স্ত্রী ছিলেন সিজারের উত্তরাধিকারী অক্টাভিয়াসের বোন। অক্টাভিয়াস এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে আক্রমণ চালিয়ে অ্যাক্টিয়াসে অ্যান্টনিও এবং ক্লিওপেট্রার নৌবহর ধ্বংস করে দেন। অ্যান্টনি পরাজিত হয়ে আত্মহত্যা করেন। মিসরের নয়া শাসক হয়ে অক্টাভিয়াস ক্লিওপেট্রাকে বিয়ে করতে চাইলেও তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অক্টাভিয়াসের হাতে নিহত হয় সিজারিয়ন ও আলেকজান্ডার হেলিয়স। সেলেনি বিয়ে করেন নিউমিডিয়ার রাজাকে; তাদের ছেলে সর্বশেষ টলেমি নিহত হন ক্যালিগুলার হাতে। এভাবে মিসরে মেসিডোনিয়ান সাম্রাজ্যের টলেমি বংশের অবসান ঘটে এবং শেষ হয় সপ্তম ক্লিওপেট্রার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অধ্যায়।
সপ্তম ক্লিওপেট্রা সারা বিশ্বের আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তার চরিত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা হয়েছে কালজয়ী উপাখ্যান। জর্জ বার্নড শ’ লিখেছেন সিজার ক্লিওপেট্রা, এতে প্রাধান্য পেয়েছেন রোমান্টিসিজিম। শেক্সপিয়র লিখেছেনÑ অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রা। এটিতেও প্রাধান্য পেয়েছে প্রেম ও উচ্চাকাক্সক্ষা। আর সেই সঙ্গে তিনি আশ্চর্য দক্ষতার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন ক্লিওপেট্রার রূপের। হেনরি হ্যাগার্ডের ক্লিওপেট্রায় ফুটে উঠেছে ক্লিওপেট্রার ব্যক্তিত্ব, উচ্চাভিলাস আর কিছুটা নারীসুলভ অসহায়তা। এ ছাড়াও ক্লিওপেট্রার চরিত্র নিয়ে লিখেছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিকÑ ড্রাইডেন প্লুটার্ক, ড্যানিয়েল প্রমুখ।
ইংরেজ ঔপনিবেশিকতার জন্য এ দেশে বেশিরভাগ লোকই শেক্সপিয়রের অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রা পড়েছেন। তারা সেই সঙ্গে পড়েছেন হ্যাগার্ডের ক্লিওপেট্রা। এই বিশেষ চরিত্রটিকে লেখকরা ঐতিহাসিক দিক দিয়ে যথাসম্ভব অপরিবর্তিত রেখেছেন। আবার অনেকে কিছু কাল্পনিক চরিত্রের অবতারণা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চরিত্র হচ্ছে হ্যাগার্ডের হার্মেসিস। হ্যাগার্ডের মতে, হার্মেসিস হচ্ছে মিসরের সেথ রাজবংশের শেষ উত্তরাধিকারী। বিষাক্ত সাপের কামড়ে আত্মহত্যা করেছিলেন ক্লিওপেট্রা। কালজয়ী উপাখ্যানের অমর চরিত্র ক্লিওপেট্রা কিংবদন্তি হয়ে আজও বেঁচে আছে।
কিছুদিন আগে পড়লাম হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের ক্লিওপেট্রা বইটির বাংলা অনুবাদ। সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশীত বইটির অনুবাদক সায়েম সোলায়মান। অনুবাদক চমৎকার অনুবাদ করেছেন স্বাবলীল শব্দচয়নে।
কাহিনী সংক্ষেপঃ মিশরের প্রাচীন এক রাজবংশে জন্ম নিল একটি ছেলে সন্তান “হারমাচিস”। তার মা স্বপ্ন দেখলেন একদিন তার ছেলে মিশরের রাজা হবেন, যেমন তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন। যেদিন হারমাচিসের জন্ম হলো সেদিনই, তখনকার রাজার ঘরে জন্মনিলো এক শিশুকন্যা “ক্লিওপেট্রা”।
হারমাচিসের মা তার স্বপ্নের কথা জানিয়ে দিল হারমাচিসের বুড়ি দাইমার কাছে। এক’কান দু’কান কেরে এই কথা পৌছোগেল রাজার কানে। রাজা কথাটা শোনা মাত্রই সৈন্য পাঠালো ছেলেটাকে মারা জন্য। সৈন্যরা যখন হারমাচিসকে মারতে এলো তখন বুড়িদাইমা তার নিজের নাতিকে হারমাচিস বলে চিনিয়েদিলেন সৈন্যদের। সৈন্যরা বুড়ির নাতীর মাথা কেঁটে নিয়েগেল রাজাকে দেখাতে। এভাবেই বেঁচে গেলো হারমাচিস। রাজাও কাটা মাথা দেখে ভুলেগেলেন সব।
হারমাচিস একটুবড় হবার পর একদিন তার বাবার কাছে জানতে পারলো তার মার দেখা স্বপ্নের কথা, একদিন মিশরের রাজা হবে সে। তাই তার বাবা যেকিনা প্রধান পুরহিত, ছেলে হারমাচিসকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য হারমাচিসএর মামার নিকটে পাঠিয়ে দিলেন। পাঁচ বছর একমাস মামার কাছে থেকে নানান ধরনের শিক্ষা ও জাদুবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠে হারমাচিস। বাবার কাছে ফিরে এলে বাবা তাকে এবার দেবতাদের বিষয়ে অজানা ধ্যানসাধনার কথা বলেন। এর কিছুদিন পরেই হারমাচিস প্রধান পুরুহিত হিসেবে দিখ্যা নেন, এবং একটি গোপন মিটিংএ মিশরের বিভিন্ন পুরহিত ও প্রধান প্রধান ব্যক্তিবর্গ হারমাচিসকে মিশরের ফারাও বা রাজা হিসেবেও মননিত করেন।
ইতোমধ্যে রাজার মৃত্যুর পরে তার কন্যা ক্লিওপেট্রা মিশরের রাণী হয়ে সিংহাসনে বসে। তাই হারমাচিসের উপরে দায়ীত্ব পরে, ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করার। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় বিদ্রহ ও হত্যার মাধ্যমে হারমাচিসের রাজা হবার। রাণী ক্লিওপেট্রার খাস দাসী চারমিওন ছিলো হারমাচিসেরই চাচাতো বোন। চারমিওনের সাহায্যে হারমাচিস রাণীর নেকনজরে আসে এবং রাণীর খাস জ্যতীসি হিসেবে নিযুক্ত হয়। রাণী হারমাচিসের রূপ দেখে তাকে ভালো বেসে ফেলে, আবার হারমাচিসও নিজের কর্তব্যের কথা ভুলে যায় ক্লিওপেট্রার রূপ দেখে। ক্লিওপেট্রার ছিলো মিশরের সেরা সুন্দরী।
হারমাচিস আর রাণী ক্লিওপেট্রা ভালোবেসে ফেলে একে-অপরকে। কিন্তু হারমাচিসকে সকলেই বারবার মনে করিয়ে দিতে থাকে তার কর্তব্যের কথা। একদিন হারমাচিস ও চারমিওন মিলে ঠিককরে রাণীকে ছুরিমেরে হত্যা করবে হারমাচিস। সেই মোতাবেক হারমাচিস যায় রাণীর কক্ষে, কিন্তু চারমিওনের বিশ্বাস ঘাতকতাকার কারণে ধরা পরে যায় হারমাচিস। তারপর শুরু হয় তার নতুন আরেক উপলব্ধি।
শেষপর্যন্ত হারমাচিস কি পেরে ছিলো ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করতে......
রাজা হয়েছিলো হারমাচিস........
চারমিওন কেন বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলো........
বইটি পড়ুন উত্তর জানতে চাইলে।
ক্লিওপেট্রা বইটি থেকে কিছু উক্তি এখানে উল্লেখ করছি, যা আমার ভালো লেগেছে।
১/ নারীর জিভ ছাড়া পৃথিবীর আর সব কিছুকেই বোধহয় বেঁধে রাখা সম্ভব।
২/ কেবলমাত্র বোকা আর মূর্খরাই গোপন কথা বলে দেয়। জ্ঞানী আর সাহসীরা চুপ থাকে, উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করে।
৩/ সৌন্দর্যের দংশনে বিষধর সাপে কাটা মৃত মানুষের মতো স্থির হয়ে গেলাম আমি।
৪/ ফলের পোকার মতো কাজ করতে হবে আমাদের। যে পোকা ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে ফলকে, কিন্তু বাইরে থেকে বুঝা যায়না ব্যাপারটা।
৫/ কোনো মেয়ে যদি তোমাকে ভালো না বাসে বা অন্ততপক্ষে পছন্দ না করে, তাহলে ওকে বিশ্বাস কোরো না। ওদের মতিগতির কোনো ঠিক নেই-ওদের আবেগ সমুদ্রের ঝড়ের মতো। কখন আসে, কখন যায়, টের পাওয়া যায় না।
৬/ তাড়াহুড়ো কতরে গিয়ে ভুল লোককে বেছে নেবেন না দয়া করে।
৭/ নর-নারীর ভালোবাসার ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। ওই আবেগ শুরু হয় পাহাড়ের বুকে জন্ম নেওয়া ঝরনার মতো-ছোট্ট একটা জলধারা, যাকে গুরুত্বই দেয় না কেউ। আর শেষ হয় বিরাট কেনে নদীর মোহনায়, অথবা হয়তো কারও ক্ষেত্রে সমুদ্রে। সাঁতার না জানলে ডুবে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না প্রেমিকের।
৮/ আমার মতে ভালোবাসা হচ্ছে আশার সমাধি, বিশ্বাসের ধ্বংসস্তূপ।
৯/ যতদিন আঘান না আসে, ততদিন প্রেম খুবই মধুর।
১০/ সুখ কি, তা না জেনেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
১১/ সময়ের চেয় বড় চিকৎসক আর নে্ই। মনের ঘা, শরীরের ঘা দুটোই একসময় শুকিয়ে দেয় সে।
১২/ যতটুকু পাই, ঠিক ততটুকুই চাই; আবার যতটুকু চাই, ঠিক ততটুকুই পাই।
১৩/ ভাগ্যকে দোষ দিয়ে আমরা পাপীরা নিজেদেরকে হালকা করতে চাই। অথচ একই পাপ আরেকজন করলে ওকে অপবাদ দিতে, সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে বাধে না আমাদের। ভাগ্যে লেখা ছিলো- বলে ক্ষমা করে দেই না লোকটাকে।
১৪/ পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত আবেগের নাম প্রেম এবং একমাত্র কোকারাই সেই আবেগে আক্রান্ত হয়।
১৫/ অকাজে বীরত্ব অপচয় করার চেয়ে আর বড় অপচয় নেই এই পৃথিবীতে।
সমস্ত প্রকার ভুল ও ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এখন, ধন্যবাদ।