Sunday, August 15, 2010

চার বছরের শিশুর মুখে ফেনসিডিল!

0 comments
চার বছরের এক শিশু বোতলে চুমুক দিয়ে কিছু একটা খাচ্ছে। দেখলে স্বাভাবিকভাবে মনে হবে বাচ্চাদের উপযোগী কোন জুস হয়ত খাচ্ছে সে; কিন্তু নজর একটু তীক্ষ্ন করলে বোঝা যাবে আসলে ব্যাপারটা তা নয়। শিশুটি বোতল থেকে চুষে খাচ্ছে ফেনসিডিল। তারই ফেনসিডিলসেবী বাবার ফেলে দেওয়া বোতল কুড়িয়ে নিয়েছে সে। যশোর শহরের তুলোতলা রায়পাড়ার এ ঘটনায় প্রমাণ করে যশোরে মাদকদ্রব্য কতোটা সহজলভ্য। যশোর শহর মাদকে ভাসছে। তার ঢেউ গিয়ে আছড়ে পড়ছে প্রত্যন্ত গ্রামেও। তুলোতলা রায়পাড়া হলো মাদকের অন্যতম বাজার। ভারতীয় শাড়ি ও কসমেটিক্সের অবাধ বিকিকিনির জন্য আশিরদশকে তুলোতলা রায়পাড়া যশোরের বনগাঁ বলে পরিচিত ছিল। পরে এটি মাদকপল্লী হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছে। এখানে বহুবার মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। মাদক স্পর্শ করবে না বলে এখানকার শত শত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে হাজির হয়ে শপথ নিয়েছে এবং মুচলেখাও দিয়েছে; কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে তারাই আবার এ কাজে নেমেছে। বর্তমানে এই মাদকপল্লীতে তিনশতাধিক মাদক ব্যবসায়ী আছে। এদের অর্ধেকের বেশি মহিলা। বেশ কিছু সংখ্যক শিশু-কিশোরও এর সঙ্গে জড়িত। এখানে পাইকারীহারে বেচাকেনা হওয়া ছাড়াও ফেরি করে বেচার দল আছে। শহরের পাড়া, মহল্লা এবং অলিগলিতেও খোলামেলা মাদক বিক্রি হয়। এসব বিক্রয় কেন্দ্রের মধ্যে চাঁচড়া, রেলগেট কলাবাগান, কয়লাপট্টি, চোরমারা দীঘিরপাড়. খড়কি, ধর্মতলা, কাজীপাড়া, পালবাড়ি, বাবলাতলা, উপশহর, ঘোপনুয়াপাড়া, ধানপট্টি, খালধার রোড, বারান্দিপাড়া, বেজপাড়া, আশ্রম রোড, শঙ্করপুর উল্লেখযোগ্য। এসব স্পট থেকে মাদক যাচ্ছে গ্রামে এবং জেলার বাইরেও।
মাদক পাচারের নানা কৌশল
যশোর শহরে মাদক আসে ভারত থেকে। এসবের মধ্যে ফেনসিডিল ও হেরোইনই বেশি। মদ ও প্যাথেড্রিন ইনজেকশনও আসে। সারাদেশে এসব মাদকের চালান পৌঁছে দেওয়ার জন্য যশোর হচ্ছে ট্রানজিট পয়েন্ট। চালানগুলো গন্তব্যে পেঁৗছাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্বিঘ্ন করতে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়। কাঁঠাল, নারকেল ও মিষ্টি কুমড়োর ভেতর ঢুকিয়ে, সবজির গাড়ি, সাপের ডালি, ওষুধ ও মিষ্টির প্যাকেটে সাজিয়ে মাছের পোনাবহনকারী পিকআপে চাপিয়ে এবং শরীরে সেট করে দূরপাল্লার গাড়ি, এম্বুলেন্স, বিয়ের গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সিটের নিচে বেঁধে মাদক স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন সমপ্রতি অভিযান চালিয়ে এভাবে মাদক বহনের সময় একাধিক চালান আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
মাদক পাচারের রুট
শার্শা উপজেলার গোগা, অগ্রভুলট, পাঁচভূলট, পুটখালী, দৌলতপুর, গাঁতিপাড়া, সাদিপুর, ডিহি ও কাশিপুর এবং চৌগাছা উপজেলার শাহজাদপুর, আন্দুলিয়া, হিজলী, বর্ণি, মাসিলা ও পাঁচপিরতলাসহ অন্তত ২০টি পয়েন্ট দিয়ে স্্েরাতের মতো মাদকের চালান আসে। চৌগাছার সবকটি পয়েন্ট ও শার্শার পুটখালি দিয়ে ফেনসিডিল আসে। এর পরিমাণ প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার বোতল। ১০ কেজি করে হেরোইন আসে শার্শা সাদিপুর দিয়ে। যশোর শহরে মাদকের খোলামেলা বেচাকেনা চললেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজনের তৎপরতা নেই বললেই চলে। মাদকের ছড়াছড়ি থাকলেও তাদের উদ্ধারের যৎসামান্য সাফল্য তা প্রমাণ করে। গত বছর তারা মাত্র তিন কেজি ১৯১ গ্রাম হেরোইন, তিন হাজার ৯৫৬ বোতল ফেনসিডিল, ৩৪ কেজি গাঁজা ও ১৯২ বোতল মদ উদ্ধার করে।
ব্যবসায়ে পুঁজি বিনিয়োগ
মাদক ব্যবসা অন্য যে কোন ব্যবসার চেয়ে লাভজনক। পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি খাটালে প্রতিদিন সহজেই ৫০০ টাকা লাভ হয়, যা অন্য কোন বৈধ ব্যবসায় হয় না। মাদক ব্যবসায়ীরা টাকার জোগান পায় এক শ্রেণীর সুদখোর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এসব ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পুঁজি খাটায়। তারা প্রতিদিন এক হাজার টাকায় ১০ টাকা সুদ নেয়। কেউ পাঁচ হাজার টাকা নিলে তাকে প্রতিদিন সুদ দিতে হয় ৫০ টাকা। মাদক বেচাকেনা করে তাদের বাড়তি থাকে ৪৫০ টাকা। একজন সুদখোর ব্যবসায়ী মাদক ব্যবসায় পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করে ফুলে-ফেঁপে উঠছে।
মাদক ব্যবসায়ে পুলিশ-বিডিআরের
সহযোগিতার অভিযোগ
প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে যশোর আসার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে পুলিশ ও বিডিআর। ৮ আগস্ট ডেপুটি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাদকবিরোধী সভায় এ অভিযোগ করা হয়। ডেপুটি কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বিডিআরের কমান্ডিং অফিসার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য ওই সভায় সীমান্তে এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পের দূরত্ব অনেক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয় বলে চোরাচালান ঠেকানো অনেকটা দূরূহ হয়ে পড়ে বলে উল্লেখ করা হয়।
ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী
অবাধ মাদক ব্যবসার কারণে যশোরের সামাজিক পরিবেশ কলুষিত হয়ে উঠেছে। আইন শৃঙ্খলার অবনতির প্রধান কারণ এই মাদক ব্যবসা বলে প্রশাসন ও জনগণ একমত। এ ব্যবসা সমূলে উৎখাতের দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে শহরবাসীর পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ছাত্র শিক্ষক ও সুধীমহল সম্মিলিতভাবে মাদকবিরোধী মিছিল নিয়ে এই স্মারকলিপি দেয়।
উত্সঃ সংবাদ

0 comments:

Post a Comment