ঢাকা থেকে ২১০ কিলোমিটার দূরে সিলেট বিভাগের জেলা মৌলভীবাজার। এ জেলার বড়লেখা উপজেলায় রয়েছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় দুটি জলপ্রপাত। এছাড়াও বেশ কিছু বেড়ানোর জায়গা আছে জেলা শহরের আশপাশে।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় রয়েছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। প্রায় ২৭০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া এ জলপ্রপাত সারা বছরই বহমান থাকে। তবে বর্ষা পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। মাধবকুণ্ড ইকো পার্কের প্রধান ফটক ফেলে প্রায় আধা কিলোমিটার পথ হাঁটার পরে জলপ্রপাতে এসেই সড়কটি শেষ হয়েছে। জলপ্রপাতের কাছেই একটি খাসিয়া পুঞ্জি। খাসিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছোট্ট এ গ্রামটি ছবির মতো সুন্দর।
পরীকুণ্ড জলপ্রপাত
মাধবকুণ্ড ঝরণার কিছুটা আগে শিব মন্দিরের বিপরীত দিক থেকে পাথুরে ঝিরি পথটি শেষ হয়েছে পরীকুণ্ড জলপ্রপাতে। এ ঝরণাটির সৌন্দর্য মাধবকুণ্ডের চেয়েও অনেক বেশি। তবে এটি কেবল বর্ষাকালেই প্রাণ ফিরে পায়।
হাকালুকি হাওর
দেশের অন্যতম হাওর হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে অবস্থিত। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পশ্চিম প্রান্তে পড়েছে হাকালুকির একটি অংশ। হাকালুকি হাওরের নামকরণ নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। জানা যায়, বহু বছর আগে ত্রিপুরার মহারাজ ওমর মানিক্যের সৈন্যদের ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জলমগ্ন এ জায়গায় লুকিয়ে ছিল। এ কারণে এ এলাকার নাম হয় হাঙ্গর লুকি বা হাকালুকি। এরকম আরো একটি কাহিনী হলো- এক সময় বড়লেখার পশ্চিমাংশে হেংকেল নামে এক আদিবাসী গোষ্ঠীর বসবাস ছিল। তাদের সে এলাকার নাম ছিল হেংকেলুকি। পরবর্তীতে হেংকেলুকি থেকেই হাকালুকির উদ্ভব হয়।
প্রায় ১৮১ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত এ হাওরের প্রায় ৭০ ভাগই মৌলভীবাজার জেলাতে। বর্ষায় এ হাওর প্লাবিত হয়ে বিশাল রূপ ধারণ করে। তখন এর গভীরতা থাকে ৬-২০ ফুট। শুষ্ক মৌসুমে হাওরের বেশিরভাগই শুকিয়ে যায়। শুধু হাওরের প্রায় ২৩৮টি বিলে সারা বছরই কমবেশি পানি থাকে।
বর্ষিজোড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল
মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্ষিজোড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এর আরেক নাম লাউডগা রিজার্ভ ফরেস্ট। প্রায় আটশো একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে বর্ষিজোড়া পাহাড়ের উপর এ বন। এ বনের প্রধান বৃক্ষ শাল।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে রেল ও সড়কপথে মৌলভীবাজার যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০১৭১১৯২২৪১৭), শ্যামলী পরিবহন (০১৭১১৯৯৬৯৬৫), সিলেট এক্সপ্রেস (০১৭১৩৮০৭০৬৯), টি আর ট্রাভেলস (০১৭১২৫১৬৩৭৮) ইত্যাদি বাসে যাওয়া যায় মৌলভীবাজার। ভাড়া নেন এসি বাসে ২৫০ টাকা, টি আর ট্রাভেলসের এসি বাসে ৩৫০ টাকা। ট্রেনে মৌলভীবাজার যেতে হলে নামতে হবে কুলাউড়া স্টেশনে। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২.০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০.০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া- এসি বার্থ ৫৮১ টাকা, এসি সিট ৩৯৭ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৩৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৮০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৫০ টাকা, শোভন ১৩০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯.০০ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪১৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৮৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৪৭২ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮৫ টাকা, শোভন ১৭০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
মৌলভীবাজারে থাকার জন্য কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল আছে। শ্রীমঙ্গল রোডে হোটেল সোনাগাঁও (০৮৬১-৬৪৬০৭), শহরের কুসুমবাগে হোটেল শেরাটন প্লাজা (০৮৬১-৫২০২০), সাইফুর রহমান রোডে হোটেল হেলাল (০৮৬১-৫২৫৩৫)। এসব হোটেলে প্রতিদিনের রুম ভাড়া ১৫০-৫০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।
জরুরি প্রয়োজনে
সদর হাসপাতাল: ০৮৬১-৫৩০৩৮, ০৮৬১-৫৩০৮২, ফায়ার সার্ভিস ০৮৬১-৫২১১১, কুলাউড়া থানা: ০৮৬২৪-৫৬০০৩, বড়লেখা থানা: ০৮৬২২-৫৬০১৩।
০০ আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন ০০
0 comments:
Post a Comment