দেশে প্রচণ্ড বিদ্যুৎ সংকট চলছে। ভুগছেন সবাই। যাতে কাজ চালানোর মতো বিদ্যুৎ পান সবাই, বিশেষ করে পুরো গ্রীষ্মকালে যাতে কৃষকরা বোরো ধানের ক্ষেতে পানি সেচ দিতে পারেন, সে জন্য সরকার লোডশেডিং করে অর্থাৎ এক ধরনের রেশনিং করে সবাইকে কিছু বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। লোডশেডিং হওয়ায় যার ঘরে বা কারখানায় যখন বিদ্যুৎ থাকে না, তখন তিনি ক্ষুব্ধ হন। বিদ্যুৎ ফিরে এলে খানিকক্ষণের জন্য স্বস্তি পান। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়মিত অথবা বিরতিহীন না হওয়ায় অনেকেরই খুব অসুবিধা হচ্ছে, যেমন ওয়াসার। হাসপাতালে চিকিৎসক ও সেবাদানকারীরাও ভয়ে ভয়ে থাকেন, কখন জটিল কাজের মাঝখানে বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুৎনির্ভর ছোট-বড় অনেক কল-কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। আপাতত 'যখন যেমন তখন তেমন' দর্শনটি মেনে নিয়ে প্রায় সবাই কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে এ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মহাজোট সরকারের সবাই গত বিএনপি-জামায়াত সরকারকে দায়ী করছেন এখনকার বিদ্যুৎ সংকটের জন্য। তাঁরা বলছেন, সেই সরকার নতুন করে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি। তবে তাঁদের মধ্যে যাঁরা একটু সতর্ক, তাঁরা অবশ্য বলেন, গত সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারেনি। বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রামে বলেছেন, এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। আর জাতীয় সংসদে তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকার অযোগ্য বলেই বিদ্যুৎ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। তিনি বিগত জরুরি শাসনের দুই বছরের সরকারটির বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন এই মর্মে যে, তাঁর জোট সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো এবং নতুন কেন্দ্র বসানোর জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ যে কাজগুলো করে রেখেছিল, সেগুলো তারা সম্পন্ন না করে ফেলে রাখায় এখন বিদ্যুৎ সংকট এত গভীর হয়েছে।
ইতিমধ্যে সেই পাকিস্তান জমানা থেকে গত বছর এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর একটা তালিকা আমাদের হাতে এসেছে। এটার সূত্র বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। তালিকাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ১৯৬২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে, যা এখন স্বাধীন বাংলাদেশ, সরকার কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটসহ মোট পাঁচটি বিদ্যুৎ উৎপাদনযন্ত্র বসিয়েছিল। এই সব কয়টির মোট উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২৬৮ মেগাওয়াট।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে যে কয়টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে, তার উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১১৫ মেগাওয়াট। জেনারেল জিয়া ও বিচারপতি সাত্তারের শাসনামলে চালু হয় পাঁচটি ইউনিট। সেগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৬৫ মেগাওয়াট।
এরপর জেনারেল এরশাদের আমল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারি উদ্যোগ বাড়তে থাকে। তাঁর ৯ বছর শাসনামলে ১৪২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম ছোট-বড় ২২টি ইউনিট বসে। বিএনপির দ্বিতীয় আমল, অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়া প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় যোগ হয় ৫৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় আমলে সরকারি ও বেসরকারি - দুই খাতে যেসব নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট যোগ এবং নতুন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, তার উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১২১৫ মেগাওয়াট। উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলাদেশে সেবারই প্রথম বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে দেওয়া হয়। তবে তাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের সবটাই সরকার কিনে নেয়। খালেদা জিয়া তাঁর জোট সরকারের আমলে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিদ্যুতের নতুন উৎপাদন ক্ষমতা যোগ করেন ১১৮৫ মেগাওয়াট। আর গত কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভাড়া করা বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে যোগ করে ৩৫৯ মেগাওয়াট।
এ অবস্থায় কোনো সরকারই বলতে পারে না - 'আমরা ছাড়া আর কেউ কিছু করেনি।' যা বলতে পারে, তা হলো - 'অন্যরা যথেষ্ট করতে পারেনি।' নিচের তালিকাটি পড়লে দেখা যাবে, দেশে বহু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল হওয়ার বয়স পার হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও নানা কারণে, যার মধ্যে বড় হলো আর্থিক অসচ্ছলতা, পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন কেন্দ্র বসানো যায়নি। অবশ্য, বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর নানা রকম শর্ত ও বায়না এবং বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের কূটকৌশল বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন ব্যাহত করেছে মারাত্দকভাবে। অন্যদিকে, সারা দেশে চাহিদা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তবে এখান থেকে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনার সুবিধার জন্য গত ৪৮ বছরের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের তালিকা সংযোজন করলাম। আশা করব, কারো না কারো কাজে লাগবে।
পাকিস্তান আমল
কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প - দুই ইউনিট। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ মেগাওয়াট। চালু করার তারিখ ৮ জানুয়ারি, ১৯৬২ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২। আশুগঞ্জ - দুই ইউনিট। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ৬৪ মেগাওয়াট। গ্যাসচালিত। প্রতিষ্ঠাকাল ৮ জুলাই, ১৯৭০ এবং ১৭ জুলাই, ১৯৭০। শাহজীবাজার - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ মেগাওয়াট। চালু করার তারিখ ১৯৬৯। গ্যাসচালিত।
স্বাধীনতা-পরবর্তীকাল : আওয়ামী লীগের আমল
ঘোড়াশাল - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ৫৫ মেগাওয়াট। চালু করার তারিখ ১৬ জুন, ১৯৭৪। গ্যাসচালিত। খুলনা - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েলচালিত। এ সময় দেশের সরকারপ্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রথম সামরিক শাসনামল
ঘোড়াশাল - দুই ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ৫৫ মেগাওয়াট। চালু করার তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬। গ্যাসচালিত। ভেড়ামারা - দুই ইউনিট। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ২০ ইউনিট। চালু করার তারিখ ২৭ এপ্রিল, ১৯৭৬ এবং ২৮ জুলাই, ১৯৭৬। হাই স্পিড ডিজেলচালিত।
এ সময় সরকারি ক্ষমতা ছিল মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের হাতে।
বিএনপির প্রথম আমল
ভেড়ামারা - এক ইউনিট। ২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন। চালু করার তারিখ ১৯ জানুয়ারি, ১৯৮০। হাইস্পিড ডিজেলচালিত। এ সময় রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া ছিলেন সরকারপ্রধান। কর্ণফুলী বিদ্যুৎ প্রকল্প - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট। চালু হওয়ার তারিখ ৮ জানুয়ারি, ১৯৮২। এ সময় সরকারপ্রধান ছিলেন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার।
দ্বিতীয় সামরিক শাসনামল
শিকলবাহা - দুই ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ মেগাওয়াট এবং ২৮ মেগাওয়াট। চালু হওয়ার তারিখ ২৪ এপ্রিল, ১৯৮৪ এবং ১৩ অক্টোবর, ১৯৮৬। গ্যাসচালিত। আশুগঞ্জ - তিন ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা দুটির প্রতিটি ৫৬ মেগাওয়াট এবং ৩৪ মেগাওয়াট একটি। এই তিনটি ইউনিট চালু করার তারিখ ১৪ নভেম্বর, ১৯৮২ ২৮ মার্চ, ১৯৮৪ এবং ২৩ মার্চ, ১৯৮৬। ঘোড়াশাল - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। চালু করার তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬। খুলনা - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ১১০ মেগাওয়াট। উৎপাদন শুরুর তারিখ ৭ জুলাই, ১৯৮৪। ফার্নেস অয়েলচালিত। বরিশাল - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ২০ মেগাওয়াট। চালু হওয়ার তারিখ ৫ আগস্ট, ১৯৮৪। এ সময় প্রধান সামরিক শাসনকর্তা ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন লে. জে. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সামরিক শাসনের এই আমল ছিল ২৫ মার্চ, ১৯৮২ থেকে ১০ নভেম্বর, ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত।
জাতীয় পার্টির আমল
আশুগঞ্জ - তিন ইউনিট। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০ মেগাওয়াট। চালু করার তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ ৪ মে, ১৯৮৭ এবং ২১ মার্চ, ১৯৮৮। হরিপুর - তিন ইউনিট। প্রতিটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩২ মেগাওয়াট। চালু করার তারিখ ৩১ অক্টোবর, ১৯৮৭ ১৫ নভেম্বর, ১৯৮৭ এবং ২ ডিসেম্বর, ১৯৮৭। গ্যাসচালিত। সিলেট - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ২০ ইউনিট। চালু করার তারিখ ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৬। গ্যাসচালিত। কর্ণফুলী বিদ্যুৎ প্রকল্প - দুই ইউনিট। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট, চালু হওয়ার তারিখ ১১ জানুয়ারি, ১৯৮৮। ঘোড়াশাল - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন আরম্ভের তারিখ ১৮ মার্চ, ১৯৮৯। গ্যাসচালিত। সৈয়দপুর - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ২০ মেগাওয়াট। চালু হওয়ার তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭। হাইস্পিড ডিজেলচালিত। বরিশাল - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ২০ মেগাওয়াট। চালু করার তারিখ ৪ অক্টোবর, ১৯৮৭। হাইস্পিড ডিজেলচালিত। রংপুর - এক ইউনিট। ২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা। চালু হওয়ার তারিখ ১৬ আগস্ট, ১৯৮৮। হাইস্পিড ডিজেলচালিত। ভোলা - এক ইউনিট। তিন মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর তারিখ ৮ অক্টোবর, ১৯৮৮। ভোলা - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা তিন মেগাওয়াট। চালু হয় ৮ অক্টোবর, ১৯৮৮। ফার্নেস অয়েল পরিচালিত। এই আমলে জেনারেল এরশাদ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ও সরকারপ্রধান ছিলেন।
বিএনপির দ্বিতীয় আমল
বাঘাবাড়ী - এক ইউনিট। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭১ মেগাওয়াট। উৎপাদন শুরুর তারিখ ৪ জুন, ১৯৯১। গ্যাসচালিত। রাউজান - এক ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। চালু হওয়ার তারিখ ২৮ মার্চ, ১৯৯৩। গ্যাসচালিত। ঘোড়াশাল - পাঁচ ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন আরম্ভ হওয়ার তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪। গ্যাসচালিত। ফেঞ্চুগঞ্জ - তিন ইউনিট। প্রতিটি ৩২ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন দুটি এবং ৩৩ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম একটি। চালু হওয়ার তারিখ ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯৫ এবং ৮ জুন, ১৯৯৫। গ্যাসচালিত। বিএনপি সরকারের এই আমলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারপ্রধান ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় আমল
রাউজান - দুই ইউনিট। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। চালু হওয়ার তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭। গ্যাসচালিত। ঘোড়াশাল - ছয় ইউনিট। উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। চালু হওয়ার তারিখ ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯৯। শাহজীবাজার - দুই ইউনিট। প্রতিটি ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন। উৎপাদন আরম্ভ হওয়ার তারিখ ২৮ মার্চ, ২০০০ এবং ২৫ অক্টোবর, ২০০০। গ্যাসচালিত। এ পর্যন্ত অর্থাৎ ওপরে দেশের বিভিন্ন শাসনামলে বিদ্যুৎ উৎপাদনযন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং চালু করার যে তালিকা দেওয়া হলো, তার সবই সরকারি খাতের। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় মালিকানার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দেওয়া এবং সেসব কেন্দ্রের কাছ থেকে সরকারের বিদ্যুৎ কিনে নেওয়ার রীতি চালু হয়। সেই নীতি অনুসারে আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলে বেসরকারি খাতে খুলনায় একটি ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র ১২ অক্টোবর, ১৯৯৮ বাঘাবাড়ীতে ৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কেন্দ্র ২৬ জুন, ১৯৯৯ হরিপুরে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম একটি ও ২৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম আরেকটি কেন্দ্র এবং ময়মনসিংহে পাঁচ ইউনিটের ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম একটি কেন্দ্রের চারটি ইউনিট ২০ নভেম্বর, ১৯৯৯ থেকে ২৩ মে, ২০০১ সালের মধ্যে চালু হয়। আওয়ামী লীগের এই আমলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান ছিলেন। এটা ছিল তাঁর প্রথম শাসনামল।
বিএনপির তৃতীয় আমল
সরকারি খাতে চালু হয় সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি ইউনিট, এর উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট এবং এটা বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে ৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৪ সালে। এটা গ্যাসচালিত। টঙ্গী বিদ্যুৎকেন্দ্র - এক ইউনিট, উৎপাদন ক্ষমতা ১০৫ মেগাওয়াট, চালু হয় ২৮ মার্চ, ২০০৫। গ্যাসচালিত। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র - দুই ইউনিট, মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন আরম্ভ করার তারিখ ৩১ জানুয়ারি, ২০০৬। কয়লাচালিত।
বিএনপি তৃতীয় শাসনামলে পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার নীতি অব্যাহত রাখে। এই আমলে হরিপুর পাওয়ার লিমিটেড কম্পানির ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়। আরো চালু হয় মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের নরসিংদীর তিন ইউনিটসম্পন্ন কেন্দ্র, যার উৎপাদনক্ষমতা ৪৫০ মেগাওয়াট। পাঁচটি রাজনৈতিক আমল এবং দুটি সামরিক শাসনামল ছাড়াও বিগত তত্ত্বাবধায়ক বা জরুরি আইনের দুই বছরের শাসনামলেও কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হচ্ছে ভাড়া করা, যার মধ্যে তিনটি ১৫ বছর মেয়াদের জন্য, আর বাকি তিনটি মাত্র তিন বছর মেয়াদের জন্য। তিন বছর মেয়াদি কেন্দ্রগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ১৩৮ মেগাওয়াট এবং ১৫ বছর মেয়াদিগুলোর সম্মিলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১১৬ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে সামিট পাওয়ার আরইবির জন্য ১০৫ মেগাওয়াট উৎপাদন করছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমল থেকে।
লেখকঃ আতাউস সামাদ
0 comments:
Post a Comment