Monday, August 9, 2010

জামালপুর

0 comments
রাজধানী থেকে সড়কপথে ১৮৭ কিলোমিটার এবং রেলপথে ১৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জেলা শহর জামালপুর। এ জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, কুড়িগ্রাম এবং শেরপুর জেলা, দক্ষিণে শেরপুর জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলা, পশ্চিমে যমুনা নদী, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলা অবস্থিত। এ অঞ্চলের সাধক পুরুষ হযরত শাহ জামালের (র) নামে এর নামকরণ হয়েছে জামালপুর। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে।

হযরত শাহ জামাল-এর (র) সমাধি:

জামালপুর শহরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত এ অঞ্চলের সাধক পুরুষ হযরত শাহ জামাল-এর (র) সমাধি। একটি সমাধিক্ষেত্র ছাড়াও পুরনো একটি মসজিদ আছে এখানে।

দয়াময়ী মন্দির

জামালপুর শহরের জিরো পয়েন্টের কাছে অবস্থিত প্রাচীন মন্দির। প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্য রীতির সংমিশ্রণে এ মন্দিরটি নির্মিত। প্রতিবছর অষ্টমী পূজা উপলক্ষ্যে এখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়।

হস্তশিল্পের দোকান

জামালপুর হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এ শহরে তাই হস্তশিল্পের বিপণিবিতানও অনেক। শহরের আশিক মাহমুদ কলেজ সড়কে এরকম অনেক বিক্রয় কেন্দ্র আছে, যেখানে অনেক কম দামে পাওয়া যাবে জামালপুরের বিখ্যাত নকশি কাঁথা ও সূচিকর্মের বিভিন্ন সামগ্রী।

হযরত শাহ কামাল-এর (র) সমাধি:

জেলার মোলান্দহ উপজেলার দুরমুট ইউনিয়নে ব্্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত হযরত শাহ কামাল-এর (র) সমাধি। এ অঞ্চলের বির্স্তীর্ণ এলাকা ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হলেও এ সমাধিক্ষেত্রটি আজও টিকে আছে। বৈশাখ মাসের শুরু থেকে এখানে মাসব্যাপি ওরস অনুষ্ঠিত হয়। ওরস উপলক্ষে পুরো মাসজুড়ে এখানে গ্রামীণ মেলা বসে। জামালপুর সদর থেকে বাস ও ট্রেনে সহজেই অঅসা যায় এখানে।

লাউচাপড়া

জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জের লাউচাপড়ায় অবস্থিত পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র। এখানে চারিদিকে গারো পাহাড়ের সবুজ বন। পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকা একটি সিঁড়ি উঠে গেছে একেবারে চূড়ায়। সেখানে আবার রয়েছে মস্ত বড় এক ওয়াচ টাওয়ার। দশ-বারোটি সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলে চারিদিকে সবুজ ছাড়া কিছুই আর চোখে পড়ে না। দূরে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আকাশছোঁয়া সব পাহাড়। চারিদিকটা যেন ছবির মতো। এই পাহাড়ি জঙ্গলে আছে নানা জাতের পশু-পাখি। ধান পাকার মৌসুমে আবার মেঘালয় থেকে চলে আসে বুনো হাতির দল। কাঠঠোকরা, হলদে পাখি, কালিম পাখি আরো কত ধরনের পাখি চোখে পড়বে এখানে। পুরো জায়গাটি অবসর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে জামালপুর জেলা পরিষদ। এ অবসর কেন্দ্রে প্রবেশে কোনো টাকা লাগে না। তবে কোনো বাহন নিয়ে গেলে তার জন্য পার্কিং ফি দিতে হবে। পার্কিং ফি প্রতিটি বাস কিংবা কোস্টারের জন্য ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, জিপ, টেম্পো, কার ৫০ টাকা, বেবি টেক্সি, ঘোড়ার গাড়ি ২০ টাকা, মোটর সাইকেল, ভ্যান গাড়ি ১০ টাকা, রিকশা ৫ টাকা, বাই সাইকেল ২ টাকা। এছাড়া লেকে নৌ বিহার করতে জনপ্রতি লাগবে ১০ টাকা, ওয়াচ টাওয়ারে উঠতে ৩ টাকা এবং পিকনিক পার্টির রান্নাঘর ও প্রতি চুলা ব্যবহারের জন্য দিতে হবে ৫০ টাকা।

দিকলাকোনা নামে এখানে আছে গারো আদিবাসীদের ছোট্ট একটি গ্রাম। এ গ্রামে বাইশ পরিবারে রয়েছে একশ জন গারো। তারা সবাই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। এ গ্রামের মাতব্বর প্রীতি সন সারমা। ভীষণ সদালাপি এ লোকটির আতিথেয়তায় মুগ্ধ হবেন যে কেউ। প্রতিবছর বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ, ইস্টার সানডে উপলক্ষে এ গ্রামে হয় নানা উৎসব।

দিকলাকোনা গ্রামের শুরুতেই রয়েছে ‘দিকলাকোনা সালগিত্তাল হোস্টেল’। খ্রিস্টান মিশনারিজ পরিচালিত এ হোস্টেলে প্রথম শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণীর প্রায় ৭০জন ছাত্র-ছাত্রী থাকে। এখান থেকে শুরু করে গ্রামটি ঘুরে ফিরে গারোদের দৈনন্দিন জীবনের নানান কাজ কর্ম উপভোগ করতে পারেন।

লাউচাপড়ায় রাত কাটানো হতে পারে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এখানকার শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ রাতে যেন আরো শান্ত, আরো স্নিগ্ধ। রাতে এখানে থাকার জন্য দুটি রেস্ট হাউস অছে। একটি জামালপুর জেলা পরিষদের পাহাড়িকা বাংলো এবং অন্যটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বনফুল রিসর্ট। জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসে থাকতে হলে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। যোগাযোগ করতে হবে প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ, জামালপুর। ফোন- ০৯৮১-৬২৭১৬, ০৯৮১-৬৩৫১৪, ০৯৮১-৬৩২৪০। তবে বেসরকারি বনফুল রিজর্টটি আরো বেশি সজ্জিত ও সুযোগ-সুবিধা সংবলিত। নিরাপত্তাও এখানে তুলনামূলক অনেক বেশি। এই রিসর্টে সাধারণ কক্ষের ভাড়া ১০০০ টাকা এবং তাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া ১৫০০ টাকা।

জায়গাটি জামালপুর জেলার অধীনে হলেও যাওয়ার সহজপথ হলো শেরপুর হয়ে। ঢাকা থেকে সরাসরি শেরপুরে যায় ড্রিমল্যান্ড পরিবহনের বাস। ভাড়া ১৮০-২০০ টাকা। শেরপুর থেকে বাসে বকশীগঞ্জের ভাড়া জনপ্রতি ২৫ টাকা। সেখান থেকে রিকশা কিংবা ভ্যানে লাউচাপড়ার ভাড়া জনপ্রতি ৩০-৪০ টাকা।

জেলা শহরে কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক ও রেল পথে আসা যায় জামালপুর। তবে সড়কপথের চেয়ে রেলপথটাই সুবিধাজনক। ঢাকার কমলাপুর থেকে আন্তঃনগর তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও অগ্নিবীনা ট্রেন যায় জামালপুর। ভাড়া প্রথম শ্রেণী ১৫০ টাকা এবং সাধারণ শ্রেণী ৫০-৮০ টাকা।

ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে মহানগর ও রাজীব পরিবহনের বাস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আধাঘণ্টা পরপর ছেড়ে যায়। ভাড়া ১৬০-১৮০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিধি পরিবহন, সিলেট থেকে শাহজামাল পরিবহন, রাজশাহী ও বগুড়া থেকে পদ্মা পরিবহনের বাসে সরাসরি জামালপুর আসা যায়।

কোথায় থাকবেন

জামালপুর শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল আছে। শহরের সবচেয়ে ভালো হোটেল সকাল বাজারে হোটেল স্টার ইন্টারন্যাশনাল, ফোন- ০১৭১৩২১১৪৯৪। এ হোটেল শীতাতপ নিয়ান্ত্রিত ও সাধারণ মানের কক্ষ আছে। ভাড়া ৪০০-১২০০ টাকা। এছাড়া শহরের অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেল হলো: গেইট পাড়ে হোটেল আল সিরাজ, ফোন-০৯৮১-৬২৫৯২। গেইেট পাড়ে হোটেল রাসেল, ফোন- ০৯৮১-৬৩২৯৪। স্টেশন রোডে হোটেল আল করিম, ফোন-০১৭১৬০৩৬৮০৮। মেডিকেল রোডে হোটেল সানোয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ফোন- ০১৭২৫২৪৬৯৬০। পুরাতন বাস স্টেশনে হোটেল আল সামাদ, ফোন- ০৯৮১-৬৩৪০১"এসব হোটেলে ২০০-৫০০ টাকায় থাকা যাবে।
০০ আলোকচিত্র ও লেখা মুস্তাফিজ মামুন ০০

0 comments:

Post a Comment