Friday, August 27, 2010

ঢাকার রেকর্ড সংখ্যক শিলালিপি প্রকাশ, বঙ্গ নিয়ে গবেষণায় ট্রাস্ট ফান্ড হচ্ছে

0 comments
ঢাকা: রাজধানী ঢাকার অলি-গলি ঘুরে খুঁজে পাওয়া নতুন ৫৪টি প্রাচীন শিলালিপি প্রকাশ করেছে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি।

শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ‘ঢাকার শিলালিপি’ শীর্ষক প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। একই অনুষ্ঠানে ‘প্রাচীন বঙ্গ নিয়ে গবেষণায় যৌথ উদ্যোগে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন অর্ধশতাধিক চিত্রশিল্পী, ভাষাবিদ, শিক্ষক, আলোকচিত্রী, স্থপতি ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী পণ্ডিতরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮৭২ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ঢাকার মোট ২১টি শিলালিপি বিভিন্ন সাময়িকী ও বইতে প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত গত দু’ছরের জরিপে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি আরবি ও ফারসি ভাষার আরও ৫৪টি নতুন শিলালিপির সন্ধান পায়। এছাড়া পর্তুগিজ, ল্যাটিন, আর্মেনীয় ও ইংরেজী ভাষার ১২ এপিটাফও খুঁজে পায় তারা।

আলোকচিত্রী পাভেল রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে ’ঢাকার শিলালিপি’ প্রতিবেদনটির মোড়ক উন্মোচন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিক। প্রতিবেদন পাঠ করেন জাকারিয়া মন্ডল।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির আহবায়ক জয়ীতা রায়। অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে প্রাচীন বঙ্গ বিষয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে ’ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন শিল্পী সাহাবুদ্দিন আহমেদ। ঘোষণা পত্র পাঠের পরপরই আদি কাঠামো ভেঙ্গে ফেলা ইসলাম খাঁ মসজিদের চিত্রকর্ম ঢাবি উপাচার্যের হাতে তুলে দেন ভাস্কর রাশা।

আগেই জমা পড়ে চন্দ্রশেখর দে, আবদুস সাত্তার, ফরিদা জামান, সাঈদা কামাল, রণজিৎ দাশ, রোকেয়া সুলতানা, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, নাইমা হক, বীরেন সোম, আইভি জামান, কেজি মুস্তাফা, আনিসুর রহমান, হামিদুজ্জামান খান ও মামুন কায়সারের চিত্রকর্ম।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, প্রতœত্ত্ববিদ আকম যাকারিয়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রফেসর এমিরিতাস’ এবিএম হোসেন, স্থপতি মীর মোবাশ্বের আলী, স্থপতি শামসুল ওয়ারেস, ফারসি ভাষাবিদ অধ্যাপক কুলসুম আবুল বাশার, চিত্রশিল্পী সমর জিৎ রায় চৌধুরী ও সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু।

এ সময় এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান আবু সাঈদ এম আহমেদ, টাকার নকশাকারক কেজি মুস্তাফা, চিত্রশিল্পী নাইমা হক, চিত্রশিল্পী লালারুখ সেলিম, ইংরেজী অনুবাদক অধ্যাপক ফখরুল আজম, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পরিচালক সুবীর চৌধুরী, স্থপতি রফিক আযম, ফরিদ উদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির জরিপে খুঁজে পাওয়া ৮টি শিলালিপির ফটোকপি ছাপানোর দায়ে অভিযুক্ত করা হয় পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইউসুফ সিদ্দিক ও জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এম এনামুল হককে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনুবাদের জন্য অনুবাদকদের কাছে সরবরাহ করা কিছু শিলালিপির ফটোকপি ছাপা হয়ে যাওয়ায় ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটিকে তড়িঘড়ি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়েছে। ঢাবি’র পৃষ্ঠপোষকতায় কমিটি শিগগিরই ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক ছয়টি গ্রন্থ প্রণয়ন করবে। যার কপিরাইট দেওয়া হবে ঢাবিকে।

উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক তার বক্তব্যে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক তথ্য উপাত্ত নথিবদ্ধকরণের সঙ্গে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তরুণ প্রজন্ম নির্দেশনা পেলে অসাধারণ কিছু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উপাচার্য আরও বলেন, ‘৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা আবার ইতিহাসের দিকে যাচ্ছি।’

অধ্যাপক এবিএম হোসেন বলেন, ‘ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি শিলালিপি খোঁজার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু তাদের পরিশ্রমে সংগৃহীত শিলালিপির চুরি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’
রাজিব ত্রিপুরা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি

0 comments:

Post a Comment