Saturday, August 21, 2010

ফিলিস্তিনি স্বামী হত্যার বিচারের অপেক্ষায় মার্কিন স্ত্রী

0 comments
জুমার নামাজে যাওয়ার আগে স্ত্রী মইরাকে ডেকে জিয়াদ জিলানি বলেছিলেন, ‘তিন মেয়েকে তৈরি রেখো। খুব গরম পড়েছে। নামাজ থেকে ফিরে সবাই মিলে সৈকতে যাব।’ মইরা মেয়েদের নিয়ে তৈরিই ছিলেন, কিন্তু জিলানি আর ফেরেননি।
এটা ২০১০ সনের ১১ জুনের কথা।পরে মইরা জানতে পারেন, নামাজ থেকে ফেরার পথে ইসরায়েলি পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন জিলানি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে শোনা ঘটনার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, জেরুজালেমের পুরনো অংশে আল-আকসা মসজিদে নামাজ পড়ে নিজের গাড়িতে করে ফিরছিলেন জিলানি। হঠাৎ টহলরত ইসরায়েলি তিন পুলিশের সঙ্গে তাঁর গাড়ির ধাক্কা লাগে। তারা হালকা আহত হয়। তাদের সহকর্মী পুলিশ সদস্যরা জিলানির ওপর হামলে পড়ে, গুলি চালায়।

বাঁচার জন্য গাড়ির বাইরে লাফ দেন জিলানি। কিন্তু গুলি এড়াতে পারেননি। তাঁর কোমর ও কাঁধে গুলি লাগে। আহত অবস্থায় ফুটপাতে উপুড় হয়ে পড়েন। তিনি যখন সুরা পড়ছিলেন, এক পুলিশ তাঁর উপরে দাঁড়িয়ে এম-সিক্সটিন বন্দুক দিয়ে মাথায় গুলি করে। ধাক্কার ঘটনাটিকে ইসরায়েলি পুলিশ ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করে। পুলিশের ওপর প্রায়ই এ রকম হামলা হয় বলে দাবি করে তারা। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী ও জিলানির পারিবারিক আইনজীবী বিষয়টিকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দাবি করেন। ট্রাফিক এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বিকল্প পথ ধরার সময় পুলিশের সঙ্গে জিলানির গাড়ির ধাক্কা লাগে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। ফিলিস্তিনি তরুণরা রাস্তার ওই জায়গায় পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ছিল বলেও ধারণা করে তারা।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে এ ধরনের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু জিলানির মার্কিন স্ত্রী মইরা জিলানি (৪৩) একে আর ১০টা সাধারণ ঘটনার মতো মেনে নেননি। স্বামীর ময়নাতদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছেন, মাত্র তিন ফুট দূর থেকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করা হয়েছে তাঁকে। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করেছেন স্বামীর মৃত্যু তদন্তে সহায়তার জন্য।

ইসরায়েলি বিচার মন্ত্রণালয়ের তদন্ত খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছেন স্থানীয় মার্কিন দূতাবাসকে। তবে জিলানির দেহে আত্মঘাতী বোমা লুকানো থাকতে পারে_এই আশঙ্কাতেই মাথায় গুলি করা হয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ।

জিলানির মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর ইসরায়েলি পুলিশ তাদের বাড়ি যায় তল্লাশি করতে। দরজার বাইরে তাদের একঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন মইরা। জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের এ রকম আচরণকে স্পর্ধা হিসেবেই দেখা হয়। জিলানি পরিবারের নিয়োগ করা আইনজীবী এবং স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান হাসান তাবাজাহ জানান, দুর্ব্যবহার ও বিতাড়িত হওয়ার ভয়ে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করতে ভয় পায়। এ ক্ষেত্রে ‘মইরা বিরাট একটি ভূমিকা পালন করছেন।’

মইরার এমন প্রতিবাদী হওয়ার পেছনে তাঁর মার্কিন পরিচয়টা হয়তো কাজ করেছে। পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে গিয়েছিলেন জিলানি। তখনই তাঁর সঙ্গে পরিচয় মইরার। তারপর বিয়ে। ১৭ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তিনি জেরুজালেমে যান। আগের ধর্ম ছেড়ে গ্রহণ করেন ইসলাম।

স্বামীর শহরকে নিজের শহরের মতোই ভালোবাসেন তিনি। তবে এখনো ফিলিস্তিনি নারীদের মতো পুরোপুরি সর্বংসহা হতে পারেননি। বলেন, ‘আমি একজন আমেরিকান, আমারও বলার অধিকার আছে। ইসরায়েলিরা আমাদের নির্বোধ আরব বলে গণ্য করে। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হলেও আমি বিষয়টির শেষ দেখতে চাই। আমার স্বামীর জন্য ন্যায়বিচার আদায় করতে চাই আমি।’
সূত্র : লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস

0 comments:

Post a Comment