Monday, August 2, 2010

সৌন্দর্য চর্চায় লেবু

1 comments
 রূপচর্চার জন্য লেবু একটি শ্রেষ্ঠতম উপাদান। সৌন্দর্য চর্চায় লেবুর ব্যবহার আজ থেকে হয়নি। প্রাচীন মিশর এবং গ্রীস্মের রাজকুমারীরাও লেবুর সমাদর করতেন। লেবুকে তারা তাদের রূপচর্চার একটি বিশেষ উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতেন। এজন্য চীন দেশে লেবুকে বলা হতো ‘লিমুং’। অর্থাৎ মেয়েদের জন্য উপকারী। চীনের উপকথায় আছে- কোন এক রূপসী সম্রাজ্ঞী লেবু থেকে তার রূপচর্চার উপকরণ তৈরি করতেন এবং তার সৌন্দর্যের তথ্যটি গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে গেল। আর তখন থেকে মেয়েরা রূপচর্চায় লেবু ব্যবহার করে আসছেন।

আমাদের দেশে লেবু অতি সহজেই পাওয়া যায়। সৌন্দর্য বাড়াতে লেবুর কার্যকারিতা অনেকখানি। প্রসাধন সামগ্রী হিসেবে আপনি যে মেকআপ ব্যবহার করছেন তাতে আপনার মুখে যে পরিচ্ছন্নতা বা সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, তা সাময়িক। কিন্তু প্রাকৃতিক সামগ্রীর ব্যবহারে সৌন্দর্য হয় স্থায়ী।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই যদি একগ্লাস কুসুম গরম পানিতে অর্ধেকটা পাতি লেবুর রস সামান্য মধু অথবা চিনি দিয়ে মিশিয়ে খান তাহলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয় যাবে। শরীরের চামড়ার ফুটে উঠবে আভা। চোখ-মুখে বিবর্ণতা মুছে গিয়ে ত্বকের ঔজ্জ্বলতা বাড়বে বহুগুণ। আপনার চামড়া যদি তৈলাক্ত হয় তাহলে দিনের মধ্যে কয়েকবার লেবুর রস পান করুন। চামড়ার তেলতেলে ভাব কয়েকদিন পরই কমে আসবে। মুখে শ্রী বাড়ানোর জন্য এক টুকরো লেবুর রসের সাথে দু’চামচ দুধ মিশিয়ে তুলার সাহায্যে মুখে প্রলেপ লাগাবেন। পনেরো-বিশ মিনিট এই প্রলেপ রাখার পর ধুঁয়ে ফেলবেন। যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা দুধ বাদ দিয়ে শুধু লেবুর রসই লাগাবেন। মনে রাখবেন মুখের ব্রণ এবং ব্রণের দাগ সরানোর জন্য লেবুর রস ত্বকে মাখা একান্তভাবেই দরকার। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। লেবু কিংবা গাজরের রস অল্প একটু চিনির সাথে মিশিয়ে খেলে এর হাত থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যায়। শুষ্ক ও রুক্ষ্ম ত্বকের কমনীয়তা আনার জন্য লেবুর রস, গোলাপ পানি ও শসার রস সমপরিমাণে মিশিয়ে ঘাড়, গলা ও দেহের অন্যান্য অংশে মাখুন। পনেরো-বিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ডিমের সাদা অংশের সাথে অর্ধেকটা লেবুর রস ও কুসুম গরম পানি পেস্টের মতো করে মিশিয়ে নিন। এই প্রলেপটি আস্তে আস্তে ত্বকে মাখুন। শুকিয়ে যাবার পর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। তেলতেলে ত্বকের পক্ষে এটি ভীষণ উপকারী। লেবুর রস ও শসার রস সমপরিমাণে মিশিয়ে নিন। ব্যস, হয়ে গেল অ্যান্ট্রিনজেন্ট লোশন তৈরি। এটি ত্বকে লাগেিয় দেখুন। কয়েকদিনের মধ্যেই ত্বকের তেলতেলে ভাব কমে যাবে। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ১ চামচ দুধের সরের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ধীরে ধীরে তা ত্বকে মালিশ করে নিন। সকালে উঠেই তা ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের উপরি দাগগুলো উঠে যাবে। দেহ ত্বককে কোমল এবং দাগমুক্ত রাখার জন্য লেবু একটি চমৎকার উপাদান। ত্বকে অনেক সময় কালো দাগ দেখা যায়। এক্ষেত্রে একটি ছোট শসার সাথে একটি পাতি লেবুর রস, ১ চামচ ব্রান্ডি ও ১ চা চামচ ডিমের সাদা অংশ, দু’চামচ গোলাপ পানি মিশিয়ে ত্বকে ধীরে ধীরে মালিশ করবেন। কালো দাগতো দূর হবেই, সেই সাথে ত্বক হবে আকর্ষণীয়, কোমল ও উজ্জ্বল। হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের গোড়ালি এসব জায়গায় বেশি ময়লা জমে। এ নিয়ে অনেকেরই দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। আধা টুকরো লেবু নিয়ে এই জায়গাগুলোতে ভাল করে ঘষে নিলে ময়লা উঠে গিয়ে ঝকঝকে হয়ে উঠবে। পায়ের রুক্ষভাব দূর করতে লেবুর রসের সাথে অল্প মিহি চিনি মিশিয়ে মালিশ করে নেবেন। দশ মিনিট পর হাত ধুয়ে নিন কুসুম গরম পানিতে। দেখবেন হাত-পা কেমন পেলব কোমল মসৃণ হয়ে উঠেছে।

ঘরের কাজ যেমন কাপড় কাচা, বাসন মাজা, ঘর মোছা, এসব কাজ করতে করতে হাতে কড়া পড়ে যায়। হাতের মোলায়েম ভাব নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে গোলাপ পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে হাতের পাতায় মাখুন। এছাড়া হাতের রুক্ষ্মতা দূর করার জন্য নিয়মিত টমেটোর রস, লেবুর রস ও কাঁচা দুধ একসাথে মিশিয়ে গোসলের আগে পনেরো-বিশ মিনিট ত্বকে মেখে নেবেন।

মুখের মেছতা বা অন্যান্য দাগ দূর করতে স্কীনের উপর ভ্যাপার নেবার পর ১ চামচ মুলতানি মাটি ও আদা চামচ ট্যালকম পাউডার গোলাপ পানির সাথে মিশিয়ে সেই মিশ্রণে কয়েক ফোটা গ্লিসারিন ও লেবুর রস মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে কুসুম কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এই মিশ্রণটি ৩/৪ দিন ব্যবহার করবেন।

অতুলনীয় সৌন্দর্যময় কেশরাজির পরিচর্যায় লেবুর প্রয়োজন সর্বাধিক। প্রতিদিন গোসলের আগে একটা লেবু চিপে রস বের করে সেই রস চুলের গোড়ায় বিলি কেটে কেটে ঘষে লাগিয়ে দিন। এতে চুলের গোড়া পরিষ্কার ও শক্ত চুলের খুসকি দূর হয়। এ ছাড়া চায়ের পানি ছেঁকে সেই পানিতে একটা লেবুর রস মিশিয়ে শ্যাম্পু করার পর সেই পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে চুলের রুক্ষ্মভাব কেটে চুল হবে রেশমের মতো কোমল-মসৃণ-উজ্জ্বল।
০০ শ্রাবন্তী হালদার ০০

1 comments:

Post a Comment