পৃথিবীতে কিভাবে গুহাচিত্র প্রথম আবিষ্কৃত হলো সে সম্পর্কে কিছু বলা যাক। ঘটনাটি আকস্মিক। ঘটলো ১৮৭৯ সালে উত্তর স্পেনে। আবিষ্কারক এক সৌখিন ব্যক্তি। তাঁর নাম হলো মারসেলিনো দ্যা সাওতুলা। স্পেনের সানতানদার এলাকার কাছাকাছি আবিষ্কৃত হয় পৃথিবীর প্রথম গুহাচিত্র।
সাওতুলার আবিষ্কৃত গুহাচিত্র থেকেই দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হলো যে, এই সমস্ত শিল্পাকৃতির আবিষ্কার মানব সভ্যতার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। আমাদের উপমহাদেশেও এ ধরনের গুহাচিত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ রকম শতশত গুহার কথা আমাদের জানা আছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে মধ্য ভারতে। ভূপাল শহরের একশত মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত এই সমস্ত গুহা। ভারতবর্ষের প্রাচীন গুহাচিত্রের বয়স প্রায় সাড়ে সাত হাজার বছর।
সভ্যতা বিকাশের একেবারে শুরুতে মানুষ প্রথম যেসব দিকে মনোনিবেশ করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো ছবি আঁকা। আদিম মানুষের জীবন যাপন ছিল অত্যন্ত কঠিন। তারা বাইসন, হরিণ, মহিষ, ষাঁড় ইত্যাদি জীবজন্তু শিকার করতো এবং এদের মাংস ও ফলমূল খেয়ে বেঁচে থাকতো। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় ও হিংস্র জীবজন্তুর হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা গুহায় বসবাস করতো। তারা যে সব গুহায় বাস করতো সেসব গুহায় তারা ছবি আঁকতো।
এই সমস্ত গুহাচিত্রে যে সমস্ত রঙ ব্যবহার করা হয়েছিল তার সবকিছুই প্রাকৃতিক খনিজ রঙ। এ গুলির মধ্যে ছিল গাঢ় লাল এবং গোলাপ- এগুলো পাওয়া যেত মূলত পোড়ামাটি থেকে। তারা শিকারের বস্তু এবং দৃশ্যকে বিষয় করে ছবি আঁকতো। এসব ছবির ড্রইং-ই হলো প্রধান। রেখার মাধ্যমে জীবজন্তুর আকার, আকৃতি, ছুটে যাওয়ার গতি ইত্যাদি তারা চমত্কারভাবে ফুটিয়ে তুলতো।
পরিশেষে বলা যায় যে, শিকারী শিল্পী প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গুহার অমসৃণ ও এবড়ো-থেবড়ো দেওয়ালে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চিত্র রচনা করেছে। এর উঁচুনিচু খাঁজ, খাড়া অংশ, ঢালু অঞ্চল অনেক সময় ছবি আঁকতে সহায়তা করেছে। যার ফলে বের হয়ে আসা উঁচু দেওয়ালে আঁকা বাইসন, ষাঁড়, ঘোড়া দেখতে আরো জীবন্ত ও গতিশীল মনে হয়। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পাহাড়ের দৃশ্য, মেঘ, আকাশ, লতাগুল্ম ছবির পরিবেশকে আরো সুন্দর করেছে। গুহাচিত্রগুলোতে রঙের ব্যবহার আরো বাস্তব ও প্রাণময় করে তুলতে সহায়ক হয়েছে। অতএব গুহাচিত্রের চিত্রগুলোতে মানুষ বাইসন, হরিণ, শূকর ইত্যাদি আকার পূঙ্খানুপুঙ্খ খুঁটিনাটি না থাকলেও সহজেই চেনা যায়। কি বলা হচ্ছে তার ভাষাও সহজেই বোঝা যায়।
ধন্যবাদ ভাই। সুন্দর সাজিয়েছেন সাইটটি...