Friday, August 17, 2012

মসজিদ আল কিবলাতাইন, মদিনা

0 comments
'কিবলা' আরবি শব্দ। যার দ্বারা যে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা হয় বা প্রার্থনা করা হয়, সেই দিক নির্দেশ করা হয়ে থাকে। 'কিবলাতাইন' শব্দটি দ্বারা দুটি কিবলা বোঝানো হয়। একই মসজিদে একই নামাজে প্রথমে জেরুজালেম এবং পরে মক্কার দিকে কিবলা পরিবর্তন করার কারণে মদিনা নগরের মসজিদ আল কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ ঐতিহাসিক গুরুত্ব লাভ করেছে। হজরত মোহাম্মদ (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের দ্বিতীয় বছরে আরবি রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে কিবলা পরিবর্তনের এ ঘটনা ঘটে। গবেষকদের মতে, ওই দিন হজরত মোহাম্মদ (সা.) এই মসজিদে জোহর (মতান্তরে আসর) নামাজ আদায় করছিলেন। দুই রাকাত নামাজ আদায়ের পর হজরত জিব্রাইল (আ.) জেরুজালেম নগরীর পরিবর্তে মক্কা নগরী অর্থাৎ পবিত্র কাবামুখী হয়ে নামাজ আদায়ের জন্য আল্লাহর নির্দেশ পেঁৗছে দেন। হজরত মোহাম্মদ (সা.) মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে কিবলা পরিবর্তন করে কাবামুখী হয়ে অবশিষ্ট দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। মসজিদে উপস্থিত সাহাবাগণও একইভাবে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে অনুসরণ করে জেরুজালেম ছেড়ে কাবামুখী হয়ে নামাজ আদায় করেন। ফলে এই দিনে একই মসজিদে একই নামাজে দুটি কিবলামুখী হয়ে নামাজ আদায় করা হয়। এ ঘটনার পর থেকেই এ মসজিদটি 'মসজিদ আল কিবলাতাইন' বা দুই কিবলার মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে; যার বর্ণনা পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় পারার ১৪৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে। মসজিদ আল কিবলাতাইন পৃথিবীর প্রাচীনতম মসজিদগুলোর অন্যতম। দীর্ঘদিন এই মসজিদে দুটি মিহরাব বা ইমাম দাঁড়ানোর স্থান ছিল। যার একটি জেরুজালেমমুখী, অন্যটি ছিল কাবাঘরমুখী। পরবর্তীতে মসজিদটি ব্যাপক সংস্কার করা হয় এবং কেবল কাবামুখী মিহরাবটি রাখা হয়। মসজিদ আল কিবলাতাইন বছরজুড়ে দেশ-বিদেশের মুসলমানদের আগমনে মুখরিত থাকে। হজের সময় এই ভিড় আরও বেড়ে যায়। ইহুদিরা সাধারণত কিবলা হিসেবে জেরুজালেমের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কাবার দিকে কিবলা পরিবর্তন করে মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্য দান করেছেন। এ ছাড়াও নামাজরত অবস্থায় মহান আল্লাহর আদেশে কিবলা পরিবর্তন করে হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর সাহাবাগণ আনুগত্যের এক অনন্য নজির স্থাপন করেন। তাই ইসলামের ইতিহাসে মসজিদ আল কিবলাতাইনের আবেদন চির ভাস্বর। মদিনায় আগমনকারী দেশ-বিদেশের সব মুসলমান হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত এই মসজিদটি দর্শন করে এক অনন্য প্রশান্তি অনুভব করে থাকেন।  

0 comments:

Post a Comment