Friday, August 17, 2012

সুন্দরবন

0 comments
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবনের অবস্থান। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। যে কোনো পর্যটক সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখলে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। বনের ভেতরে প্রবেশ করার পর চারদিকে দেখা যাবে সবুজ আর সবুজ। বিধাতা যেন অপরূপ সাজে সজ্জিত করে রেখেছে। কী অপরূপ সৃষ্টি, তা সুন্দরবন দেখলেই বোঝা যায়। এই সুন্দরবনে বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বানর, শূকর, গুঁইসাপ, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ এবং নানা প্রজাতির পাখি রয়েছে। এখানকার নদ-নদীতে লোনা পানির কুমির, হাঙ্গর, চিংড়িসহ ২১০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের চেয়ে সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছ, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল এবং ১৩ প্রজাতির অর্কিড আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ সুন্দরবনকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' বা 'বিশ্ব ঐতিহ্য' ঘোষণা করে। সুন্দরবন পর্যটকদের অন্যতম স্থান হিসেবে সরকার শত শত কোটি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম। অথচ সুন্দরবন সংলগ্ন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে একে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। সুন্দরবনের এই বিশাল বৃক্ষরাজির জন্যই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ তাই চিন্তিত। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ সুন্দরবন ধ্বংস হবে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বিলীন হবে সুন্দরবনের অতীত ঐতিহ্য, জীববৈচিত্র্য ও সুন্দরবনের গাছগাছালি। ভূগর্ভস্থ পানির অতিমাত্রায় ব্যবহার চারপাশের জমির উপরিভাগে মরুময়তা সৃষ্টি করবে। নির্গত কার্বন মানুষের মধ্যে দুরারোগ্য ক্যান্সার সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কা অনেকের। এখানকার প্রধান গাছ সুন্দরী ও বন্যপ্রাণী ধ্বংস হয়ে যাবে। বায়ুমণ্ডলের সালফার ডাই-অঙ্াইড ও কার্বন যৌগগুলো থেকে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস বনের জন্য অতি মারাত্দক ক্ষতিকর এসিড বৃষ্টি ঘটাতে পারে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে বিভিন্ন মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অথচ এই সুন্দরবনকে নিয়ে সরকারের নেই কোনো মাস্টারপ্ল্যান। পর্যটন শিল্প বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হলেও সরকার পরিকল্পনায় আনতে পারেনি। সুন্দরবনকে বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন বলা হয়। একে অবশ্য উত্তম মৎস্য চারণক্ষেত্রও বলা হয়। এমনিতেই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এখানকার নদী-খাল শুকিয়ে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। সুন্দরবনকে নানাভাবে বিষিয়ে তুলছে অসাধু গোষ্ঠী। উপরন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় তো বড় হুমকি। যেভাবে বন ধ্বংস হচ্ছে তাতে অচিরেই এলাকাগুলো ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের বড় ধরনের শিকারে পরিণত হতে পারে। সে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ। বিপন্ন হবে জাতীয় অর্থনীতি।

দেশের মোট আয়তনের ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪ শতাংশ। খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরে ২১৩৯০র্০ হতে ২২৩র্০১র্৫ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯১র্২ ৫র্৪ হতে ৮৯২৯ ৯র্৪ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর পশ্চিমে হাড়িয়াভাঙ্গা, রায়মঙ্গল ও কালিন্দি নদী। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, উত্তরে ছোট নদী, খাল ও জনপদ এবং পূর্বে বলেশ্বর নদী। এই বনের প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী গাছ। সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে এই বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন। আবার সমুদ্রের কাছে হওয়ায় সমুন্দর শব্দ হতে প্রথমে সমুন্দরবন ও পরে সুন্দরবন নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। সুন্দরবনের মোট আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৩ বর্গ কিলোমিটার সমগ্র সুন্দরবনের (৬৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ) এবং জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গ কি.মি.সমগ্র সুন্দরবনের (৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ)। বনে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, বাইন, পশুর, কাঁকড়া, গরান, গোলপাতা, হেতাল, ঝানা, অমুর, সিংড়া, খলসীসহ বিভিন্ন ধরনের ঘাস জন্মে।
জানা যায়, ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্বাধিকার অর্জর্র্র্র্র্ন করে। এলটি হজেয ১৮২৯ সালে সুন্দরবনে প্রথম জরিপ চালান। ১৮৭৬ সাল পূর্ব পর্যন্ত তৎকালীন জমিদারের অধীনে ছিল সুন্দরবন। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সালে সুন্দরবনের দায়িত্ব বন বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সমগ্র সুন্দরবন চারটি ফরেস্ট রেঞ্জ এলাকায় বিভক্ত। এগুলো হলো_ খুলনা, সাতক্ষীরা, চাঁদপাই এবং শরণখোলা ফরেস্ট রেঞ্জ। সুন্দরবনে প্রায় ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল আছে। এই নদী এবং খালগুলো সমগ্র সুন্দরবনে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। পশুর, শৌলা, শিবসা, ভদ্রা, যমুনা, রায়মঙ্গল, ভোলা, মরজাত, আডুয়া শিবসা, বল এখানকার প্রধান নদী। উল্লেখযোগ্য খালগুলো হলো_ শাপলা, মরাভোলা, কটকা, বাদামতলা, মৃগামারি, করমজল, জোংড়া, হরিণটানা, মরাপশুর, নন্দবালা, ধানসাগর, নিশাজখালী প্রভৃতি। সুন্দরবনে বেশ কিছু চর আছে। এর মধ্যে দুবলার চর, মেহের আলীর চর, ডিমলার চর, বালির চর, তিন কোণার চর, পক্ষীর চর, শৌলার চর, পুতনীর চর বিখ্যাত। সুন্দরী গাছকেই সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ হিসেবেই সবাই জানেন। মোট উদ্ভিদের ৭৩ শতাংশ সুন্দরী গাছের জন্য সমানভাবে মিঠা এবং লোনা পানির প্রয়োজন। যেসব এলাকার মিঠাপানি প্রবাহ বেশি সেখানকার সুন্দরী গাছগুলো লম্বা হয়ে থাকে।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, সুন্দরী গাছগুলোতে আগামরা রোগ সংক্রামক হিসেবে দেখা দিয়েছে। মৃত্যুর প্রহর গুনছে আগামরা রোগে আক্রান্ত গাছগুলো। এ রোগে আক্রান্ত গাছগুলোর পাতা প্রথম হলুদ সবুজ হয়। এরপর সেগুলো হলুদ হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। এক সময় পাতাগুলো গাছ থেকে ঝরে পড়ে। পাতার মতো গাছের শাখাগুলোও মরতে বসে। সুন্দরী গাছ ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আগামরা গাছগুলো ওপর থেকে মরতে থাকে। একটি রোগাক্রান্ত গাছ নিচের দিকে জীবন্ত থাকবে ও ওপরের অংশটি কঙ্কালের আকার ধারণ করে। সেটি গাছ না হয়ে পরিণত হয় কাঠে। সে কাঠ কোনো আসবাব হিসেবেও ব্যবহার করা যায় না। সেগুলো লাকড়ি হিসেবেই ব্যবহার করতে হয়। মিঠাপানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সুন্দরবনে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। আর অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে আগামরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সুন্দরী গাছ। সুন্দরবনের বৃহত্তম ৫৫টি কম্পার্টমেন্টের ৪২টিতে আগামরা রোগ দেখা দিয়েছে।

সুন্দরবনের সুন্দরী গাছগুলোর শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগই এই আগামরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক গাছগুলোই এ রোগের বেশি শিকার হচ্ছে। খুলনা রেঞ্জের শিবসা নদীর পারে কালাবগিতে এবং চাঁদপাই রেঞ্জের পশুর নদীর পারে হাড়বাড়িয়া এলাকায় সুন্দরী গাছের আগামরা রোগের প্রকোপ বেশি। সুন্দরবনে মিঠা পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা আগের চেয়ে আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ম্যানগ্রোভ বনের গাছগুলোর বেঁচে থাকার জন্য মিঠা এবং লোনা পানি দুটোরই প্রয়োজন। এই পানির সমন্বয় সমানভাবে না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। মারা যাচ্ছে সুন্দরী গাছ। ভবিষ্যতে এই মরণব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্য উদ্ভিদে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রহমান ইউএনডিপির সহযোগিতায় সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের আগামরা রোগ নির্ণয়ে একটি গবেষণা করেন। সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করে তিনি এই রোগের কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালান। পর্যবেক্ষণ শেষে দেওয়া প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলখ্যাত সুন্দরবনের পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণেই সুন্দরী গাছের আগামরা রোগ হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা এবং গড়াই নদীতে মিঠা পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দক্ষিণের লবণাক্ত পানি অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে। লবণাক্ত পানি এবং মিঠা পানির প্রবাহ সমানভাবে না হওয়ায় সুন্দরীর মতো গাছগুলো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে মানিয়ে নিতে পারছে না। একটি সুন্দরী গাছ ১৩৫ থেকে ১৪০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সুন্দরবনের সুন্দরী গাছগুলোর বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছর। এর কয়েকটি ১০০ বছরের পুরনো হতে পারে। যেসব সুন্দরী আগামরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সেগুলোর বয়স ৫০-এর উপরে। বলতে গেলে সুন্দরী গাছ পরিপক্ব হওয়ার আগেই মরছে।


সুন্দরবনে মাছের আকাল

সুন্দরবনকে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান মৎস্যচারণ এলাকা বলা হয়। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সুবিধা নিয়ে এখানে সহজেই বৃদ্ধি পায় মাছের পোনা। কিন্তু চিংড়ি পোনা ধরার জন্য এখানকার অন্য অনেক মাছের পোনাই ধ্বংস হয়ে যায়। ২টি চিংড়ি পোনা ধরতে ১১২টি অন্য মাছের পোনা ধ্বংস করা হতো। এ কারণে সুন্দরবনে মাছের পোনা ধরা বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সুন্দরবনে মাছের পোনা ধরা বন্ধ হলেও পশুর এবং শিবসা নদীতে এই পোনা নিধন বন্ধ হয়নি। সে কারণে মিঠাপানির মাছের পোনাগুলো সুন্দরবনে আসার সুযোগ পাচ্ছে না। লোনা পানির যেসব মাছ আছে সেগুলোও আর আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না।

কিছু মাছ আছে যারা জীবনের একটি সময় লোনা পানিতে এবং অপর এক সময় মিঠা পানিতে জন্মায়। কিন্তু এই পরিভ্রমণের সময় তারা নিজেদের রক্ষা করতে না পারায় স্বাভাবিক প্রজনন এবং বৃদ্ধি ঘটাতে ব্যর্থ হয়। সুন্দরবনে মাছের পোনা নিধন বন্ধের পর এরকম অবস্থার উন্নতি হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। সুন্দরবনের দুবলার চর এবং মেহের আলীর চরে মৌসুমি মাছ শিকারের ওপর নির্ভর করে প্রতিবছর ৬৫০ হাজার জেলে এবং মৎস্যজীবীর ভিড় জমে। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা মাছ ধরে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি বানায়। এর পর তারা দুবলার চর ছেড়ে যায়। বাকি সময় ইলিশ এবং অন্যান্য মাছ ধরতে আরেক দল মৎস্যজীবী এসব চরে আসে।

সুন্দরবন সমুদ্রে তলিয়ে যাবে!

সমুদ্র সমতলের পানির তাপমাত্রা ০ দশমিক ৫০ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ১০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে সুন্দরবনের প্রায় ১৫ শতাংশ এলাকা অর্থাৎ প্রায় ৭৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার, উদ বিড়াল, চিত্রল হরিণ ও বন্যশূকর প্রভৃতির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেই বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন সম্পূর্ণরূপে সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। বর্তমানে এই বনের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা জেলে, কাঠুরে, ঝিনুক সংগ্রহকারী, কাঠ ব্যবসায়ী, মৌয়ালি, বাওয়ালিসহ সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর প্রায় ৬ লাখ মানুষ তাদের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস হারা হবে।

লবণাক্ততায় বিপণ্ন!

শীতকালে উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার বিপরীতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানির ব্যাপক অনুপ্রবেশের ফলে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার কবলে পড়ে ম্যানগ্রোভ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রজাতিগুলো বিপণ্ন হবে। ম্যানগ্রোভ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রজাতিগুলো মূলত ঈষৎ লবণাক্ততা সহায়ক এবং লবণাক্ত ও মিষ্টি পানির সঙ্গমস্থলে বিরাজ করে থাকে। তাই মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা এদের ধ্বংস ডেকে আনতে পারে এবং এতে সুন্দরবন বিপণ্ন হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস

জলবায়ু মডেলগুলোতে আশঙ্কা করা হয়েছে যে, এই শতাব্দীতে উপকূলবর্তী অঞ্চলজুড়ে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতার মাত্রা বাড়বে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাড়লে তা সুন্দরবনের ওপর মরণাঘাত হানতে পারে।

অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধ

অতি বৃষ্টিপাতের কারণে গঙ্গা অববাহিকার নদীগুলো বেশি পরিমাণে মিষ্টি পানি বহন করে এনে সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকা দিয়ে সাগরে নিয়ে ফেলবে। কিন্তু সমুদ্রের পানি স্ফীতির কারণে উজান থেকে আসা পানি প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উল্টোদিকে প্রবাহিত হবে। এতে করে উজানের পানি বহন করে নিয়ে আসা নদীগুলোর সমুদ্রে পানি নিষ্কাশনে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগবে। এর ফলে মৌসুমী বর্ষা ঋতুতে সুন্দরবন দীর্ঘ সময় পানিতে তলিয়ে থাকবে। যে কারণে সুন্দর বনাঞ্চলের জলাভূমি ও খাঁড়িসমূহে পলি অবক্ষেপণের হার বৃদ্ধি পাবে এবং সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল পলিতে ঢেকে গিয়ে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্যপ্রাণ গ্রহণে বাধার সৃষ্টি করবে।

-ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

0 comments:

Post a Comment