মহান আল্লাহর উদ্দেশে ইবাদত করার জন্য পৃথিবীর প্রথম উপাসনালয় হলো 'কাবা শরিফ' যা নির্মাণ করেছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) এই কাবা ঘরকে ঘিরেই গড়ে ওঠেছে মসজিদ আল-হারাম পরবর্তী সময়ে ধ্বংস এবং বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২১৩০ সালে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর পুনর্নির্মিত হয় বলে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে। তবে হজরত ইব্রাহিম (আ.) নির্মিত কাবাঘরের অংশ হিসেবে এখন কেবল হজরে আসোয়াদ বা 'কালো পাথর'-এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এ পাথরটি বেহেস্ত থেকে একজন ফেরেস্তা নিকটবর্তী আবু কুইবা পাহাড়ে নিয়ে আসেন। প্রথমে এ পাথর ছিল দুধের মতো সাদা। পরবর্তীতে আদম সন্তানের পাপ শুষে নিতে নিতে তা কালো বর্ণ ধারণ করে। এ কালো পাথর ছাড়া মসজিদ আল-হারামের বাকি সবকিছু পরবর্তীকালে নির্মিত। হজরত মোহাম্মদ (সা.) মক্কা বিজয়ের পর কাবাগৃহ তথা মসজিদ আল-হারাম পুনর্নির্মাণের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ৬৯২ সাল, ১৫৭০ সাল, ১৬২১ সাল এবং ১৬২৯ সালেও এই মসজিদের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। তবে মসজিদ আল-হারামের বর্তমান আধুনিক রূপান্তর ঘটতে শুরু করে ১৯৫৫ সাল থেকে যা আজও অব্যাহত রয়েছে। ধারাবাহিক উন্নয়ন এ কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিদিন ২০ লাখ মুসলি্লর নামাজ আদায় ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মসজিদ আল-হারামকে ২০১০ সালের মুসলমানের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। বর্তমানে প্রতিদিন ৯ লাখ মুসলমান এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে পবিত্র হজ পালনকালে মসজিদ আল-হারাম এবং এর পারিপাশ্বর্িক এলাকায় ৪০ লাখ মুসলি্ল নামাজ আদায় করতে পারেন। এ মসজিদে মোট ৯টি মিনার রয়েছে। মিনারগুলো প্রায় ২৯২ ফুট উঁচু। মসজিদ আল-হারামের মধ্যস্থলে রয়েছে কাবাঘর। কাবাঘরের উচ্চতা ৪৩ ফুট এবং দুই দিকে এই ঘর যথাক্রমে ৩৬.২ ফুট এবং ৪২.২ ফুট বিস্তৃত। এ পবিত্র ঘরটি নিকটতম পাহাড়ের কালো গ্রানাইড পাথর দিয়ে নির্মিত। রমজান মাস শুরুর ৩০ দিন আগে কাবাঘর খোলা হয় এবং ধৌত করা হয়। পৃথিবীর মানুষ এই কাবাঘরের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করে। পবিত্র হজের সময় এই কাবাঘরকে সাতবার প্রদক্ষিণ করতে হয়। ৬০৫ সালে হজরত মোহাম্মদ (সা.) এ কাবাঘরের কোণায় হজরে আসোয়াদ স্থাপন করেন। এক সময় কিছুটা দূরে থাকলেও বর্তমানে মকাম-ই-ইব্রাহিম, জমজম কূপ এবং সাফা-মারওয়া মসজিদ আল-হারাম চত্বরেই অংশ হয়ে রয়েছে। আয়তন, জনসমাবেশ ব্যবস্থাপনা, স্থাপত্য নিদর্শন সর্বোপরি ধর্মীয় বিবেচনায় মসজিদ আল-হারাম পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তায়ালার কুদরতি নিদর্শন।
**মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন আহমেদ
0 comments:
Post a Comment