৬২২ সালে পবিত্র মদিনা নগরে হিজরতের পর প্রথম যে মসজিদ নির্মিত হয়, তার নাম কুবা মসজিদ। মক্কা থেকে হজরত মোহাম্মদ (সা.) ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে মদিনা নগরীতে হিজরত করেন। মক্কা থেকে ইসলামের শত্রুদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালানোর সময় তার সঙ্গে ছিলেন হজরত আবু বকর (রা.)। পরবর্তীতে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ব ঘোষিত নির্দেশ মোতাবেক তার নিকটাত্দীয় এবং সাহাবারা পর্যায়ক্রমে মদিনা গমন করেন। সাধারণভাবে হিজরতকারীদের মজাহেরি বা মুজাহিদ বলা হতো। এই মুজাহিদদের হাতেই গড়ে ওঠে কুবা মসজিদ। হজরত মোহাম্মদ (সা.) নিজ হাতে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মূলত তারই তত্ত্বাবধানে মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। হজরত মোহাম্মদ (সা.) প্রায় ২০ রাত এই মসজিদে অবস্থান করেন এবং কসর নামাজ আদায় করেন। হজরত মোহাম্মদ (সা.) কর্তৃক ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু হওয়ার পর পৃথিবীর বুকে নির্মিত প্রথম মসজিদ হলো এই কুবা মসজিদ।
বিংশ শতকে আবদুল ওয়াহেদ আল ওয়াকিলের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিশন সৌদি আরবের পুরনো সব মসজিদ পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু করে। এ সময় মূল কুবা মসজিদ এতই দুর্বল হয়ে পড়ে, তা ভেঙে পুনর্নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে কুবা মসজিদ চত্বরে মূল মসজিদ ছাড়াও আবাসিক এলাকা, অফিস, অজুখানা, দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে।
তবে মসজিদের মূল আকর্ষণ ছয়টি। বিশাল গম্বুজ এবং চার কোণায় চারটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদে মহিলাদের নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে। মদিনাবাসীর সরলতা এবং মদিনার পবিত্রতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ১৯৮৬ সালে মসজিদটির পুনর্নির্মাণকালে ব্যাপকভাবে সাদা ব্যাসল্ট পাথর ব্যবহার করা হয়। চতুর্দিকের সুবজ পাম গাছের বলয় মসজিদটিকে বাড়তি সৌন্দর্য প্রদান করেছে।
পবিত্র কোরআনের সুরা আল তওবার ১০৮ নং আয়াতে এই মসজিদের কথা উলি্লখিত আছে। একাধিক সূত্র এবং হাদিস থেকে জানা যায়, হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, "নিজ আবাস্থল বা বাসা থেকে অজু করে কেউ যদি এই মসজিদে আসে এবং দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে তবে সে একটি ওমরাহ আদায়ের সওয়াব লাভ করবে।" উল্লেখ্য, মদিনায় অবস্থানকালে হজরত মোহাম্মদ (সা.) প্রায়ই বিশেষত শনিবারে উটে চড়ে বা হেঁটে এই মসজিদে আসতেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।
পবিত্র হজ ও ওমরাহ পালনকালে এই মসজিদে নফল নামাজ আদায়ে সচেষ্ট থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
0 comments:
Post a Comment