Wednesday, August 15, 2012

মহেশখালী

0 comments
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড় বেষ্টিত দ্বীপ মহেশখালী। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত লাবণী পয়েন্ট থেকে প্রায় সাত থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ মনোমুঙ্কর দ্বীপটি। দ্বীপটির চারদিকে সবুজ আর সবুজ। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ দেখা যায়। চিরসবুজের এ দ্বীপটি দেখলে যে কেউ মনে-প্রাণে ভালোবেসে ফেলবে। ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বীপটির সৃষ্টি হয়। মহেশখালী উপজেলায় আরও তিনটি ছোট দ্বীপ রয়েছে। এগুলো হলো_ সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা। এ উপজেলায় একটি পৌরসভা এবং আটটি ইউনিয়ন রয়েছে। যার আয়তন ৬৩২.১৮ বর্গকিলোমিটার এবং এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। উপজেলার উত্তর প্রান্তে জনতা বাজার নামক স্থানে মহেশখালী সেতু। এ সেতু নির্মিত হওয়ায় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহেশখালী। কোহেলিয়া নদীর ওপর অন্য একটি সংযোগ সেতুর দ্বারা মূল মহেশখালীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়ন। মহেশখালীর ইতিহাসের সঙ্গে 'নাথ' সম্প্রদায়ের ইতিহাস উল্লেখযোগ্য। নাথ সম্প্রদায়ের চার সিদ্ধগুরু মীননাথ, গোরক্ষনাথ, হাড়িপা এবং কাহ্নপার প্রভাব বাংলা ছাড়িয়ে নেপাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। নাথ সম্প্রদায়ের প্রভাবে মহেশখালীতে আদিনাথ মন্দির নির্মিত হয় বলে মনে করা হয়। লোককাহিনী অনুসারে মহেশখালী মৈনাক পাহাড়ে শিবের আবির্ভাব ঘটে ত্রেতাযুগে। রাম-রাবণের যুদ্ধের সময় শিবের আশীর্বাদ লাভের জন্য রাক্ষসরাজা রাবণ কৈলাশে যান শিবকে আনার জন্য। দেবতাদের অনুরোধে শিব রাবণকে শর্ত দেন যে, বিরতিহীনভাবে নিয়ে যেতে পারলে শিব লঙ্কায় যেতে রাজি আছেন। শর্ত মেনে শিবকে মাথায় নিয়ে রাবণ যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু মৈনাক পাহাড়ে রাবণের যাত্রাবিরতি ঘটে। এতে শর্তভঙ্গ হওয়ায় শিব মৈনাক পাহাড়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। লোককাহিনী মতে একদিন স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে এক নাগা সন্ন্যাসীর সহায়তায় নেপাল থেকে পাথরের অষ্টভুজা দুর্গামূর্তি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সমুদ্রের মধ্যে মৈনাক পর্বতের অবস্থান বলে রামায়ণে উল্লেখ আছে। মহেশখালী দ্বীপ এবং সমুদ্রের মাঝখানে আদিনাথ পাহাড়টির নাম মৈনাক পাহাড়। আদিনাথ মন্দিরটি সমুদ্রস্তর থেকে ২৮৮ ফুট উঁচু মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। মহেশখালীর লোকসংস্কৃতি ও লোকউৎসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'আদিনাথ মেলা'। প্রতিবছর ফাল্গুনের কোনো একদিন শুরু হয়ে ১০-১৫ দিন পর্যন্ত চলে এই মেলা। মেলায় বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিস ছাড়াও মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, হাতা, লোহার দা-বঁটি ইত্যাদি পণ্য কেনাবেচা হয়। মেলা উপলক্ষে নাটক, যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ ছাড়াও ছোট-বড় অনেক প্যাগোডা এবং বৌদ্ধ মন্দির আছে। যার মধ্যে কিছু মূর্তি স্বর্ণের তৈরি বলে জানা যায়। এক সময় হাতি, বাঘ, হরিণ, বানর, ভালুক, বিভিন্ন প্রকারের সাপ, পাখিসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তুর চারণভূমি ছিল মহেশখালী। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অসাধু শিকারির চোরা দৃষ্টিতে মহেশখালী জীববৈচিত্র্য লোপ পেতে বসেছে। বর্তমানে বানর, বনগরু, মহিষ এবং গুটিকয়েক সাপ দেখতে পাওয়া যায়। মহেশখালী যাওয়ার পথে যে জিনিসটা আপনার নজর কাড়বে তা হলো ৫০০ মিটার লম্বা একটি ঘাট। যার দু'পাশে আছে সবুজের সমারোহ। দ্বীপটি লবণ ও পান ব্যবসায়ের প্রধান কেন্দ্র। সামুদ্রিক মাছ ধরা, চিংড়ি চাষ এবং প্রক্রিয়াজতকরণ এই দ্বীপের একটি বিকাশমান শিল্প। মহেশখালীর মিষ্টি পান ভুবন বিখ্যাত। পান চাষ এখানকার ঐতিহ্যবাহী পেশা ও ব্যবসা। মহেশখালী দ্বীপটি যে বিশেষ কারণে বিখ্যাত তা হলো এর এলোমেলো আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি দৃশ্য। উঁচু পাহাড়ি টিলার উপর দাঁড়িয়ে চারদিকে চোখ মেললে যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা বিস্ময়কর। ছোট ছোট পাহাড়ি টিলার ওপর নানা গাছ-গাছালি যে কারও মনে দাগ কাটতে পারে। সময় পেলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এই নয়নাভিরাম দ্বীপটি।

*মো. সাইফুল ইসলাম

0 comments:

Post a Comment