কোথাও মেঘ, রোদ্দুর আবার কোথাও বৃষ্টি। চারদিকে সবুজ পাহাড়। রোদের মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি। এ যেন প্রকৃতির এক লীলাখেলা। পাহাড়ের এক পাশে ঘনকালো মেঘের অন্ধকার। অন্য পাশে কাঠফাটা রোদ। বিশাল আকৃতির উঁচু অরণ্যে ঢাকা পাহাড়। এক পাহাড়ে মেঘ তো অন্য পাহাড়ে বৃষ্টি। কোনো পাহাড় থেকে উঠছে ধোঁয়ার মতো জলীয়বাষ্প। সে ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে ওঠে নীল আকাশ। ভাসে মেঘের ভেলা। বিকালের পড়ন্ত রোদে পাহাড়ের চূড়া থেকে দূরে দেখা যায় বাদামি রংয়ের আকাশ আর সমুদ্রের মিলন। কখনো কালো মেঘের আকাশে সাদা বক উড়ে নিজের ঠিকানায়। শেষ বিকালে যখস সূর্য ডোবে চারদিকে নেমে আসে অন্ধকার। পাহাড়ের খোপে ঝুপড়ি ঘরে জ্বলে তেলের কুপি। আর বৃষ্টি এলে ভিজিয়ে দেয় পার্বত্য জনপদ। জুমে কাজ শেষে আদিবাসি নারীদের ঘরে ফেরার তাড়া। গভীর বন থেকে কানে আসে হারিয়ে যাওয়া গরুর গলায় বাঁধা ঘণ্টির আওয়াজ। নগর যন্ত্রণা ছেড়ে কেউ যদি নির্জন বর্ষার দৃশ্য দেখতে চান তাহলে যেতে হবে বান্দরবানের লামার মিরিঞ্জা পাহাড়ে।
সমতল থেকে প্রায় ১৬ ফুট উঁচু মিরিঞ্জা পাহাড়। হরেকরকমের গাছগাছালি। অাঁকাবাঁকা রাস্তা। চাঁদের গাড়ির আনাগোনা। পাহাড়ের গায়ে ঝরনার জলধারা। দুপাহাড়ের চূড়ায় মুরং/ ত্রিপুরাদের বাস। শূকরের পাল, বন মোরগের ডাক আর মুরংদের থাকার টং ঘর। রয়েছে পর্যটকদের জন্য টাইটানিক জাহাজের ভাস্কর্য। টাইটানিকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মনে পড়বে শত বছর আগের টাইটানিক জাহাজকে নিয়ে তৈরি কাহিনীচিত্র। শান্ত বিকালে দেখা যাবে সূর্যাস্তের দৃশ্য। কঙ্বাজারের সমুদ্রসৈকত। পাহাড়ের মাঝখানে ছুটেচলা আঁকাবাঁকা মাতামুহুরী নদী। মিরিঞ্জার পর্যটন কমপ্লেক্সে আগত পর্যটকদের সুবিধার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সুরম্য গিরিদ্বার। রয়েছে রেস্ট হাউস-কাম ওয়েটিং শেড 'বনরত্না'। নেই ভিখারিদের উৎপাত। নির্জনে বসে প্রিয়জনকে নিয়ে গল্প করতে রয়েছে দুই স্তরের গোলঘর 'মালঞ্চ'। আছে টেলিস্কোপ ঘর ও প্ল্যাটফর্ম। গোলঘরে রয়েছে জোছনা দেখার বিশেষ আয়োজন। চাঁদনী রাতে চাঁদ দেখা যাবে গোলঘর থেকে। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে মিনি শিশুপার্ক। খাওয়াদাওয়ার জন্য রয়েছে শিশুপার্কসংলগ্ন অত্যাধুনিক রেস্তোরাঁ। এক পাশে সুখ পাহাড় অন্য পাশে দুঃখ। মাঝখানে বহমান মাতামুহুরী। ঢেউতোলা ঘোলা জলে পালতোলা মালবাহী নৌকা।
পাহাড়ের গায়ে শত বছরের পাথরের কারু কাজ। কখনো দেখা মেলে বনমোরগ, খরগোশ, শিয়াল, বুনো হরিণের ছোটাছুটি। সকালে এলেই এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স ঘুরে যে কেউ চলে যেতে পারেন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক অথবা কক্সবাজারে। তবে মেঘ আর বৃষ্টির লুকোচুরি খেলার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চাইলে থাকতে হবে এক রাত। থাকতে না চাইলেও রয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা। দিনভর থেকে সন্ধ্যায় ফিরতে পারেন লামা বাজারে। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থা। খরচ খুবই কম।
ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের বাসে উঠতে হবে। চট্টগাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া বাসস্টেশনে নেমে বাস, জিপ, মাইক্রোবাসে ৩০ মিনিটের পথ। পৌঁছে যাবেন লামা মিরিঞ্জা টাইটানিক পাহাড়ে। এখান থেকে লামাবাজারে যেতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। যাওয়ার আগে লামা থানার নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে একবার যোগাযোগ করলে ভ্রমণের আনন্দটা আরও মধুর হবে। হয়তো পেতেও পারেন যাবতীয় সহযোগিতা।
* নিবারণ বড়ুয়া
0 comments:
Post a Comment