বর্তমান সময়ে হরতাল শুনলেই আমাদের চোখের সামনে অগি্নসংযোগ ও রক্তপাতের দৃশ্য ভেসে ওঠে। অতীতে কিন্তু এমন ছিল না। হরতাল ছিল দাবি আদায়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি পন্থা। শুরুতে হরতাল ছিল ব্যবসায়ীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দোকানপাট বা গুদামঘর বন্ধ রেখে প্রতিবাদ প্রকাশ করা। হরতাল একটি গুজরাটি শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ 'বন্ধ' বা 'বন্ধ করে দেওয়া'। ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে হরতাল ভারত উপমহাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে নতুন মাত্রা যোগ করে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী তাঁর নিজ এলাকা গুজরাটে পরপর কয়েকটি বন্ধ-এর ডাক দিয়ে হরতালকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে বাংলার ইতিহাসে হরতাল নামে না হলেও হরতালের মতো একই ধরনের প্রতিবাদ বহু বছর আগেও প্রচলিত ছিল। হরতাল বহু বছর ধরে দাবি ও অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে একটি প্রতিবাদের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু সময় ও স্থানভেদে হরতালের ধরন ও পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে হরতাল একটি কার্যকর ও শক্তিশালী রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। হরতালের সময় হরতালকারীরা রাস্তায় উচ্চকণ্ঠে মিছিল করে নিজেদের দাবির কথা বলে থাকে। হরতালের পক্ষে হরতালকারীদের রাজপথের কর্মকাণ্ডকে 'পিকেটিং' বলা হয়। আর যারা 'পিকেটিং' করে তাদের 'পিকেটার' বলা হয়। তবে পিকেটারদের কারণে অনেক সময় মানুষকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশে সরকার 'ভ্রাম্যমাণ আদালত'-এর মাধ্যমে হরতালের সময় বিশৃঙ্খলাকারীদের শাস্তি দিয়ে আসছে।
গ্রন্থনা : তৈমুর ফারুক তুষার
0 comments:
Post a Comment