Monday, August 13, 2012

কম্পিউটার

1 comments

প্রশ্ন: গঠনগত বা পরিচালনা নীতি অথবা ক্রিয়ানীতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।


উত্তরঃ গঠন অনুসারে বা পরিচালনার নীতি অথবা ক্রিয়ানীতি অনুসারে কম্পিউটারকে তিনভাগে ভাগ করা করা যায়। যেমন-

১. অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog Computer)

২. ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)

৩. হাইব্রিড কম্পিটার (Hybrid Computer)

১। অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog Computer)

Analog শব্দটি গ্রীক শব্দ Analogous হতে উদ্ভুত, যার অর্থ তুলনা করা। অ্যানালগ পদ্ধতিতে একটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল রাশিকে অন্য একটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল রাশির সাথে তুলনা করে পরিমাপ করা হয়। এই ক্ষেত্রে কোন বর্ণ বা অংক ব্যবহার করা হয় না। অ্যানালগ কম্পিউটার কাজ করে পদার্থবিজ্ঞানের নীতির উপর ভিত্তি করে। অর্থাত্ চাপ, তাপ, তরলের প্রবাহ ইত্যাদি পরিবর্তনশীল ডেটার জন্য সৃষ্ট বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে অ্যানালগ কম্পিউটারের ইনপুট হিসেবে ধরা হয় এবং প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণের পর ফলাফল সাধারণত কাঁটা বা প্লটারের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। অ্যানালগ কম্পিউটারে কোন ধরনের মেমরি ইউনিট ব্যবহূত হয় না। নিম্নে ব্লক ডায়াগ্রামের মাধ্যমে অ্যানালগ কম্পিউটারের কার্যাবলী দেখানো হলো-

বৈশিষ্ট্য (Characteristics)

১. অ্যানালগ কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য-

২. অ্যানালগ কম্পিউটারের ইনপুট ও আউটপুট অ্যানালগ প্রকৃতির। এর আউটপুট সাধারণত কাঁটা বা প্লটারের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

৩. অ্যানালগ কম্পিউটারের সূক্ষ্মতা কম। সূক্ষ্মতা সাধারণত 0.1% কম হয়।

৪. এই ধরনের কম্পিউটার ব্যবহারে কোন সার্বজনীনতা নেই। অর্থাত্ একটি কাজের ৫. জন্য তৈরিকৃত কম্পিউটার অন্য কাজের জন্য ব্যবহার করা যায় না।

৬. সাধারণত বিশেষ বা নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণ

মোটরগাড়ির স্পিডোমিটার (speedometer), পটেনশিওমিটার (Potentiometer), স্লাইড শুরুল (Slide rule), কাঁটাওয়ালা ঘড়ি, অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ার (Operational amplifier) ইত্যাদি অ্যানালগ কম্পিউটারের উদাহরণ।

ব্যবহার

অ্যানালগ কম্পিউটারের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো হলো- রাসায়নিক শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, বাতাসের চাপ, তাপ, বায়ু প্রবাহ ইত্যাদি নির্ণয়।

২। ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)

Digital কথাটি ‘Digit’ শব্দ হতে উত্পত্তি। যার অর্থ অংক। যে কম্পিউটার সিস্টেম ডিজিটাল তথা বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে তাকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলে। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি হলো 0 ও 1। এই দু’টি ডিজিট ব্যবহার করে এই ধরনের কম্পিউটার যাবতীয় গাণিতিক হিসাব নিকাশ সম্পন্ন করে। ডিজিটাল কম্পিউটারে অ্যানালগ কম্পিউটারের মত কোন ক্রমাগত পরিবর্তনশীল রাশি ব্যবহার করা হয় না। তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হিসাব নিকাশের জন্য সরাসরি অংক কিংবা সংখ্যা ব্যবহার করা হয় এবং ফলাফল লিখিত আকারে মনিটরের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ডিজিটাল কম্পিউটার অত্যন্তসূক্ষ্ম ও নির্ভুলভাবে ফলাফল প্রদান করতে পারে। আমরা সাধারণত অফিস বা বাসা-বাড়িতে যে সব কম্পিউটার ব্যবহার করি তার অধিকাংশই হচ্ছে ডিজিটাল কম্পিউটার।

এ ধরনের কম্পিউটারে বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত ও প্রক্রিয়াকরণের ফলাফল মেমরিতে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকে। সাধারণত কম্পিউটার বলতে ডিজিটাল কম্পিউটারকেই বুঝানো হয়। নিম্নে ব্লক চিত্রের মাধ্যমে ডিজিটাল কম্পিউটারের কার্যপ্রক্রিয়া দেখানো হলো-

ডিজিটাল কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

ডিজিটাল কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো- ১. ডিজিটাল কম্পিউটারের ইনপুট গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ ও ফলাফল প্রদান করা হয় ডিজিটাল প্রক্রিয়ায়। অর্থাত্ সরাসরি বর্ণ বা অংক আকারে। ২. এটি কাজ করে সম্পূর্ণ গাণিতিক নিয়মের উপর ভিত্তি করে। ৩. অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকরণ কাজে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।৪. এটির সূক্ষ্মতা 100%।৫. আধুনিক মানের কম্পিউটার।৬. বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। ৭. ব্যবহারে সার্বজনীনতা আছে।

উদাহরণ :বর্তমান সময়ে ব্যবহূত প্রায় সকল কম্পিউটারই ডিজিটাল কম্পিউটার। Pentium- I, II, III, IV, Aplle, Macintosh, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিজিটাল কম্পিউটারের উদাহরণ।

ব্যবহার :আমাদের প্রত্যাহিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হচ্ছে। যথা- অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, শিল্প প্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা, বিনোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে।

৩। হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer)

হাইব্রিড (Hybrid) শব্দের অর্থ হলো সংকর বা সমন্বয়। অ্যানালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের সমন্বয়ে যে কম্পিউটার তৈরি করা হয় তাকে হাইব্রিড কম্পিউটার বলে। হাইব্রিড কম্পিউটারে সাধারণত ডেটা সংখ্যায় রূপান্তরিত করে প্রক্রিয়াকরণের জন্য ডিজিটাল অংশে প্রেরণ করা হয়। ডিজিটাল অংশ প্রাপ্ত ডেটা প্রক্রিয়াকরণের পর ফলাফল মনিটর কিংবা অন্য কোন আউটপুট ডিভাইসে প্রদর্শিত হয়। সাধারণত বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার, শিল্প প্রতিষ্ঠান যেখানে অ্যানালগ ও ডিজিটাল উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে সেখানে হাইব্রিড কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার, রোগীর রক্ত চাপ, শরীরের তাপমাত্রা, হূদযন্ত্রের ক্রিয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ ধরনের কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়। নিচে ব্লক চিত্রের সাহায্যে হাইব্রিড কম্পিউটারের গঠন দেখানে হলো

চিত্রঃ হাইব্রিড কম্পিউটারের কাজের প্রক্রিয়া।

হাইব্রিড কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য :হাইব্রিড কম্পিউটারের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো-১. হাইব্রিড কম্পিউটারের ইনপুট অ্যানালগ প্রকৃতির এবং আউটপুট ডিজিটাল পদ্ধতির। ২.বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। ৩.তুলনামূলক দাম বেশি। ৪. গঠন জটিল প্রকৃতির।

1 comments:

Post a Comment