Thursday, September 16, 2010

রাজসিক

0 comments
ব্যস্ত শহরের রাজপথে ধুলোর ঝড় তুলে ছুটে চলা একঝাঁক আধুনিক প্রাইভেট কার ও বাসের মাঝে একজন ঘোড়ার গাড়ির চালককে দেখা যায় অবিরাম চাবুক চালিয়ে ঘোড়াগুলোকে সচল করার চেষ্টায় রত। এটা পুরান ঢাকার টমটমের কথা বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে না আধুনিক রূপকথার কোনো গল্প। শেরাটনের মোড়ে অবস্থিত ভাস্কর মৃণাল হকের নান্দনিক ভাস্কর্য ১‘রাজসিক’ এভাবেই প্রতিদিন আমাদের ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বাস্তবধর্মী মেটাল ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে ‘রাজসিক’ অন্যতম। ভাস্কর্যটিতে কোনো ধরনের রূপকতাকে আশ্রয় না করে শিল্পী সরাসরি একটি বিষয়কে আলোকপাত করেছেন। মৃণাল হকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যকে সকলের সামনে তুলে ধরার চিন্তাই তাকে এই কাজে উৎসাহিত করে। ভাস্কর্যটির গঠনশৈলী, স্পেসের ব্যবহার সর্বোপরি উপস্থাপনের ভঙ্গি শিল্পবোদ্ধাদের মুগ্ধ করে। বিশেষ করে গতির দিকে স্পেস তৈরি করে ভাস্কর্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিল্পীর দক্ষতা প্রশংসনীয়। সম্পূর্ণ ভাস্কর্যে খুববেশি কারুকার্য দেখা না গেলেও, এই অতি অল্প কারুকার্যের মাধ্যমেই

ভাস্কর্যটিতে ফুটে উঠেছে রাজকীয় গাম্ভীর্য। ঘোড়ার গাড়ির পাদানিতে ও দরজার উপরে যে অপূর্ব কারুকার্য দেখা যায় তা আমাদের মুঘল সাম্রাজ্যের সময়কার মুসলিম চিত্রকলাকে মনে করিয়ে দেয়। এছাড়াও ভাস্কর্যে ব্যবহƒত প্রতিটি বস্তু যেমনÑপেয়াদার হাতের গাদা বন্দুক, যাত্রীদের পোশাক-পরিচ্ছদ সবকিছুই স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের গৌরবময় অতীতকে। ফাইবার গ্লাস ও আয়রন মেটালে নির্মিত ভাস্কর্যটি প্রায় ৭ ফুট উঁচু এবং চাবুকসহ ১৩ ফুট। এটি তৈরি করতে শিল্পীর প্রায় ৩ মাস সময় ব্যয় হয়। ভাস্কর্যটিতে নবাব আহসান উল্লাহ, তার পরিবারবর্গ ও ঘোড়ার গাড়ি চালক ছাড়াও একজন পেয়াদাকে সদাসতর্ক ভঙ্গিতে গাড়ির পেছনে বসে থাকতে দেখা যায় যা ঢাকার নবাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে। ‘রাজসিক’ এক অর্থে যেমন দৃষ্টিনন্দন একটি ভাস্কর্য, অন্য অর্থে এটি আমাদের ঐতিহ্যের একটি সোপান। ২০০৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই ভাস্কর্যটি প্রতিদিনই হাজার হাজার পথচারীকে মুগ্ধ করে চলেছে। শিল্পের মাধ্যমে ঐতিহ্যকে ধরে রাখার একটি অনবদ্য প্রয়াস মৃণাল হকের ‘রাজসিক’।

0 comments:

Post a Comment